Unemployment

সম্পাদক সমীপেষু: দু’রাজ্যে দৃষ্টান্ত

সারা দেশে যখন শ্রমজীবী মানুষের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়, তখন এই দুই রাজ্যে ঠিকা কর্মীদের প্রতি অন্যায়ের প্রতিবাদ, এবং তরুণদের স্থায়ী চাকরির দাবি এক অর্থে মান্যতা পেয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২২ ০৬:০৫
Share:

‘কর্মী নিয়োগে নতুন হাওয়া’ (১০-১১) শীর্ষক প্রবন্ধটিতে রঞ্জিত শূর একটা নতুন দিশা দেখালেন। শ্রমজীবীদের মাথার উপর যখন শ্রম কোডের খাঁড়া, সামনে যখন বেকারত্বের গভীর খাদ, মূল্যবৃদ্ধি যখন গরিব-নিম্নবিত্ত শুধু নয়, মধ্যবিত্তদেরও রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে, তখন রাজস্থান এবং ওড়িশা সরকার সে রাজ্যের শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থের কথা ভেবে যে পদক্ষেপ করেছে, তা নিঃসন্দেহে অভিনন্দনযোগ্য। এ এক নতুন হাওয়া। সারা দেশে যখন শ্রমজীবী মানুষের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়, তখন এই দুই রাজ্যে ঠিকা কর্মীদের প্রতি অন্যায়ের প্রতিবাদ, এবং তরুণদের স্থায়ী চাকরির দাবি এক অর্থে মান্যতা পেয়েছে। রাজস্থান সরকার ঘোষণা করেছে, অন্তত পাঁচ বছর কাজ করলে নিয়মিত কর্মচারী হওয়ার জন্য বিবেচিত হবেন ঠিকা কর্মীরা। ঠিকা কর্মীদের মজুরি নির্ধারিত হবে ‘সমকাজে সমবেতন’ নীতি মেনে। ঠিকা কর্মীদের পারিশ্রমিকও ২০ শতাংশ বাড়ানোর জন্য বাড়তি টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে ২০২২-২৩ সালের বাজেটে। অন্য দিকে, ওড়িশা সরকার ঠিক করেছে, তারা আর কোনও ঠিকা শ্রমিক নিয়োগ করবে না। যা নিয়োগ হবে, স্থায়ী পদে। বর্তমানে ওড়িশা সরকারের অধীনে কর্মরত ৫৭ হাজার ঠিকা কর্মীর সকলকেই স্থায়ী সরকারি কর্মী হিসাবে নিয়োগ করা হবে। এ জন্য বছরে ১৩ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচের অনুমোদনও করেছে ওড়িশা মন্ত্রিসভা। সরকারের এই সব পদক্ষেপের পিছনে কর্মচারীদের আন্দোলনের একটা ভূমিকা অবশ্যই আছে। আছে ভোটমুখী ভাবনাও। তবে সব রাজ্য এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না। সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না কেন্দ্রীয় সরকারও। ভোটের দিকে তাকিয়ে কেউ ক্লাবকে টাকা দিচ্ছে, কেউ প্রতি বছর ২ কোটি বেকারের চাকরি দেব, কালো টাকা উদ্ধার করে প্রত্যেকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মোটা টাকা জমা করে দেব— এমন সব মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। আবার কেউ বা শ্রমজীবীদের দুর্দশা মোচনের কথা ভেবে কিছু সদর্থক পদক্ষেপ করছে।

Advertisement

এ ক্ষেত্রে শ্রমিক সংগঠনগুলির ভূমিকাও খতিয়ে দেখতে হবে। ঠিকা কর্মীদের নিয়মিত কর্মী হিসাবে নিয়োগের দাবি বহু সংগঠনের কাছে কম গুরুত্বপূর্ণ দাবি হিসাবে বিবেচিত হয়। অথচ, স্থায়ী কর্মীদের দাবি আদায়ের আন্দোলনে ঠিকা শ্রমিকদের যুক্ত করতে কেউ ইতস্তত করে না। শ্রমিকদের বুঝে নিতে হবে যে, দীর্ঘস্থায়ী শক্তিশালী ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনই যে কোনও সরকারকে এ জাতীয় জনমুখী কাজ করতে বাধ্য করতে পারে। বিগত কৃষক আন্দোলনও সে কথাই বলে, যেখানে কেন্দ্র বাধ্য হয়েছিল তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করে নিতে। প্রবন্ধে এ রাজ্যের সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে। নেতারা খেলা-মেলা, ঠাকুর বিসর্জন নিয়ে যত ভাবিত, শ্রমিক-কল্যাণ নিয়ে ততটা নয়। এরা জানে, ক্লাবকে টাকা দিলে সেখান থেকে ভোট রাজনীতিতে সুবিধা পাওয়ার কিছু সম্ভাবনা থাকে। আর এই করতে গিয়ে বর্তমানে তারা সরকারি কর্মীদের ডিএ দিতে পারছে না। আর কেন্দ্রীয় সরকার তো বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ভারতের স্থান নিয়ে তর্ক করায় যত আগ্রহী, তার সামান্য আগ্রহও ক্ষুধা মেটানোয় দেখায় না। আজ ভারতের নেতারা গৌতম আদানিকে নিয়ে গর্ব করেন, তিনি বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি হওয়ার জন্য। এঁদের পক্ষে সম্ভব নয় মেহনতি মানুষের স্বার্থ দেখা।

গৌরীশঙ্কর দাস, খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

Advertisement

বনভোজন

অগ্নি রায়ের ‘কাশ্মীরে বনভোজনে বেজিং’ (১১-১১) রচনার অভিঘাতে আমার মতো দেশের সমস্ত সাধারণ জাতীয়তাবাদী মানুষ অবশ্যই ঘাড় কাত করবেন। কিন্তু এই কথাটির বিপ্রতীপে যদি সেই দেশের কেউ লেখেন ‘লাসায় বনভোজনে দিল্লি’, তা হলে ওই দেশের মানুষজনের কাছে এর প্রতিক্রিয়া এমনই হতে বাধ্য। এমন দু’টি লেখা যখন একই মানুষের কাছে পৌঁছবে, তখন কী হবে— প্রশ্ন সেটাই।

তবে লাসা সম্পর্কে দিল্লির এই ভাবনা যে হারিয়ে গিয়েছে, তা তো সুস্পষ্ট ভাবে বলা যায় না। সেই কবে ৩১ মার্চ, ১৯৫৯ রয়টার্স সে খবর ছড়িয়ে দেয়। আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় পোতালা প্রাসাদ ছেড়ে গোপনে পরিবার পরিজন ও এক দল সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে স্থাবর সম্পদ নিয়ে ঘোড়ায় বা খচ্চরের পিঠে চেপে পাহাড় পর্বত গিরিখাত পেরিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ পার হয়ে অবশেষে ভারতে এসে পৌঁছন ২৪ বছর বয়সি যুবক তেনজিং গিয়াৎসো। বৌদ্ধ ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী, তিব্বতিদের ভগবান তিনি, ‘দলাই লামা’ যাঁর পরিচয়। চতুর্দশ দলাই লামা রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়ে তিব্বতের নির্বাসিত সরকার গঠন করেন আমাদের দেশে। যেমন ১৯৭১ সালে কলকাতায় গঠিত হয়েছিল বাংলাদেশের নির্বাসিত সরকার। পরে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ জয়ের পর বাংলাদেশে স্থানান্তরিত হয়। তেমনই আমাদের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ওই নির্বাসিত তিব্বতি সরকারকে স্বাগত জানান। সেই সরকারের ভরণপোষণ, রক্ষণাবেক্ষণের দায়-দায়িত্ব আমরা বয়ে চলেছি। তাই অমন একটি বনভোজনের আকাঙ্ক্ষা যে সুপ্ত, তা বলা অনুচিত হলেও অপেক্ষা রাখে না।

কিন্তু কাশ্মীরে বনভোজনের আকাঙ্ক্ষা বা বিপরীতে লাসায় বনভোজনের আকাঙ্ক্ষা যার যত সুপ্তই থাকুক না কেন, আজকের সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে তা বিলাসিতা মাত্র। এবং এই বিলাসিতার খোয়াব যদি কেউ পূর্ণ করতে চায় তা হলে তার দায় বইতে হবে প্রথমত সেই দু’টি দেশের জনসাধারণকে, এবং শেষ বিচারের বিশ্বের জনগণকে। রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ যেমন আমাদের দেশে তেলের আকাল সৃষ্টি করেছে। শুধু তা-ই নয়, সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকেই টালমাটাল করে তুলেছে। এবং ডেকে আনছে পরমাণু যুদ্ধের আশঙ্কা।

জাতীয়তাবাদী হলেও দেশ বা দেশের সীমানা সম্পর্কে উদাসীন হওয়া চলে না। দেশের স্বার্থ, দেশের মানুষের স্বার্থ অগ্রগণ্য। তবে তা নিয়ে উন্মাদনা সৃষ্টির প্রচেষ্টা এক ক্ষতিকর প্রবণতা। কূটনৈতিক আলোচনা ও সংলাপ অক্ষুণ্ণ রেখে দু’পক্ষকেই এগিয়ে চলার দায় বহন করতে হবে। বড়-ছোটর আত্মম্ভরিতা নয়, পারস্পরিক মর্যাদা, সম্মান বজায় রেখে এগিয়ে চলাই একমাত্র সমাধানের পথ। পঞ্চশীল নীতিমালা সেই পুরনো পথেরই একটি।

অর্থনীতির আঙিনায় আজ আর কোনও দেশ নিজস্ব সীমায় আবদ্ধ নেই, সমস্ত দেশই আজ এক বিশ্ব অর্থনীতির সওয়ারি। ‘এক বিশ্ব, এক গ্রাম’ নীতি নিয়েছে বিশ্ব-পুঁজির মহারথী কর্পোরেট বাহিনী। খাদ্য, পোশাক-আশাক, সংস্কৃতিতে, ভাষায় আজ আমরা আন্তর্জাতিক হতে চাইছি। আমেরিকার ফেডারাল ব্যাঙ্ক সুদ বাড়ালে বা কমালে থরহরি কম্প হয় বিশ্বের সর্বত্র। বাঁধনহীন এই এক বিশ্ব অর্থনীতির সূত্রে আমরা আবদ্ধ।

শ্যামল ঘোষ, কলকাতা-৩১

দেশদ্রোহী

‘প্রকৃত গরল’ (১৪-১১) সম্পাদকীয়তে যথার্থই প্রশ্ন করা হয়েছে, কারা দেশকে ধ্বংস করতে চায়— দেশবিরোধী শক্তি, না কি দেশপ্রেমিক শক্তি? গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মানুষ সরকারকে নির্বাচিত করে তার অছি হিসেবে সরকার পরিচালনার জন্য। কিন্তু প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে কোটি কোটি টাকা নিজের বা দলের জন্য সংগ্রহ করছেন নেতারা। এটাই আজ আমাদের দেশের দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে। নেতা-মন্ত্রীরা দুর্নীতি করবেন এটা ভেবেই আমরা ভোটের লাইনে দাঁড়াই। আমরা সব দেখছি, এবং দেখতে দেখতে এই ঘটনাগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে ফেলছি। নেতা-আমলাদের দুর্নীতি নতুন কোনও বিষয় নয়, কিন্তু পরিস্থিতি কোথায় পৌঁছলে সুপ্রিম কোর্টের মহামান্য বিচারপতি মন্তব্য করতে বাধ্য হন যে, দেশকে ধ্বংস করতে চায় দুর্নীতিগ্রস্তরা? দেশবিরোধী শক্তি গোপনে দেশকে ধ্বংস করার চেষ্টা করে, কিন্তু দুর্নীতিগ্রস্ত নেতা-মন্ত্রী-আমলারা আমাদের চোখের সামনে দেশকে ধ্বংস করছেন। গণতান্ত্রিক কাঠামোকে দুর্বল করছেন।

শেষাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায়, ভদ্রেশ্বর, হুগলি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন