‘এ কী বন্ধনে জড়ালে গো বন্ধু’ (১৪-৭) শীর্ষক লেখায় গায়িকা গীতা দত্তের জীবনসংগ্রামের সঙ্গে সঙ্গীতজগতে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার যে কথা প্রকাশ পেয়েছে, তার বেশির ভাগ অংশ জুড়েই আছে মুম্বই ও সেখানকার হিন্দি চলচ্চিত্রের বিখ্যাত গান, আর সেই গানের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রখ্যাত গীতিকার, সুরকার ও কলাকুশলীদের কথা।
কিন্তু গীতা দত্ত তো কেবলমাত্র হিন্দি গানের শিল্পী নন, বা এ গানের জন্যই জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন তা-ও নয়। তাঁর সঙ্গীতের ভাণ্ডার বহু বাংলা গানে সমৃদ্ধ ছিল। বাংলা ছায়াছবি ‘হারানো সুর’-এর ‘তুমি যে আমার’, ‘হসপিটাল’-এর ‘এই সুন্দর স্বর্ণালী সন্ধ্যায়’, বা ‘পৃথিবী আমারে চায়’-এর ‘নিশিরাত বাঁকা চাঁদ আকাশে’ গানগুলি তো বটেই, তাঁর কণ্ঠ বাংলা চলচ্চিত্রকে উপহার দিয়েছে ‘ইন্দ্রাণী’র ‘ঝনক ঝনক কাঁকন বাজে’, ‘ডাকহরকরা’ ছবির ‘কাচের ছড়ির ছটায় ছেঁইয়াবাজির ছলনা’, ‘সোনার হরিণ’-এর ‘তোমার দু’টি চোখে’, ‘স্বরলিপি’র ‘আমি শুনেছি তোমারি গান, প্রভু শুনেছি তোমারি গান’।
চলচ্চিত্র ছাড়াও আধুনিক বাংলা গানের ক্ষেত্রেও তাঁর অবদান অসামান্য। এখনও আমাদের মনপ্রাণকে তৃপ্তিতে ভরিয়ে দেয় তাঁর সুরেলা কণ্ঠনিঃসৃত ‘এই মায়াবী তিথি’, ‘কৃষ্ণচূড়া আগুন তুমি’, ‘কাজল কাজল কুমকুম’, ‘ঝিরিঝিরি চৈতালী বাতাসে’, ‘একটু চাওয়া আর একটু পাওয়া’, ‘আকাশ জুড়ে স্বপ্নমায়া’, ‘ভুলিতে যে পারি না’, ‘ওই সুরভরা দূর নীলিমায়’, ‘হৃদয় আমার যদি কিছু বলে’ এমন অনেক গান। ধান কাটার পরিবেশ নিয়ে তাঁর অন্য ধরনের গাওয়া ‘আয় রে, আয় রে ছুটে, আয় রে সবে আয় রে আয়’ গানটি কি কখনও ভোলা যাবে?
অমলকুমার মজুমদার, চ্যাটার্জিহাট, শিবপুর, হাওড়া
অনন্য মানুষ
সাহিত্য আকাদেমির প্রযোজনায় এবং তৎকালীন সভাপতি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের উদ্যোগে রমাপদ চৌধুরীর ওপর একটি প্রামাণ্য ছবি নির্মাণ করার সুবাদে, রমাপদবাবুর সঙ্গে আলাপচারিতার সৌভাগ্য হয়েছিল। কোনও সভাসমিতি, আলোচনা ইত্যাদি সযত্নে এড়িয়ে চলা এই অগ্রগণ্য সাহিত্যিক ছিলেন একদম অন্য রকম মানুষ। আমি এ পর্যন্ত চিত্রনির্মাণের সুবাদে যে ক’জন সাহিত্যিকের সঙ্গে আলাপচারিতার সুযোগ পেয়েছি, তাঁদের মধ্যে রমাপদ চৌধুরী স্মরণীয়, কারণ, শিল্প সাহিত্য সমাজ প্রসঙ্গে অমন অকপট সোজাসাপ্টা স্বতঃস্ফূর্ত অভিমত প্রকাশ করতে আমি আর কাউকে দেখিনি। প্রায় ৯৩ বছর বয়সে (ছবিটি করার সময়ে) যে ঋজু মেদহীন মানুষটি বাজারের থলি হাতে চার তলার ফ্ল্যাটে স্বচ্ছন্দে সিঁড়ি ভেঙে উঠে যেতেন এবং যিনি বলেন তাঁর সাহিত্যকর্মের অনুপ্রেরণা কোনও লেখক নন, এক জন কবি— জীবনানন্দ দাশ এবং তাঁর কাব্যগ্রন্থ ‘মহাপৃথিবী’, তাঁকে স্বতন্ত্র ও অনন্য বলে প্রণাম জানাতেই হয়। উনি আরও বলেন যে, সাহিত্যিক হওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে তাঁর ছিল না। তিনি এক জন পাঠক বা সম্পাদক হিসেবে জীবনযাপন করতে চেয়েছিলেন। বলেন, ভারতে শিল্পবিপ্লব এনেছে ভারতীয় রেলপথ। আরও বলেন, তাঁর অনেকগুলি গ্রন্থের বহুল সংস্করণের অন্যতম কারণ গ্রন্থের প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণের সৌকর্য। তিনি এক কোটি টাকা অর্থমূল্যের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েও অবিচল, নির্বিকার, প্রচারবিমুখ থেকেছিলেন, এবং বলতে পেরেছিলেন, ‘‘এক সময় লেখা থামিয়ে দিতে হয়, থেমে যাওয়াও একটা আর্ট।’’ এই সংযতবাক্, প্রচারবিমুখ অকপট মানুষটির জীবনযাপন এবং দৃষ্টিভঙ্গি পরবর্তী প্রজন্মের সাহিত্যিকদের কাছে শিক্ষণীয় হওয়ার দাবি রাখে।
রাজা মিত্র
বালিগঞ্জ, কলকাতা
‘কল্পনা’ নয়
‘জলসা মানেই তখন কিশোর’ (রবিবাসরীয়, ২৯-৭) রচনায় সুমিত্র গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছেন, মহম্মদ রফি কিশোরকুমার অভিনীত ‘কল্পনা’ ছবির রাগাশ্রয়ী গান ‘মন মোরা বাওরা’ দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করলেন। কথাটি ঠিক নয়, কারণ এই গানটি কিশোরকুমার অভিনীত ‘রাগিনী’ ছবির। দাদামণি অশোককুমার দ্বারা প্রযোজিত এই ছবির সুরকার ছিলেন ওঙ্কার প্রসাদ নাইয়ার। শোনা যায় কিশোর এই গানটি নিজের গলায় গাইবার জন্য দাদামণির মাধ্যমে নাইয়ার সাহেবের কাছে দরবার করেছিলেন, কিন্তু তিনি কর্ণপাত করেননি। ‘রাগিনী’ ছাড়া ‘শরারত’ এবং ‘প্যার দিওয়ানা’ ছবিতেও রফি কিশোরকুমারের জন্য কণ্ঠদান করেন।
অভিজিৎ রায়
জামশেদপুর
পরে কী হয়?
আজকাল প্রায়ই সংবাদে প্রকাশ হয় একটি প্রাপ্তবয়স্ক (১৮ বছরের) মেয়ে ভালবাসার টানে অভিভাবকের অজ্ঞাতসারে প্রেমিকের হাত ধরে বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করেছে। অতঃপর অভিভাবক প্রথমে নিখোঁজ, পরে অপহরণের অভিযোগ করলে পুলিশ প্রাথমিক ভাবে দু’জনকে আটক করল, কিন্তু মেয়েটি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে বলল যে সে স্বেচ্ছায় ছেলেটিকে ভালবেসে বিয়ে করেছে, স্বামীর সঙ্গেই থাকতে চায়। অতঃপর মেয়েটি হাসিমুখে তার স্বামীর ঘর করতে চলল। কিন্তু সেই মেয়েগুলি (বিশেষ করে নিম্নবিত্ত ও অল্পশিক্ষিত যারা) এত ‘অল্প’ বয়সে জীবনের এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরবর্তী সময়ে কেমন আছে, সে সম্পর্কে আমরা জানতে পারি না। বিশেষ করে মেয়েটির কথা বলা এই কারণে যে, পরবর্তী দাম্পত্য জীবনে ছন্দপতন হলে আমাদের এই আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় মেয়েটিকেই সারা জীবন দগ্ধ হতে হয়। ছেলেটির কিন্তু সেই সমস্যা বিশেষ থাকে না। প্রশ্ন উঠতেই পারে, যেখানে ১৮ বছর হলে কোনও ব্যক্তি রাষ্ট্র পরিচালনার মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ করছে (ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে) সেখানে বিবাহের সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো পরিপক্বতা তার থাকবে— এটা মেনে নিতে অসুবিধা কোথায়?
প্রথমত রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশ নিয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিলেও সেটা সরাসরি তার জীবনকে প্রভাবিত করে না। উপরন্তু পাঁচ বছর পর তার সেই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার সুযোগ থাকছে। বিয়ের ক্ষেত্রে কিন্তু একটি ভুল সিদ্ধান্ত তার জীবনে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে এবং সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার সুযোগ বাস্তবিক থাকে না। মেয়েগুলি নিজের বাবা-মাকে ছেড়ে অজানা অচেনা পরিবেশে গিয়ে বিপদে পড়লে, কিছুই করার থাকে না। তার উপর বিয়ের পরেই সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়লে ভুল শোধরানোর সুদূরতম সুযোগও আর অবশিষ্ট থাকে না। ওই বয়সে তারা মানসিক ভাবে খুবই সংবেদনশীল। সামান্য টিভি দেখা নিয়ে মায়ের বকুনি সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা পর্যন্ত ঘটছে।
তাই আমার প্রস্তাব, মেয়েদের বিবাহের ন্যূনতম বয়েস ১৮ বছরই থাকুক যেখানে সেই বিবাহে তার অভিভাবকের সম্মতি থাকবে। কিন্তু স্বেচ্ছায়, অর্থাৎ যে ক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতি নেই, সেই বিবাহের ক্ষেত্রে ছেলেদের মতো মেয়েদেরও বিবাহের ন্যূনতম বয়স ২১ বছর করা হোক।
অনিন্দ্য পাল
কলকাতা-৯৬
ভুল তারিখ?
বাংলা পঞ্জিকা বা ক্যালেন্ডার মতে ৮ অগস্ট ২০১৮ ছিল বাংলা ২২ শ্রাবণ ১৪২৫। কিন্তু আপনারা ৭ অগস্ট ২২ শ্রাবণ ধরেছেন। অর্থাৎ এই পত্রিকায় ভুল বাংলা তারিখ ছাপা হচ্ছে।
শান্তনু দত্ত
আলিপুরদুয়ার
আনন্দবাজার পত্রিকার উত্তর: বাংলায় একাধিক পঞ্জিকা প্রচলিত। আনন্দবাজার পত্রিকা বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা-র মত মেনে চলে। সেই পঞ্জিকা অনুযায়ী, ১৪২৫ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ ছিল ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের ৭ অগস্ট। ভুল কিছু হয়নি।
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।