India

অনধিকার

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২০ ০১:১২
Share:

প্রতীকী ছবি।

নেদারল্যান্ডস-এর এক মাতামহী সম্প্রতি যে শিক্ষা পাইলেন, তাহা ভারতেরও মনে রাখা প্রয়োজন। মেয়ের অনুমতি না লইয়া সমাজমাধ্যমে নাতি-নাতনিদের ছবি পোস্ট করায় আদালতে তিরস্কৃত হইয়াছেন ওই বৃদ্ধা। শিশুদের তথ্যের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করিয়াছেন তিনি, তাই ছবি না মুছিলে জরিমানা হইত তাঁর। ভারতীয়রা কবে বুঝিবেন, অনুমতি না লইয়া অপরের যে কোনও তথ্য-পরিসংখ্যান (ডেটা) আহরণ করা, মজুত করা, বিক্রয় করা বা ব্যবহার করা কেবল অসৌজন্য নহে, অপরাধ? আক্ষেপ, রাষ্ট্রই এখনও সে বিষয়ে যথেষ্ট সতর্ক, সজাগ হয় নাই। ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা (প্রাইভেট ডেটা প্রোটেকশন) আইন এখনও পাশ হয় নাই, গত বৎসর প্রস্তাবের আকারে কেবল পেশ হইয়াছে সংসদে। প্রস্তাবিত আইনটি লইয়া অসন্তোষ দেখা দিয়াছে। তাহা ব্যক্তির তথ্যের উপর রাষ্ট্রকে অতিরিক্ত দখলদারির সুযোগ দিয়াছে, এমন আপত্তি উঠিয়াছে। কিন্তু সেই বিতর্কের মধ্যেই আরও নূতন নূতন উদ্বেগ দেখা দিতেছে। কেন্দ্রীয় সরকার এক একটি এমন পদক্ষেপ করিতেছে যাহার ফলে ব্যক্তির তথ্যের গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হইবার, নাগরিকের উপর নিয়ত-নজরদারি চলিবার আশঙ্কা আরও প্রবল হইতেছে। তাহার সাম্প্রতিকতম নিদর্শন চালকহীন উড়ন্ত যান বা ড্রোন সম্পর্কিত নিয়মের খসড়া (আনম্যানড এয়ারক্রাফট সিস্টেমস রুলস, ২০২০), যাহা অসামরিক বিমান মন্ত্রক সম্প্রতি প্রকাশ করিয়াছে। ড্রোনের নথিভুক্তি, বিক্রয় ও ব্যবহারের বহুবিধ শর্ত সেখানে উল্লিখিত হইয়াছে, শুধু আসে নাই ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখিবার শর্তটি।

Advertisement

আকাশে উড়িবার পথে ব্যক্তির অজ্ঞাতসারে ড্রোন তাহার ছবি, শব্দ ও অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করিতে পারে। সেই সকল তথ্য যাহাতে ব্যবসায়িক কাজে, রাষ্ট্রের নজরদারির কাজে বা অপর কোনও কারণে ব্যবহৃত না হয়, তাহা সরকারি বিধিতেই নিশ্চিত করিতে হইবে। ড্রোন-দ্বারা সংগৃহীত কোন তথ্যগুলি মজুত, বিক্রয় বা ব্যবহার করা অপরাধ, এবং করিলে কী শাস্তি হইবে, তাহা স্পষ্ট করিয়া দিবে সরকারি বিধিনিয়ম, ইহাই প্রত্যাশিত। আশ্চর্য এই যে, ২০১৮ সালে ড্রোন সম্পর্কিত যে বিধি (রেগুলেশন) অসামরিক বিমান মন্ত্রক প্রকাশ করিয়াছিল, তাহাতে ইহার কিছুই ছিল না। ব্যক্তির গোপনীয়তা সুরক্ষিত রাখিতে হইবে, এমন একটি নীতির উল্লেখ ছিল শুধু। তাহার রূপায়ণের পদ্ধতি কিছুই বলা হয় নাই। বিষয়টি যথেষ্ট সমালোচিত হইয়াছিল। অথচ দুই বৎসর পরে যে নিয়মাবলি প্রকাশিত হইল, তাহাতেও ফের একই নীরবতা। ব্যক্তির সুরক্ষা ও নিরাপত্তা লঙ্ঘন না করিবার নির্দেশ রহিয়াছে কেবল। ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্ট ব্যক্তির গোপনীয়তাকে মৌলিক অধিকার বলিয়াছে। ইহার পরেও ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা প্রাধান্য পায় নাই ড্রোন নিয়ন্ত্রণের নিয়মাবলিতে।

আশঙ্কা হয়, এমন ভুল কেবল বেখেয়ালে ঘটে নাই। সম্প্রতি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আরোগ্য সেতু অ্যাপটি সকলকে ডাউনলোড করিবার অনুরোধ করিয়াছিলেন। সেই অ্যাপ সম্পর্কেও অভিযোগ উঠিয়াছে, তাহাতে ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত নহে। কারণ কাহারা মজুত তথ্যের নাগাল পাইতে পারে, কী শর্তে পাইতে পারে, সে বিষয়ে স্বচ্ছ নীতি নাই। ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকদের প্রশ্ন করিয়া কোনও নির্দিষ্ট উত্তরও মেলে নাই। ড্রোন ব্যবহারের নিয়মাবলিতে কেন ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তার প্রশ্নটি গুরুত্ব পায় নাই, সেই কারণ সন্ধান করিলে একটি আশঙ্কা প্রবলতর হইয়া উঠে— ভারতীয় রাষ্ট্রের পরিচালকরা ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তাতে আদৌ বিশ্বাসী নহেন। এমন ঘটিতে থাকিলে নূতন নূতন প্রযুক্তি প্রতি দিন নাগরিককে বিপন্ন করিবে। স্বচ্ছ, সবল ও সুদূরপ্রসারী আইন দ্বারা ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার প্রয়োজন আজ তীব্র ভাবে অনুভূত হইতেছে।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন