Cycling

সাইকেলে এগিয়ে চলুক শহর

কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভলপমেন্ট অথরিটি সাইকেল যাতায়াতের আলাদা রাস্তা তৈরির উদ্যোগ করেছে।

Advertisement

কল্যাণশঙ্কর মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২০ ০০:০১
Share:

করোনা থেকে বাঁচতে কলকাতার মানুষ ভিড় বাস এড়িয়ে সাইকেলে যাতায়াত শুরু করেছেন। খুবই ইতিবাচক ঘটনা। শহরাঞ্চলে সাইকেলে যাতায়াতে উৎসাহ দিতে সরকারের তরফ থেকে অবিলম্বে উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তোলা উচিত।

Advertisement

কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভলপমেন্ট অথরিটি সাইকেল যাতায়াতের আলাদা রাস্তা তৈরির উদ্যোগ করেছে। তারা দু’ধরনের পদক্ষেপের কথা ভেবেছে। প্রথমত, রাস্তার ধারে গাড়ি পার্কিং তুলে অন্যত্র করা হবে। দ্বিতীয়ত, রাস্তার ধারের হকারদের জন্য অন্য ব্যবস্থা করা হবে। প্রাথমিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, রাস্তায় মাত্র ২ শতাংশ জায়গা বাড়লেই সাইকেলের জন্য আলাদা রাস্তা করা যাবে। পার্কিং ও হকার-সমস্যার সুরাহা করলে সহজেই এই অতিরিক্ত জায়গাটা পাওয়া যায়। পরিকল্পনা মতো, আগামী বছরের প্রথম দিকে কলকাতায় সাইকেলের আলাদা রাস্তার কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার কথা। করোনা-লকডাউনের সুযোগে কলকাতা যদি সাইকেলবান্ধব শহরে উত্তীর্ণ হতে পারে, তবে তা বড়ই আশার কথা।

সাইকেলে যাতায়াত বাড়লে, গাড়ির সংখ্যা কমবে। খনিজ তেলের ব্যবহার কমবে, বিশ্ব উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে লড়াইটাও জোরদার হবে, পরিবেশবান্ধব সমাজ গড়ে উঠবে। সাইকেল নিঃশব্দে চলে, শব্দ দূষণও করে না। পরিবেশবান্ধব যানগুলির তালিকায় সাইকেল উপরের দিকেই রয়েছে। ইউরোপের দেশগুলি সাইকেলকে জনপ্রিয় করেছে। আমরাও তার থেকে শিক্ষা নিতে পারি।

Advertisement

নিয়মিত সাইকেল চালানো স্বাস্থ্যকর। তাতে ওজন ঠিক থাকে, রক্তচাপ ও রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকে, হৃদ্‌যন্ত্র ভাল থাকে, মাংসপেশি সবল হয়। প্রসূতিদেরও সাইকেল চালানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। যাতায়াতের খরচ তো বটেই, সাইকেল চালালে চিকিৎসা খরচও কমে। সমীক্ষা জানাচ্ছে, ডেনমার্কে সাইকেলের ব্যবহার বাড়ার ফলে স্বাস্থ্যখাতে বাৎসরিক প্রায় ৩৪৭ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছিল।

শহরের রাস্তাগুলি যত সংখ্যক গাড়ি যাতায়াতের জন্য তৈরি, গাড়ির সংখ্যা এখন তার চেয়ে ঢের বেশি। ফলে, অতিমারির প্রকোপ আরম্ভ হওয়ার আগে পর্যন্ত রাস্তায় যানজট ছিল নিত্যকার ঘটনা। অফিসবেলায় কলকাতা শহর অচল হয়ে যেত। এই অবস্থায় অল্প দূরত্বের গাড়ির সংখ্যা কমিয়ে, সাইকেলকে পরিবর্ত হিসেবে ভাবা ভাল। স্কুলগুলির সামনে যানজটও তো প্রাত্যহিক ঘটনা। ছেলেমেয়েরা যদি স্কুলে বা অন্যত্র যাওয়া-আসায় সাইকেল ব্যবহার করে, তা হলে বড়দের সময় বাঁচে। তখন তাঁরা অন্য কাজ করতে পারেন। ছেলেমেয়েরাও স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে। আরও এক ভাবে সাইকেল সময় বাঁচায়। শহরের বসে-কাজ-করা জীবনযাত্রায় শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়। অথচ ব্যস্ততার কারণে ব্যায়ামের সময়টুকুও বার করা যায় না। নিয়মিত সাইকেল চালালে ব্যায়ামের জন্য আলাদা করে সময় বের করার প্রয়োজনই হয় না।

সাইকেল অত্যন্ত সাশ্রয়ী যান। গাড়ির তেলের খরচ বা গণপরিবহণের ভাড়ার খরচ বাঁচায়, সাইকেলের জন্য পার্কিং ফি-ও লাগে না। প্রশাসনের ব্যয়ভার লাঘবেও সমর্থ সাইকেল। গাড়ির তুলনায় সাইকেল চলাচলের পরিকাঠামো তৈরির খরচ অনেক কম। যেমন, গাড়ির পার্কিং তৈরির খরচের মাত্র ৫ শতাংশ ব্যয় করেই সাইকেল পার্কিং-এর জায়গা তৈরি হয়ে যায়। জায়গা ব্যবহারের দিক থেকেও সাইকেল বেশি কুশলী। একটা গাড়ি রাস্তায় সাইকেলের থেকে ৩০ গুণ বেশি জায়গা দখল করে। একটি গাড়ি পার্কিং-এর জায়গায় ১২টি সাইকেল ধরে। জনবহুল শহরের স্থান সঙ্কট বিচারে, সাইকেলের এই সুবিধাটিও গুরুত্বপূর্ণ।

সাইকেলের ব্যবহার প্রসারিত হলে, সামাজিক সমতার পথটিও প্রশস্ত হবে। গাড়ি কেনার সামর্থ্য সবার থাকে না, কিন্তু সাইকেল সহজলভ্য। ধনী-দরিদ্র, বয়স, লিঙ্গ নির্বিশেষে অধিকাংশই সাইকেলে স্বচ্ছন্দ। সচলতায় সবারই অধিকার, সাইকেলের ব্যবহার প্রসারে সেই অধিকারের বিস্তার ঘটবে। ক্ষমতায়নও সার্বিক হয়ে উঠবে।

অনেকের ধারণা, সাইকেল নিরাপদ নয়। অথচ, ইউরোপের দেশগুলিতে সাইকেল চালনা ও পথ দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে অন্য তথ্য মিলেছে। যে সব দেশে বেশির ভাগ মানুষ সাইকেলে যাতায়াত করেন, সেখানে সাইকেল দুর্ঘটনা কম হয়। অন্য দিকে, যেখানে কম সংখ্যক মানুষ সাইকেলে যাতায়াত করেন, সেখানেই দুর্ঘটনা বেশি। এই তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায় যে কলকাতায় সাইকেলে যাতায়াতের জন্য আলাদা রাস্তা তৈরির উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। এতে উৎসাহিত হয়ে আরও বেশি মানুষ সাইকেলকে যান হিসেবে বেছে নিলে, যাতায়াত নিরাপদ হবে। কলকাতা উন্নততর শহর হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন