এই ভয়াবহ সঙ্কটকালে সমাজের প্রতি তথাকথিত শিক্ষিত মানুষের আচরণ যদি দায়িত্বজ্ঞানহীন হয়, সে নিজেকে সংক্রমিত জেনেও জন-অধ্যুষিত জায়গায় ঘুরে আসে, তা হলে এ দেশের বিপুলসংখ্যক অল্পশিক্ষিত মানুষের মনেই বা সচেতনতা কী করে ঢোকানো সম্ভব? বা, আদৌ সম্ভব কি?
এই প্রসঙ্গে একটি ঘটনা উল্লেখ করি। দিন চার-পাঁচ আগে, আমার বাড়ির কাজে সাহায্যকারী মেয়েটি কাজ করতে এসেছে, মুখে সস্তার একটা মাস্ক লাগিয়ে। আমি হেসে বললাম, ‘‘কী রে, তোর মনেও তা হলে করোনার ভয় ঢুকেছে?’’
আমাকে চমকে দিয়ে ও বলল, ‘‘না গো বৌদি, সারা দিন জলের কাজ তো— কাল সারা রাত খুব কেশেছি, সঙ্গে জ্বর-জ্বর ভাব। এখন তো টিভি খুললেই, যেখানে-সেখানে থুতু না ফেলার কথা বলে, আবার কেমন করে কাশতে হবে— সবই দেখায়। তোমার বাড়িতে বয়স্ক অসুস্থ মানুষ (ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ৮২ বছরের আমার বৃদ্ধা মা শারীরিক ভাবেও পঙ্গু), তাই ভাবলাম, আমার থেকে দিদার যদি কিছু হয়, তাই ছেলেকে দিয়ে এটা কিনিয়েছি।’’
আশার আলো এখানেই। না, পড়াশোনা কে কত করেছে, তা দিয়ে আদৌ বোঝা যায় না, কার বোধ এবং বিবেচনা কতখানি। এই বিবেচনারই আর এক নাম কি শিক্ষা নয়?
রীনা সেনগুপ্ত
কলকাতা-৯৪
ঘর হয়নি
একাধিক বার পঞ্চায়েতে আবেদন করেও আমার বাংলা আবাস যোজনায় ঘর হয়নি। ঘরের অতি প্রয়োজনীয়তার জন্য একমাত্র চাষযোগ্য জমিটি বিক্রয় করে ২০১৫ সালে কোনও রকমে থাকার মতো অসম্পূর্ণ একটি ঘর করি। ঘরের মেঝে নেই, রং নেই, প্লাস্টার নেই।
বর্তমানে আমি ১০০ দিনের কর্মী ও খেটে খাওয়া শ্রমিক। আমার পক্ষে অসম্পূর্ণ ঘরকে সম্পূর্ণ করা সম্ভব নয়। আমার মতো অনেকেই কষ্ট করে অসুবিধার মধ্যে অসম্পূর্ণ ঘরে আছেন। আমাদের রাজ্যে নতুন নামে অনেক নতুন সরকারি প্রকল্প হচ্ছে। গীতাঞ্জলি আবাসন, বাংলা আবাস যোজনার মতোই ‘অসম্পূর্ণ আবাস যোজনা’ প্রকল্প হওয়া অতি প্রয়োজন।
গুরুদাস রায়
দশঘরা, হুগলি
ডাকঘর পরিষেবা
লিঙ্ক না থাকায় এবং রসিদ-বই না থাকায় একাধিক ডাকঘরে পরিষেবায় বিঘ্ন ঘটছে। তাতে যেমন সমস্যায় পড়েছেন সাধারণ গ্রাহকেরা, তেমনই পোস্টাল এজেন্টরা। এই সমস্যার কী সমাধান, তা নিয়ে সকলেই চিন্তিত।
বহু সাধারণ গ্রাহক আছেন, যাঁরা ডাকঘর থেকে পেনশনের টাকা তুলে সংসার চালান। তাঁদের অবস্থা কী, তা আর বোঝানো যাবে না। পাশাপাশি ডাকঘরে নিত্য নতুন নিয়ম চালু করা হচ্ছে। অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, নমিনি বদল-সহ বিভিন্ন কাজে পরিষেবা-ফি বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অ্যাকাউন্টে কমপক্ষে ৫০০ টাকা না থাকলে অ্যাকাউন্ট বাতিল করে দেওয়া হবে বলছে। কিন্তু পরিষেবা দিন দিন খারাপ হচ্ছে।
নির্ঝর দাশগুপ্ত
কলকাতা-১৫
পড়ে, শেখে না
কন্যাশ্রী প্রকল্প বিষয়ে প্রসেনজিৎ সরখেল এবং উপাসক দাস-এর ‘স্কুলে আসছে, শিখছে না’(১৬-৩) নিবন্ধ প্রসঙ্গে এই পত্র।
আমাদের সংস্থা সোনারপুরে একটি সান্ধ্যকালীন বিনাব্যয়ে কোচিং সেন্টার শুরু করেছে। এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল, টিউটর বা কোচিং সেন্টারের অর্থ জোগাতে অক্ষম পরিবারের তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পাঠরত ছাত্রছাত্রীদের পড়ানো হয়। আমাদের অভিজ্ঞতার সারমর্ম, ‘এরা স্কুলে যায়, পড়ে, কিন্তু শেখে না।’ তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা পুরো শতকিয়া লিখতে পারে না। বাংলা গদ্য পড়তে পারে না। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রছাত্রী দুই অঙ্কের গুণ ও ভাগ করতে পারে না। বাংলা গদ্য সাবলীল ভাবে পড়তে পারে না। সাধারণ বাংলা বাক্যগঠনে অক্ষম।
এতে সহজেই ধারণা করা যায়, শিক্ষার পরিমাণগত উন্নতি হলেও গুণগত উন্নতি হচ্ছে না।
সুভাষচন্দ্র আচার্য
কলকাতা-১৫০
জলের উৎস
‘পানীয় জলের সঙ্কটের মুখে শহর, তৈরি হচ্ছে নয়া নীতি’ (২৩-২) প্রতিবেদনটি পড়লাম। অতি শীঘ্রই কলকাতায় ও শহরতলিতে জলাভাব ঘটতে চলেছে এটাই সত্য। কারণ জলের প্রধান সরবরাহকারী ভাগীরথী-হুগলি নদীর জলের উৎস ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে।
লর্ড ক্লাইভের আমলের ম্যাপে দেখা যায় ভাগীরথীর সঙ্গে গঙ্গার সরাসরি সংযুক্তি। পরবর্তী কালে সেই সংযোগ ক্ষীয়মাণ হতে হতে একটা ক্ষীণ ধারা গঙ্গা থেকে ভাগীরথীতে বইত। এর প্রতিকার করতে গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে ফারাক্কা ব্যারেজ প্রকল্পে দীর্ঘ এক খাল খনন করে গঙ্গার জল ভাগীরথীতে সরবরাহের ব্যবস্থা হয় এবং মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গীপুরে ভাগীরথীর ওপর ব্যারেজ তৈরি করে দুই নদীর সংযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। কিন্তু এখন সরবরাহকারী খালে জলাভাব হওয়ায় ভাগীরথী তার জলের উৎস হারিয়ে ফেলছে।
এ দিকে ভাগীরথীর নিম্নাংশ, যা হুগলি নামে পরিচিত, তার জলের উৎস বঙ্গোপসাগরের জোয়ার, যা দিনে দু’বার আসে ও আবার সাগরে ভাটা হয়ে ফিরে যায়। সাগর থেকে জোয়ার আসার নদীখাত দুটি। একটির নাম রাঙাফলা খাত। সেটি দক্ষিণ ২৪ পরগনার পশ্চিম পাড় ধরে আসছে। অন্যটির নাম হলদিয়া ব্যালারি খাত। সেটি আসে পূর্ব মেদিনীপুরের পূর্ব পাড় ধরে। দুটি খাতের জোয়ার ডায়মন্ডহারবারে মিলিত হয়ে শক্তিমান হয়ে ওঠে ও নবদ্বীপ পর্যন্ত যায়। তার পর প্রবল ভাটা হয়ে নদীতে জমা পলি নিয়ে সাগরে ফেরে। এই ভাবেই প্রাকৃতিক নিয়মে হুগলির নাব্যতা রক্ষা পায়।
দুর্ভাগ্যক্রমে, গত শতাব্দীর আশির দশকে হলদিয়া ব্যালারি নদীখাত উন্নয়ন প্রকল্পে ভুল বিদেশি প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে ব্যালারি নদীখাত পলিতে ভরে যাওয়ায় নব্বইয়ের দশক থেকে এই পথ দিয়ে জোয়ার আসা বন্ধ হয়ে যায়।
প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হওয়ায় জোয়ার কমে যাচ্ছে, ভাটা দুর্বল হয়ে নদীর পলি টানতে পারছে না। ফলে নদীর গভীরতা কমছে এবং শীঘ্রই এক দিন হয়তো বা এমন অবস্থা হবে যার জন্য পলতা, গার্ডেনরিচ প্রভৃতি জায়গার শোধনকারী ব্যবস্থাগুলি জল সরবরাহের অভাবে ভেঙে পড়বে। যুগপৎ নিকাশি-ব্যবস্থার বিপর্যস্ত হওয়ার সম্ভাবনাও থাকছে।
অতি দ্রুত কতগুলি পদক্ষেপ করা প্রয়োজন। যেমন, ১) দেরি না করে হুগলির মোহনায় ব্যালারি নদীখাত ড্রেজিং করে পলিমুক্ত করা, যাতে জোয়ার দ্বিতীয় পথটি দিয়ে আবার আসতে পারে।
২) ভাগীরথীর সঙ্গে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরবর্তী প্রবাহিনী গঙ্গার সংযোগ স্থাপন করে নদীর পূর্বতন জলের উৎস ফিরিয়ে আনা।
৩) কলকাতা বন্দরের মেরিন বিভাগের সহায়তায় ভাগীরথী-হুগলির জলমগ্ন চরাগুলি নির্ণয় করে সেগুলি ড্রেজিং করে নদীকে পলিমুক্ত করা।
৪) এর জন্য উচ্চ ক্ষমতাশীল উন্নয়ন বোর্ড গঠন করা।
তরুণ কুমার চৌধুরী
পূর্বতন রিভার ট্রেনিং ইঞ্জিনিয়ার, কলকাতা বন্দর
গঙ্গায় মুদ্রা
কর্মসূত্রে প্রতি দিন পানিহাটি-কোন্নগর ফেরি সার্ভিসে যাতায়াত করতে হয়। লঞ্চে গঙ্গা পেরোবার সময় মাঝেমধ্যেই চোখে পড়ে, লঞ্চ থেকে দু’একজন যাত্রী গঙ্গায় কয়েন ছুঁড়ে দিচ্ছেন। এটা একটা কুসংস্কার । এ ভাবে প্রতিদিন যে দেশের কত মুদ্রা নষ্ট হচ্ছে, তার হিসেব কে রাখে। এটা দেশের জাতীয় ক্ষতি।
অতীশচন্দ্র ভাওয়াল
কোন্নগর, হুগলি
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।