Editorial

এই কাণ্ডজ্ঞানহীন মহাসংগ্রাম শুধুমাত্র ক্ষমতার মোহে

রামায়ণ আর মহাভারত আজ এক বিন্দুতে এসে মিলে যাচ্ছে উত্তরপ্রদেশের রাজনৈতিক ময়দানে। যদুবংশের মুষল পর্বও আছে সেখানে আজ। আবার দশরথ আছেন, কৈকেয়ী আছেন, মন্থরা আছেন রাম আছেন, ভরতও আছেন।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:২৩
Share:

যুদ্ধের এক পক্ষ। ছবি: পিটিআই।

রামায়ণ আর মহাভারত আজ এক বিন্দুতে এসে মিলে যাচ্ছে উত্তরপ্রদেশের রাজনৈতিক ময়দানে। যদুবংশের মুষল পর্বও আছে সেখানে আজ। আবার দশরথ আছেন, কৈকেয়ী আছেন, মন্থরা আছেন রাম আছেন, ভরতও আছেন।

Advertisement

কিন্তু রামায়ণ-মহাভারত হল মহাকাব্য। তাদের বিপুল ব্যপ্তিতে নেতিবাচক পর্বগুলি নেহাৎই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ মাত্র। সত্য-অসত্যের সঙ্ঘাতই হোক বা ন্যায়-অন্যায়ের লড়াই— মহাকাব্যে তাদের প্রকাশ সব সময়ই নির্মোহ এক ভঙ্গিতে। উত্তরপ্রদেশের যদুকুলে যা ঘটছে, তার প্রকাশভঙ্গি কিন্তু একেবারেই নির্মোহ নয়। বরং ঠিক তার বিপ্রতীপ। যাদব পরিবারের তথা সমাজবাদী পার্টির যে তুমুল অন্তর্কলহ সর্বসমক্ষে আজ, নির্বাচনের মুখে দাঁড়িয়ে তার চেয়ে অপরিণত এবং কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণ আর কিছু হতেই পারে না।

উত্তরপ্রদেশের এই রামায়ণ এবং মহাভারত থেকে রাজনীতির ছাত্রদের অনেক কিছু শেখার আছে। ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্যটির রাজনৈতিক শাসনদণ্ড এখনও পর্যন্ত যে পরিবারের হাতে, সেই পরিবারে বাবা-ছেলেতে, কাকা-ভাইপোয়, ভাইয়ে-ভাইয়ে, জায়ে-জায়ে লড়াই এমন পর্যায়ে পৌঁছল যে তা প্রকাশ্য রাস্তায় লাঠালাঠি-সংঘর্ষের পর্যায়ে নেমে এল! দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের পক্ষে এমন ঘটনা ঘটানো খুব কঠিন। কিন্তু দায়িত্বশীল ব্যক্তবর্গই এই ধুন্ধুমারটা ঘটালেন এবং এখনও ঘটাচ্ছেন।

Advertisement

মুলায়ম সিংহ যাদবের পরিবার এই প্রথম রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ স্থানাধিকার করেছে, তা নয়। গত কয়েক দশক ধরেই উত্তরপ্রদেশ এবং ভারতের রাজনীতিতে এই যাদব পরিবার তথা সমাজবাদী পার্টি প্রভাবশালী। তা সত্ত্বেও এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন সঙ্ঘাতে যাদব পরিবারের সদস্যরা জড়ালেন কী ভাবে? জড়ালেন ক্ষমতার মোহে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে। যাদবকুলের এই লড়াইটা কোনও নীতি-আদর্শের লড়াই নয়, জনস্বার্থের সংগ্রামও নয়। ক্ষমতার ভাগ কে কতটা নেবেন, লড়াই তা নিয়েই। সেই লড়াইতে এত গভীর ভাবে নিবদ্ধ কুশীলবদের মন-প্রাণ যে পারিপার্শ্বিকতা সম্পর্কে বোধ লোপ পেয়েছে প্রায় সকলের।

ভারতীয় রাজনীতিতে একটা বাঁক খুব জরুরি এখন। এমনিতেই দেশের রাজনৈতিক দলগুলি সম্পর্কে খুব উচ্চ ধারণা জনসাধারণের আজ আর নেই। সেই রূঢ় বাস্তবতার মধ্যে দাঁড়িয়েও ক্ষমতার মোহে এমন দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়লে ভাবমূর্তি আরও কালিমলিপ্ত হয়।

উত্তরপ্রদেশের যদুবংশকে দেখে কি শিক্ষা নেবে দেশের অন্য দলগুলি? মানুষের দিকে কি ফিরবে তাদের অভিমুখ? নাকি পাখির চোখ হয়ে থেকে যাবে শুধু ক্ষমতাই? উত্তর খুঁজছে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement