অদ্ভুত এক নেশার দিকে এগিয়ে চলেছে তরুণ প্রজন্ম। যদি এখনই সেটাকে সমূলে উপড়ে ফেলা না যায়, তা হলে নিঃসন্দেহে পৃথিবী এক বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এই নেশার নাম অনলাইন গেমস। এ এক ভার্চুয়াল বিষ, যা নিত্য সেবন করে চলেছে যুবসমাজ। এই ভার্চুয়াল খেলা যুবসমাজকে এতটাই গ্ৰাস করেছে যে, সবুজ ঘাসের খেলার মাঠ আজ জঙ্গলে পরিণত হয়েছে।
করোনাভাইরাসের সঙ্গে প্রায় দেড় বছর ধরে গোটা বিশ্ব লড়াই করে চলেছে। পড়াশোনা শিকেয় উঠেছে। আর এই অবসরেই যুবসমাজ মজেছে বিভিন্ন আকর্ষক ও মজার অনলাইন গেমসে। তারা জানেই না, এটা কী ভাবে তাদের কেরিয়ারকে শেষ করে দিচ্ছে, তাদের জীবনের মূল্যবান সময়কে কী ভাবে গ্ৰাস করে নিচ্ছে।
মোবাইল প্রস্তুতকারী সংস্থার কম দামে আকর্ষক ফোন, সিম কোম্পানিগুলোর রকমারি অফার, ই-কর্মাসের লোভনীয় হাতছানি, সরকারি ও বেসরকারি অনুদান বা স্কলারশিপের টাকার সঙ্গে স্কুল ও কলেজ বন্ধ— সব মিলিয়ে এক কমপ্লিট প্যাকেজ অনায়াসে হাতের কাছে পেয়ে যাওয়ায় যুবসমাজ তার সদ্ব্যবহার করতে ভুলছে না। এর ফলে আমাদের তরুণ প্রজন্ম ধীরে ধীরে এক অজানা ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলেছে। এমতাবস্থায় যদি অভিভাবকগণ ও সরকার শক্ত হাতে হাল না ধরে, এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করতে পারে, তবে চোখের সামনেই যুবসমাজকে বিপন্ন হতে দেখতে হবে। কারও কিছু করার থাকবে না। তাই সময় থাকতে সাবধান হওয়া প্রয়োজন।
উজ্জ্বল সাঁতরা
জামালপুর, পূর্ব বর্ধমান
দশ টাকায় এসি
এখন বহরমপুর-কলকাতা সাপ্তাহিক প্যাসেঞ্জারি করতে গিয়ে শিয়ালদহ স্টেশনে লক্ষ করছি, যাত্রিসাধারণের সুবিধার্থে পূর্ব রেলের শিয়ালদহ শাখার উদ্যোগে শিয়ালদহ স্টেশনেই ১২ ও ১৩ নং প্ল্যাটফর্মের উপর ঘণ্টা প্রতি ও জন প্রতি মাত্র দশ টাকায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বিশ্রামের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই প্ল্যাটফর্মের লাইনে সাধারণত দূরপাল্লার গাড়িগুলো যাতায়াত করে। ট্রেনে এসি-তে যাওয়ার জন্য যাঁরা টিকিট কাটেন, তাঁদের জন্য ভাল ওয়েটিং রুমের ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু যাঁরা সেটা পারেন না, তাঁদের কিছু ক্ষণের জন্য কম টাকায় এসি ভোগ করার এক অভিনব ব্যবসায়ী কায়দা দেখে ভালই লাগছে।
সঞ্জয় কুমার মিশ্র
বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ
কঠিন পরীক্ষা
গত ১০ মে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নদিয়া জেলার শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা করার জন্য গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানকার ব্যবস্থা দেখে হতাশ হলাম। যাঁরা পরীক্ষা করাতে গিয়েছেন, তাঁদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অসুস্থ শরীরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে শুধুমাত্র কর্মচারী অপ্রতুলতার কারণে, যা তাঁদের আরও বেশি অসুস্থতার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ওই দিন কাউন্টার থেকে আউটডোর টিকিট কাটার পর অন্য একটি কাউন্টারে ফের লাইন দিলে ওখানে যিনি দায়িত্বে আছেন তিনি লিখে দিচ্ছেন র্যাপিড অ্যান্টিজেন, না আরটি-পিসিআর— কী পরীক্ষা করা হবে। এর পর নাম রেজিস্ট্রেশনের জন্য তৃতীয় বার লাইনে দাঁড়ানো।
দীর্ঘ দু’ঘণ্টার বেশি সময় গ্রীষ্মকালের এই দাবদাহ পরিস্থিতির মধ্যে খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে থেকে নাম নথিভুক্ত করা কতটা কষ্টকর, তা একমাত্র ভুক্তভোগীরাই জানেন। এত কষ্ট করে নাম নথিভুক্ত করার পর আমাদের পর দিন বেলা সাড়ে এগারোটায় পরীক্ষার সময় দেওয়া হল। নির্দিষ্ট দিনে উপস্থিত হয়ে বিশৃঙ্খল পরিবেশের মধ্যে পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে সমর্থ হলাম এবং তখনই জানিয়ে দেওয়া হল রিপোর্ট দেওয়া হবে আরও এক দিন পর বিকেল বেলায়।
নির্দিষ্ট দিনে আবারও দীর্ঘ দু’ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে রিপোর্ট সংগ্রহ করতে সক্ষম হলাম। আমার মনে হয়েছে, পর্যাপ্ত সংখ্যক কাউন্টার থাকলে নাম নথিভুক্ত করার সময় ও রিপোর্ট সংগ্রহের সময় মানুষদের এই হয়রানির শিকার হতে হত না। প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা এই ব্যাপারে যদি একটু ভাবেন, তা হলে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। এই পরিস্থিতিতে নতুন লোক নিয়োগ সম্ভব নয়। তাই সরকার যাঁদের প্রতি মাসে বেতন দিচ্ছে, এই রকম সরকারি কর্মচারীদের কাজে লাগানো উচিত। যাঁরা ট্রেন বন্ধ থাকার কারণে অফিস যেতে পারছেন না, অথবা শিক্ষকরা, যাঁদের পরিস্থিতির কারণে স্কুলে ক্লাস করতে হচ্ছে না, তাঁদের বাড়ির কাছাকাছি স্বাস্থ্য পরিষেবার কাজে নিযুক্ত করা হলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি সম্ভব হবে বলে মনে করি। এতে মানুষের হয়রানিও বন্ধ হবে।
২০০০ সালের বন্যার সময় যে সমস্ত বেতনভুক কর্মচারী পরিস্থিতির কারণে তাঁদের কর্মস্থলে উপস্থিত হতে পারছিলেন না, তাঁদের নিকটবর্তী ব্লক ডেভলপমেন্ট অফিসে জরুরি পরিষেবার স্বার্থে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছিল, এবং তাঁদের সংশ্লিষ্ট ব্লকে বন্যার্তদের সাহায্যের কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ রইল বিষয়টি ভেবে দেখার।
পার্থ সারথী মণ্ডল
কৃষ্ণনগর, নদিয়া
তবুও আশা
গত দুই দফায় সরকারকে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়গুলো নিয়ে সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম ছিল শিক্ষা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর ক্রমাগত ব্যর্থতায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের গোটা শিক্ষাব্যবস্থা। প্রাথমিক পর্যায় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত নিয়োগের ক্ষেত্রে বহু অভিযোগ উঠেছে। গত কয়েক বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক নিয়োগে সরকারের অনীহা ও বেকারত্ব সমস্যা বেড়েই চলেছে। রাজ্যের স্কুলগুলিতে কয়েক হাজার শিক্ষকের পদ ফাঁকা রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কয়েক বছর ধরে এসএসসি পরীক্ষায় বসতে না পারার কারণে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের হতাশার মধ্যে দিনযাপন করতে হচ্ছে। এ ছাড়াও নিয়োগ সংক্রান্ত বিভিন্ন দুর্নীতি ও বছরের পর বছর নবম থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত এসএসসি পরীক্ষা না হওয়ায় বিপাকে বিভিন্ন জেলার কয়েক লক্ষ শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতী।
তবে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল দেখে সরকারের প্রতি আমাদের প্রত্যাশা অনেক বেড়েছে। দায়িত্বও বেড়েছে নতুন সরকারের। নতুন সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, খুব দ্রুত নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত নতুন করে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা হোক। দুর্নীতিমুক্ত প্যানেল তৈরি ও প্রতি বছর এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া হোক। তা হলে শিক্ষিত বেকার ছেলেমেয়েরা উপকৃত হবে। পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকার কারণে স্কুলগুলির যে চরম দৈন্যদশা, স্কুলগুলি তা থেকে মুক্তি পাবে। শিক্ষক নিয়োগের পাশাপাশি সরকারি দফতরের সমস্ত পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু রেখে বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা জরুরি। পাশাপাশি এই রাজ্যে শিল্পবান্ধব পরিবেশ তৈরি হলে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
সুকমল দালাল
খণ্ডঘোষ, পূর্ব বর্ধমান
অ্যাপ নেই
বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা স্কুলপড়ুয়াদের জন্য নানা অ্যাপ তৈরি করে বিক্রি করছে। তার মাধ্যমে উপকার পাচ্ছে সিবিএসই, আইসিএসই বোর্ডের ছাত্রছাত্রীরা। তবে মনে রাখা উচিত যে, পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ, অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা, যারা বাংলা মাধ্যমে মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পড়ে আসছে, তাদের জন্য কোনও সুনির্দিষ্ট অ্যাপের অস্তিত্ব আপাতত নেই।
এক জন ছাত্রী হিসেবে আমাদের সমস্যার কথা জানালাম। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের কাছে এই বিষয়ে সুরাহার আর্জি রইল।
দেবারতি দেব
পশ্চিম বর্ধমান