চালু হোক খেলাশ্রী
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, সবুজ সাথী ইত্যাদি প্রকল্প খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে ছেলেমেয়েরা উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। এ বার এই প্রকল্পগুলোর মতোই বাংলাতে ‘খেলাশ্রী’ চালু করা দরকার। গ্রামগঞ্জে অনেক ছেলেমেয়ে বিভিন্ন খেলায় খুব ভাল ফল করে, অথচ দারিদ্রের কারণে বেশি দিন খেলা চালাতে পারেন না। আমাদের নামখানায় এমন কিছু ক্রিকেট ও ফুটবল প্লেয়ার দেখেছি, যাঁরা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ভাড়ায় খেলতেন। কয়েক জন ক্রিকেটার ছিলেন, যাঁরা মাঠে নামলেই ছয়ের বন্যা। কয়েক জন ফুটবলারের পায়ের কাজ ছিল দেখার মতো। কিন্তু আজ তাঁরা অভাবের কারণে বিদেশে কর্মরত। মুখ্যমন্ত্রী ‘খেলাশ্রী’ চালু করলে এই রকম অনেক তরুণ প্লেয়ার উঠে আসবেন, যাঁরা ভবিষ্যতে রাজ্যের নাম উজ্জ্বল করতে পারেন।
শিবপ্রসাদ জানা নামখানা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
কিছু বক্তব্য
আমার লেখার (‘কৃষির সমস্যা...’, ২১-৭ ও ‘কৃষির জন্য...’ ২২-৭) পরিপ্রেক্ষিতে তুষার ভট্টাচার্যর (‘কৃষি-বিজ্ঞান’, সম্পাদক সমীপেষু, ৬-৮) চিঠি প্রসঙ্গে কিছু বলতে চাই।
প্রথমত, প্রবন্ধে আমি কিন্তু এই সার্বিক সমস্যার মূল বা একদম গোড়ার কথা দিয়ে আলোচনা শুরু করেছিলাম, যার প্রেক্ষিত ছিল অনেক বড় ও গভীর। এ আমার তিন দশকে বিভিন্ন সংস্থায় ও স্থানে কাজ করার উপলব্ধি। তাই একটা কথা আমার কাছে খুব পরিষ্কার, কৃষি নিয়ে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকীর্ণতা থেকে বেরতে হবে। নয়তো সমস্যাগুলো থেকেই যাবে।
১) খণ্ডজমির মালিকানা— এ রাজ্যে এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া মুশকিল, মিলেমিশে কিছু করাও অবাস্তব। তাই ছোট জমিকে প্রযুক্তিগত ও লাভজনক করতে কী ভাবে ব্যবহার করা যায়, তার বাস্তবসম্মত চেষ্টা করতে হবে। গ্রিনহাউস চাষ, উল্লম্ব-চাষ, দামি রফতানি যোগ্য ফসলের চাষ ইত্যাদি প্রযুক্তি প্রয়োগ করে এক বিঘে জমিতে পাঁচ বিঘের সমান উৎপাদন ও আয় সম্ভব। তবে তা জানতে ও শিখতে হবে।
২) বীজ ও জাত— আবারও বলি, চাষির বীজ ও জাত সম্বন্ধীয় এই সমস্যা ও নির্ভরতার মূল কারণ দেশের কৃষিবিজ্ঞান এবং গবেষণার চূড়ান্ত অক্ষমতা ও অপদার্থতা। এটা ঘটনা যে, আগে বেশির ভাগ উন্নত সবজির বীজ আসত জাপান, আমেরিকা, হল্যান্ড থেকে। কিন্তু এখন আসে চিন থেকে। আর নতুন জাতের ফল, ফুল, সাজানোর গাছ, ইত্যাদি বেশির ভাগই ‘তাইল্যান্ড’ থেকে। আমরা তা হলে কী করছি?
৩) পাট— যখন পাটে লাভ ছিল, তখন ব্যবসাদার ও মিল-মালিকরা চাষিদের ঠকাত। আর এখন, এই প্লাস্টিক বর্জনের যুগে পাট চাষ বন্ধের কথা কেন উঠছে? কেন সারা পৃথিবী আমাদের পাট চাষিদের উপর নির্ভর করবে না? যদি হত, তা হলে পাট চাষিরা অর্থনৈতিক ভাবে কতটা এগোত? এটা বুঝতে না পারা বা চাওয়াই হল আসল সমস্যা।
৪) শুষ্ক ও পাথুরে অঞ্চল— ‘ভালপাহাড়’-এর উদাহরণ এখন মুখে মুখে, কমলবাবু সত্যিই দারুণ কাজ করেছেন। আশা করি, এই কাজের পিছনে যে প্রযুক্তি আছে, তা ক্রমশ ছড়াবে। আমি নিজে বাঁকুড়ার শুষ্ক ও পাথুরেতম অঞ্চলে (সি সি এফ আর, কাঁকি, আররা) বিগত পাঁচ বছর ধরে বারো বিঘে জমিতে এর প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছি। তাই জানি এটা দেখতে সোজা, কিন্তু দাঁড় করানো কত কঠিন। যদি এটাকে সাধারণ-গ্রাহ্য করে ছড়ানো যায়, তা হলে মাত্র পাঁচ বছরে ওই অঞ্চলের ভোল পালটে যাবে, যা শত চেষ্টা করে কোটি কোটি টাকা খরচেও বিগত দিনে সম্ভব হয়নি। এর কারণ খোঁজার চেষ্টা করলে অনেক কিছু জানা যাবে।
৫) সমবায়— এ দেশে সমবায় হল ‘সোনার পাথরবাটি’। চাকুরিসূত্রে গ্রাম, তালুক, রাজ্য, এবং জাতীয় সব স্তরের প্রায় সব ধরনের সমবায়ের সঙ্গে সরাসরি বা পরোক্ষ ভাবে কাজ করার অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে খুব দুঃখের সঙ্গে উপরের কথাটা বললাম। অতএব এ নিয়ে স্বপ্ন দেখার কোনও মানেই হয় না, যদি না আমরা সবাই পালটে যাই। সুযোগ পেলে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে। শুধু এটুকু বলতে পারি, সরকার, বাবু ও সাধারণ মানুষ— কারওরই মিলেমিশে কাজ করার মানসিকতা নেই। সেই কারণেই আজকের এই ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার বর্তমান সমবায়-ধারণাকে প্রাসঙ্গিক করে তুলতে এর মধ্যে কিছু নতুনত্ব আনতেই হবে।
সবশেষে বলি, এত সমস্যার সমাধান সম্ভব, যদি ধারণা স্পষ্ট হয়, হাতে যদি ঠিক প্রযুক্তি থাকে, আর ইচ্ছে যদি আন্তরিক হয়।
অরূপরতন ঘোষ নদিয়া
রাজনৈতিক ঝুঁকি
খবরে প্রকাশ, বিমুদ্রাকরণের ফলে বিশাল আমানত জমা পড়েছে ব্যাংকে। আর তা থেকে ঋণ দেওয়া বা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলেই সুদের হার কমছে (‘সুদ ছাঁটাইয়ের শিকড়...’, ১-৮)। অন্য দিকে, খেলাপি ঋণ ক্রমশ বেড়ে যাওয়ার ফলেও ঋণদানের ব্যাপারে দ্বিধা বাড়ছে। যেখানে আমানত বেড়েছে ১১ শতাংশ হারে, সেখানে ঋণদান আটকে আছে ৬ শতাংশে। এই বিশাল টাকা বাজারে না খাটিয়ে ব্যাংক লাভ করতে পারে না। অতএব এত জমারাশিতে ৪ শতাংশ হারে সুদ দিতে গিয়ে চিন্তায় পড়েছে ব্যাংক। ঋণগ্রহীতার ব্যর্থতা পোষাতে হবে আমানতকারীকে।
ব্যাংক জাতীয়করণের পর ব্যাংক ফেল হওয়া কমে গিয়েছিল। এই আস্থায় দেশের সাধারণ মানুষের বিপুল জমারাশি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে জমা হয়েছিল এবং তা থেকে জাতীয় আর্থিক পরিকল্পনা এবং পাবলিক, প্রাইভেট, জয়েন্ট সেক্টর-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা বিনিয়োগ, ঋণ ইত্যাদি প্রক্রিয়ায় দেশের সর্বজনীন উন্নয়নের এক পথ দেখা যাচ্ছিল। এই চাহিদা থেকেই জমারাশির সুদের হার অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল। ফলে রাষ্ট্রের সমাজকল্যাণকর কিছু ভূমিকা ফলপ্রসূ হয়েছিল। আজ ব্যাংক সেই চেনা পথ থেকে সরে নতুন পথে হাঁটছে। সাধারণ মানুষের কাছে এই পথ অচেনা। হয়তো তাঁরা বাধ্য হচ্ছেন নতুন পথে হাঁটতে। কিন্তু এক সাময়িক অস্থিরতায় পড়ে তাঁদের মনে আর্থিক সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেক প্রশ্ন, দ্বিধা, দ্বন্দ্ব তৈরি হয়ে গেছে।
এটা ঠিক, শুধু সুদের আশায় গরিব-মধ্যবিত্ত মানুষ এই সরকারি ব্যাংকে টাকা রাখেন না। নিরাপত্তা, সহজে লেনদেন আর সহজে প্রাপ্তি— মূলত এই তিন সুবিধার জন্য রাখেন। কিন্তু এখন আর তার জো নেই। সুদের হার যে ভাবে কমতে চলেছে, তাতে আসল টাকার ক্ষয় আরও বেশি হবে। ক্ষয় থেকে বাঁচতে শেয়ার, ঋণপত্র, মিউচুয়াল ফান্ড ইত্যাদিতে জমারাশি বিনিয়োগ করতে হবে। সে ক্ষেত্রেও উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সেই জমারাশি সুফল দিতে পারবে কি না, তা নিয়ে ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। সে জন্য দরকার বর্তমান অর্থনীতিতে ঝুঁকি বোঝার জন্য ‘ফিনানশিয়াল লিটারেসি’।
এই ফাঁকে ব্যাংকের কাঠামো আর চরিত্রটাই আমূল পরিবর্তিত হতে শুরু করেছে। আগামী দিনে ইট-কাঠ-পাথরে গড়া ব্যাংক ক্রমশ কমবে। বদলে ইন্টারনেট-কার্ড-মোবাইলের জগতে অভ্যস্ত হতে হবে, যার নিদান হেঁকেছে ডিজিটাল ইকনমি। ইতিহাসের শিক্ষা, নতুন ভাবনায় সবাই উপকৃত হয় না। কঠিন রোগে অ্যান্টিবায়োটিক দরকার। রোগ সারলে প্রশ্ন করি, এর কি দরকার ছিল? সংস্কার এক রাজনৈতিক ঝুঁকি। তার দায় সকলের।
আর শুভ্রাংশু ফটকগোড়া, চন্দননগর
ভ্রম সংশোধন
‘অন্ধকার ঘুচল কোথায়?’ (১৭-৮) শীর্ষক প্রবন্ধে লেখা হয়েছে ‘মাসখানেক আগেই তো ঘুরে এসেছেন নোয়াখালিতে’। এটি হবে ‘মাসকয়েক আগে...’। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী। প্রসঙ্গত, মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী নোয়াখালিতে এসেছিলেন ১৯৪৬ সালের নভেম্বর মাসে।
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়