রোজ কেন মহালয়া
• মনে পড়ে, মহালয়ার পুণ্যপ্রভাতে আকাশবাণীর প্রভাতি অনুষ্ঠান মহিষাসুরমর্দিনী শোনার জন্য বছরভর অপেক্ষায় থাকতাম। অথচ বেশ কিছু দিন ধরে লক্ষ করছি শহরের পথে-ঘাটে, দিন-রাত, যখন-তখন স্রেফ বিজ্ঞাপনের জন্য আকাশবাণীর মহিষাসুরমর্দিনীর রেকর্ড বেজে চলেছে। বাংলা ও বাঙালির ভাললাগা, ভালবাসার তোয়াক্কা না করে টোটো গাড়িতে বিজ্ঞাপনের ফ্লেক্স জড়িয়ে সদা-সর্বদা তারস্বরে আলোর বেণু বাজানো ও স্তোত্রপাঠ চলছে তো চলছেই। গাড়ি-ঘোড়ার ভিড়ে, হর্নের আওয়াজের মাঝে, এটা যেমন শ্রুতিকটূ, তেমনই অতি দোষে দুষ্ট।
কিন্তু কেন আজ এই উপদ্রব? কোনও এক অজ্ঞাত কারণে বিগত আশির দশকে আকাশবাণীর মহানির্দেশক মহিষাসুরমর্দিনী অনুষ্ঠানের রেকর্ড বা সিডি-র স্বত্ব গ্রামোফোন কোম্পানি অব ইন্ডিয়াকে মাত্র এক টাকার বিনিময়ে দান করেন। আর আজ গ্রামোফোন কোম্পানির হাত ঘুরে সেই স্বত্ব আরপিজি পেরিয়ে রেকর্ড, সিডি, চিপস বা পেন ড্রাইভের মাধ্যমে জনগণের মুঠিফোনেও চলে এসেছে। এখন প্রশ্ন হল, কেন একটি মহার্ঘ অনুষ্ঠানের কপিরাইট একটি নামমাত্র ব্যক্তিগত পত্রের মাধ্যমে মাত্র এক টাকার বিনিময়ে এমন ভাবে হস্তান্তরিত হল? এক দক্ষ প্রশাসক হিসাবে কলকাতা বেতারের সর্বময় এই প্রাক্তন কর্তা মহিষাসুরমর্দিনীর আবেগ বা গুরুত্ব সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল ছিলেন বলেই সকলে মনে করেন। তাও কেন বাঙালির একান্ত আপন জিনিস আজ এমন ভাবে হাটে-মাঠে-বাণিজ্যে নামবে?
তাই কোহিনুর ফেরত চাওয়ার মতো করেই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই, আকাশবাণীর মহিষাসুরমর্দিনীর কপিরাইট আগের মতো সর্বাংশে ফিরিয়ে নেওয়ার আইনি বন্দোবস্ত পাকা করা হোক এবং শহরের অলিগলিতে সারা বছর ধরে এই অনুষ্ঠানটির মর্যাদাহানি বন্ধ করা হোক।
সঞ্জীব রাহা
পাডিয়া মার্কেট, হাই স্ট্রিট, কৃষ্ণনগর
ঘুমিয়ে বাংলা
• এই বছর নিট (NEET)-এর নির্দেশে অল ইন্ডিয়া মেডিক্যাল জয়েন্ট পরীক্ষায় সারা দেশে অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তার ফলে হিন্দি ও ইংরেজি ছাড়া অন্য ভারতীয় ভাষায় যারা পরীক্ষা দিয়েছে, তাদের সর্বনাশ হয়েছে। সিবিএসই-র দ্বারা আয়োজিত পরীক্ষায় ভাষা আলাদা হলেও প্রশ্নপত্র কী ভাবে আলাদা হয়? আর এই অপদার্থতার কারণে তামিলনাড়ুর এক জন মেধাবী দরিদ্র ছাত্রী যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি এবং সে আত্মহত্যা করেছে। সিবিএসই-র এই তুঘলকি নিয়মের ফলে এই রাজ্যেও অনেক ছাত্রছাত্রীর কপাল পুড়েছে। খবরে প্রকাশ, গত বছর পর্যন্ত এই রাজ্যে মেডিক্যাল কলেজগুলোতে যেখানে বাংলা মাধ্যমের সিংহভাগ (প্রায় ৭০%) যোগ্য হয়েছিল, এই বছরে সেই সংখ্যাটা ১৭%-র কাছাকাছি। অথচ এই নিয়ে কারও কোনও প্রতিবাদ শোনা গেল না। এ দিকে তামিলনাড়ু এর প্রতিবাদে উত্তাল। অথচ বাংলা শুধুই ঘুমায়ে রবে। এর কারণ কি, এ রাজ্যের মন্ত্রী, প্রশাসনিক দফতরের বড়, মেজ, ছোট কর্তা, কর্মচারী এবং সর্বোপরি, শুধুমাত্র ‘২১ শে ফেব্রুয়ারি’-তে বাংলা ভাষার জন্য কুম্ভীরাশ্রু ঝরানো ‘বাংলা প্রেমী’দের পুত্র-কন্যা, নাতি-নাতনিরা সবাই ইংরাজি মাধ্যমে পড়ে বলে?
গৌরী পাল
কলকাতা-৯৬
গোপাল সেন
• ইতিহাসবিদ গৌতম ভদ্র যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য গোপালচন্দ্র সেন সম্পর্কে একটি তথ্যবহুল ও মনোজ্ঞ প্রবন্ধ লিখেছেন (‘শিক্ষার স্বাধিকার বজায় রেখেই...’, রবিবাসরীয়, ১৩-৮)। দু’-একটি তারিখের ছোটখাটো প্রমাদ সংশোধন আর গোপালচন্দ্র সেনের হত্যার পরে সেই সম্বন্ধে মেধাজীবী ও শিক্ষাবিদদের অব্যবহিত প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য পত্রটির অবতারণা। ৩১ জুলাই ১৯৭০ উপাচার্য হেমচন্দ্র গুহ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১ অগস্ট থেকে ৬ অগস্ট অধ্যাপক প্রতুলচন্দ্র গুপ্ত ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ছিলেন। ৭ অগস্ট গোপালচন্দ্র সেন অস্থায়ী ভাবে উপাচার্যের কার্যভার গ্রহণ করেন। বেলেঘাটা সিআইটি আবাসন থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে অশোক বসু-সহ চার জন যুবককে পুলিশ ১৯ নভেম্বর ভোরে হত্যা করে। ২০ নভেম্বরের সংবাদপত্রে খবরটি বেরোয় এবং তার পরের দিন গোপালচন্দ্র সেনের ধিক্কার বিবৃতি প্রকাশিত হয়।
তৎকালীন রেজিস্ট্রার প্রবীরচন্দ্র বসুমল্লিক-সহ অনেকেরই স্মৃতিলেখে বলা হয়েছে যে, ১৯৭০ সালের ৩০ ডিসেম্বর গোপালচন্দ্র সেনের কাজের মেয়াদের শেষ দিন ছিল। অথচ সমসাময়িক সংবাদপত্রে (৩১ ডিসেম্বর, ১৯৭০-এর অমৃতবাজার পত্রিকা) উল্লেখিত যে, নিহত উপাচার্যের কার্যকালের মেয়াদ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১-এ শেষ হওয়ার কথা। কোনও কারণে কি গোপাল সেন কার্যভার থেকে আগেই ইস্তফা দিতে চেয়েছিলেন? কারও কারও স্মৃতিলেখে তাঁর সুপ্ত ‘অভিমান’-এর কথা উল্লেখিত আছে। ১ জানুয়ারি অমৃতবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনেও এর হদিশ পাওয়া যায়।
ষাটের দশকের অন্তে এবং সত্তরের গোড়ায়, কংগ্রেসের তৎকালীন রাজনীতির সঙ্গে গাঁধীবাদও নকশালপন্থীদের একাংশের আক্রমণের নিশানা হয়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ এপ্রিল, ১৯৭০-এর গাঁধী স্টাডি সেন্টার ভাঙচুর এবং বই পোড়ানোর ঘটনা এই মনোভাবেরই প্রকাশ। গোপালচন্দ্র সেনের মতো এক জন গাঁধীবাদী উপাচার্যের হত্যা এই সমীকরণের সঙ্গে কতটা সম্পর্কিত, তা অন্য প্রসঙ্গ। তবে এর প্রতিক্রিয়াস্বরূপ সমকালীন নাগরিক সমাজ হিংসার রাজনীতিকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করতে অনুপ্রাণিত হয়।
কেওড়াতলা শ্মশানে গোপালচন্দ্র সেনের অন্ত্যেষ্টির মঞ্চ থেকে এক সর্বসম্মত বিবৃতিতে পশ্চিমবঙ্গের লেখক এবং সাহিত্যিক সমাজ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে। • জানুয়ারি অমৃতবাজার পত্রিকায় তাঁরা আবেদন করেন গোপাল সেনকে রাজনৈতিক রেষারেষির শিকার হিসেবে না গণ্য করে, সামাজিক হিংসার শিকার হিসেবে গণ্য করতে। আহ্বান করেন দল ও মত নির্বিশেষে হিংসার রাজনীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, মৈত্রেয়ী দেবী ও আশাপূর্ণা দেবীর মতো একাধিক সাহিত্যিক এই বিবৃতিতে গোপাল সেনের হত্যাকে কাপুরুষোচিত আখ্যা দিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে সমকালীন প্রজন্মের যুবক-যুবতীরা কোনও এক ভ্রান্ত মতাদর্শের বশবর্তী হয়ে ভালবাসা, মমতা এবং সমবেদনার মতো কিছু মৌলিক মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলছে।
প্রতিক্রিয়া আসে অন্যান্য মহল থেকেও। ৯ জানুয়ারি, ১৯৭১-এ সাপ্তাহিক বামপন্থী ইংরেজি পত্রিকা ফ্রন্টিয়ার-এর মন্তব্য বিভাগে এক জন পাঠক গোপালচন্দ্র সেন হত্যার ঘটনার রেশ টেনে লেখেন, তাঁর পরিচিত এক জন অর্থনীতির অধ্যাপক ইতিমধ্যে তিন বার হুমকি-চিঠি পেয়েছেন। সংশ্লিষ্ট অধ্যাপক আদর্শগত ভাবে বামপন্থী হলেও নকশালপন্থী রাজনীতির সমর্থক নন। ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এহেন হুমকি তিনি হেসে উড়িয়ে দিতেন। কিন্তু এখন আর সে সাহস পান না। তিনি লেখেন সিপিআই (এমএল)-এর প্রচারমাধ্যমের লেখালিখির মধ্যে দিয়ে এমন এক পরিমণ্ডল সৃষ্টি হয়েছিল, যেখানে বাক্ স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে যে কেউ ন্যূনতম মতান্তরের ফলে যাকে-তাকে যে কোনও ভাষায় আক্রমণ শানাতে পারত। এই পরিস্থিতি বৃহত্তর আকার নেয়। ফলে, সিপিআই (এমএল)-এর বামপন্থী রাজনীতির উপর ক্রমশ লোকের বিতৃষ্ণা বেড়েই চলে।
সুদীপ্ত মিত্র
গবেষক, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়
বাইরে মেশিন
• জলপাইগুড়ি স্টেট ব্যাংক, টাউন ব্রাঞ্চের পাসবুক আপডেট-এর মেশিন ব্যাংকের বাইরে থাকায় রোদ-বৃষ্টিতে আমাদের, বিশেষ করে বয়স্ক লোকদের খুব কষ্ট হয়। ব্যাংকের সুবিধা হয়েছে, ভিতরে ভিড় হচ্ছে না। কী করা যায়, কর্তৃপক্ষকে ভেবে দেখতে অনুরোধ করছি।
ত্রিদিব মজুমদার
ই-মেল মারফত
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়