মাসুদ আজহার।—ফাইল চিত্র।
শান্তির কথা শুধু মুখে বললে চলে না, শান্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধও থাকতে হয়। পুলওয়ামা পরবর্তী পরিস্থিতিতে ভারত-পাকিস্তানকে বার বার শান্তি স্থাপনের পরামর্শ দিচ্ছিল যে চিন, মাসুদ আজহারের মতো কুখ্যাত এবং বিপজ্জনক সন্ত্রাসবাদীকে নিষিদ্ধ করার পথে আবার সেই চিনই একমাত্র বাধা হয়ে দাঁড়াল।
এই প্রথম বার নয়, রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে যত বার পেশ হয় মাসুদকে ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী’ ঘোষণা করার প্রস্তাব, তত বারই সক্রিয় হয়ে ওঠে চিন, রুখে দেওয়া হয় মাসুদকে। পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার পরে গোটা বিশ্বের মতামত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। নিজের দেশের মাটিতে জঙ্গিদের লালন করছে পাকিস্তান—প্রায় গোটা বিশ্ব এ কথা আরও একবার মেনেছে এবং দ্বিধাহীন ভাষায় পাকিস্তানের নিন্দা করেছে।মাসুদ আজহার এবং তার সংগঠন জইশের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার জন্য পাকিস্তানের উপর চাপ বাড়িয়েছে আন্তর্জাতিক মহল। এই রকম আবহেই রাষ্ট্রপুঞ্জ নিরাপত্তা পরিষদে আরও একবার জমা পড়ে মাসুদকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার প্রস্তাব।ফ্রান্সের আনা সেই প্রস্তাবকে সমর্থন করেছে আমেরিকা, ব্রিটেন, রাশিয়া। কিন্তু চিন আবার বেসুরো বাজল। ভারতে জঙ্গি হামলার পরে যারা পাকিস্তানকে সতর্কবার্তা দেওয়ার কথা ভাবল, তারাই নিরাপত্তা পরিষদে গিয়ে মাসুদকে নিষিদ্ধ করার চেষ্টা আটকে দিল।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
চিনের এই দ্বিচারিতার ফল যে মারাত্মক হতে পারে, তা বেজিঙের কূটনীতিকরা কি বোঝেন না? পুলওয়ামার ঘটনা যে দুই পরমাণু শক্তিধর দেশকে যুদ্ধের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল, তা গোটা বিশ্ব জানে। মাসুদদের নিষিদ্ধ না করলে বা জঙ্গি দমনের প্রশ্নে পাকিস্তানের উপর আন্তর্জাতিক চাপ না বাড়ালে ভবিষ্যতে যে পুলওয়ামার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা থেকেই যায়, তা বুঝতে কূটনীতিক বা নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ হতে হয় না। আর আরও একটা পুলওয়ামা বা উরি বা পঠানকোট ঘটলে যে ভারতের তরফ থেকে আরও তীব্র সামরিক পদক্ষেপ হবে, সেও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে| চিনের কাছে কোনওটাই অজানা নয়। তা সত্ত্বেও মাসুদের উপর নিষেধাজ্ঞা আটকে দেওয়া দুর্ভাগ্যজনক!
আরও পড়ুন: মাসুদ আজহারকে ‘বিশ্ব সন্ত্রাসী’ ঘোষণায় এ বারও ভেটো চিনের?
পাক ভূখন্ডে ভারতীয় বায়ুসেনার বোমাবর্ষণের পরে প্রবল উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল উপমহাদেশের পরিস্থিতি। যুদ্ধ যদি শুরু হয়, তা হলে চিনের স্বার্থও যে সুরক্ষিত থাকবে না, তা বেজিঙের কর্তারা বুঝেছিলেন। তাই পাকিস্তানের উপরে চাপ বাড়ানোর বয়ান দিয়েছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতি একটু ঠান্ডা হয়ে আসতেই ফের স্বমূর্তিতে ফিরেছে চিন।
আরও পড়ুন: চিনের বাধা, নিরাপত্তা পরিষদে নিষিদ্ধ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা গেল না মাসুদ আজহারকে
অর্থনৈতিক এবং সামরিক মাপকাঠিতে চিন এখন পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ শক্তি| কিন্তু বৃহৎ হলেই যে মহৎ হওয়া যায় না, চিনা নীতি তা স্পষ্ট করে দিচ্ছে। মুখে শান্তির কথা বলছে চিন। উপমহাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা নিয়ে বার বার উদ্বেগ দেখাচ্ছে চিন। পৃথিবীর এই প্রান্তে স্থিতিশীলতা এবং শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখতে তারা যে বদ্ধপরিকর, তা আন্তর্জাতিক মহলকে বোঝাতে চাইছে চিন। কিন্তু চিনের বাস্তব ভূমিকা যে মোটেই দায়িত্বশীল রাষ্ট্রের মতো নয়, তা বলাই বাহুল্য। মাসুদকে রক্ষা করে বা পাকিস্তানে চলতে থাকা জঙ্গি পরিকাঠামো ধ্বংসের প্রশ্নে ভারত-আমেরিকার পাশে না দাঁড়িয়ে চিন যে পরিস্থিতি তৈরি করে রাখছে, তাতেই কিন্তু নিহিত থাকছে ভবিষ্যৎ সঙ্ঘাতের বীজ।