Rabindranath Tagore

সম্পাদক সমীপেষু: স্বার্থের ঊর্ধ্বে

বর্তমান বঙ্গীয় বুদ্ধিজীবী মহল নৈঃশব্দ্যের আড়াল খোঁজার ‘যৌক্তিকতা’ পান এই আখ্যানে যে, নিজের এবং পরিবারের প্রতি কিছু দায়বদ্ধতা তাঁদেরও রয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২৩ ০৪:১০
Share:

রবীন্দ্রনাথ শিখিয়েছেন শিল্পী-সাহিত্যিকের মনকে হতে হবে ব্যাপ্ত, কেবল স্বার্থভাবনায় নিমজ্জিত নয়। ফাইল চিত্র।

‘চুপ থেকে মেনে নিতেন না’ (১১-৫) শীর্ষক প্রবন্ধে রিমি মুৎসুদ্দি ঠিকই বলেছেন যে, রবীন্দ্রনাথ শিখিয়েছেন শিল্পী-সাহিত্যিকের মনকে হতে হবে ব্যাপ্ত— কেবল স্বার্থভাবনায় নিমজ্জিত নয়। আমরা সে শিক্ষা গ্রহণ করেছি কি? অনেকে যুক্তি দেন, ‘আগে প্রতিবাদ করেছি বলে সব সময়ে আমাকেই কেন করতে হবে’, কিংবা ‘আগে করিনি বলে এখন কেন করতে পারব না?’ যদিও এ আসলে স্ববিরোধিতা, বা দ্বিচারিতা গোপন করার কৌশলমাত্র। বর্তমান বঙ্গীয় বুদ্ধিজীবী মহল নৈঃশব্দ্যের আড়াল খোঁজার ‘যৌক্তিকতা’ পান এই আখ্যানে যে, নিজের এবং পরিবারের প্রতি কিছু দায়বদ্ধতা তাঁদেরও রয়েছে। তবু প্রশ্ন ওঠে, বিশিষ্টতার স্বীকৃতি প্রাপ্তি ও তজ্জনিত ক্ষমতাসীনের আনুকূল্য পেয়ে তা হারানোর আশঙ্কাও কারণ নয় তো?

Advertisement

প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রশক্তির দ্বারা বারংবার চরম ভাবে নির্যাতিত সাহিত্যিক সলঝেনিৎসিন জীবনের এক কঠিন সময়েও নির্ভীক কণ্ঠে শুভ্র আত্মসম্মানবোধে সাহসী উচ্চারণে বলতে পেরেছিলেন, সাধারণ মানুষের কাজ মিথ্যায় যোগ না দেওয়া, কিন্তু লেখক-শিল্পীদের কাজ আরও বড়— মিথ্যাকে পরাস্ত করা। তাঁর এই প্রত্যয় তিনি নিজের জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছেন। কী নির্যাতন তিনি সয়েছেন, কী মারাত্মক ঝুঁকি তিনি নিয়েছিলেন, তা অজানা নয়।

সাধারণের পক্ষে হয়তো সব ক্ষেত্রে উচ্চৈঃস্বরে প্রতিবাদ করা সম্ভব হয় না। কোনও দলের প্রতি আনুগত্য, সত্য ঘটনা না জানা, বিভ্রান্তিমূলক অর্ধসত্য প্রচারের শিকার হন তাঁরা। সর্বোপরি রয়েছে হেনস্থা, নিপীড়নের আশঙ্কা, এই বৃহত্তম গণতন্ত্রেও। তবে শাসকের নির্দেশে ভুল ইতিহাস প্রচারের বিরুদ্ধে সমাজ থেকে, রাজনীতি থেকে কম প্রতিবাদ উঠে আসায় প্রবন্ধকার কেন আশ্চর্য হয়েছেন, বোঝা গেল না। আর কোনও ক্ষেত্রে কি বুদ্ধিজীবীদের প্রতিবাদ তাঁর চোখে পড়েছে? চারিদিকের এত অন্যায়, দুর্নীতির মতো জ্বলন্ত সমস্যা থাকা সত্ত্বেও বুদ্ধিজীবীদের ‘হিরণ্ময় নীরবতা’ নিন্দনীয়। যাঁরা কিছু প্রাপ্তির আশায় বা প্রাপ্ত কিছু হারানোর আশঙ্কায়, কিংবা নিছক ভয়েই নিশ্চুপ থাকেন, তাঁরা হয়তো বিস্মৃত হন, স্বাধীনতা বা মতপ্রকাশের অধিকার নিয়ে আপস চলে না। অন্যায়, মিথ্যাচার দেখে বুঝেও নিশ্চুপ থাকা, কিংবা ঘুরপথে সমর্থন জুগিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা শিরদাঁড়া ন্যুব্জ করে, লুপ্ত করে বিবেক ও চেতনা। মনে রাখতে হবে ‘দ্য রেসপন্সিবিলিটি অব ইন্টেলেকচুয়ালস’ রচনায় নোম চমস্কির বক্তব্য, বুদ্ধিজীবীদের দায়িত্ব সত্য বলা এবং মিথ্যা ধরিয়ে দেওয়া।

Advertisement

শান্তনু রায়, কলকাতা-৪৭

প্রথম আলো

ঈশা দাশগুপ্তের ‘দু’প্রান্তের দুই আলোকশিখা’ (৬-৫) প্রবন্ধ সূত্রে কিছু কথা। স্ত্রীলোকেরা লেখাপড়া শিখলে বিধবা হয়, দেশীয় সমাজ-সংস্কারের এই বাতাবরণে শিক্ষাসমিতির সর্বাধ্যক্ষ জন ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বালিকা বিদ্যালয় স্থাপনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন। তার আগেই বারাসতে বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতা প্যারীচরণ সরকারকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হলে, সেই দুর্দিনে বেথুন তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। বিনয় ঘোষ তাঁর বিদ্যাসাগর ও বাঙালী সমাজ গ্রন্থে জানিয়েছেন, বারাসতে গিয়ে বেথুন সাহেব বালিকা বিদ্যালয় পরিদর্শন করে কলকাতায় অনুরূপ বিদ্যালয় স্থাপনের প্রেরণা পান। চার পাশের আঁধারের মধ্যে দাঁড়িয়েও হেনরি ভিভিয়ান ডিরোজ়িয়ো-র ছাত্র দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে তিনি বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন।

এক সময় বেথুন সাহেব তাঁর বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের জন্য ঘোড়ার গাড়ির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। ছাত্রীদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য তিনি খেলনা দিতেন। এমনকি তাদের সঙ্গে শিশুর মতো খেলাও করতেন। রাস্তায় মেয়েদের দেখে বহু টিটকারিও শুনতে হয়েছিল সে-দিন। অবশ্য প্রতিবাদে এগিয়ে এসেছিলেন রামগোপাল ঘোষ, মদনমোহন তর্কালঙ্কার, শম্ভুনাথ পণ্ডিতের মতো বিশিষ্টজন। সেই সঙ্গে দেশবাসীকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে বিদ্যাসাগর স্কুলগাড়ির দু’পাশে উদ্ধৃত করেছিলেন মনুসংহিতার শ্লোক— “কন্যাপ্যেবং পালনীয়া শিক্ষণীয়াতিযত্নতঃ।” বেথুন সাহেবের আকস্মিক প্রয়াণে (অগস্ট, ১৮৫১) বিদ্যালয়ের অস্তিত্ব রক্ষায় এগিয়ে এসেছিলেন তিনি। এগিয়ে এসেছিলেন গভর্নর জেনারেল লর্ড ক্যানিং-এর পত্নীও। তাঁরা অর্থ দান করে এবং সরকারের কাছ থেকে সাহায্য আদায় করে স্কুলটিকে বাঁচিয়ে রাখেন। আর বিদ্যাসাগর মহাশয় সেক্রেটারি পদে আসীন (২৪ ডিসেম্বর, ১৮৫৬) হয়ে বিদ্যালয়ের পঠনপাঠন ও নিয়ম-কানুন বিষয়ে ‘বিজ্ঞাপন’ দিয়ে লিখেছিলেন— “হিন্দুজাতীয় স্ত্রীলোকদিগের যথোপযুক্ত বিদ্যা শিক্ষা হইলে হিন্দু সমাজের ও এতদ্দেশের যে কত উপকার হইবে তদ্বিষয়ে অধিক উল্লেখ করা অনাবশ্যক, যাহাদের অন্তঃকরণ জ্ঞানালোক দ্বারা প্রদীপ্ত হইয়াছে, তাঁহারা অবশ্যই বুঝিতে পারেন ইহা কত প্রার্থনীয়...।” তবে, আজও বঙ্গদেশে স্ত্রীশিক্ষা বিষয়ে সবার আগে উচ্চারিত হয় রামমোহন রায়ের নাম।

সুদেব মাল খরসরাই, হুগলি

যুগাবসান

সার্কাসের একটা যুগ শেষ হল। গত ২৩ এপ্রিল কেরলে নিজের বাড়িতে ৯৯ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন জেমিনি শঙ্করন। তিনি ছিলেন সার্কাসের এক জন প্রবাদপ্রতিম স্থপতি, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, তথা হরাইজ়ন্টাল বার ও ট্র্যাপিজ় খেলার বিশেষজ্ঞ। ১৩ জুন, ১৯২৪ সালে কেরলের মালাবার জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র অষ্টম শ্রেণি অবধি পড়াশোনা করে যোগ দেন সার্কাসে। এর পর অবশ্য সুযোগ পেয়ে চলে যান ভারতীয় সেনাবাহিনীতে, তবে অবসর নিয়ে ফের চলে আসেন সার্কাসেই। সার্কাস যাঁর নেশা, স্বপ্ন, তাঁকে কি সার্কাস থেকে দূরে সরিয়ে রাখা যায়? সার্কাসের খেলা দেখাতে দেখাতেই হয়ে ওঠেন সার্কাসের মালিক। ১৯৫৪ সালে যখন জেমিনি শঙ্করনের বয়স মাত্র ৩০ বছর, তখন মহারাষ্ট্রের বিজয়া সার্কাস কিনে নিয়ে নাম দিলেন জেমিনি সার্কাস। এ ছাড়াও আরও দু’-একটি সার্কাস বিভিন্ন নামে খুলেছিলেন তিনি। সে এক সার্কাসের যুগ ছিল বটে! পশুদের চার্টার্ড বিমানে বা ট্রেনে করে দেশের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্তে নিয়ে যেতেন। পশুপাখিদের প্রতি ছিল তাঁর অগাধ ভালবাসা। তিনিই সার্কাসে প্রথম ম্যাজিক শো চালু করেন। সার্কাসকে শিশু-কিশোর, এমনকি বড়দের উপযোগী করেন।

বেঁচে থাকতেই সার্কাস-পুরুষ জেমিনি শঙ্করন দেখে গেলেন সার্কাসের দুরবস্থা। বর্তমান প্রজন্ম আর সার্কাস দেখার সুযোগ পায় না। সার্কাসের মাঠ হারিয়ে যাচ্ছে। বড় বড় সার্কাস ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে। এক সময়ে ভারত তথা বাংলার মাঠ নির্দিষ্ট থাকত সার্কাসের জন্য। বাঁকুড়ার নতুনচটির সার্কাস ময়দান, হুগলির চন্দননগরের সার্কাস মাঠ আজ শুধুই স্মৃতি। সার্কাস আজ একটি মন্দা ব্যবসা। হারিয়ে যেতে বসেছে বড় রঙিন তাঁবু, আকাশে আলোর মশাল চক্র, জোকার, অ্যাক্রোব্যাট, শহর জুড়ে সার্কাসের পোস্টার, ট্র্যাপিজ়ের খেলা, জাগলার, জাদুকর, এক চাকার সাইকেলের নানা কারসাজি। সার্কাস আবার স্বমহিমায় কবে ফিরবে, সে দিকে তাকিয়ে সার্কাসমোদী মানুষ।

শক্তি চট্টোপাধ্যায়, এক্তেশ্বর, বাঁকুড়া

টনক নড়ল

পথ-দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিকে সাহায্যের জন্য যিনি এগিয়ে আসবেন, তাঁকে আইনি সুরক্ষা কবচ দেওয়ার জন্য সাত দফা নির্দেশিকা জারি করেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতর (পথ-দুর্ঘটনায় আহতের সাহায্যকারীকে আইনি সুরক্ষা দিতে নির্দেশ, ১২-৫)। এ বিষয়ে দেরিতে হলেও কর্তৃপক্ষের টনক নড়ায় ধন্যবাদ। সামাজিক বুননকে মজবুত করার জন্য এই নির্দেশিকা জরুরি ছিল।

নিত্যরঞ্জন বাগচী, কলকাতা-১৫০

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন