ছন্দপতন হোক না!
শিশুদের মন বোঝার জন্য খুব বেশি পড়াশোনার প্রয়োজন নেই। চাই অনুভব, খানিক ভালবাসা আর একান্ত করে চাওয়া। অন্তর্জালের দৌলতে একলা-সর্বস্ব শিশুদের কল্পনার জগৎটি আজ প্রায় বিলুপ্ত। ট্রেনে, বাসে, পথে-ঘাটে যেখানে দু’চোখ যায়, দেখতে পাই, সাত থেকে সত্তর অবধি সবার হাতে একটি করে আধুনিক প্রযুক্তির চলভাষ। এখন দেখছি বিমানেও মোবাইল, ল্যাপটপ নিষিদ্ধ করেছেন আমেরিকার রাষ্ট্রপ্রধান। খুব ভাল কথা। কিন্তু আমাদের দেশে আধুনিক প্রজন্মের শিশুরা আজ পুরোপুরি মোবাইল-নির্ভর, যা শুধু যে ইন্দ্রিয়, বা শরীরের ক্ষতি করছে তা নয়, মনের বিকাশের পক্ষেও মোটেই অনুকূল নয়। তাই বর্তমান প্রজন্মের শিশুদের চাই প্রকৃতি পাঠ। প্রকৃতির সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদান। যেখানে অপু-দুর্গার মতো তারা শিখবে গাছ-পাখি-ফুল, করবে অরণ্য আলাপচারিতা, গো-রাখালের ছন্দ-জীবন, নীরব-শান্ত বৃক্ষ কলতান। মধুর হয়ে উঠবে ওদের নিষ্পাপ জীবন, মনের বিকাশ ঘটবে দ্রুত। এত কোলাহলের মাঝে না হয় একটু ছন্দপতন হল। অন্য রকম হাওয়া লাগুক না, ক্ষতি কী!
সব্যসাচী পড়ুয়া কলকাতা-৭৫
দখলদারের রাজ্য
‘মেট্রো নয়, ভাগ্যে বনগাঁ লোকালই’ (১৬-৪) শীর্ষক চিঠির প্রেক্ষিতে বলি, দখলদারদের জন্য কেবল মেট্রো রেলের এয়ারপোর্ট-বারাসাত অংশের সম্প্রসারণেই নয়, এ রাজ্যে উন্নয়নের হরেক প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়ছে। রেলের বিভিন্ন শাখার দখলদারদের জন্য কত প্রকল্প কী ভাবে মার খাচ্ছে, তা নিয়ে নানা সময় রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে বা হচ্ছে। বহু বছর ধরে নানা পর্যায়ে আলোচনার পর ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণেও বাধা হয়ে উঠছে দখলদাররা। এই সম্প্রসারণ না হলে কী রকম সমস্যা হচ্ছে, ভুক্তভোগীরা হাড়ে হাড়ে জানেন। ভাবাদিঘির রেল সম্প্রসারণ ও ভাঙড়ের তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের জমি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কঠোর মনোভাব নিচ্ছেন। তিনিই এক সময় আবার দলবল নিয়ে আটকে দিয়েছিলেন অপারেশন সানশাইন, রেল লাইনের পাশ থেকে দখলদারদের উচ্ছেদের মতো নানা সরকারি পরিকল্পনা। খতিয়ে দেখুন, প্রতিটি ক্ষেত্রে জমির বৈধ মালিকের চেয়ে দখলদারদের সংখ্যা অন্তত দশ গুণ বেশি।
ক্ষতি হচ্ছে কোটি কোটি টাকার। বাড়ছে লোকের ভোগান্তি। করদাতারা বা পড়াশোনা করে ভাল কাজ পেয়ে যাঁরা উন্নত মানের জীবন চান, কেন এবং কী ভাবে তাঁরা এগুলো মেনে নেবেন? দখলদারে ভরে যাচ্ছে রাজ্য। ওদের নিয়ে রাজনীতির দাদা-দিদিরা যদি ভোট বাক্স ভরাতে চান, অনুন্নয়নের আদর্শ নজির হয়ে উঠবে এই রাজ্য।
অশোক সেনগুপ্ত কলকাতা-৭৫
নাম মাহাত্ম্য
কর্মসূত্রে পুরুলিয়ায় থাকার কারণে মাঝেমধ্যে বিভিন্ন ধরনের নামের সঙ্গে আমারও পরিচয় হয় (‘নামের বিচিত্র খেলায় মশগুল রাজস্থানের গ্রাম’, ১৭-৪)। এই জেলায় বাস করেন এমন বহু স্থানীয় মানুষের নাম ভোটার তালিকায় দেখতে পাওয়া যায় বা বিভিন্ন দাবি নিয়ে তাঁরা আমাদের কাছে আবেদন করে নীচে নাম সই করেন। তার মধ্যেই খুঁজে পাই হরেক নামের মেলা— মন্ত্রী, কংগ্রেস, বিডিও, বালিকা, এপ্রিল, জানুয়ারি, নদিয়ার চাঁদ, অতিকায়, রাবণ, বিজেপি, নেতাজি, ভোটার ইত্যাদি। এ ছাড়া আছে মশলার নাম— জিরা, ধনিয়া, তেজপাতা, এলাচি, আবার তাপমাত্রার নামও শোনা যায়, ঠান্ডা, গর্মি— এই সব। দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত শব্দগুলোকে এ অঞ্চলের মানুষ তাঁদের ছেলেমেয়েদের নামকরণের মাধ্যমে ভালবেসে আরও আপন করে নিয়েছেন।
মানসী চক্রবর্তী কলকাতা-১২৪
অব্যবস্থার দমদম
শিয়ালদা-হাওড়ার পর দমদম রেলস্টেশন, লোক চলাচল ও যোগাযোগের জন্য এখন কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের ব্যস্ততম জায়গা। দমদম রেলব্রিজ উত্তর-দক্ষিণে ব্যাপ্ত এবং পূর্ব ও পশ্চিম দুটো সীমারেখায় ভাগ হয়েছে এই অঞ্চল। পূর্ব দিক দক্ষিণ দমদম পুরসভার অধীনে ও পশ্চিম কলকাতা পুরনিগমের স্বায়ত্বশাসনে।
আমরা এই স্টেশন চত্বর দিয়ে প্রতি দিনের যাতায়াতকারী। কী দুর্বিষহ অব্যবস্থা ও অনাচারের মধ্যে দিয়ে এই অঞ্চলে যাতায়াত করতে হয়, কয়েকটা উদাহরণ দিই— প্রথমত, এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম দিয়ে নেমেই দক্ষিণ বরাবর হাঁটলে, রেল পুলিশের নাকের ডগায় রেল বিল্ডিং-এর দেওয়াল সাঁটিয়ে, স্থায়ী পরিকাঠামো বানিয়ে, অবাধে চলছে ভাগ্য বাজানো, মিষ্টি মুখ থেকে তেলেভাজা, পরোটার বাণিজ্য, যার বিস্তার চুপিসাড়ে বেড়েই চলেছে। সাধারণের যাতায়াতের পরিসর দিন কে দিন ছোট এবং মারাত্মক দুর্ঘটনাপ্রবণ হয়ে উঠছে! দ্বিতীয়ত, রেল ব্রিজের নীচে, অসংখ্য ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে থেকে পরিসর সংকুচিত করছে। বাসগুলো আগে ও পরে দু’বার করে, দীর্ঘ সময় স্টপেজ দেয়, পিছনে লম্বা গাড়ির মিছিল জমে যায়, সামনে ‘সবুজ স্বেচ্ছাসেবকরা’ একই জায়গায় গল্পে মশগুল! তৃতীয়ত, এই পরিসরে সব সময় নোংরা জল জমে থাকছে, সাম্প্রতিক বহুমূল্য সংস্কারের পরেও! চতুর্থত, সংস্কারের পরেই, নতুন রেলিংয়ের ধারে ধারে, নতুন নতুন ছোট ছোট টেবিল এসে গেছে, জায়গা দখল কে করে আগে! এবং শেষে, দক্ষিণ দমদম পুরসভা অঞ্চলে, রাজনৈতিক দলের যে কোনও অনুষ্ঠানে (যেখানে সব রকমের জনপ্রতিনিধিরা মাঝে মাঝেই হাজির থাকেন), প্রায় এক মাইলব্যাপী মাইক ও তার উচ্চকিত ব্যবহারে কান ঝালাপালা করা কর্কশ ঘোষণা, ভাষণ ও সংগীত উচ্চারিত বা ধ্বনিত হয়!
উত্তম চৌধুরী কলকাতা-৩০
ঢের কাজ বাকি
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর পুরুলিয়া জেলার প্রত্যন্ত থানা ঝালদা মহকুমা হিসাবে আত্মপ্রকাশ পাওয়ায়, মহকুমাবাসী হিসেবে আনন্দিত (‘নয়া মহকুমা ঝালদা...’, ৭-৪)। তবে মহকুমা হিসাবে ঝালদার পরিকাঠামো একেবারেই নেই। বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে, যা সমাধানের জন্য সরকারকে পদক্ষেপ করতে হবে। যেমন, ঝালদা মহকুমা শহরের বুক চিরে যে তিন কিলোমিটার রাঁচি-পুরুলিয়া সড়কটি রয়েছে, তা একেবারেই সংকীর্ণ। তাই দীর্ঘ দিন ধরে এই রাস্তাটি গাড়ি চলাচল ও সাধারণ নাগরিকদের যাতায়াতের পক্ষে কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবিলম্বে রাস্তাটির দু’পাশে সম্প্রসারণ ও সংস্কার চাই।
শহরের বুকে স্থায়ী কোনও বাসস্ট্যান্ড নেই। ফলে রাস্তার মাঝেই বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রীদের ওঠা-নামা করতে হয়। তাই অবিলম্বে স্থায়ী একটি বাসস্ট্যান্ড দরকার।
ঝালদা মহকুমা শহরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের এলাকাবাসীর স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য আজ অবধি কোনও সুচিকিৎসার স্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। তাই অসহায় সব রোগীদের পার্শ্ববর্তী ঝাড়খণ্ডের বোকারো কিংবা রাঁচিতে চিকিৎসার জন্য যেতে হয়। সেই জন্য অবিলম্বে ঝালদা শহরের বুকে ২৪ ঘণ্টা পরিষেবার মহকুমা সদর হাসপাতাল তৈরি করতে হবে।
ঝালদা মহকুমার গুরুত্বপূর্ণ কুটিরশিল্প, লাক্ষা ও বিড়ি। কিন্তু আর্থিক সহায়তার অভাবে পরিকাঠামো বিপন্ন, হাজার হাজার পরিবার অভাবের তাড়নায় ধুঁকছে। এই দুটি কুটির শিল্পকে গুরুত্ব দিয়ে চাঙ্গা করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে আরও কর্মসংস্থান হতে পারে।
এ ছাড়া ঝালদা শহরে দীর্ঘ দিনের পানীয় জলের সমস্যার সমাধান করতে হবে। অযোধ্যার মতো মুরগুমা ও খয়রাবেড়ার জলাধারের সৌন্দর্যায়নকে কেন্দ্র করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। এবং বিষ্ণুপুর মহকুমার যদুভট্ট মঞ্চের আদলে শহরের বুকে একটি সাংস্কৃতিক মঞ্চ ও কমিউনিটি হল তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
তপনকুমার বিদ বেগুনকোদর, পুরুলিয়া
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in