Editorial News

রাজনৈতিক প্রজ্ঞার মান কি নামছে দিন দিন?

আকারে-ইঙ্গিতেই বা আসবে কেন এই সব অবাঞ্ছিত কথাবার্তা! রাজনীতি কি এত দেউলিয়া যে, রাজনৈতিক ভাষায় কটাক্ষ বা আক্রমণ করা যায় না?

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:০৩
Share:

নাম না করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কুরুচিকর মন্তব্য রাহুল সিংহর। —ফাইল চিত্র

বিতর্ক যতই প্রবল হোক, সমালোচনা যতই তীক্ষ্ণ হোক, রাজনীতিকদের একাংশের বোধহয় কিছুই যায়-আসে না। তাই রাজনৈতিক ভাষ্যের নামে আপত্তিকর কথাবার্তার স্রোত থামতে চায় না কিছুতেই।

Advertisement

এ বার বিজেপি নেতা রাহুল সিংহ। আক্রমণের লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে বাক্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে রুচি বহির্ভূত কটাক্ষটা ছিল, সে বাক্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম উচ্চারিত হয়নি ঠিকই। কিন্তু ইঙ্গিত অত্যন্ত স্পষ্ট ছিল।

আকারে-ইঙ্গিতেই বা আসবে কেন এই সব অবাঞ্ছিত কথাবার্তা! রাজনীতি কি এত দেউলিয়া যে, রাজনৈতিক ভাষায় কটাক্ষ বা আক্রমণ করা যায় না? বিরোধের তীব্রতা বোঝাতে আপত্তিকর বা কুরুচিকর শব্দ ব্যবহার করা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না?

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

বলাই বাহুল্য, রাহুল সিংহ প্রথম নন। দশকের পর দশক ধরে বাংলার রাজনীতিতে এই প্রবণতা লক্ষ্য করছি আমরা। ষাটের দশকে কংগ্রেস নেতৃত্বকে আক্রমণ করতে গিয়ে একাধিক বার কুরুচিকর পন্থা-পদ্ধতি অবলম্বন করেছিল বামেরা। তখন বামেরা বিরোধী আসনে ছিলেন। কিন্তু ক্ষমতাসীন বামপন্থীরাও কম যাননি। বাংলায় বাম রাজত্বের শেষ দিকে একের পর এক শীর্ষ সিপিএম নেতা জঘন্য ভাষায় আক্রমণ করেছেন রাজনৈতিক বিরোধীদের। সেই সব আপত্তিকর মন্তব্যের বিরুদ্ধে স্বাভাবিক ভাবেই তৃণমূলের স্বর অত্যন্ত চড়া ছিল সে সময়ে। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পরে তৃণমূলের একের পর এক নেতা-বিধায়ক-সাংসদ-মন্ত্রী বেপরোয়া ভঙ্গিতে বার বার বিরোধীদের দিকে ছুড়ে দিয়েছেন নানা জঘন্য শব্দবন্ধ। বিপজ্জনক এক প্রবণতা চারিয়ে দিয়ে সরাসরি প্ররোচনা দেওয়াকে যেন প্রথায় পরিণত করেছেন কেউ কেউ। বিজেপি-ও কম যাচ্ছে না। কখনও স্থানীয় স্তরের নেতা, কখনও শীর্ষস্তরের— রুচি বহির্ভূত নানা মন্তব্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের দিকে ছুড়ছে বিজেপি। প্ররোচনাত্মক ভাষণের অভিযোগও বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে উঠছে।

আরও পুড়ন: মুখ্যমন্ত্রীকে আপত্তিকর কটাক্ষ, নাম না করে কুকথা বললেন রাহুল সিংহ

আকথা-কুকথার এই প্রবাহকে তো অনর্গল থাকতে দেওয়া যায় না। কোথাও গিয়ে তো থামতে হবে। রাজনীতির ভাষায় আর কতখানি অবনমনের পরে সম্বিৎ ফিরবে আমাদের রাজনীতিকদের? সরল সত্য হল— রাজনৈতিক প্রজ্ঞা থাকলে প্রতিপক্ষকে আক্রমণের জন্য অপশব্দ বা প্ররোচনার প্রয়োজন হয় না। বোঝা দরকার যে, এই আপত্তিকর কথাগুলো রাজনৈতিক কথা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে তো পারেই না, এই কথাগুলো রুচিসম্মতও হয় না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন