অভিষেক মুখোপাধ্যায়ের ‘সাফল্যের উল্টো পিঠ’ (১০-১১) শীর্ষক প্রবন্ধে সঠিক ভাবেই বলা হয়েছে খেলার মাঠে ভারতের মেয়েরা জিতেছেন, বাইরের লড়াই এখনও বাকি। দীর্ঘ দিন মহিলা ক্রিকেটারদের ভাগ্য নির্ধারিত হত পুরুষ-প্রধান বোর্ডের কর্মকর্তাদের দ্বারা। এখন আর্থিক পরিস্থিতির কিছুটা সুরাহা হলেও যাতায়াতের মাধ্যম, হোটেলের মান, ট্রেনিং ইত্যাদি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুরুষ ক্রিকেটারদের সঙ্গে ব্যবধান আছে। প্রবন্ধকার লিখেছেন— এ যুদ্ধ অনেক পুরনো, হাজার হাজার বছর আগেকার। দেশে, বিদেশে সর্বত্র এই যুদ্ধ চলছে; ভবিষ্যতেও চলবে— মেয়েদের সমান অধিকারের লড়াই। ছেলেদের মতো করেই মেয়েরা খেলাধুলা-সহ সমস্ত ক্ষেত্রে যোগদান করবেন, বাড়ির বাইরে বেরোবেন, অনেক রাতে বাড়ি ফিরবেন— এ সব বিষয় এখনও আমাদের পুরুষ নিয়ন্ত্রিত সমাজ মেনে নেয়নি। কী কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে এখনও মেয়েদের লড়াই করতে হয়, চার পাশে তাকালেই দেখতে পাই।
নিজেদের বাড়িতে বা কর্মক্ষেত্রেও মেয়েরা নিরাপদ নন। আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড়, যিনি ভারতের সম্মান বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছেন, সেই কুস্তিগিরের উপর নির্যাতনের কথা আমরা জানি। বিভিন্ন জায়গায় প্রশাসন প্রকৃত অপরাধীকেই আড়াল করে। অনেক ক্ষেত্রে উল্টে অভিযোগকারীকে হেনস্থা করে, বা কেস-ডায়েরি তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেয়। ফলে অপরাধীরা প্রশ্রয় পেয়ে যায়। ধর্ষকদের ফুলের মালা দিয়ে রাজনৈতিক দলের সংবর্ধনার সংবাদ যন্ত্রণার সঙ্গে পড়তে হয়। মনে হয় যেন, উপর থেকে নীচ পর্যন্ত ন্যায়-নীতি-বিচার একই রাস্তায় হাঁটছে! ফলে হাথরস-উন্নাও-পার্ক স্ট্রিট-আর জি করের মতো ঘটনা এ দেশে ঘটতে পারে। মণিপুরে যারা মেয়েদের বিবস্ত্র করে হাঁটাল, তাদের উপযুক্ত শাস্তি হয়েছে কি?
ধর্ষণ-কন্যাভ্রূণ হত্যা-নারী পাচার ভারতে নিয়মিত ঘটনা। বিশেষ করে সংখ্যালঘু, দলিত মহিলারা খুবই অসহায় অবস্থায় থাকেন। ‘বিবাহের মাধ্যমে মেয়েদের দায়িত্ব শুধু পুরুষকে সন্তুষ্ট করা। পরিবর্তে তাঁরা ভরণ-পোষণ পাবেন’, এমন ধারণাই সমাজের এক বড় অংশের মধ্যে বর্তমান। এ দেশে খাতায়-কলমে ‘দাসপ্রথা’ চালু নেই। অথচ, বহু জায়গায় মেয়েদের ক্ষেত্রে যেন সেই নিয়ম এখনও চলছে। এর বিরুদ্ধেই রামমোহন-বিদ্যাসাগরের মতো সমাজ সংস্কারকের আজীবন লড়াই ছিল। তাই হয়তো আজ জাতীয় শিক্ষানীতি (২০২০)-তে তাঁদের নাম বাদ গিয়েছে।
প্রবন্ধকার বলতে চেয়েছেন— বিশ্বজয়ী মেয়েদের বাইরের লড়াই এখনও বাকি। আমার মতে, এই লড়াই শুধু মেয়েদের একার নয়। নারী-পুরুষ সবাইকেই এই লড়াইয়ে যোগ দিতে হবে।
নিখিল কবিরাজ, শ্যামপুর, হাওড়া
স্বপ্নের জয়
অভিষেক মুখোপাধ্যায়ের ‘সাফল্যের উল্টো পিঠ’ শীর্ষক প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বলি, ক্রিকেটে বিশ্বজয় করে ইতিহাস সৃষ্টি করল ভারতীয় মহিলারা। এ তো শুধু ক্রিকেটের জয় নয়, এ অনেক প্রশ্নের জবাব, অনেক ‘ট্যাবু’র বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর স্পর্ধা। মনে পড়ে এই বিশ্বকাপের বারো বছর আগে, ২০১৩ সালেও মহিলা বিশ্বকাপের আয়োজক ছিল ভারত। সেই সময় সমস্ত ম্যাচের আয়োজন করা হয়েছিল মুম্বই এবং কটকে। কিন্তু প্রতিযোগিতা শুরুর সপ্তাহখানেক আগে, নির্ধারিত ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম থেকে সব ম্যাচ হঠাৎ সরিয়ে দেয় বিসিসিআই। কারণ, মুম্বই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন চেয়েছিল ওয়াংখেড়েতে রঞ্জি ট্রফির ফাইনাল খেলতে। বারো বছর আগের সেই অবহেলার ‘জবাব’ দিল বিশ্বকাপের এই জয়। সেই সময় যে টুর্নামেন্ট দেখতে হাতেগোনা দর্শক আসতেন, এ বার সেই একই টুর্নামেন্টের ফাইনালে নবী মুম্বইয়ের ডি ওয়াই পাটিল স্টেডিয়াম উত্তাল ছিল নীল ঢেউয়ে। মেয়েরা জয়ের স্বপ্ন দেখা কখনও বন্ধ করেননি, স্বপ্ন দেখেই তাঁরা আজ এত দূর পৌঁছেছেন। ঠিকই তো, যে স্বপ্ন দেখতে জানে না সে পরিবর্তন আনবে কী করে?
প্রদীপ কুমার সেনগুপ্ত, ব্যান্ডেল, হুগলি
কুর্নিশ
অনেক স্বপ্নভঙ্গের রাত পেরিয়ে অবশেষে স্বপ্নপূরণের রাত এল গত ২ নভেম্বর। ভারতের মেয়েরা ক্রিকেট বিশ্বকাপ জিতে নিলেন। ২০১৭-র বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠার পর এ দেশে মেয়েদের ক্রিকেটে অগ্রগতি দ্রুততর হয়েছে ঠিকই, কিন্তু প্রচারের ক্ষেত্রে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের ক্রিকেট এখনও অনেক পিছনে। সাধারণ মানুষও মেয়েদের ক্রিকেট সম্পর্কে ততটা ওয়াকিবহাল নন। ১৯৮৩-র বিশ্বকাপে জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে কপিলদেবের অপরাজিত ১৭৫ রানের ইনিংস আমাদের স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করে। অথচ, ২০১৭-র মহিলাদের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে হরমনপ্রীতের ১৭১ রানের ইনিংস তত চর্চিত হয় কি? গত জুন-জুলাই মাসে ভারতের পুরুষ ও মহিলা ক্রিকেট দল একই সঙ্গে ইংল্যান্ড সফরে ছিল। মহিলা ক্রিকেট দল পাঁচটি টি২০ ও তিনটি একদিনের ম্যাচের সিরিজ়-এর দু’টিতেই জেতে। কিন্তু তাঁদের ক্রিকেটের খবর কতটুকু সংবাদমাধ্যমে জায়গা পেয়েছিল? একটি খেলারও পুরো স্কোরকার্ড দেখতে পাইনি। এই মানসিকতার পরিবর্তন হলে আনন্দ পাব।
পর পর তিনটি ম্যাচে হারার পরেও মনোবল না হারানো, সেমিফাইনালে দুরন্ত লড়াইয়ে জয় ছিনিয়ে নেওয়া, সবশেষে ফাইনালে জয়— সব মিলিয়ে এই বিশ্বকাপ অনন্য। আহত হয়ে দলের বাইরে চলে যাওয়া প্রতীকাকে হুইলচেয়ারে সামনে রেখে বিশ্বকাপ জয়ের উদ্যাপন আর মাঠে উপস্থিত পূর্বসূরিদের হাতে বিশ্বকাপ তুলে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন— অবিস্মরণীয়। এই মেয়েদের কুর্নিশ।
স্বস্তি আচার্য, নরেন্দ্রপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
অনুপ্রেরণা
‘দৃষ্টিহীনদের বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন ভারত’ (২৪-১১) সংবাদ পড়ে এবং দৃষ্টিহীন ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটারদের বিজয়োল্লাসের ছবি দেখে খুব আনন্দ হল। এই বছরেই প্রথম দৃষ্টিহীন মহিলাদের টি২০ বিশ্বকাপ আয়োজন করা হয়। প্রথম বারেই টুর্নামেন্ট জিতে ভারতের দৃষ্টিহীন কন্যারা কলম্বোর মাঠে ইতিহাস গড়লেন। এঁদের অধিকাংশই গ্রামের দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে। তা সত্ত্বেও টি২০ বিশ্বকাপের প্রথম থেকেই ভাল পারফরম্যান্স করেছেন তাঁরা। অপরাজিত থেকে ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এই খেতাব তাঁদের দলের জন্যই শুধু নয়, দেশের পক্ষে উচ্চাশা ও গৌরবের প্রতীক। প্রতিবন্ধকতা নয়, সাহস ও আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে পারলে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছনো সম্ভব। ভারতের দৃষ্টিহীন কন্যারা তার দৃষ্টান্ত রাখলেন।
সুবীর ভৌমিক, কলকাতা-৫৫
বিপজ্জনক
বেশ কিছু দিন ধরেই কলকাতা এবং তার আশপাশে ভ্যানজাতীয় গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে, যারা বিপজ্জনক ভাবে বাঁশ, লোহার রড, গ্যাস সিলিন্ডার ইত্যাদি নিয়ে মেন রাস্তার উপর দিয়ে চলাচল করছে। এদের কারণে মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটছে। এরা বেশির ভাগ সময়েই সিগন্যাল মানে না। বৈধ লাইসেন্স আছে কি না, তা-ও জানা নেই। অবাক হলাম কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে-তেও এদের অবাধ যাতায়াত দেখে।
তপন বিশ্বাস, কলকাতা-১৩৫
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে