অক্টোবর ২০১৯

নামভূমিকায়

বরাবর ব্যাট চালিয়েছেন নিজের মতো। ক্যাপ্টেন হয়ে দল চালিয়েছেন নিজের শর্তে। বিসিসিআই-কেও সে ভাবেই চালাবেন প্রশাসক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বরাবর ব্যাট চালিয়েছেন নিজের মতো। ক্যাপ্টেন হয়ে দল চালিয়েছেন নিজের শর্তে। বিসিসিআই-কেও সে ভাবেই চালাবেন প্রশাসক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় 

Advertisement

শিশির রায়

শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৯ ০২:৩২
Share:

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।

গল্পটা বলেছিল এক বন্ধু। গল্প হলেও সত্যি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট, কলেজে পড়ানোর পরীক্ষাও হেলায় পাশ দিয়ে চাকরিতে ঢোকার আগে সে দেখা করতে গিয়েছিল তাঁর কলেজবেলার প্রিয় শিক্ষকের সঙ্গে। উচ্ছ্বাস চলকে পড়ছিল শরীরের ভাষায়। মাস্টারমশাই চশমার ফাঁকে দেখে, স্মিতহাস্যে একটাই কথা বলেছিলেন: এ বার থেকে পড়াশোনাটা ভালমতো কোরো।

Advertisement

৩৯তম বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে লিখতে গিয়ে এটা মনে পড়ল, কারণ তাঁকে যে ক্রিকেটটা এখন আরও ভাল খেলতে হবে! নব্বইয়ের দশক জুড়ে বড়-হওয়া আমরা সচিন বনাম সৌরভ নিয়ে তর্ক করতাম। ইস্কুলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এখনও করি, তথ্য আর তত্ত্বের তির ছোড়াছুড়ি চলে। শেষে সব্বাই হাসে। হাসিতে মিশে থাকে সারসত্যটুকু: জীবন তো স্ট্যাটিসটিক্সের ওপরে, ও পারে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে শুধু তেরো হাজার ওয়ান-ডে রানে, অফসাইডের ঐশ্বরিকতায়, লর্ডসের ব্যালকনিতে জামা ওড়ানোয় মাপব, তাই হয়? সে তো শুধু ক্রিকেটটুকু। সি এল আর জেমস শুনলে তাঁর কিপলিং-ছোঁয়া প্রবাদপ্রায় বাক্যটা বলতেন, ‘হোয়াট ডু দে নো অব ক্রিকেট হু ওনলি ক্রিকেট নো?’

দুর্দান্ত প্রাক্তন ক্রিকেটার এখন দেশের ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থার সর্বোচ্চ পদে। বাঙালি হাসছে, কলার তুলছে। মনের কোণে চিন্তাও ঘনাচ্ছে: এত বড় পদ, দায়িত্ব, পারবে তো মানুষটা? আবার নিজেই আশ্বাস দিচ্ছে নিজেকে, ঠিক পারবে। ক্যাপ্টেন ছিল না? প্রতিপক্ষকে ছেড়ে কথা বলেনি কখনও। চোখে চোখ রেখে লড়েছে। টিমটাকে কী বানিয়েছিল! সহবাগ ওপেনিংয়ে নেমে নড়বড়িয়ে আউট হয়ে ফিরতে বলেছিল, পরের ম্যাচে শুরু থেকেই এমন মারবি যাতে ওরা পালাবার পথ না পায়। সহবাগের বীরেন্দ্রে রূপান্তর সবাই জানে। যুবরাজ, হরভজন, ধোনি— এঁরাই তো সৌরভের এক-একটা মেডেল! ক্রিকেট আর ক্রিকেটারদের দু’হাতে ধরে পাল্টে দেওয়ার লায়েক যে, তাঁরই তো প্রশাসক হওয়া সাজে!

Advertisement

এই মানুষটার ক্ষেত্রেই যেন সব ঘটতে হবে। ঘটনা, অঘটন— দুই-ই। ২০০০-এ ক্যাপ্টেন হলেন, ম্যাচ গড়াপেটার পাঁক থেকে ভারতীয় ক্রিকেটকে টেনে সাফসুতরো করার চ্যালেঞ্জ। ২০১৪ থেকে বাংলার ক্রিকেট সংস্থা সিএবি-তে; যুগ্মসচিব থেকে পরের বছর সিএবি-সভাপতি। এ বারও তো প্রেসিডেন্ট পদের দৌড়ে প্রথমে তাঁর নামই ছিল না। সেখান থেকে সর্বসম্মতিক্রমে বিসিসিআই সভাপতি। সৌরভই কেন? শ্রীনিবাসন, ব্রিজেশ পটেল, অনুরাগ ঠাকুর, বা কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল অমিত শাহ-তনয় জয় শাহকে নিয়ে— এঁরা নয় কেন?

কেন আবার! ক্রিকেটার হিসেবে সিভি-টা দেখো। পোর্টফোলিয়ো দেখো। ক্যাপ্টেন হিসেবে চাপ সইবার ক্ষমতাটা দেখো। দলের শিরায় দার্ঢ্য আনার ধকটা দেখো। এমন একটা মানুষ চাই যে সামনে তাকাতে পারে। নিজের আইডিয়ার কমতি নেই, তবু অন্যের আইডিয়া মন দিয়ে শোনে। চট করে বেছে নিতে পারে যেটা দরকার। কী করতে চায়, জানে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার বেলায় কঠোর। আর যেটা ভাববে, করবে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে করবে। সঙ্গে যোগ করো ব্যক্তিত্বের ক্যারিশমা। দু’দিন আগেই নিজের শহরে সংবর্ধনা সভায় বলেছে, আমি বরাবর নিজের মতো খেলেছি, নিজের কেতায় দলকে চালিয়েছি, বিসিসিআইকেও সেই ভাবেই চালাব। একদম সটান, সপাট। নো-ননসেন্স।

সভাপতি হওয়া ইস্তক যেটুকু বলেছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, তা থেকেই তাঁর প্রশাসক-সত্তার নির্যাসটুকু টলটলে। বিসিসিআই-এর ফুল ফর্ম কী? বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া। ‘কন্ট্রোল’-এর মধ্যে যেন একটা ছড়ি-ঘোরানোর ভাব। সৌরভ বলেছেন, আমি এসেছি ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের জীবন সহজ করতে। বিসিসিআই-এর গত কয়েক বছরটা তো দুঃস্বপ্নের মতো ছিল। দুর্নীতির জেরে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ, লোঢা কমিশন, ‘কমিটি অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্স’-এর জমানা। সৌরভ সভাপতি হয়ে জানালেন, এ বার সব স্বাভাবিক হবে। জানালেন, তাঁর পাখির চোখ ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেট। সেখান থেকেই তো বেরিয়ে আসবে ভবিষ্যতের বিরাট ধোনি রোহিত রাহানেরা! সিএবি-সভাপতি সৌরভ চালু করেছিলেন ‘ভিশন ২০২০’। বাংলার ক্রিকেটারদের পরিপুষ্টির জন্য মুরলীধরন, ভিভিএস-দের ক্লাস। সর্বভারতীয় পরিসরে সেই রূপরেখা নিশ্চয়ই জোরদার হবে আরও। ধোনির ভবিষ্যৎ নিয়ে সারা দেশ কুতূহলী, সভাপতি উবাচ: আমি যদ্দিন আছি, কোনও ক্রিকেটারের সম্মানহানি হবে না।

ক্রিকেট তো বটেই। দেশও তো এমন মানুষকেই চায়, যাঁর আশ্বাসে স্বস্তি মেলে। যাঁকে নিয়ে সবর্দা তটস্থ হয়ে থাকতে হয় না। যাঁকে ঘিরে স্বপ্ন দেখা যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন