অভিশাপই অসহায়ের সম্বল
শিয়রে সুদিন! অন্তত স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে। কারণ, পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যভবনও আজকাল স্বাস্থ্য ব্যাপারে অনিয়ম দেখলে ‘বিরক্ত’ হচ্ছে! তাই না দেখে, প্রথমে আমাদের বিস্ময়, তার পর ঘোর কাটিয়ে একটা আশার আলো। ধন্যবাদ সোমা মুখোপাধ্যায়কে যিনি একটি অমানবিক ঘটনায় আলোকপাত (‘মানসিক হাসপাতালে...’, ৯-৫) করতে গিয়ে স্বাস্থ্যভবনের ঘুম ভাঙিয়েছেন, এই ছেলেটিকে জোর করে যে ভাবে কোচবিহারের স্কুল থেকে বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, তা শুনে স্বাস্থ্যভবন প্রচণ্ড বিরক্ত! ‘ভবনে’ বসে বিরক্ত হওয়ার জন্যও সরকার স্বাস্থ্যকর্তাদের মাসে মাসে মাইনে দেয়!
১৮০ কিলোমিটার দূরের এই রানিগঞ্জ শহরে বসে কলকাতার স্বাস্থ্যভবন আমার কাছে ইট-সিমেন্ট-বালির তৈরি একটা ভূতুড়ে ভবন ছাড়া আর কিছুই মনে হয়নি। যেখানে যন্ত্রের মতো কিছু মানুষ যায় আসে আর মাইনে পায়। কী দিনই না গেছে! হাসিটা সুন্দর করতে গিয়ে আমার মুখটাই নষ্ট করে দিল কলকাতার এক ম্যাক্সিলো-ফেশিয়াল সার্জেন। ৯৮ বছরের শয্যাশায়ী জেঠিমাকে তিন দিকে তালা বন্ধ করে সাদা কাগজে ওই ডাক্তারের বিরুদ্ধে অভিযোগ লিখে টানা দেড় বছর কলকাতা-রানিগ়ঞ্জ করেছি। কোনও দিন স্বাস্থ্যভবন, কোনও দিন ডেন্টাল কাউন্সিল আবার কোনও দিন কনজিউমার ফোরাম। কখনও এ হাসপাতাল, কখনও ওই ডেন্টাল কলেজ, কখনও সেই হাসপাতাল। রাতের কোলফিল্ডে রানিগঞ্জ ফিরেছি। আবার পরের দিন কোনও রকমে দুটো খাবার বানিয়ে জেঠিমার মাথার কাছে রেখে আবার দৌড়েছি সরকারি অফিসগুলোতে। ওড়নায় মুখ ঢেকে সে এক প্রাণপণ লড়াই। ফলাফল ইয়া বড় একটা শূন্য, শুধুই মনে হয়েছে কী নির্মম এই সব অফিসগুলো।
একটা সরকার যদি কাজ করব বলে ঝাঁপায় তা হলে তাকে আটকায় কার সাধ্যি? যদি ক্ষমতা দিয়ে এত অপরাধ করা যায়, ভাল কাজও তো করা যায়! সে আন্তরিকতা দেখতে না পাওয়াটা বড় হতাশার। ভোট দেওয়ার পর তা ফিরিয়ে নেওয়ার অধিকার তো জনসাধারণকে সংবিধান দেয়নি। কাজেই শেষ পর্যন্ত অভিশাপকেই হাতিয়ার করে নিতে হয় অসহায় ভাবে।
রানি মজুমদার রানিগঞ্জ
শিক্ষা ও সরকার
মালদহ জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সমালোচনা করেছেন এবং ওই সভা থেকেই তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। (‘বারান্দায় পরীক্ষা কেন...’, ৫-৫)। বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বশাসিত সংস্থা এবং তার স্বাধিকারের প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ। এটা ঠিক, পরীক্ষা নিয়ে যে ছেলেখেলা চলছে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে, তা সমর্থনযোগ্য নয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা পরিচালনায় যদি কোনও ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকে তা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল বা আচার্যের বিচার্য বিষয় হতে পারে, রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক বৈঠকের কর্মসূচির অংশ হতে পারে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি কোনও ভাবে দায়ী থাকেন, তবে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা বিশ্ববিদ্যালয় আইনেই সম্ভব, যে আইন রাজ্য সরকার বিধানসভায় তৈরি করেছে। মুখ্যমন্ত্রী এও বলেছেন, উপাচার্য কেন প্রশাসনিক বৈঠকে নেই। উপাচার্যকে রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক বৈঠকে থাকতে হবে কেন?
অথচ গত ৭ জানুয়ারি নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজ্য সরকার হস্তক্ষেপ করবে না!
তরুণকান্তি নস্কর সভাপতি, অল বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন
রত্নবীজ
শুধু সুগন্ধী নয়, হারিয়ে গেছে বাংলার বিপুল বিচিত্র ধানের সম্ভার ও পরম্পরাগত কৃষি সংস্কৃতির ধারা (‘লক্ষ্মীলাভের আশায়...’, ৮-৫)। ভারতীয় উপমহাদেশে যে ধান চাষ হয় তার আছে অগুন্তি প্রকারভেদ। লম্বা গাছ, খাটো গাছ, শক্ত ডাঁটা, দুর্বল ডাঁটা, রোমশ পাতা, মসৃণ পাতা, সরু ধান, মোটা ধান, লাল, কালো, হলদে, সাদা, সুগন্ধী বা গন্ধহীন চাল— কত জাতের ধান যে এ দেশে পাওয়া যায়! বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়া অগণিত কৃষক ধানের আদিম কোনও জাত থেকে সুদীর্ঘ কালের চেষ্টায় সৃষ্টি করেছেন এই সব ধান, যা এক এক ধরনের জমিতে ফলনের উপযোগী। জোয়ারের নোনা জলে ধোয়া লবণাক্ত জমিতে ফলন দেয় এমন ধানও আছে সুন্দরবন অঞ্চলে, তেমনই হিমাঙ্কের চার ডিগ্রি নীচে, তুষারপাতের মধ্যেও দিব্যি ফলন দেয় এমন ধানও রয়েছে দার্জিলিং জেলায়। আবার খরাপ্রবণ এলাকায়, যেখানে সেচের কোনও সুযোগ নেই, সেখানে ঢালু উঁচু জমিতেও বেশ কয়েক জাতের ধান চাষ হয়। দক্ষিণ বাংলার বারোমেসে জলাজমিগুলোতে কয়েক জাতের ধান ফলে, যেগুলোর শিষ দশ ফুট গভীর জলের উপরিতলের আরও দু’ফুট উপরে আন্দোলিত হয়। এই বাংলার পশ্চিমের জেলাগুলিতে আবার এমন কয়েক জাতের ধান পাওয়া যায়, যারা প্রবল হাওয়াতেও ভূমিস্পর্শ করে না।
আদি কৃষককুল যে ধানের নানান জাত বাছাই করেছিলেন, রসনার তৃপ্তি তার একটি অন্যতম কারণ। সুন্দর সরু চালের জন্য সীতাশাল, রূপশাল, বাঁশকাঠি ধান। সুস্বাদু ভাতের জন্য কয়া, বকুলফুল, মধুমালতী, ঝিঙেশাল। অপরূপ খইয়ের জন্য কনকচূড়, বিন্নি, ভাসামানিক, লক্ষ্মীচূড়া। চমৎকার মুড়ির জন্য রঘুশাল, চন্দ্রকান্ত। পরমান্নের উপযোগী ছোটদানার শ্যামা, তুলসী মঞ্জরী, তুলসী মুকুল। দেবভোগ্য সুরভিত চালের জন্য বাসমতী, গোবিন্দভোগ। এই ধানগুলো বাংলারই এবং তালিকা এখানেই শেষ নয়।
বিগত শতকের ষাটের দশকে ভারতে ঘটে যাওয়া ‘সবুজ বিপ্লব’-এর হাত ধরে আন্তর্জাতিক কৃষি ব্যবসায়ীদের আগ্রাসী বিজ্ঞাপন, প্রযুক্তিনির্ভর কৃষিতে ঢালাও সরকারি অনুদান আর উচ্চ ফলনশীল ‘ম্যাজিক’ বীজের বাজার দখলের ফলে বেশির ভাগ দেশি, পুরনো জাতের ধান হারিয়ে গেছে, আজও যাচ্ছে। ঠিক ভাবে কেউ জানে না ঠিক কতগুলো জাতের সনাতন ধান আজ সারা দেশে চাষ হচ্ছে। তবে আশির দশকেই ভারতের শতকরা আশি ভাগেরও বেশি ধানজমিতে দু’তিনটি উচ্চফলনশীল জাতের ধান চাষ হত। বর্তমানে আরও বেশি জমি এর আওতায় এসে গেছে। উচ্চফলনশীল ‘ম্যাজিক’ বীজ দিয়ে শুরু করে সবুজ বিপ্লবের ঢেউ বিগত ৪৫-৫০ বছরের মধ্যেই হাজার হাজার জাতের ধান একেবারে মুছে দিয়েছে। আজ দেশি ধানের অতুল বৈচিত্রের আর সামান্যই অবশিষ্ট আছে। ওই সকল রত্নবীজ ধানের সংরক্ষণ-সহ যত বেশি চাষিদের কাছে পৌঁছবে তত সমৃদ্ধ হবে বাংলার ধান জমিগুলো। সার্থক হবে কৃষি দফতরের প্রচেষ্টা।
নন্দগোপাল পাত্র সটিলাপুর, পূর্ব মেদিনীপুর
জাতীয় পতাকা
একমাত্র সরকারি অফিসের শীর্ষে ২৪X৭ দিন জাতীয় পতাকা উড্ডীন থাকে। এ ছাড়া আর কোনও প্রাসাদের শীর্ষে ১৫ অগস্ট ও ২৬ জানুয়ারি ছাড়া অন্য দিন জাতীয় পতাকা তোলা যায় না। এটাই নিয়ম বলে জানি। বেসরকারি হোটেল ললিত গ্রেট ইস্টার্ন-এর শীর্ষে সারা বছর দুটি জাতীয় পতাকা উড়তে দেখা যায়। এটা নিয়মবিরুদ্ধ নয়?
স্বপনকুমার গোস্বামী কলকাতা-২৭
ভ্রম সংশোধন
‘অকৃপণ প্রকৃতি’ (পত্রিকা, ১৩-৫) প্রবন্ধে লেখা হয়েছে তিব্বতি ভাষায় ‘লা’ মানে হ্রদ, হবে গিরিবর্ত্ম বা গিরিপথ। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in