TMC

সম্পাদক সমীপেষু: তৃণমূলের সব ঠিক?

পুরসভা হোক বা বিধানসভা, বামফ্রন্টই বিপুল ভোটে জিতেছে। তার মানে এই নয় যে, সেই ঘটনাকে মান্যতা দেওয়া উচিত।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২১ ০৫:৩২
Share:

বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকে আনন্দবাজার পত্রিকা-য় প্রকাশিত সম্পাদকীয় প্রতিবেদন, চিঠিপত্র ইত্যাদি (দু’-একটি ব্যতিক্রম বাদ দিলে) পড়ে মনে হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে বিগত দশ বছরে যা যা হয়েছে, সব ঠিক। কারণ ভোটের ফলাফল তৃণমূলের পক্ষে গিয়েছে। বিগত দশ বছরে বেশ কিছু জনকল্যাণমূলক কাজ হয়েছে, যেগুলোর মধ্যে কিছু কাজ পূর্বে দেখা যায়নি, সে কথা কেউই অস্বীকার করতে পারবেন না। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, সরকারের কোনও ভুল ছিল না। কর্মপ্রার্থী, বেকার যুবকদের আন্দোলন, সরকারি কর্মচারীদের বঞ্চনা, মানুষের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অধিকার হরণ, বিরোধিতা সহ্য করতে না পারা, সরকারি প্রকল্পে দুর্নীতি, এগুলো কি মিথ্যা হয়ে যায়? বামফ্রন্ট সরকার ৩৪ বছর নির্বাচনে জিতেই সরকার চালিয়েছিল, তা বলে তাদের কোনও ভুল ছিল না? সাঁইবাড়ি ঘটনার পরে বর্ধমানে যত নির্বাচন হয়েছে (’৭২ সালের নির্বাচনকে হিসাবের মধ্যে আনছি না), পুরসভা হোক বা বিধানসভা, বামফ্রন্টই বিপুল ভোটে জিতেছে। তার মানে এই নয় যে, সেই ঘটনাকে মান্যতা দেওয়া উচিত।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে ধন্যবাদ, তাঁরা ঠিক সময়ে ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে তৃণমূল সরকারকে নির্বাচিত করেছেন, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ সৃষ্টিকারী কোনও দলকে এখানে ক্ষমতায় আনেননি। এখন রাজ্য সরকার পূর্বের ভুলগুলো শুধরে নিয়ে আগামী দিনে কাজ করুক। কেউ যেন মনে না করেন— আমরা যা করি তা-ই ঠিক, সেই জন্যই মানুষ আমাদের ভোট দিয়েছেন। তাঁরা যেন ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পরে বামফ্রন্ট সরকারের অবস্থাটা মনে রাখেন। বিশেষত, যখন এই প্রথম বিজেপি বিধানসভার প্রধান, বলা যায় একমাত্র বিরোধী দল।

পুলক চট্টোপাধ্যায়, শ্রীপল্লি, পূর্ব বর্ধমান

Advertisement

মেয়েরা কী চায়

‘মেয়েরা নিজের বাংলাকেই চায়’ (৫-৫) প্রসঙ্গে আমার প্রশ্ন, মেয়েরা যে বাংলাকে চাইছে, সেটা কোন বাংলা? যেখানে মেয়েদের নিরাপত্তা নেই, চাল চুরি, গরুপাচার, কাটমানি, কয়লা পাচার ইত্যাদি শিল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেই বাংলাকে চায় কি? এগুলো কি মেয়েদের ভাবনার বিষয় নয়? না কি ভোট দেওয়ার সময়ে এগুলো চিন্তা করার দরকার নেই। আমার মনে হয়, প্রকৃত বাংলার মেয়ে বলতে ঐশী ঘোষ, মালিনী ভট্টাচার্য, অপর্ণা সেন, মীরাতুন নাহার— এমন সমাজ সচেতন মেয়েদের কথাই বোঝায়। বাঙালি মেয়েরা কোনও দিনই বিচার ছাড়া কোনও মত গ্রহণ করেনি। কেবল সংখ্যাধিক্য দিয়ে চিন্তা করেনি। তাই বেশির ভাগ মেয়ে মমতাকে ভোট দিয়েছেন বলেই সেটা ঠিক হয়েছে, এমন ভাবার কারণ নেই।

অনুদান হারানোর ভয়কে এই নিবন্ধে বাসে সিট পাওয়ার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। বাসে সিট পেয়ে গেলেও ভাল সিটের দিকে নজর আমাদের সব সময় থাকে। তা পাওয়ার জন্য অন্য যাত্রীদের সঙ্গে ঝগড়াও করি। না করলে ভাল সুযোগ নষ্ট হয়। অনুদান হারানোর ভয় আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? তা যে বাঙালির চাকরির বা ব্যবসার প্রতি অনীহা তৈরি করে দিচ্ছে, সেটাও বলা দরকার। কত হাজার হাজার কর্মী-পদ বিলুপ্ত হয়েছে, সে কথা বাংলার মেয়েদের মনে করাবে কে?

কেন্দ্রীয় সাহায্য নিয়ে, ঋণ নিয়ে, প্রতিটি নাগরিকের মাথায় হাজার হাজার টাকার দেনা চাপিয়ে কোনও সরকার চলতে পারে না, চলা উচিত নয়। এই অনুদানের পরিকল্পনা দিয়ে ভোট কেনা হবে, ভারতের অন্য প্রদেশের নেতাদের অসম্মানজনক সম্বোধন করা হবে, আর শত লাঞ্ছনা অপমান ভুলে বাঙালি ভোট দিয়ে আসবে ‘বাংলার মেয়ে’র জন্য— এতেই কি বাংলার মেয়ের সম্মান বেড়ে যাচ্ছে?

শচীনন্দন দাস, কলকাতা-১৪৬

প্রকৃত বাম

অশোক কুমার মুখোপাধ্যায়ের ‘নয়া বামপন্থা’ (১৩-৫) চিঠিটি প্রসঙ্গে কিছু কথা যোগ করতে চাই। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে সিপিআই এমএল (লিবারেশন) নেতা দীপঙ্কর ভট্টাচার্যকে প্রশ্ন করা হয়, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বামপন্থী মনে করেন কি না। দীপঙ্করবাবু বললেন, তিনি মমতাকে বামপন্থী মনে করেন না। জনগণের মনে কিন্তু প্রশ্ন থেকেই গেল। এই বঙ্গে যাঁরা নিজেদের ‘বামপন্থী’ হিসেবে দাবি করে আসছেন, তাঁদের বামপন্থী বলা হচ্ছে কোন নিক্তিতে? কয়েক দশক আগে বঙ্গের ‘বামফ্রন্ট’ প্রসঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকা-র একটি সম্পাদকীয়তে তাৎপর্যপূর্ণ একটি শব্দবন্ধ ব্যবহৃত হয়েছিল— ‘বঙ্গীয় বামপন্থা’। তখন কিছু মহল থেকে এ-নিয়ে মৃদু প্রতিবাদও উঠেছিল, কিন্তু আজ ওই শব্দবন্ধটিই কার্যত প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছে। এর সত্যতা স্পষ্ট হয় যখন দেখি, বামেদের ভরাডুবির পরেও আলিমুদ্দিন থেকে পরাজয়ের কারণ হিসেবে নিজের দলের দুর্বলতাগুলো বাদ দিয়ে অন্য সব কিছুর প্রতি অঙ্গুলিনির্দেশ করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও তাঁর দলের দুর্নীতি স্বীকার করেন এবং তা দূর করতেও সচেষ্ট। যে কোনও দুর্নীতিকে দ্ব্যর্থহীন ভাবে নিন্দা করাই শ্রেয়। কিন্তু প্রশ্ন, চিটফান্ড, সিন্ডিকেট রাজ, তোলাবাজি এগুলো কি বাম আমলে ছিল না? বছরের পর বছর ভোটে বুথদখল ও কারচুপি কি ছিল না? ‘অনিলায়ন’ পদ্ধতি পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাক্ষেত্রে কী সর্বনাশ ঘটিয়েছে, সেটাও মনে রেখে কোন দল বামপন্থী আর কোন দল দক্ষিণপন্থী বা কোনটি ফ্যাসিস্ট দল, তার পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।

১৯৭৭ সালে ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই যে সব হত্যাকাণ্ড বঙ্গীয় বাম দলটির সৌজন্যে ঘটেছে, তা স্মরণ করলে বামমনস্ক মানুষ লজ্জিত হতে বাধ্য। প্রসঙ্গত বলি, বামেরা অসংখ্য ‘ঐতিহাসিক ভুল’ করেছেন। আজ না হলেও, ভবিষ্যতে ২০২১-এর নির্বাচনও নিশ্চয়ই ‘নয়া ঐতিহাসিক ভুল’-এর তালিকায় সংযোজিত হবে। তাই আরও ভুলের দিকে না গিয়ে জনগণের শ্রদ্ধা ফিরে পেতে প্রকৃত বামপন্থী হয়ে উঠতে অনুরোধ জানাই কমরেডদের।

শক্তিশঙ্কর সামন্ত, ধাড়সা, হাওড়া

দ্বিচারিতা

প্রতিটা নির্বাচনেই দেখি কোনও না কোনও প্রার্থী এক সঙ্গে দু’জায়গায় দাঁড়াচ্ছেন, বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন সাংসদ, অথবা বিধায়ক লোকসভা নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন। জিতে গেলে উপনির্বাচন করতে হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের এ বিষয়ে চিন্তা করা উচিত। হয় এ ভাবে দু’জায়গায় দাঁড়ানো, অথবা সাংসদ, বিধায়কদের মেয়াদ চলাকালীন অন্যত্র নির্বাচনে দাঁড়ানো বন্ধ করে আইন আনতে হবে। নতুবা ওই ব্যক্তি বা তার দলকে উপনির্বাচনের সমস্ত খরচ বহন করতে হবে।

মিহির ভৌমিক, তেহট্ট, নদিয়া

ক্লাবের কর্তব্য

এ রাজ্যের ক্লাবগুলিকে যখন বার্ষিক অনুদান দিচ্ছে সরকার, তখন ক্লাবের কি কোনও দায় দায়িত্ব থাকে না সমাজের প্রতি? এই অতিমারির সময় অক্সিজেনের অভাব মেটাতে ক্লাবের কি উচিত নয় এগিয়ে আসা? এখন রক্তের যে আকাল চলছে, তাতে রক্তদান শিবির করাও দরকার। কিছু পালস অক্সিমিটার কিনে দুঃস্থ, অসুস্থ মানুষের পাশে থাকা উচিত। ক্লাবের স্বল্প পরিসরে ‘আইসোলেশন সেন্টার’ তৈরি হোক। প্রতি বাড়িতে ক্লাবের কিছু সদস্যের মোবাইল নম্বর দেওয়া হোক।

প্রিয়াঙ্কা চক্রবর্তী, নজরগঞ্জ, পশ্চিম মেদিনীপুর

মোদীকেন্দ্রিক

প্রেমাংশু চৌধুরী লেখেন, রাজ্য সরকার এবং ‘নরেন্দ্র মোদী সরকার’। নরেন্দ্র মোদী সরকার যদি হঠাৎ কিছু ভাল করে ফেলে, তা হলে উনি লেখেন ‘কেন্দ্রীয় সরকার’।

সৌগত বাগচি, কলকাতা-১৫৭

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement