Ajay Basu

সম্পাদক সমীপেষু: অনবদ্য অজয়

সংযমী বাচনভঙ্গি, শব্দচয়ন ও সর্বোপরি, তাঁর জাদুমাখা কণ্ঠস্বরের জন্য প্রথিতযশা খেলোয়াড়দের পাশাপাশি তিনিও আমাদের কিশোর মনের নায়ক।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২০ ০০:৩৯
Share:

জন্মশতবর্ষে তাঁকে স্মরণ করে ‘শতবর্ষে ধারাভাষ্যকার’ (রবিবাসরীয়, ৪-১০) প্রতিবেদনের জন্য ক্রীড়া সাংবাদিক গৌতম ভট্টাচার্যকে ধন্যবাদ। ষাট-সত্তরের দশকে রেডিয়োতে ফুটবল বা ক্রিকেটের ধারাভাষ্য ছিল এক অমোঘ আকর্ষণ। সেখানে অজয় বসুর রাজকীয় ও অনন্য উপস্থিতি। অনন্য এ কারণে নয় যে, তিনি বাংলা ধারাভাষ্যের অন্যতম পথিকৃৎ। সংযমী বাচনভঙ্গি, শব্দচয়ন ও সর্বোপরি, তাঁর জাদুমাখা কণ্ঠস্বরের জন্য প্রথিতযশা খেলোয়াড়দের পাশাপাশি তিনিও আমাদের কিশোর মনের নায়ক। সেই নায়কের সান্নিধ্য পাওয়া এক দুর্লভ সংযোগ।

Advertisement

আশির দশকের গোড়ার দিকে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগে অধ্যাপনায় যোগ দিলেন। আমাদের ব্যাচকে দিয়েই তাঁর অধ্যাপনা শুরু। প্রথম যে দিন এলেন, অপলক নয়নে তাঁকে দেখলাম। সর্বাঙ্গে বাঙালিয়ানার ছাপ, ব্যক্তিত্বে চুম্বকের আকর্ষণশক্তি। খেলাধুলোর প্রতি আমার অনুরাগ ধরা পড়ল তাঁর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে। কলকাতায় সে বছর প্রথম নেহরু গোল্ড কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট। ভিন্‌দেশি ফুটবলের উৎকর্ষে বিভোর কলকাতাবাসী। এক দিন ক্লাসের পরে আমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, খেলা দেখতে যাব কি না। ট্যাক্সিতে যেতে যেতে কলকাতা ফুটবলের অতীত নিয়ে তাঁর কাছে কিছু গল্প শুনলাম। দৈনন্দিন জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতে আজ তিনি বিস্মৃতপ্রায়। বয়সের ব্যবধান ঘুচিয়ে তিনি যে ভাবে আপন করে নিয়েছিলেন, তা কি ভোলা সম্ভব? বিভিন্ন রচনা সংবলিত তাঁর একটি বই, ফিরে ফিরে চাই। জন্মশতবর্ষে তাঁর স্মৃতিতে মাল্য অর্পণ করে ফিরে ফিরে চাই স্নিগ্ধ ব্যক্তিত্বের মানুষটির দিকে।

সুমন মিত্র

Advertisement

কলকাতা-১০২

কথায় ছবি

‘শতবর্ষে ধারাভাষ্যকার’ পড়ে নস্টালজিয়ায় আচ্ছন্ন হলাম। যখন টিভি ছিল না, তখন অজয় বসুর এক-একটি বাক্য এক-একটি ছবি তুলে ধরত দর্শকের চোখে। তিনি বলতেন, ‘‘ব্যাটসম্যান সপাটে ব্যাট চালিয়েছেন, লাল বল সবুজ ঘাসের উপর মাটি কামড়ে চলে যাচ্ছে সীমানার ও পারে।’’ আমরা কল্পনায় দেখতে পেতাম বল চলে গিয়েছে বাউন্ডারির ও পারে। অথবা, ‘‘নৃত্যেরই তালে তালে বল করতে আসছেন রে লিন্ডওয়াল।’’ আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠত রে লিন্ডওয়ালের বোলিং অ্যাকশন।

ফুটবল খেলা হলে উত্তেজনা আরও বাড়ত। অজয় বসু স্থানীয় ভাষা প্রয়োগ করতেন বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে। ‘‘স্টপারের পায়ে বল, স্টপার বুঝতে পারছেন না কাকে বল দেবেন। বলটা তিনি গ্যারাজ করে দিলেন।’’ অর্থাৎ, বলটা গেল গোলকিপারের কাছে। চমৎকার ভাষা, চমৎকার প্রয়োগ।

দূরদর্শন আসতেই সব কথা বলা বন্ধ হয়ে গেল। আমরা শুধু দেখতেই থাকলাম। ভাষার দিন শেষ হল।

সঞ্জয় চৌধুরী

খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

সেই স্বর্ণযুগ

১৯৫৭ সালে রেডিয়োতে ধারাবিবরণী প্রথম যাঁকে দিয়ে শুরু হয়েছিল, যাঁর সুললিত কণ্ঠস্বর শ্রোতাদের হৃদয় জয় করেছিল, তিনি ভাষ্যকার অজয় বসু। যদিও তাঁর পূর্বে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, রাজেন সেন প্রমুখ বেতারে বাংলায় ধারাবিবরণী দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাঁরা সেই জগতে ক্ষণিকের অতিথি।

অজয় বসু যদিও তৎকালীন যুগান্তর পত্রিকার ক্রীড়া সাংবাদিক ছিলেন, তবু খেলা সম্বন্ধে অগাধ জ্ঞান এবং কণ্ঠস্বরের জন্য তিনি ছিলেন দেশের অন্যতম সেরা ধারাভাষ্যকার। ফুটবল, ক্রিকেট থেকে শুরু করে ভলিবল, বেসবল-সহ বহু খেলার ধারাবিবরণীতে তিনি ছিলেন দক্ষ। যে কোনও খেলা শুরুর দশ মিনিট আগে মাঠের পরিবেশ ও খেলোয়াড়দের আচার-আচরণের বিবরণ তাঁর ভরাট, গম্ভীর কণ্ঠে শোনার জন্য রেডিয়ো কানের কাছে নিয়ে বসে থাকতাম। সেই জন্যই তিনি ছিলেন বাঙালি ক্রীড়াপ্রেমীদের কাছে ধারাবিবরণীর স্বর্ণযুগের একমাত্র অধীশ্বর।

তপনকুমার বিদ

বেগুনকোদর, পুরুলিয়া

মুজিবের সফরেও

কলকাতার ইডেন উদ্যানকে দু’ভাবে দেখেছিলাম। এক, মাঠে উপস্থিত থেকে, ১৯৭৮ সালে ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের টেস্ট ম্যাচ দেখে। আর তারও আগে প্রয়াত অজয় বসুর ধারাবিবরণী থেকে— ‘‘নমস্কার, ক্রিকেটের নন্দনকানন ইডেন থেকে অজয় বসু বলছি। আজ ভারত বনাম...।’’ চাক্ষুষ দেখা ইডেনের থেকে অজয় বসুর বর্ণনায় দেখা ইডেনকে বেশি ভাল লেগেছিল। মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের ফুটবল ম্যাচের ধারাবিবরণী শুনতে শুনতে মনে হত, কমল ভট্টাচার্য মোহনবাগান সমর্থক আর অজয় বসু ইস্টবেঙ্গল। গৌতম ভট্টাচার্যের লেখায় না পড়লে বিশ্বাস হত না, উনি মোহনবাগান সমর্থক ছিলেন। এতটাই নিরপেক্ষ ও সাবলীল ছিল তাঁর ধারাবিবরণী।

লেখক একটা ঘটনা উল্লেখ করতে হয়তো ভুলে গিয়েছেন। সেটা ৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২। বাংলাদেশ তখন সদ্য স্বাধীন হয়েছে, শেখ মুজিবুর রহমান কলকাতায় ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর সঙ্গে সভা করতে। এ বাংলার বাঙালিদের মধ্যে অদ্ভুত এক আবেগ তৈরি হয়েছিল মুজিবকে দেখার, বা তিনি কী বলেন, তা শোনার জন্য। কিন্তু সবার পক্ষে মাঠে উপস্থিত হওয়া সম্ভব ছিল না। সুতরাং, মুজিব দমদম বিমানবন্দরে নামা থেকে সভার শেষ পর্যন্ত ধারাবিবরণীর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। অন্যতম ভাষ্যকার হিসেবে সেখানে উপস্থিত ছিলেন অজয় বসু, যদিও তিনি রাজনীতির জগতের লোক ছিলেন না। তাঁর সাবলীল এবং পরিমার্জিত ভাষণক্ষমতা তাঁকে সে দিন অপরিহার্য করে তুলেছিল।

শরদিন্দু ঘোষ চৌধুরী

নৈহাটি, উত্তর ২৪ পরগনা

গো-ও-ল!

অজয় বসুর সেই উদাত্ত কণ্ঠস্বর এখনও যেন শিহরন জাগায় প্রতি রোমকূপে! অজয়-কমল-পুষ্পেনের কথকতা খেলাধুলোয় আকর্ষণের জাদুদণ্ড ছিল। কী অসাধারণ ভাষাশৈলী এবং নাটকীয় বাচনভঙ্গি!

‘‘ইডেনের সবুজ ঘাসে-মোড়া ময়দানের বুক চিরে বল বাউন্ডারি সীমানার বাইরে, দৃষ্টিনন্দন বাউন্ডারি হাঁকালেন গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ!’’ কিংবা ‘‘হাবিবের থ্রু, শরীরের দোলায় নইমকে টলিয়ে চোখধাঁধানো ব্যাকভলি শ্যামের এবং গো-ও-ল!’’ ভোলা যায় না এমন ধারাভাষ্য! বেতারে একক অভিনয়ের মতো উজ্জ্বল! মাঝে মাঝে অজয়-কমল-পুষ্পেনের মধ্যে একটু মজা, একটু রসালাপ বেশ লাগত! আজকের প্রজন্মের ক’জন অজয় বসুর মতো সাংবাদিক-ধারাভাষ্যকার-সম্পাদকের নাম জানে! প্রতি বছর সেরা ক্রীড়া সাংবাদিক চিহ্নিত করে ‘অজয় বসু স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হোক।

বিশ্বজিৎ কর

কলকাতা-১০৩

মানবিক পুলিশ

করোনা পরিস্থিতিতে রাজ্যের মানুষ পুলিশকর্মীদের নতুন ভাবে দেখেছিলেন। লকডাউনে গরিব মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দেওয়া, অসুস্থ মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি, মৃতদেহ দাহ অথবা দাফন করা থেকে শুরু করে প্রবীণদের কাছে ওষুধ পৌঁছে দেওয়া, এমনকি গান গেয়ে মানুষকে মনোবল জোগানো, সবই করেছে পুলিশ।

কিন্তু ভোট যত এগিয়ে আসছে, পুলিশ ততই যেন শাসকের দলদাসে পরিণত হচ্ছে। ন্যায়-নীতি ভুলে শাসক দলের তোলাবাজদের কথায় চলতে শুরু করেছে। কালের নিয়মে শাসকের পরিবর্তন হবে। কিন্তু সাধারণ মানুষ থাকবে, পুলিশও থাকবে। আমরা সেই মানবিক পুলিশকে দেখতে চাই।

অজয় দাস

উলুবেড়িয়া, হাওড়া

অসহায়

‘জুলুম’ শীর্ষক চিঠির (৪-১০) প্রসঙ্গে জানাই, দু’মাস আগে আমার পুত্রবধূ পুত্রসন্তানের জন্ম দেয়। হিজড়ার দল এসে ১৬০০০ টাকা দাবি করে। সেই সময় আমরা দু’জন বয়স্ক মানুষ বাড়িতে ছিলাম। অন্য দিন আসতে বলায় দরজা প্রায় ভেঙে ফেলার উপক্রম করে। হুমকি দেয়, পরে এলে ২৫০০০ টাকা দিতে হবে। অনেক দরাদরি করে ৬০০০ টাকা দিতে বাধ্য হই।

সোমা দাস

কলকাতা-৫৫

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন