History and Politics

সম্পাদক সমীপেষু: ইতিহাস ও রাজনীতি

ইতিহাস অতীতের কিছু শুকনো তথ্য নয়। তথ্যের উপস্থিতি সেখানে সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে উল্লেখযোগ্য ঘটনার কার্যকারণ বিশ্লেষণের সহায়ক রূপে।

শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:০৭
Share:

শ্রীমন্তী রায়ের ‘ইতিহাস আবেগ নয়’ (২২-১১) শীর্ষক প্রবন্ধটি গুরুত্বপূর্ণ। উপসংহারে তিনি যথার্থই বলেছেন সচেতন ইতিহাসবোধ ছাড়া শক্তিশালী নাগরিক হওয়া সম্ভব নয়। সঙ্কীর্ণ ইতিহাস দিশাহীন ভবিষ্যতের জন্ম দেয়। এ দেশে ইতিহাসচর্চার প্রতি ছাত্রছাত্রীদের, শিক্ষিত মানুষজনের যে উদাসীনতা, তা সুযোগসন্ধানী রাজনীতির পক্ষে সুবিধাজনক। কারণ, তারা মানুষের ইতিহাসবোধের অনুপস্থিতির সুযোগে ইতিহাসকে কৌশলে নিজেদের পক্ষে টেনে নেয়।

ইতিহাস অতীতের কিছু শুকনো তথ্য নয়। তথ্যের উপস্থিতি সেখানে সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে উল্লেখযোগ্য ঘটনার কার্যকারণ বিশ্লেষণের সহায়ক রূপে। সময়ের পরিপ্রেক্ষিতটি সেখানে গুরুত্বপূর্ণ। অতীতে কোনও ঘটনার ন্যায্যতা থাকলেও বর্তমানে অনুরূপ ঘটনা অন্যায্য হতে পারে। জনসাধারণের এই ইতিহাসবোধ না থাকলে শাসকগোষ্ঠী দু’টি ঘটনাকে একই পঙ্‌ক্তিভুক্ত করে কাজ হাসিল করে নিতে পারে সহজেই। ইতিহাসের গতিপথ সরল নয়, হওয়ার কথাও নয়। তার বাঁকগুলি চিহ্নিত করে আলো ফেলতে হয়। সেই কাজটি সহজ নয়। মাধ্যমিক পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে ইতিহাস পড়তে হয়। কিন্তু ওই বয়স এবং ইতিহাসের পাঠ্যসূচি ইতিহাসবোধ তৈরি হওয়ার পক্ষে অনুকূল নয়। তা ছাড়া সেখানেও রাজনীতি পাঠ্যক্রমে জল মেশায়। তাই পরবর্তী কালেও শিক্ষার্থীরা যাতে ইতিহাস চর্চা করতে পারে, সেটিই এখন ভাবার। অন্তত পত্র-পত্রিকায়, সমাজমাধ্যমে ব্যাপক ইতিহাসচর্চার প্রয়োজন। আমাদের সঙ্কট ও বিপন্নতাগুলিকে ইতিহাসের আলোয় চর্চা করা উচিত।

ভারতবর্ষে মুসলমান শাসনকালে হিন্দু-মুসলিম পারস্পরিক সম্পর্কের কিছুটা অবনতি ঘটেছিল। এই তথ্য সেই সময়ের সামাজিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ করে পরবর্তী কালে তাকে মেরামত করা যেত। সেটা করা হল না। বরং শাসককুল এর সুযোগ নিল। দেশের মানুষের ইতিহাস চেতনার অভাবের সুযোগ নিয়ে ব্রিটিশ সরকার এবং দেশীয় রাজনীতি মেরামতের বদলে সেই সম্পর্ককে আরও বিষাক্ত করে তুলল। এর পরিণাম যত দূর যেতে পারে বলে কল্পনা করা যায়, তার চেয়েও বেশি দূর গড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

দুর্গেশ কুমার পান্ডা, সোনারপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

যথার্থ উদ্বেগ

শ্রীমন্তী রায়ের ‘ইতিহাস আবেগ নয়’ পড়ে আন্দামান সেলুলার জেল ভ্রমণের স্মৃতি ফিরে এল। সেলুলার জেলে গাইডরা যে ভাবে ব্যাখ্যা করেন এবং যে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো হয়, তা দেখার পর ইতিহাসের সাধারণ বোধসম্পন্ন যে কোনও মানুষ কিছুটা হতাশ হবেন বলেই মনে করি। ১৯০৬-১৯ অবধি সময়কালে এখানে বন্দি ছিলেন উল্লাসকর দত্ত, বারীন্দ্রকুমার ঘোষ, হেমচন্দ্র দাস কানুনগো, জ্যোতিষচন্দ্র পালের মতো বিপ্লবী। এঁদের সম্পর্কে যা দেখানো হয়েছে তা একেবারেই যথেষ্ট নয়। বিপ্লবী ইন্দুভূষণ রায় সম্পর্কে ব্রিটিশ সরকারের মত ছিল যে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু তাঁর সহবিপ্লবীদের লেখা থেকে জানা যায়, ইন্দুভূষণ রায়কে হত্যা করে আত্মহত্যার কথা প্রচার করা হয়। স্বাধীনতার এত বছর পরেও ব্রিটিশ সরকারের নথিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে, না কি বিপ্লবীদের স্মৃতিকথাকে, সে ব্যাপারে ভাবনার অবকাশ আছে। ১৯১৯-৩২ অবধি সময়কাল পর্যন্ত কোনও রাজনৈতিক বন্দিদের এখানে পাঠানো না হলেও চৌরিচৌরার ঘটনায় অভিযুক্ত দ্বারিকাপ্রসাদ পান্ডে এখানে বন্দি ছিলেন। এটিরও উল্লেখ করা প্রয়োজন ছিল। ১৯৩২-৩৮ পর্যন্ত আগত বন্দিদের কথা কিছুটা বলা হয়েছে এবং লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো চলাকালীন ‘বন্দে মাতরম্’, ‘ভারতমাতা কি জয়’ ও ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ ঘন ঘন শোনা যায়। কিন্তু তা সত্ত্বেও একেবারেই অনুচ্চারিত থেকে যায় কমিউনিস্ট কনসলিডেশন-এর কথা। ইতিহাস যে-হেতু সমাজবিজ্ঞানের একটি শাখা, তাই যে কোনও ঐতিহাসিক ঘটনাকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখাটাই স্বাভাবিক। একই ঐতিহাসিক ঘটনার একাধিক বিশ্লেষণ থাকতেই পারে। তার মধ্যে একটিকে গ্রহণ করা মানে বাকিগুলিকে বর্জন করা নয়।

অনিন্দ্য সুন্দর দাস, জগদীশপুর, হাওড়া

ভালবাসার পাঠ

‘ইতিহাস আবেগ নয়’ প্রবন্ধটি সময়োপযোগী। এই লেখার সূত্র ধরে একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে বলি, আজ যুক্তিনির্ভর ইতিহাস চর্চার স্থান দখল করছে আবেগসর্বস্ব ইতিহাসের ফাঁপা অবয়ব। সম্প্রতি সমাজের একটা বৃহৎ অংশ আবেগসর্বস্ব ইতিহাসের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে এবং আবেগকে নির্ভর করেই তারা ইতিহাস লেখাতে চাইছে, পড়তে চাইছে, শিখতে চাইছে। প্রশ্ন হল, এই ধরনের ইতিহাসের প্রতি সমাজের এই আকর্ষণ কি শুধুই সমাজমাধ্যমে কিছু মানুষের ভিত্তিহীন ইতিহাস চর্চা, রাজনৈতিক স্বার্থ-সম্বলিত কথাবার্তা বা আবেগসর্বস্ব ইতিহাস-নির্ভর চলচ্চিত্রের পরিণতি?

আমার মনে হয়, তা নয়। এই ভিত্তিহীন ইতিহাসের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার পশ্চাতে একটি বৃহৎ কারণ হল এ দেশের প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক স্তরে ইতিহাস পাঠদানের কিছুটা ভ্রান্ত পদ্ধতি। ছোট থেকেই আমরা ইতিহাস পড়ি কেবলই মুখস্থ করে কিছু নম্বর পাওয়ার উদ্দেশ্যে। কাকে বলে ইতিহাস, কেন পড়া হয় ইতিহাস, আমাদের জীবনে ইতিহাসের গুরুত্ব কী, বৈজ্ঞানিক-যুক্তিনির্ভর ইতিহাস আর আবেগসর্বস্ব ইতিহাসের পার্থক্য কী— এ সবের নান্দনিক পাঠদান এখনও তেমন চোখে পড়ে না। সুতরাং, ইতিহাসের আসল নির্যাস থেকেই শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হয়। ইতিহাসের প্রতি তাদের কোনও ভালবাসা তৈরি হয় না এবং স্কুলের পাঠ শেষ হলেই তাদের একটা বড় অংশ ইতিহাসকে জীবন থেকে সম্পূর্ণরূপে বর্জন করে। অথচ, তারাই পরবর্তী কালে সমাজমাধ্যম থেকে গৃহীত যুক্তিহীন ইতিহাসকে স্বচ্ছন্দে আপন করে নেয় বা নিতে চায়। কারণ, সমাজমাধ্যমে যে ইতিহাস সামনে রাখা হয়, তা কিন্তু বেশ নান্দনিক। ফলে তা সমাজের কাছে সহজে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে। এই পরিস্থিতি পাল্টাতে হলে শিক্ষাক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক, যুক্তিনির্ভর ইতিহাসের পাঠদানকে যথাসম্ভব নান্দনিক করে তুলতে হবে এবং ইতিহাস মুখস্থ করানো থেকে বিরত থাকতে হবে। দেখতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীদের কাছে ইতিহাস ভালবাসার পাঠ্য হয়ে ওঠে। এ বিষয়ে শিক্ষকদের দায়িত্ব সহকারে এগিয়ে আসতেই হবে।

অয়ন কুমার সরকার, খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

খেলার আনন্দ

প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের জীবনে মোবাইল ফোন নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে। এক সময় বিকেল হলেই শিশুদের দৌড়ঝাঁপ, লুকোচুরি, দড়িলাফ বা ক্রিকেট খেলায় মেতে উঠতে দেখা যেত। এখন সেই দৃশ্য অনেকটাই বিরল। সমাজকর্মীরা বলছেন, এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে শিশুদের নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে মোবাইল ব্যবহার বন্ধ করে মাঠে খেলাধুলা, বই পড়া ও সৃজনশীল কাজে উৎসাহিত করতে হবে। পাশাপাশি বিদ্যালয় ও সমাজের উদ্যোগে খেলাধুলার পরিবেশ গড়ে তুললে শিশুরা আবারও প্রকৃত আনন্দের জগতে ফিরে আসবে।

বিদেশ গাজী, হিঙ্গলগঞ্জ, উত্তর ২৪ পরগনা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন