রোহন ইসলামের ‘হিন্দু আধিপত্যের অমর চিত্র কথা’ (রবিবাসরীয়, ১৫-৭) পড়ে মনে হল, লেখকের ঐকান্তিক বাসনা ছিল হিন্দু অধঃপতনের অমর চিত্র কথা লেখা। লেখক লিখছেন অমর চিত্র কথা সূক্ষ্ম রূপে সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদের আবরণে হিন্দু পুনরভ্যুত্থানের বক্তব্যেই অটল থেকেছে এবং সেটি অনন্ত পাই-এর মানসজাত। অতএব, তা ভারতবর্ষের ধর্মনিরপেক্ষতার মহানতম আদর্শের মূলে কুঠারাঘাত করে তাকে ক্রমেই রক্তাক্ত করে চলেছে। শুধুমাত্র হিন্দু চরিত্রের ওপর মনোনিবেশ করেই অমর চিত্র কথা এগিয়েছে এবং তাতে অন্যধর্মীয় চরিত্র স্থান পায়নি।
প্রশ্ন ওঠে, অমর চিত্র কথা এ রকম কোনও অঙ্গীকার কোনও কালে করেছিল কি না যে চরিত্রায়ণের ক্ষেত্রে সমভাব প্রদর্শিত হবে। অথচ প্রবন্ধের প্রথম অনুচ্ছেদেই লেখক লিখেছেন যুবক পাইয়ের নিজস্ব ভাষ্য, “দিল্লির মতো শহরে ফি বছর রামলীলায় দশ দিন ধরে রামায়ণের কত দৃশ্য অভিনীত হয়। সেই শহরে বেড়ে উঠেও ওরা রামের মায়ের নাম বলতে পারল না! অথচ চার্চিল, সক্রেটিস সম্বন্ধে সব প্রশ্নেরই জবাব ছিল ওদের কাছে!” তা হলে মূল প্রত্যাশাটি কী? অগঠিত হিন্দু সমাজব্যবস্থাকে চিরকালই ধর্মনিরপেক্ষতার নামাবলি গলায় দিয়ে অন্যের প্রতি দণ্ডবৎ প্রণাম করতে হবে, যদিও অপর পক্ষ থেকে এ রকম বার্তা আসার কোনও সম্ভাবনাই নেই! দেশভাগের পর ভারতবর্ষের দুই প্রতিবেশী দেশে হিন্দুর সর্বনাশ, কার্যত ধ্বংসপ্রাপ্তি হবে। একই ক্ষণে ভারতবর্ষে আসমুদ্রহিমাচল বিস্তৃত অসংগঠিত হিন্দুসমাজ ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশস্তির গাথা রচনা করবে আপন রক্তক্ষরণের মাধ্যমে?
হিন্দুত্ব আর ভারতীয়ত্বকে এক করা, সাভারকরকে মহিমান্বিত করা, গাঁধীকে নিয়ে পরে সিরিজ় করা নিয়ে লেখকের তীব্র আপত্তি। কিন্তু শ্রীপাই বা অমর চিত্র কথার পক্ষ থেকে ইসলামিক ধর্মবিশ্বাসে আঘাত করার দায়ে একটি প্রকাশনাকেও উনি চিহ্নিত করেননি অথবা করতে পারেননি। অর্থাৎ এ রকম কিছু কখনও হয়নি। অপর পক্ষে, ইসলামিক জগতেও লিখিত গ্রন্থ, প্রকাশনায় মুসলিম চরিত্রের প্রাবল্য থাকে। সেখানে প্রয়োজনে হয়তো হিন্দু চরিত্র থাকে, প্রগতিশীলতাও হয়তো থাকে, কিন্তু অনেকাংশেই তা অনুপস্থিত। শ্রীপাই এক জন হিন্দু ছিলেন, তাই তাঁর দ্বারা সৃষ্ট ‘অমর চিত্র কথা’ সনাতন হিন্দু সভ্যতা নিয়েই চর্চা করে, তার দায়বদ্ধতা একমাত্র নিজ সমাজের কাছে। হিন্দু মানেই তাকে সবার কাছে দায়বদ্ধ হতে হবে, তা কেন?
অনিমিত্র চক্রবর্তী, ই-মেল মারফত
বাস্তবটা দেখুন
শুভ্রজিৎ রায় তাঁর চিঠিতে (‘পরকীয়া অপরাধ?’, ১৮-৭) যে উদাহরণ ও যুক্তির উল্লেখ করেছেন, তা শাস্ত্রানুসারে অবশ্যই সত্য। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বর্তমান সামাজিক অবস্থান অনুসারে স্ত্রী-পুরুষ সম্পর্কের কাঠামোর চিত্র তা হলে কোথায়
গিয়ে দাঁড়াবে? আমি এক জন সাধারণ গৃহবধূ হিসাবে খুবই সন্ত্রস্ত। কারণ সমাজে পরকীয়া সম্পর্কের ফলে ভেঙে যাচ্ছে বিশ্বাস, ‘নীড়’ হচ্ছে ‘নষ্টনীড়’, যার শিকার ছোট ছোট নিষ্পাপ শিশুরা, তারা হারাচ্ছে বাবা-মার নির্ভেজাল স্নেহ ভালবাসা। তৈরি হচ্ছে না তাদের মনন, ভালবাসার বন্ধন।
লেখক, বা অন্য যাঁরা এর সমর্থনে, তাঁরা কখনও কি ভেবে দেখেছেন, যে গৃহবধূটি সংসার আর স্বামীকে ভালবেসে বাঁচতে চান— তাঁর হৃদয়ে গিয়ে কোন শক্তিশেল বেঁধে? অথবা যে পুরুষটি সরল মনে ভালবেসে তাঁর স্ত্রীকে গ্রহণ করেন, তাঁর অনুপস্থিতিতে স্ত্রী যখন অন্যের প্রিয়তমা হয়ে ওঠে— তাঁর স্বপ্নগুলো কেমন দাউদাউ করে জ্বলে যায়? কী দোষ এঁদের? শুধুমাত্র বিশ্বাসের ভিত দিয়ে গড়া সুখ-শান্তির একটা ঘরের আশা করা! আর অন্য দিকে অাছে কিছু সময়ের জন্য শারীরিক ও মানসিক তৃপ্তির রস আস্বাদন। অর্থাৎ, নিজের কামনা চরিতার্থ করতে খুনেও নাই দোষ। সব খুনই চোখে দেখা যায় না, রক্তও ঝরে না। তবুও এ খুন। এ খুনে, নিহত গোলাপের মতোই, বিচার হয় না।
আর, সবাই তো পরকীয়ার সুযোগ পায় না। কিন্তু মনের ইচ্ছা যুবা থেকে বৃদ্ধ সকলকেই উদ্দীপ্ত করে। তাই নাবালিকা থেকে নব্বই বছরের বৃদ্ধার ধর্ষণ— সমাজের চমকপ্রদ উপহার। জানি না স্থান-কাল-পাত্র বিচার করে কবে শিক্ষিত সমাজ কখন কোন ঘটনা বা রায়কে সমর্থন করবে!
লেখক ‘পরিণত, উদার সাবালক দৃষ্টিভঙ্গি’র কথা বলেছেন। তা হলে সেই দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, বিবাহ ব্যবস্থাটাই লোপ পাক! সম্পর্কে দ্বান্দ্বিকতাও থাকবে না, মানব মনের বিচিত্র অনুভূতি বহুমাত্রিক বোধে বৈচিত্র পাবে অবাধে!
তপতী চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা-৫৪
পুরাণ কেন?
শুভ্রজিৎবাবু পরকীয়ার সমর্থনে কেন পৌরাণিক কাহিনি টেনে আনলেন বোঝা গেল না। প্রথমত, পুরাণে যা আছে সেগুলি বাস্তবে ছিল কি না, বা সেগুলি কতটাই বা রূপক, তা-ই তো অজানা! যদি ধরেও নিই ওগুলি সত্যি ঘটনা, তা হলেও ওইগুলি দ্বারা কি বর্তমান সমাজে মূল্যবোধ ও নৈতিকতা নির্মাণ করা হয়, না হওয়া উচিত? শ্রীকৃষ্ণ যদি তাঁর মামিমা রাধার সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে থাকেন (রাধা-কৃষ্ণ প্রেম সম্পর্কে এমন স্থূল ব্যাখ্যা বালকসুলভ ও নিন্দনীয় বলে মনে করি), তা হলে কি আজকের দিনে ওই সম্পর্ককে কেউ নৈতিক বলবেন? বেশির ভাগ দেবতাই তো বহুবিবাহ করেছিলেন, আজকে কেউ সেই অজুহাতে বহুবিবাহকে গ্রহণযোগ্য বলে সওয়াল করেন?
অনিন্দ্য পাল, কলকাতা-৯৬
নীতি নষ্ট
পরিণত ও সাবালক দৃষ্টিভঙ্গিও নিজের প্রিয়জনের পরকীয়া সম্পর্ক স্বীকারে ব্যর্থ। মানব-মনের বহু বিচিত্র অনুভূতি থাকে। তাই বলে আমরা সব অনুভূতিকে প্রাধান্য দিতে পারি না। সমাজে বিবাহ নামক নিয়মটি যদি না থাকত, একটা শৃঙ্খলায় যদি নর-নারীর সম্পর্ক বাঁধা না থাকত, তা হলে আমাদের চার পাশের অবস্থা কী হত! আর বিবাহবহির্ভূত ভাবে অন্য জনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে চাইলে পুরনো সম্পর্কের ত্যাগ অনিবার্য, তবুও কিসের ভিত্তিতে সেই সম্পর্কে থাকা? শুধুমাত্র দেহগত সুখকে প্রাধান্য দিলে আমাদের নৈতিক জীবনের কী হয়? মানবমনের বিচিত্র অনুভূতিকে বুঝতে গিয়ে আমরা যেন আমাদের নৈতিক আদর্শকে নষ্ট না করি।
শুভম সাহা, নিচু ভানুনগর, শিলিগুড়ি
খেলা কাকে বলে
‘এটা কী করলেন’ (৬-৭) চিঠি পড়ে, প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে সন্তোষ ট্রফিতে রেলওয়েজ় বনাম সার্ভিসেসের খেলার কথা মনে পড়ল। রেলের পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুর্দান্ত শট সার্ভিসেসের গোলরক্ষকের বুকে গিয়ে লাগল। তিনি ধরাশায়ী। সামনে পড়ে আছে বল। অরক্ষিত গোল। পিকে ফাঁকা গোলে বল না ঠেলে, এগিয়ে গেলেন গোলরক্ষকের দিকে। সহ-খেলোয়াড়কে সাহায্য করার জন্য। ভারতের সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফরোয়ার্ড জানিয়ে গিয়েছিলেন, খেলাধুলোয় ‘খেলা’টা বেশি, ‘ধুলো’টা কম।
সুদীপ বিশ্বাস, উত্তরপাড়া, হুগলি
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ই-মেলে পাঠানো হলেও।
ভ্রম সংশোধন
‘ছোট শিল্পের সংজ্ঞা বদলের প্রস্তাব’ (ব্যবসা, পৃ ৯, ২৪-৭) শীর্ষক খবরে হিতাংশু গুহকে ভুল করে ফসমি-র প্রেসিডেন্ট বলা হয়েছে। তিনি আসলে ফ্যাকসি-র প্রেসিডেন্ট। এই অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।