Newsletter

এই ভয়ঙ্করই মাৎস্যন্যায়ই কি ভবিতব্য?

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্নের সাক্ষী হল জয়নগর। বিধায়কের গাড়ী লক্ষ্য করে মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা পড়ল, এলোপাথাড়ি চলল গুলি। সৌভাগ্যক্রমে বিধায়ক গাড়িতে ছিলেন না।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৫৩
Share:

বোমা ও গুলিতে ক্ষতিগ্রস্থ বিধায়কের গাড়ি।—নিজস্ব চিত্র।

আইনের শাসন বহাল রাখার মতো পরিস্থিতি কি আদৌ রয়েছে এ রাজ্যে?নাকি অবাধ নৈরাজ্যের পটভূমি প্রস্তুত? ইচ্ছা হলেই আইন-কানুনকে বা পুলিশ-প্রশাসনকে নস্যাৎ করে দিয়ে মাৎস্যন্যায়ে মেতে ওঠাটা যে ভাবে দস্তুর হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তাতে এই প্রশ্নগুলো না তুলে আর পারা যাচ্ছে না। এই প্রশ্নগুলো প্রথম বার উঠছে, তা কিন্তু নয়। পশ্চিমবঙ্গের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বারবার গুরুতর প্রশ্ন উঠছে। কিন্তু রোগ নিরাময়ের বিন্দুমাত্র চেষ্টাকোথাও চোখে পড়ে না। না দেখা যায় রাজনৈতিক সদিচ্ছা, না রয়েছে প্রশাসনিক তৎপরতা। নৈরাজ্যের যাবতীয় লক্ষণ উজ্জ্বল ভাবে দৃশ্যমান।

Advertisement

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্নের সাক্ষী হল জয়নগর। বিধায়কের গাড়ী লক্ষ্য করে মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা পড়ল, এলোপাথাড়ি চলল গুলি। সৌভাগ্যক্রমে বিধায়ক গাড়িতে ছিলেন না। দুর্ভাগ্যক্রমে তিন জন ঘটনাস্থলেই বোমা-গুলির শিকার হয়ে গেলেন চিরতরে। পুলিশ-প্রশাসনের প্রতি বিন্দুমাত্র সমীহ থাকলে ভর সন্ধ্যায় জমজমাট এলাকায় ব্যস্ত রাস্তার ধারে এই রকম ভয়াবহ হত্যালীলা চালানো কারও পক্ষে সম্ভব!

একের পর এক রাজনৈতিক খুনের অভিযোগ উঠছে, রাজ্যের প্রত্যেকটা প্রান্ত থেকে অভিযোগ উঠছে। রাজনৈতিক খুনের সংখ্যায় পশ্চিমবঙ্গ সকলকে টেক্কা দিতে চায়—বিরোধী দলগুলো এই রকম মন্তব্যও করছে। কিন্তু রাজ্যের শাসক দল বা রাজ্যের প্রশাসন বিষ্ময়কর ভাবে নির্বিকার। কোথাও গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে বিরোধী দলের কর্মীর দেহ, কোথাও নিথর দেহ ঝুলছে বিদ্যুতের টাওয়ার থেকে, কোথাও ভোটের আগের রাতে নিজের বাড়িতে জীবন্ত দগ্ধ হচ্ছেন বিরোধী দলের সমর্থক দম্পতি, কোথাও বোমার আঘাতে খুন, কোথাও সরাসরি গুলি। প্রশাসন বা শাসক দল সমস্বরে কী বলছে? কখনও বলছে আত্মহত্যা, কখনও বলছে বিরোধী দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, কখনও বলছে পারিবারিক বিবাদ। যদি ধরে নিই এ সব বিরোধী দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের ফল অথবা যদি ধরে নিই এ সব পারিবারিক বিবাদের বহিঃপ্রকাশ, তা হলেও কি খুনের ভয়াবহতা কোনও ভাবে লঘু হয়? একটার পর একটা খুন হতেই থাকা কি আদৌ কোনও সফল প্রশাসনের পরিচয় দেয়?

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বোমা-গুলির নিশানা ছিলেন সম্ভবত জয়নগরের বিধায়ক, যিনি শাসক দলেরই। বোমা-গুলিতে মৃত্যুও হল শাসক দলের লোকজনেরই। বিরোধী দলগুলো সমস্বরে বলছে, আততায়ীরাও শাসক দলেরই। সেই অভিযোগের সত্যাসত্য পরে বিচার করা যাবে। যদুবংশের মুষল পর্ব শুরু হয়েছে কিনা, সে প্রশ্নের উত্তরও না হয় পরে খোঁজা যাবে। সর্বাগ্রে প্রশ্ন করতে হচ্ছে, শাসক বা বিরোধী, এ ভাবে কারও মৃত্যুই কি কাম্য? যখন তখন যেখানে সেখানে দুটো-চারটে করে প্রাণ এ ভাবে ঝরিয়ে দেওয়া যায়! কারও কিছু বলার নেই, কেউ বাধা নেওয়ার নেই, কাউকে ভয় পাওয়ারও নেই!কোন পরিস্থিতিতে বাস করছি আমরা?

আরও পড়ুন: জয়নগরে তৃণমূল বিধায়কের গাড়ি লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি-বোমা, নিহত তিন

এ রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনের অনিরপেক্ষতাদীর্ঘদিন ধরেই কুখ্যাত। বাম জমানার শেষের দিক থেকেই পুলিশের বিরুদ্ধে দলদাসত্বের অভিযোগ উঠতে শুরু করেছিল। রাজ্যের বর্তমান শাসক দল সেই সময়ে বিরোধী আসনে বসে এই দলদাসত্বের বিরুদ্ধেই কণ্ঠস্বর তুঙ্গে তুলেছিল। কিন্তু সেই বিরোধী শাসক হয়ে ওঠার পরে দলদাসত্ব যেন বাধ্যবাধকতায় পর্যবসিত হল। পুলিশের প্রধান দায়িত্ব এখন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা নয় বোধহয়। শাসক দলের সঙ্গে মসৃণ সমন্বয়ই সম্ভবত পুলিশের কাছে অগ্রাধিকার এ যুগে। রাজ্যের অনেক এলাকাতেই এখন পুলিশ আধিকারিকরা শাসক দলের কার্যকলাপের সক্রিয় অংশীদার বলে শোনা যায়। অমুক জেলায় বা তমুক মহকুমায় এই পুলিশকর্তা বা ওই পুলিশকর্ত্রীর নির্দেশ বা অঙ্গুলি হেলনেই শাসক দল পরিচালিত হয় —এমন খবরও বাংলার প্রান্তে প্রান্তে শোনা যাচ্ছে গত কয়েক বছর ধরে। এই শ্রুতিযদি সত্য হয়, তা হলে পুলিশের কাজ আগের থেকে অনেক বেড়েছে, পুলিশের অগ্রাধিকারও বদলে গিয়েছে। সে ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবহেলিত হতে বাধ্য। গোটা বাংলাওবাধ্য ছাত্রের মতো এই সবকিছু মেনে নেবে, এ বিষয়ে শাসক দল নিশ্চিত তো?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন