সম্পাদক সমীপেষু: অপবিত্র হয়নি

কোনও মানুষ যদি সমাধিস্থলে ঢুকে একটু বিশ্রাম নেন বা ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েন তা হলে রবীন্দ্রনাথ অপবিত্র হয়ে যাবেন!  এই ধারণা যাঁরা পোষণ করেন, তাঁরা হয়তো রবীন্দ্রনাথকে বোঝেননি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৮ ০০:০০
Share:

‘‘সমাধিস্থলেই ‘অরক্ষিত’ রবীন্দ্রনাথ’’(৭-৮) শীর্ষক প্রতিবেদন পড়ে রবীন্দ্রনাথের সমাধিস্থল অপবিত্র হয়েছে বলে কিছুতেই মনে হল না। নিমতলা শ্মশানের কোনও শবযাত্রী বা ক্লান্ত কোনও মানুষ যদি সমাধিস্থলে ঢুকে একটু বিশ্রাম নেন বা ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েন তা হলে রবীন্দ্রনাথ অপবিত্র হয়ে যাবেন!
এই ধারণা যাঁরা পোষণ করেন, তাঁরা হয়তো রবীন্দ্রনাথকে বোঝেননি। সমাধিস্থলে গেলে বোঝা যায় ওখানে কেউ বসতে চাইলে যাতে সেটা সম্ভব হয়, সেই রকম খোলামেলা ভাবেই নকশাটা করা। ‘অরক্ষিত’ রবীন্দ্রনাথের জন্য রক্ষী প্রয়োজন নেই। দরকার সর্ব ক্ষণের জন্য এক জন কর্মী যিনি সমাধিস্থলকে পরিচ্ছন্ন রাখবেন ও সৌন্দর্যায়নের দিকে দৃষ্টি দেবেন।
মৃণাল সরকার
শ্যামনগর, উত্তর ২৪ পরগনা

Advertisement

উচ্ছেদ হল

১ অগস্ট ২০১৮ দুর্গাপুরের বিধাননগরের কয়েকটি রাস্তার ধারের খাবারের দোকান, চায়ের দোকান ও বাড়ির সামনে সম্প্রসারিত বেড়া ও তৎসংলগ্ন গেট উচ্ছেদ করা হল। এই উচ্ছেদ থেকে বাদ যায়নি একা থাকা স্বামীহারা বৃদ্ধার বাড়ির সামনের গেট, বা চায়ের গুমটি, যার মালিক চা বিক্রির রোজগারে তাঁর সংসারের ভরণপোষণ ও মেয়েদের পড়াশোনা চালান। কিন্তু কেন এই উচ্ছেদ অভিযান, তা কেউ জানে না। অবশ্য প্রায় ১৫-২০ দিন আগে মাইকে প্রচার করা হয়েছিল, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বেআইনি নির্মাণ ভেঙে ফেলতে হবে, না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা করা হবে। উচ্ছেদের দিন দুই-তিন আগে লাল দাগ দিয়ে উচ্ছেদের জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছিল। কেউ কেউ ঝামেলা এড়াতে পরের দিনই বেআইনি নির্মাণ ভেঙে দিয়েছিল। এই অভিযানের বাহার দেখে যা মনে হল, লক্ষাধিক টাকা সরকারকে ব্যয় করতে হয়েছে। কেননা, জেসিবি মেশিন ভাড়া, বেশ কয়েকখানি ট্রাক ভাড়া, পুলিশ, সিভিক ভলান্টিয়ার্স, শ্রমিকের মজুরি, প্রশাসনিক কর্মচারীদের মাইনে ইত্যাদি যোগ করলে খরচের পরিমাণ যথেষ্টই হবে, যা পশ্চিমবঙ্গের মতো আর্থিক অনটনে চলা রাজ্যের পক্ষে বেমানান। এর আগেও এমন অভিযান হয়েছে, কিন্তু ফল কিছুই হয়নি, শুধু সরকারি কোষাগারের অপচয় এবং দোকানগুলির পুনর্নির্মাণের খরচ বহন ছাড়া। কেননা, অভিযানের কয়েক দিন পরেই আবার নতুন করে দোকানগুলি পুনর্নির্মাণ করা হয়েছিল। শুধু দোকানদারদের রোজগারের উদ্দেশ্যেই নয়, মিশন হসপিটালের রোগীদের ও তাঁদের সঙ্গে আসা পরিজনদের অপেক্ষাকৃত কম পয়সায় খাবার সরবরাহ করার জন্য। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ, যেখানে কেন্দ্র বা রাজ্য কোনও সরকার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে না, সেখানে ভবিষ্যতে এ ধরনের অভিযানের আগে সামাজিক দায়বদ্ধতা ও রাস্তার ধারে সৌন্দর্যায়নের প্রয়োজনীয়তা, আইনের দৃষ্টিভঙ্গিতে নয়, মানবিকতার দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখুন।

Advertisement

শান্তিপদ মনি

বিধাননগর, দুর্গাপুর

তিনটি কারণ

উজ্জ্বলকুমার মণ্ডলের ‘পটভূমিটা জরুরি’ শীর্ষক চিঠির (৪-৮) প্রেক্ষিতে বলতে চাই, তিনটি কারণে সম্ভবত ইতিহাসবিদরা শ্যামাপ্রসাদকে সাম্প্রদায়িক বলেছেন। এক, এটা ঠিক যে সেই সময় পূর্ব পাকিস্তানে হিন্দুদের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদে শ্যামাপ্রসাদ নেহরুর মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন এবং কংগ্রেস ছেড়ে জনসঙ্ঘ নামে দল গঠন করেন। কিন্তু অবিভক্ত ভারতের পূর্ববঙ্গে বেশির ভাগ জমির মালিকানা ছিল হিন্দুদের হাতে আর মুসলমানরা ছিলেন মুনিশ। এ ছাড়া শিক্ষা এবং চাকরিতে মুসলমানরা ব্রাত্য ছিলেন। দেশভাগের পর হিন্দুদের প্রতি চোরা বিদ্বেষ থেকে, তখনও ১৯৫০ সালে দেশত্যাগ না করা হিন্দুদের মুসলমানরা মেনে নেননি। স্বাভাবিক ভাবেই এত দিনের বঞ্চনার বদলা নিতে হিন্দুদের তাঁরা আক্রমণ করেছিলেন। শ্যামাপ্রসাদ যদি দেশভাগের প্রতিবাদে কংগ্রেস ছাড়তেন, তা হলে ইতিহাসবিদরা ওঁকে সাম্প্রদায়িক বলতেন না।

দুই, উনি কংগ্রেস ছেড়ে আরএসএস-এর ছত্রচ্ছায়ায় জনসঙ্ঘ গঠন করলেন। উনি যদি জনসঙ্ঘকে ধর্মনিরপেক্ষ দলে পরিণত করতেন, তা হলে কংগ্রেস ৬০ বছর দেশ চালাতে পারত না।

তিন, শ্যামাপ্রসাদ নেহরু-লিয়াকত চুক্তির বিরোধিতা করে শুধু হিন্দুদের পাশে দাঁড়িয়ে চেয়েছিলেন, হিন্দুপ্রধান যশোর-খুলনা ভারতে আসুক। কিন্তু মুসলিমপ্রধান মুর্শিদাবাদের ভারত-অন্তর্ভুক্তি চাননি। কিন্তু ভৌগোলিক কারণ এবং কলকাতা বন্দর বাঁচানোর তাগিদে নেহরু সেটা মানেননি।

কমল চৌধুরী

কলকাতা-১৪০

স্কুলে বদলি

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিক্ষা দফতর ১২-০৩-২০১৮ তারিখের নির্দেশনামায় শিক্ষার স্বার্থে ও প্রশাসনিক কারণে সরকার পোষিত ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক, সহশিক্ষক, গ্রন্থাগারিক ও শিক্ষা কর্মীদের এক স্কুল থেকে অন্য স্কুলে বদলির নির্দেশ জারি করেছে। এই বিষয়ে স্কুল শিক্ষাদফতর কেন্দ্রীয় স্কুল সার্ভিস কমিশনকে নির্দেশ দেবে নিয়োগ কর্তৃপক্ষের (প. ব. মধ্য শিক্ষা পর্ষদ) কাছে সুপারিশ করতে। নিয়োগ কর্তৃপক্ষ (বোর্ড) বদলির আদেশ জারি করবে। এই প্রসঙ্গে কয়েকটি কথা।

১) এ যাবৎ জেনারেল ট্রান্সফার, ট্রান্সফার অন স্পেশাল গ্রাউন্ড, মিউচুয়াল ট্রান্সফার— এই তিন ব্যবস্থা চালু আছে। এগুলি বাতিলের কোনও নির্দেশ নেই। তা হলে কি এগুলোর সঙ্গে শিক্ষার স্বার্থে বা প্রশাসনিক কারণে বদলি
একটি অতিরিক্ত সংযোজন?
তা যদি হয় বদলির এই বহু ব্যবস্থায় জটিলতা বাড়বে।

২) শিক্ষার স্বার্থে বদলি কাম্য, যদি তা শিক্ষার স্বার্থ রক্ষা করে। ওয়েস্ট বেঙ্গল স্কুল সার্ভিস কমিশন রুলস-২০১৩ অনুসারে প্রথমে ২৫ শতাংশ এবং ওই রুলস ২০১৫ অনুসারে ১০ শতাংশ শিক্ষকশিক্ষিকা বদলির সুযোগ পেয়েছেন, এর ফলে গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলি তীব্র শিক্ষক-সঙ্কটে ভুগছে। স্কুলগুলিতে প্রয়োজনীয় ঘরবাড়ি, কোথাও বা ছাত্রাবাস, ছাত্রছাত্রী সংখ্যা থাকা সত্ত্বেও, শিক্ষকের অভাবে পঠনপাঠন হচ্ছে না।
শিক্ষার স্বার্থে সে সব স্কুলে শিক্ষকদের বদলি করা সম্ভব হলে ভাল, অন্যথায় গ্রামের স্কুলগুলির অবস্থা হবে ডাক্তারহীন গ্রামীণ হাসপাতালগুলির মতো।

৩) শিক্ষক পদ খালি হলে তা পূরণ করতে প্রশাসনিক ধাপগুলি পেরোতে অনেক সময় লাগে। সে ক্ষেত্রে পরিবর্ত শিক্ষক না দিয়ে যদি বদলি করা হয়, তা হলে চালু স্কুলগুলিও অচল হবে। ট্রান্সফার উইথ প্লেসমেন্ট-ই সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান। বিষয়টি ভাবা দরকার।

৪) শিক্ষা দফতর ২০১৭-য় নির্দেশিকা জারি করে অতিরিক্ত শিক্ষক তালিকা সংগ্রহ করেছে। প্রায় ছাত্রছাত্রীহীন বহু স্কুলের শিক্ষক তালিকাও সরকারের কাছে আছে। তাঁদের প্রয়োজনীয় স্থানে নিয়োগ করা আশু প্রয়োজন। বদলি চালুর আগে এ কাজটি জরুরি।

৫) এ রাজ্যে এখনও অনেক সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুল আছে। যেগুলি নির্বাচিত প্রতিনিধি দ্বারা গঠিত পরিচালক সমিতি দ্বারা পরিচালিত, সেগুলিকে সরকার পোষিত না করে বদলি চালু
করলে প্রশাসনিক ও আইনগত জটিলতা বাড়বে।

৬) বদলির স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মীদের শঙ্কামুক্ত করে কাজ করতে সাহায্য করে। বিশেষ কারণে বদলি নিয়ে নানা গুঞ্জন। আবার এই বদলিও যদি নিরপেক্ষতা হারায় ও শাস্তির নামান্তর হয়, তবে শিক্ষায় অরাজকতা বাড়বে।

বদলি হোক নিয়মতান্ত্রিক। স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও পরিবর্ত শিক্ষক নিয়োগ বদলি ব্যবস্থাকে যথার্থ কার্যকর করতে পারে। শ্রীদামচন্দ্র জানা

রাজ্য সাধারণ সম্পাদক,
প. ব. প্রধানশিক্ষক সমিতি

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন