সরকার ৩১ আমরা ৭৩!
• যেখানে প্রতি লিটার পেট্রোল আমদািনতে খরচ মাত্র ৩১ টাকা, সেখানে সাধারণ মানুষকে দ্বিগুণেরও বেশি টাকা দিয়ে (কলকাতায় ৭৩.১২ টাকা প্রতি লিটার) এক লিটার পেট্রোল কিনতে হচ্ছে। অথচ ২০১৫-’১৬ বর্ষে শিল্পপতিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করে ছাড় দেওয়া হয়েছে ৬ লক্ষ ১১ হাজার ১২৮ কোটি টাকা! জনগণের বেলায় ভরতুকি কমছে আর শিল্পপতিদের বাড়ছে। স্বাধীনতার পর থেকে এই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে। আমরা হাঁ করে তাকিয়ে আছি সরকারের দিকে।
কিংকর অধিকারী
বালিচক, পশ্চিম মেদিনীপুর
তোষণ নয়?
• মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘কাউকে তোষণ করি না’, (৭-৯)। বেশি দিন আগের ঘটনা নয়, কলকাতার টিপু সুলতান মসজিদের তৎকালীন ইমাম বরকতি সাহেব কেন্দ্রীয় সরকারের আদেশ উপেক্ষা করে তাঁর গাড়িতে লালবাতি লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে বরকতি বলেন, তিনি কেন্দ্রের এই আইন মানেন না। ব্রিটিশ আমল থেকে তিনি গাড়িতে লাল আলো লাগাচ্ছেন এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেটা জানেন। মুখ্যমন্ত্রী না বললে তিনি খুলবেন না। যদিও কিছু দিন পর বরকতি সাহেব তাঁর গাড়ি থেকে লালবাতি খুলতে বাধ্য হন, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি। প্রশ্ন উঠতেই পারে, এই নীরবতাই কি ইমাম বরকত সাহেবকে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে ইসলামের শত্রু আখ্যা দিয়ে তাঁর দাড়ি ও মুখে কালি মাখাবার নির্দেশ জারি করার অনুপ্রেরণা দিয়েছিল?
এ রাজ্যের মালদহ, বর্ধমান, ধুলাগড়, বসিরহাটে যে সাম্প্রদায়িক ঘটনার বিস্ফোরণ ঘটেছিল, তাতে কি রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকা খুব স্বচ্ছ বা সক্রিয় ছিল? এই সব ঘটনার যথাযথ তদন্ত হল না কেন? কেনই বা বিরোধী দলের প্রতিনিধিদের ঘটনাস্থলে যেতে দেওয়া হল না? সম্প্রতি তিন তালাক-সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী যে ভাবে জনসভায় সাম্প্রদায়িক কথাবার্তা বলে বেড়াচ্ছেন, সে ব্যাপারেই বা মুখ্যমন্ত্রীর মুখে কুলুপ কেন?
মুখ্যমন্ত্রী প্রায়ই বলেন, পশ্চিমবঙ্গ গুজরাত নয়। এখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিরাজ করে। তা যদি হয়, তা হলে দশমীর সন্ধ্যার পর বিসর্জন বন্ধ রাখার আদেশ জারি কেন? সম্প্রীতি যদি থাকে, তা হলে কেন একই দিনে দুটি সম্প্রদায় তাদের নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারবে না? বাংলাদেশ মুসলিম রাষ্ট্র হয়ে যদি একই দিনে মহরম ও বিজয়া দশমী পালন করতে পারে, তা হলে পশ্চিমবঙ্গ কেন পারে না? কেন একটি সম্প্রদায়ের উৎসব পালনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারির প্রয়োজন হয়? মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ধর্মীয় মিছিলে অস্ত্র ব্যবহার না করার জন্য। খুবই যুক্তিসংগত প্রস্তাব। কিন্তু এই প্রস্তাব কি শুধু বিশেষ কিছু ধর্মীয় মিছিলের ক্ষেত্রে, না কি সমস্ত ধর্মীয় মিছিলের স্বার্থে? যদি স্পষ্ট করে বলতেন, তা হলে মুখ্যমন্ত্রীর ‘তোষণ না করার ভাবমূর্তি’র বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে মানুষের সন্দেহ অনেকটাই দূর হত।
মিহির কানুনগো
কলকাতা-৮১
কাজির বিচার নয়
• তিন তালাক নিয়ে খবরের কাগজ বা টেলিভিশনে বেশির ভাগ আলোচনাই হচ্ছে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে। এমনকী মাননীয় সুপ্রিম কোর্টেও তিন তালাকের শুনানির বেশির ভাগ অংশ জুড়েই ছিল সেই ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিকে সামনে আনার চেষ্টা। আমরা কিন্তু বরাবরই বলে আসছি, তিন তালাক, নিকাহ হালালা, বহু বিবাহ, সম্পত্তির উত্তরাধিকার, অভিভাবকত্বের মতো বিষয়গুলিকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে জেন্ডার জাস্টিস-এর দিক থেকে দেখা হোক। কেন না ধর্মীয় ব্যবস্থাপনায় বা ধর্মীয় আইনকানুনের নিজেরই একটি বড় ধরনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সে তাকে যতই উদার ভাবে বা মানবিক ভাবে ব্যাখ্যা করা হোক বা কোডিফাই করা হোক না কেন।
মুসলিম ব্যক্তিগত শরিয়তি আইনের যে ব্যাপারটি সবচেয়ে চিন্তার তা হল, সে বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাক, খোরপোশ, অভিভাবকত্ব, সম্পত্তির উত্তরাধিকারের মতো বিষয়গুলিকে এক দিকে যেমন রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের বাইরে রাখতে চায়, অপর দিকে তেমনই সে ব্যক্তির মৌলিক অধিকারকে অস্বীকার করে তার উপর গোষ্ঠীর বা ধর্মীয় সমাজের অনুশাসন চাপিয়ে দিতে চায়। অর্থাৎ বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাক, খোরপোশ, অভিভাবকত্ব, সম্পত্তির উত্তরাধিকারের মতো বিষয়গুলিতে রাষ্ট্রের সুস্পষ্ট আইন থাক এবং আদালতে তার যথোপযুক্ত বিচার হোক— তা মুসলিম ব্যক্তিগত শরিয়তি আইন অনুমোদন করে না। তাই বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে যেখানে অন্যান্য সকল ধর্মাবলম্বী ভারতীয় নাগরিককে আদালতের শরণাপন্ন হতে হয়, সেখানে মুসলিম হওয়ার সুবাদে কি অনায়াসেই না আদালতকে এড়িয়ে যাওয়া যায়! এ ভাবেই ব্যক্তিগত আইনের সুযোগ নিয়ে আসলে মুসলিম পুরুষ বিচার বিভাগ বহির্ভূত ক্ষমতা হাতে রাখতে চায়। আর কে না জানে, এই ক্ষমতাই মুসলিম নারীকে নিষ্পেষণের কাজে ব্যবহৃত হয়।
তিন তালাক মামলা শুনানির সময় মাননীয় অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতগি তাঁর সওয়ালে বলেছিলেন, আদালত যদি তিন তালাক বাতিল করে দেয়, তবে কেন্দ্র নতুন আইন আনবে। তাই এখন আমাদের সবার নজর কেন্দ্রের দিকে, সংসদের দিকে। আশা রাখব, নতুন যে আইনটি হবে, সেখানে এক জন মুসলিম মহিলা সর্বক্ষেত্রেই যেন মুসলিম পুরুষের সমানাধিকার পান, তা নিশ্চিত হয়। কোনও মতেই ব্যক্তিগত আইনের দোহাই দিয়ে কোনও মুসলিম পুরুষ যেন বিচার বিভাগ বহির্ভূত ক্ষমতার অধিকারী হতে না পারেন, তাও নিশ্চিত করতে হবে। আর তা করতে হবে ভারতীয় সংবিধানের লিঙ্গ বৈষম্যহীন সাম্য নীতিকে ভিত্তি করে। এই একবিংশ শতাব্দীর ভারতীয় মুসলমান কোনও কাজির বিচার চায় না। চায় রাষ্ট্রের সুস্পষ্ট আইন ও মহিলাদের সমানাধিকার।
ওসমান মল্লিক
কলকাতা-২
উল্টোটাও ঘটে
• দোলন গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্যের সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ সহমত পোষণ করি (‘হ্যাঁ, স্বামীরাও ধর্ষণ করে থাকে’, ১৩-৯)। তবে স্ত্রী-রাও যে স্বামী-ধর্ষণ করেন, সেটা বলা হয়নি। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, শ্রান্ত, ক্লান্ত, বিধ্বস্ত, নানা সমস্যায় জর্জরিত, ডেলি প্যাসেঞ্জার স্বামীটি বাড়ি ফিরলে স্ত্রী-রা সহবাসে অপারগ স্বামীদের ওপর যৌন নির্যাতন করেন। অথচ, স্ত্রীর হাতে অত্যাচারের ঘটনা প্রকাশ্যে এলে পুরুষরা কৌতুকের পাত্র হয়ে ওঠেন।
আর একটা কথা, ‘অচেনা লোক নির্যাতন করলে’ আদালত শুধু নির্যাতিতার সাক্ষ্যকে বিশ্বাস করে অভিযুক্তদের বিচার করেন— লেখকের এ ধারণাটা সত্য নয়। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই শাস্তিবিধান হয়। কিন্তু নিজ স্ত্রীকে ধর্ষণের বিচার করার যথাযথ আইনি পদ্ধতি এখনও স্থির হয়নি। সবার ঘরে গোপন ক্যামেরা রাখার অবাস্তব প্রক্রিয়া ছাড়া আর কী উপায়ে অত্যাচারের সত্যতা নিরূপণ করা যায়, তার সন্ধান প্রয়োজন ছিল।
অশোককুমার দাস
কলকাতা-৭৮
উঠুক নিষেধাজ্ঞা
• বড় বাস্কে-র বক্তব্যের বিষয়ে আমি সম্পূর্ণ সহমত (‘নিষেধাজ্ঞা নয়, চাই বিতর্ক’, ৮-৯)। শ্রীহাঁসদার লেখা পুস্তক পড়েই বলছি তিনি এমন কিছু গর্হিত কাজ করেননি। বরং এই মানুষদের সাধারণ সমস্যাগুলিকে আন্তরিক প্রচেষ্টায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। এই প্রচেষ্টা রাষ্ট্র অমানবিক ভাবে বন্ধ করতে পারে না। আমাদের চিন্তার স্বাধীনতা থাকাটা কি অন্যায়? নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া উচিত।
শিবানন্দ পাল
খালবিল মাঠ, বর্ধমান-১
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়