Jharkhand

লজ্জা লাগছে কি? প্রমাণ দিন

সেই চরম লজ্জাজনক ঘটনা যদি সত্যিই পীড়া দিত এ দেশের শাসকবর্গকে, তাহলে আজ ফের একই ঘটনার সাক্ষী হতে হত না।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৯ ০০:২৯
Share:

আক্রান্ত: মারধরের ভিডিয়োয় তবরেজ আনসারি। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যে

অশেষ লজ্জার মুখোমুখি গোটা ভারত যে হল আরও একবার, সে নিয়ে সংশয়ের অবকাশই থাকতে পারে না। কিন্তু ভারতের শাসকবর্গকে এ লজ্জা স্পর্শ করছে কি না, নিশ্চিত হয়ে বলতে পারছি না। কারণ এ লজ্জা প্রথমবার হানা দিল না, আগেও অনেকবার উগ্র উন্মত্ততায় এ ভাবে সহনাগরিকের প্রাণ নিয়ে নেওয়ার সাক্ষী হয়েছি আমরা। সেই চরম লজ্জাজনক ঘটনা যদি সত্যিই পীড়া দিত এ দেশের শাসকবর্গকে, তাহলে আজ ফের একই ঘটনার সাক্ষী হতে হত না।

Advertisement

ঝাড়খণ্ডের সরাইকেলা-খরসোঁয়া জেলায় এক যুবককে ১৮ ঘণ্টা ধরে বেঁধে পেটানো হল। গণপ্রহারের খবর পুলিশ-প্রশাসনের কানে সময়মতো একেবারেই পৌঁছয়নি, তেমন নয়। কিন্তু সময়মতো ওই যুবককে উদ্ধার করতে পৌঁছয়নি পুলিশ। উদ্ধার যতক্ষণে করল, ততক্ষণে অনেকটাই ক্ষতি হয়ে গিয়েছিল। অতএব হেফাজতেই মৃত্যু হল গণপ্রহারের শিকার যুবকের।

গণপ্রহারের যে ভিডিয়ো সামনে এসেছে, তা মর্মান্তিক। বাইক চোর সন্দেহে বেঁধে মার শুরু। সন্দেহভাজন যুবকের নাম তবরেজ আনসারি, এ কথা জানার পর জোর করে ‘জয় শ্রীরাম’ বলানোর চেষ্টা শুরু। এটা কোনও সভ্য সমাজের নমুনা? এটা কোনও সুষ্ঠু রাষ্ট্রব্যবস্থার নমুনা? এটা কি আইনের শাসন বজায় থাকার নমুনা? সর্বোপরি এটা কি মনুষ্যত্বের নমুনা?

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘জয় শ্রীরাম’ বলিয়ে, ১৮ ঘণ্টা পিটিয়ে খুন ঝাড়খণ্ডে

নরেন্দ্র মোদী সরকারের প্রথম দফার শাসনে বারবার ঘটেছে এই ধরনের ঘটনা। ভারতের প্রায় সব প্রান্তে ঘটেছে। সে নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়েছে। দেশে শুধু নয়, আন্তর্জাতিক স্তরেও উদ্বেগ ধরা পড়েছে। সেই আন্তর্জাতিক উদ্বেগ সম্প্রতি আরও একবার প্রতিফলিত হয়েছে একটি মার্কিন রিপোর্টে। ভারতে সংখ্যালঘুদের অধিকার তথা নিরাপত্তা সঙ্কুচিত হচ্ছে— মার্কিন রিপোর্টটিতে মূলত এ কথাই বলা হয়েছে। সে রিপোর্ট পত্রপাঠ নস্যাৎ করার চেষ্টা করেছে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক। ভারতে গণতন্ত্র কতটা সুরক্ষিত ও শক্তিশালী, সে কথা জোর দিয়ে মনে করিয়ে দিতে চেয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। ভারতের সংখ্যালঘুর অধিকার নিয়ে আমেরিকাকে ভাবতে হবে না, এইরকম বার্তাও দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আবার সেই উদ্বেগজনক ঘটনাই তো ঘটল। নরেন্দ্র মোদী সরকার বিপুল জনাদেশ নিয়ে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পরেও সেই প্রথমবারের লজ্জাই বহাল রইল।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

জনাদেশ বিপুল, সন্দেহ নেই। কিন্তু জনাদেশ এই লজ্জাজনক ঘটনাবলির সমর্থনে, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। দেশবাসীর বিশ্বাস অর্জনে নরেন্দ্র মোদীরা নিশ্চয়ই সফল হয়েছেন। সফল হয়েছেন বলেই দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য ফিরে এসেছেন। কিন্তু যে ঘটনা ঝাড়খণ্ডে ঘটে গেল, তা দেশবাসীর বিশ্বাসের অমর্যাদা করছে। এই কথাটা দেশের শাসকবর্গ যত তাড়াতাড়ি বোঝেন, ততই মঙ্গল। নাগরিক কিন্তু দিনের শেষে সুশাসন চান, সক্ষম প্রশাসন চান, শান্তিপূর্ণ সমাজ চান। এ দেশের নাগরিকদের অধিকাংশই শুভবুদ্ধি সম্পন্ন, নিশ্চয়ই সে কথা বিশ্বাস করে দেশের শাসকবর্গ। আর সেই শুভবুদ্ধি সম্পন্ন নাগরিকরা যে উগ্র উন্মত্ততা চান না, শাসকবর্গ আশা করি সে কথাও বোঝেন। কাউকে চোর বলে সন্দেহ হলেই গণপ্রহার শুরু করতে হবে, কারও নাম তবরেজ জানলেই মারতে মারতে ‘জয় শ্রীরাম’ বলানো হবে— কোনও সুস্থ সমাজে বা সক্ষম শাসনে এমনটা ঘটতে পারে না। সুতরাং দায়টা সবচেয়ে বেশি প্রশাসনকেই নিতে হবে। দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাটা কার প্ররোচনায় ঘটল, কী পরিস্থিতিতে ঘটল, কোনও রাজনৈতিক দল জড়িত ছিল কি না, এ সব প্রশ্ন আপাদমস্তক অবান্তর। আইনের শাসন পূর্ণমাত্রায় বহাল থাকলে কিছুতেই এ ঘটনা ঘটতে পারে না। অর্থাৎ প্রশাসনিক অক্ষমতার বা অনিচ্ছার ইঙ্গিত স্পষ্ট। কোনও অক্ষমতার কারণে নরেন্দ্র মোদী দ্বিতীয়বার জনাদেশ পেলেন, এমনটা নিশ্চয়ই কেউ ভাবছেন না। সুতরাং সক্ষমতা প্রমাণ করুন।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন