সম্পাদক সমীপেষু: অনেক রামায়ণ

তেরো শতকের তামিল কবি কম্বন লিখিত ‘রামাবতারম’-এ রাবণ এক জন মহান রাজা, যিনি সীতাকে স্পর্শ করবেন না বলে সীতা-সহ পুরো পর্ণকুটিরটিকেই তুলে লঙ্কায় নিয়ে যান।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৮ ০১:১৫
Share:

গৌতম চক্রবর্তীর লেখায় (‘বাল্মীকির অন্য রামায়ণ’, রবিবাসরীয়, ২৫-৩) উল্লিখিত রাবণের কাছে রামের রাজনীতিশিক্ষা ছাড়াও পনেরো শতকের কৃত্তিবাসী বাংলা রামায়ণে যে বীরবাহুর যুদ্ধ, তরণীসেন বধ, মহীরাবণ ও অহিরাবণ বধ, দেবী দুর্গার অকালবোধন, মন্দোদরীর কাছ থেকে রাবণের মৃত্যুবাণ হরণে হনুমানের ভূমিকা কিংবা লব-কুশের সঙ্গে যুদ্ধে রামের পরাজয় ইত্যাদি কাহিনি আছে, তার কোনওটাই কিন্তু বাল্মীকি রামায়ণে নেই। বৌদ্ধ রামায়ণ ‘দশরথ জাতক’-এর প্রাচীন কাহিনি এখনকার হিন্দুত্ববাদীদের ভীষণ চটিয়েছে, কারণ রামপণ্ডিত ও সীতা এখানে ভাই-বোন এবং পরে তাঁরাই আবার স্বামী-স্ত্রী। জৈন রামায়ণ ‘পউম চরিয়ম্’-এ সীতা রাবণ ও মন্দোদরীর মেয়ে। ইরানীয় খোটানি রামায়ণে সীতা হলেন রাবণ আর তাঁর প্রধান মহিষীর মেয়ে। চৈনিক রামায়ণ (২৫১ খ্রি.) অনেকটাই পালি ‘দশরথ জাতক’-এর অনুরূপ। ফিলিপিন্স উপকথায় রাবণ (লাওয়ানা) নিহত হননি, বরং পরাজিত হয়ে সুশাসনে ব্রতী হয়েছিলেন। ইন্দোনেশীয় রাম-সীতা মানবজাতির আদি পিতা-মাতা। জাপানের রামকথায় রামচন্দ্র স্বয়ং শাক্যমুনি। তিব্বতি ও মঙ্গোলীয় রামায়ণ চতুর্থ শতকের গুণভদ্রের লেখা জৈন রামায়ণ ‘উত্তর পুরাণ’ এবং ‘বৃহৎ কথা’-র দ্বারা প্রভাবিত।

Advertisement

তেরো শতকের তামিল কবি কম্বন লিখিত ‘রামাবতারম’-এ রাবণ এক জন মহান রাজা, যিনি সীতাকে স্পর্শ করবেন না বলে সীতা-সহ পুরো পর্ণকুটিরটিকেই তুলে লঙ্কায় নিয়ে যান। অসমের ষোলো শতকের বৈষ্ণব কবি শঙ্করদেব ও মাধব কন্দলীর যৌথ ভাবে লেখা রামায়ণে রামচন্দ্র শ্রীকৃষ্ণে পরিণত হয়ে যান। পনেরো শতকের ওড়িয়া কবি সরল দাসের ‘বিলঙ্কা রামায়ণ’ এবং চৈতন্য পার্ষদ বলরাম দাসের ‘জগমোহন’ রামায়ণ দু’টির সঙ্গে বাল্মীকির রামায়ণের মিল সামান্যই। পনেরো শতকের আর এক ওড়িয়া কবি অর্জুন দাসের লেখা ‘রামবিভা’ রামায়ণে রামচন্দ্র হয়ে গিয়েছেন শ্রীশ্রীজগন্নাথদেবের প্রতিরূপ। আজ ভুঁইফোড় কালাপাহাড়িদের তাণ্ডবে যদি রামায়ণের এই কালজয়ী বর্ণময় বহুবিধ রূপগুলি মহাকাব্যটির সৃষ্টির দেশ থেকেই মুছে যায়, তার থেকে আফসোসের আর কিছু থাকে কি?

পীযূষ রায় বেহালা

Advertisement

এখনও আছেন

নদিয়া জেলার ফুলিয়া থেকে গত ১৮ মে কলকাতায় ডাক্তার দেখাতে এসে এক আশ্চর্য অভিজ্ঞতা হল। ঠাকুরপুকুর-তারাতলা রুটের অটোয় চেপে তারাতলায় যাওয়ার সময়, পকেট থেকে মোবাইল বার করতে গিয়ে আমার এটিএম কার্ড রাখার খাপটি আচমকা পড়ে যায়, তারাতলায় নেমে আমি সঙ্গে সঙ্গে যাদবপুরের অটোতে উঠে পড়ি। এ দিকে আগের অটোচালক (সুজন মণ্ডল) তাঁর অটোতে ওই খাপটি (যার মধ্যে দু’টি ব্যাঙ্কের এটিএম কার্ড, বিগ বাজারের কার্ড ছিল) পেয়ে প্রায় সঙ্গে সঙ্গে এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের ঠাকুরপুকুর শাখায় জমা দেন। ওখানকার ব্রাঞ্চ ম্যানেজার আমার কার্ড থেকে মোবাইল নম্বর সার্চ করে তক্ষুনি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং আমি কার্ডগুলি ফিরে পাই। হারিয়ে যাওয়া জিনিসগুলি ফিরে পেলাম সেটি নয়— আসল ব্যাপার হল, এই চরম সামাজিক অবক্ষয়ের যুগেও কিছু ব্যতিক্রমী ও কর্তব্যপরায়ণ মানুষ আছেন, যাঁরা অপরের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

তাপস কুমার বিশ্বাস ফুলিয়া, নদিয়া

পুলের নীচে

‘উড়ালপুলের নীচে বসতি, ক্ষুব্ধ মন্ত্রক’ (১৭-৫) শীর্ষক খবরে পড়লাম, এজেসি বসু রোড, পার্ক স্ট্রিট উড়ালপুলের পাশাপাশি বিদ্যাসাগর সেতুর নীচে ঝুপড়ি গড়ে সাতশো পরিবার বসে পড়েছেন। ব্রিজের নীচে জনবসতি গড়ে ওঠা কখনওই কাম্য হতে পারে না। পোস্তা বা সম্প্রতি বারাণসীতে নির্মীয়মাণ উড়ালপুল ভেঙে পড়ার ঘটনা সুখকর নয়। বিদ্যাসাগর সেতুর নীচে শুধু ঝুপড়ি নয়, গঙ্গার পশ্চিম পাড়ে ঠিক সেতুর নীচে দু’-দু’টি সরকারি পরিবহণ সংস্থার বাস ডিপো গড়ে উঠেছে। স্থায়ী ভাবে বসবাস না করলেও অনেক শ্রমিক, কর্মচারী এখানে নিত্য দিন যাতায়াত করেন, উড়ালপুলের ঠিক নীচে ডিজ়েল-সহ, টায়ার, লুব্রিক্যান্ট, সহজ দাহ্যবস্তু রাখা থাকে। যে কোনও মূহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটা বিচিত্র নয়। সবচেয়ে বড় কথা, এই দুই সরকারি পরিবহণ সংস্থার বাসডিপোর অবস্থান নবান্ন থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে। তাই ঝুপড়ি উচ্ছেদের পাশাপাশি এই সরকারি জবরদখলের বিষয়টিও জনস্বার্থে সমান গুরুত্ব দাবি করে।

ডি রাজশেখর কাজিপাড়া, হাওড়া

জমি আছে, তবু...

২০১১ সালে বাম সরকার মুর্শিদাবাদ জেলার বেলডাঙা থানার অন্তর্গত ভাবতা গ্রামে একটি কলেজের অনুমোদন দেয়। কিন্তু সরকার তো জায়গা ক্রয় করবে না। আর জায়গা না পেলে কলেজও হবে না। তাই ভাবতা তথা পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দারা একটি জায়গা ক্রয় করার জন্য সচেষ্ট হন। ফেরিওয়ালা থেকে দিনমজুর, কৃষক থেকে শিক্ষক, ব্যবসায়ী— সবাই নিজের সাধ্যমতো অর্থ দেন। কেউ দিনের সবটুকু আয় দান করেন, কেউ নিজের সব গয়না বিক্রি করে দিয়ে এক লপ্তে ১৮ বিঘা জমি ক্রয় করে নেন। সাড়ম্বরে ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি কলেজের শিলান্যাস করেন তৎকালীন উচ্চশিক্ষামন্ত্রী সুদর্শন রায়চৌধুরী। কিন্তু তার পর সরকারের পরিবর্তন হয়। আজ সাত বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেল। কলেজ নির্মাণ তো দূর, একটি ইটও পড়েনি। একটি শিলান্যাসের ফলক ভেঙে গিয়েছে। আর একটি ফলকে মানুষ ক্ষোভে গোবর লেপে দিয়েছেন। অনেক জায়গায় দরবার করেও কোন লাভ হয়নি। উপযুক্ত জায়গার অভাবে যেখানে সরকারের অনেক প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়, সেখানে কলেজের জন্য দান করা ১৮ বিঘা জমি পড়ে আছে এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।

মোঃ আবুসাঈদ ভাবতা, মুর্শিদাবাদ

ভোটের গল্প

চাকরি পাওয়ার পর প্রথম বার পঞ্চায়েত ভোটের কাজে প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব নিয়ে ভোট করাতে গিয়েছি। দুপুরের দিকে, যখন ভোটকেন্দ্র একটু ফাঁকা, এক ব্যক্তি এলেন, ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করে তৃতীয় পোলিং অফিসারকে জিজ্ঞাসা করলেন, “পিসাইডিং আপিসার কোনটো?” তৃতীয় পোলিং অফিসার আমার দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করলে, সেই ব্যক্তি আমাকে আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করে, অপবিত্র জন্তুজাত বলে সম্বোধন করে প্রস্থান করলেন।

আর এক ভোট। যথারীতি ভোটকেন্দ্রে শৌচালয় নেই। ‘বড় বাইরে’ বাঁশঝাড়ে, ‘ছোট বাইরে’ যত্রতত্র। ভোরবেলা সবার আগে ঘুম থেকে উঠে জল দিয়ে ভিজিয়ে মুড়ি খাচ্ছি। দেখি, আমার টিমের এক পোলিং অফিসার কোনও রকমে পরনের লুঙ্গি সামলে দৌড়তে দৌড়তে আসছেন, আতঙ্কিত! কাছে আসতে আমি নিরাসক্ত মুখে বললাম, “যেখানে পড়ে নেই সেখানে কাজ সেরে তাড়াতাড়ি আসুন, পোলিং এজেন্টরা এসে পড়বেন এখনই।” আসলে, যেটা দেখে উনি দৌড়ে এসেছেন, ভোররাতে ‘বড় বাইরে’ সারতে গিয়ে টর্চের আলোয় বাঁশঝাড়ে সেই বোমাটা আমিও পড়ে থাকতে দেখেছি!

প্রতীপ কুমার দত্ত বোলপুর, শান্তিনিকেতন

আলাদা পাতা

বহু খবরের কাগজে রাজ্যের খবর, জেলার খবর, সিনেমার খবর, খেলার খবর শিরোনামে কিছু পাতা নির্দিষ্ট থাকে। এখন সমাজে যা চলছে, মনে হয়, পরিসংখ্যানের বিচারে ‘ধর্ষণের খবর’ বা ‘ধর্ষণের পাতা’ও করতে হতে পারে।

সীতারাম বেহানী কলকাতা-২৯

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন