সম্পাদক সমীপেষু: নেতাদের বাবুয়ানি

অ্যারিস্টোক্র্যাট স্টুপিডদের সঙ্গে পার্টি করব না— ছোট মুখেই এত বড় কথাটা মুখের উপরে বলে দিয়ে চলে এসেছিলাম’’ (‘প্রেমে পড়েছি...’, রবিবাসরীয়, ২১-৭)।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৯ ০০:৩৯
Share:

বিমান বসু।

2 কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের কি বিলাসবহুল জীবন শোভা পায়? নেতাদের বাবুয়ানির কালচার অনেক সময় পার্টিকর্মীদেরও সহ্য হয় না। জেনে ভাল লাগল, বিমান বসু যৌবনে ছিলেন এই পার্টিকর্মীদের দলে। তাঁর মুখে শোনা গেল: ‘‘বাবুয়ানি সহ্য হত না। অ্যারিস্টোক্র্যাট স্টুপিডদের সঙ্গে পার্টি করব না— ছোট মুখেই এত বড় কথাটা মুখের উপরে বলে দিয়ে চলে এসেছিলাম’’ (‘প্রেমে পড়েছি...’, রবিবাসরীয়, ২১-৭)। তবে অ্যারিস্টোক্র্যাট স্টুপিড নয়, অথচ কমিউনিস্টসুলভ দম্ভ নিয়ে চলেন, এমন নেতার সংখ্যাও কম নয়। অশোক মিত্র ‘তিন কুড়ি দশ’ বইতে লিখেছেন, ‘‘বামপন্থীদের মধ্যে একটি বিশেষ শ্রেণি ছিলেন; তারা সকলেই হয় বড়লোক না হয় পয়সাওলা পরিবারের ছেলে,... আরেক ধরনের বামপন্থী ছিলেন যারা ইংলন্ডে এসেছিলেন আইসিএস হবার জন্যে, কিন্তু ফেল করে বা অন্য কারণে, শেষে ব্যারিস্টারি পড়তে গেলেন, পরে রাজনীতিতে যোগ দিয়ে পদমর্যাদার জোরে একাধারে উদ্ধত, অজ্ঞ ও ধূর্ত হয়ে উঠলেন।’’ জ্যোতিবাবুর শৌখিন জীবনযাপন নিয়ে অনেক সমালোচনা সিপিএমকে সইতে হয়েছে। বিমানবাবু, বুদ্ধবাবুর জীবনযাত্রায় বিলাসিতার ছাপ ছিল না, আজও নেই, কিন্তু তাঁরাও কি নেতাসুলভ দম্ভকে অগ্রাহ্য করে চলতে পেরেছেন? একাধিক নেতার হামবড়া স্বভাবের দরুন নেতা ও কর্মীদের মধ্যে অসেতুসম্ভব দূরত্ব রচিত হয়েছে। কমিউনিস্ট পার্টিকে শ্রমিক-কৃষকের পার্টি বলা হয়, যদিও দলের নেতৃত্বে ইংরেজি-শিক্ষিত এলিটদেরই দাপট লক্ষ করা যায়। পার্টি গরিবের জন্য লড়াই করে, কিন্তু কম লেখাপড়া-জানা বা কম রোজগেরে কর্মীরা পার্টিতে নেতৃত্বের আজ্ঞাবহ হয়েই চলতে বাধ্য হন।
শিবাশিস দত্ত, কলকাতা-৮৪

Advertisement

তখনও মেট্রোয়

2 ‘এত ব্যস্ততা’ (১৬-৭) শীর্ষক চিঠিতে পড়লাম, ‘‘আজ থেকে বছর কুড়ি আগেও দেখেছি, মেট্রো ট্রেনের গেট ঠিকঠাক বন্ধ না হলে, ট্রেন ছাড়ত না বা ছাড়তে পারত না।’’ তা ঠিক নয়। সেই সময়ও এ রকম একটি ঘটনা ঘটেছিল। মেট্রো রেলের এক স্টেশন থেকে উঠতে গিয়ে ভদ্রলোকের হাত দরজায় আটকে যায়। ভেতর থেকে লোকেরা শক্ত করে তাঁর হাত ধরে থাকে, আর ভদ্রলোক দরজার সঙ্গে শরীরটা লেপ্টে রাখেন। ২/৩ মিনিট গভীর উৎকণ্ঠায় কাটিয়ে, পরবর্তী স্টেশনে সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। ভদ্রলোক ২০০২ সালে মেট্রো রেলের বিরুদ্ধে রেলওয়ে ক্লেমস ট্রাইবুনাল/কলকাতা বেঞ্চে কেস ফাইল করে, তাঁর ‘মেন্টাল ট্রমা’র জন্য চার লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। কিন্তু বিচারকরা দাবি নাকচ করেন, তাঁকে আরও সতর্ক হতে বলেন। আমি তখন ট্রাইবুনালে কর্মরত ছিলাম বলে কেসটা কিছুটা মনে আছে। আসলে দরজা পুরো বন্ধ না হলে ট্রেন চলতে পারবে না— এই বদ্ধমূল ধারণাই যাত্রীদের বিপদ ডেকে আনছে।
সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস, পলতা, উত্তর ২৪ পরগনা

Advertisement

কথা পাচ্ছে

2 খিদে, তৃষ্ণার মতো, মানুষের কথাও পায়, কারও দিনে ষাটটা, কারও বা শ’দুয়েক। কথা পেলে অনেক মানুষই এখন আঙুল দিয়ে তার প্রকাশ ঘটায়, হোয়াটসঅ্যাপে টাইপ করে। সংলাপের অভিব্যক্তির বিবর্তন বেশ অভিনব, প্রণিধানযোগ্য।
শোভন সেন, সাঁতরাগাছি, হাওড়া

দুই মেরু

2 আকর্ষক দুটো খবর পড়লাম। চন্দ্রাভিযানের সাফল্য চেয়ে ইসরোর চেয়ারম্যান তিরুপতি মন্দিরে পূজা দিলেন। আর, গ্রামবাংলার এক পুরোহিত, ধর্মীয় নিয়মকানুনই যাঁর রোজগারের হাতিয়ার, নিজের বাড়িতে ঠাঁই দিলেন এক নিরাশ্রয় মুসলমান মহিলাকে।
বিস্মিত হয়ে ভাবতে হয়, দুটোই আমার ভারতবর্ষ! দেশের কৃতীতম বিজ্ঞানীদের সংগঠন যেখানে আর্থিক প্রাচুর্যের (প্রকল্পের খরচ প্রায় এক হাজার কোটি টাকা) মধ্যেও আত্মবিশ্বাস হারাচ্ছেন, অখ্যাত গ্রামের এক মানুষ দারিদ্রকে অগ্রাহ্য করে আত্মায় আস্থা রাখছেন। দেবাশিস মিত্র
কলকাতা-৭০

সাংবাদিকতা

2 অমিতাভ গুপ্ত ‘‘মিসটেক, মিসটেক’’ (১২-৭) শীর্ষক প্রবন্ধে লিখেছেন, এই প্রথম নাগরিক সমাজ সাংবাদিকদের শত্রু হিসেবে দেখল। কথাটা ঠিক নয়। ষাট থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত সাংবাদিকতা করেছি, মাঝে মাঝে নাগরিকদের হাতে সাংবাদিকদের নিগৃহীত ও অপমানিত হতে দেখেছি। সত্তরের দশকে এক সিনিয়র সাংবাদিক মেডিক্যাল কলেজে রিপোর্ট করতে গিয়ে জনতার হাতে নিগৃহীত হন। আমি বহু বার কলকাতায় খবর করতে গিয়ে শ্লেষ বিদ্রুপের শিকার হয়েছি। এটিকে তখন আমরা সবাই ‘পেশাগত বিপত্তি’ বলেই গণ্য করতাম। নকশাল আমলে আমাদের এক সহকর্মী আততায়ীদের হাতে নিহত হন।
সাংবাদিক নিগ্রহের পিছনে বহু কাল ধরে যে ধারণা কাজ করে— সংবাদপত্র সরকারের আজ্ঞাবহ বা কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দলের তাঁবেদার। তাই তারা সত্যি কথা লেখে না। সাম্প্রতিক কালে আমাদের সমাজে পেশিশক্তিই স্বাধিকার প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এ ক্ষেত্রে নিরীহ বেতনভুক সাংবাদিকদের হাতের কাছে পেলে তথাকথিত ‘নাগরিক সমাজ’ ‘হাতের সুখ’ মিটিয়ে নেবে, আশ্চর্য কী!
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় অভিযোগ করেছেন, কিছু সাংবাদিক টাকা খান, তাঁর কাছে তথ্যপ্রমাণ আছে। আমি লিখিত ভাবে কলকাতা প্রেস ক্লাবকে অনুরোধ করেছিলাম, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে বিধানসভায় দোষী সাংবাদিকদের নাম প্রকাশ করতে বলুন। আমার প্রস্তাব গ্রাহ্য হয়নি। গত প্রায় ২০০ বছর ধরে বহু সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে বাংলার সাংবাদিকেরা সততা, নিরপেক্ষতা, বস্তুনিষ্ঠতা, প্রতিবাদের ঐতিহ্য গড়ে তুলেছিলেন। তাঁদের প্রতি মানুষের আস্থা যদি চলে যায়, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ ভেঙে পড়তে দেরি নেই।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা-৬৪

আপত্তিকর

2 প্রতি সন্ধ্যায় টিভি সিরিয়াল দেখি। সিরিয়ালগুলিতে, কোনও মানুষকে হেয় প্রতিপন্ন করতে প্রায়ই ব্যবহৃত হয় ‘গেঁয়ো’, ‘গাঁয়ের জংলি’ ইত্যাদি শব্দ। গ্ৰামে বসবাসকারী মানুষদের কাছে যা অত্যন্ত অপমানজনক। নির্মাতারা নিশ্চয় জানেন, সিরিয়ালের গরিষ্ঠ অংশের দর্শক গ্ৰামের। ‘‘দৃশ্যের বিশ্বাসযোগ্যতার প্রয়োজনে ব্যবহৃত’’— অজুহাত না দিয়ে, বিকল্প শব্দ ব্যবহার করলে ভাল হয়।
ক্ষেত্রনাথ মণ্ডল, বিষ্ণুপুর, পূর্ব বর্ধমান

জাতের নামে

2 জাতপাত তুলে শিক্ষিকাকে অপমান করার ঘটনা ঘটেছে বলে অনেকে মর্মাহত। আমি নিজের জীবনের একটা ঘটনা বলি। হুগলি জেলার একটি গ্রামে, আমার এক বন্ধুর সঙ্গে তার পরিচিত এক ব্যক্তির বাড়ি যাই। গৃহকর্তা চা-বিস্কুট দিয়ে আপ্যায়ন করেন। চা খাওয়ার পরে গৃহকর্তা বন্ধুকে বলেন, ‘‘চক্রবর্তী, আমরা যে হেতু কুলীন ব্রাহ্মণ, তাই কাপ-ডিশগুলো তোমরা একটু কষ্ট করে ধুয়ে দাও।’’ বাড়ির কাছের একটা পুকুর দেখিয়ে দেন। স্তম্ভিত হয়ে যাই! অতঃপর নিজ নিজ কাপ-ডিশ নিয়ে পুকুরের দিকে যাই। বন্ধু নিজের কাপ-ডিশ ধুতে শুরু করে, আমি কাপ-ডিশ আছাড় মেরে ভেঙে, পুকুরের মাঝখানে ছুড়ে ফেলে দিই। গৃহকর্তার কাছে গিয়ে বলি, ‘‘অসাবধানতাবশত আপনাদের ক্ষতি করার জন্য দুঃখিত।’’ একটা কুড়ি টাকার নোট তাঁর দিকে বাড়িয়ে দিই। তিনি নির্বিকারচিত্তে তা গ্রহণ করেন!
অশোককুমার ঘোষ, লিলুয়া, হাওড়া

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন