Internet

বিদ্বেষ প্রচার

শুভচেতনাসম্পন্ন মানুষদের আরও বেশি করে যথাযথ স্থানে এই ঘৃণা-ভাষণের প্রতিবাদ করতে হবে। সাধারণ মানুষকে বোঝাতে হবে যে, রাজনীতির নেতারা তাঁদের শুধু দাবার বোড়ে হিসাবে ব্যবহার করছেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২৩ ০৫:১০
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

সুজিষ্ণু মাহাতো তাঁর ‘ঘৃণার বাস্তুতন্ত্রের বিরুদ্ধে’ (৮-৮) শীর্ষক প্রবন্ধে সঠিক ভাবেই ধরেছেন যে, বর্তমানের শক্তিশালী মাধ্যম ইন্টারনেটের সাহায্যে সুচতুর ভাবে বিদ্বেষ, ঘৃণার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। শাসকের প্রভাব বজায় রাখার এ একটা পন্থাও বটে। আমজনতা এক সময় বইয়ের পাতায় মুদ্রিত বিষয়কে ধ্রুবসত্য মানত, এখন সে বিশ্বাসের জায়গা দখল করেছে ইন্টারনেট। মানুষের মনের অন্ধকার দিকগুলো, ঘৃণা, হিংসা ইত্যাদির নিয়ত উস্কানিতে আজ হরিয়ানায় এই দাঙ্গা, অত্যাচার। মণিপুর জ্বলছে। সাধারণ মানুষের জীবন সম্পত্তি নিরাপত্তার বিনিময়ে লাভ হচ্ছে শাসকের কায়েমি স্বার্থবাদের। বুদ্ধ, জিশু, মহম্মদ, কৃষ্ণ, রাম কখনও বলেননি অন্য ধর্মে আঘাত হানো, মানুষকে মারো। কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে, তাঁদের নামকেই অস্ত্র করে উলুখাগড়ার প্রাণনাশ করা হচ্ছে। এই সব মহাপুরুষ শান্তি, সহনশীলতা, মানুষকে ভালবাসার কথা বলে গিয়েছেন।

Advertisement

শুভচেতনাসম্পন্ন মানুষদের আরও বেশি করে যথাযথ স্থানে এই ঘৃণা-ভাষণের প্রতিবাদ করতে হবে। সাধারণ মানুষকে বোঝাতে হবে যে, রাজনীতির নেতারা তাঁদের শুধু দাবার বোড়ে হিসাবে ব্যবহার করছেন। এর খারাপ প্রভাব আমাদের রাজ্যেও পড়ছে। সে দিন একটি দোকানে জোর আলোচনা শুনলাম যে, বাংলা ভাগ হয়ে ভালই হয়েছে, নইলে এখানেও বাঙালি হিন্দু বিতাড়িত হত। এই অযৌক্তিক আলোচনার বিরুদ্ধে তাঁদের যথাসাধ্য বোঝানোর চেষ্টা করি। তাঁরা বলেন, নেটের অমুক পেজে এই লেখা আছে। আবার নেটের একটি নামকরা পেজে আমি আমার আপন সেজো ঠাকুরদা মহাশয় আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের দেশের বাড়ি ও বাংলার নবজাগরণে তাঁর ভূমিকা নিয়ে লিখি। সেটি বহু মানুষের দ্বারা প্রশংসিত হয়। কিন্তু এক জন পৃষ্ঠাজোড়া মন্তব্য করেন যে, আমার যে-হেতু বিয়ের পরে গোত্রান্তর হয়ে গিয়েছে, তাই তাঁর বিষয়ে লেখার অধিকার আমি হারিয়েছি। হায়! এই জ্ঞানতাপস বিজ্ঞানী আজীবন অবৈজ্ঞানিক মতাদর্শের বিরুদ্ধে বলেছেন। আজ ঘৃণার কুপ্রচারে তাঁকেও জ্যোতি থেকে তমসায় টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে!

শিখা সেনগুপ্ত, বিরাটি, উত্তর ২৪ পরগনা

Advertisement

আসল ইতিহাস?

ওপেনহাইমার হুজুগের বাজারে অন্তত দু’খানা বাংলা বইয়ের বাজার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। নারায়ণ সান্যালের বিশ্বাসঘাতক এবং জ্যোতিপ্রকাশ চট্টোপাধ্যায়ের নির্বাপিত সূর্যের সাধনা। দু’টিই অনেক বছর আগে লেখা। প্রথমটি প্রায় কিশোর বয়সে পড়েছিলাম। বেশ মনে পড়ে, বইখানা পড়ে উঠে রীতিমতো আচ্ছন্ন হয়ে ছিলাম। কিন্তু দ্বিতীয় বইখানা পড়িনি। এই হুজুগের সুবাদে বইটা কিনে ফেললাম, এবং পড়তে শুরু করলাম।

কিন্তু কিছু দূর এগোতে না এগোতেই একটা ঘটনার বিবরণ পড়ে একেবারে চমকে গেলাম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগেকার জার্মানির ঘটনা। বক্তৃতা করতে উঠেছেন আইনস্টাইন। বাইরে বার্লিনের রাস্তা পুরু তুষারে ঢাকা। আপেক্ষিকতাবাদ নিয়ে বক্তৃতার মাঝেই একটি ছেলে উঠে দাঁড়িয়ে বলল “এই সব বস্তাপচা ইহুদিপ্রচার আর কত দিন চলবে?” জনাপঁচিশেক ছেলেমেয়ে সমস্বরে স্লোগান তুলল— “দুনিয়াকে ধাপ্পা দেওয়ার জন্য তৈরি করা ইহুদি আপেক্ষিকতাবাদ নিপাত যাক।” “নব সমাজ আসছে আসবে।” “জার্মান বিজ্ঞান দীর্ঘজীবী হোক।” খানিক ক্ষণের মধ্যেই সভাস্থলে চিৎকার-চেঁচামেচি হাতাহাতি চেয়ার ছোড়াছুড়ি শুরু হয়ে গেল। সভাস্থল ছেড়ে পালাতে শুরু করলেন আতঙ্কিত জনতা। জ্যোতিপ্রকাশ চট্টোপাধ্যায়ের বর্ণনায় “যখন পিস্তল ছোঁড়ার শব্দ শোনা গেল, স্টেজের একপাশে দাঁড়িয়ে হতভম্ব আইনস্টাইন, তখনও একহাতে তাঁর মেটে রঙের টাই এবং অন্য হাতে মাইকটা ধরে বিড়বিড় করে বলার চেষ্টা করছেন...।”

শিউরে উঠলাম রোমিলা থাপরের কথা ভেবে। অবশ্য তাঁর বক্তৃতা এমন করে থামিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে এখনও খবর পাইনি। কিন্তু আজকাল তো হরবখতই যার তার মুখে শুনি— রোমিলা থাপর, ইরফান হাবিব প্রমুখ নাকি কোনও ইতিহাসবিদই নন। তাঁরা নাকি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ইতিহাস লিখে মানুষকে বিভ্রান্ত করে এসেছেন, ‘আসল ইতিহাস’ দেশের মানুষকে জানতেই দেননি।

বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা-উপশাখার খবরও কি আলাদা করে ভাল? নতুন গড়ে ওঠা একটি মেডিক্যাল কলেজে চাকরি করি। নতুন করে কলেজ লাইব্রেরি গড়ে উঠছে। নতুন বই কেনা হচ্ছে। দেশীয় প্রকাশকরা তাঁদের নতুন প্রকাশিত বই ‘স্পেসিমেন কপি’ হিসাবে অধ্যাপকদের কাছে রেখে যাচ্ছেন। আমার অধ্যাপনার বিষয়টি যে-হেতু এমবিবিএস পাঠ্যসূচিতে নেই, অন্য বিভাগের বইপত্রই উল্টেপাল্টে দেখি। এক সহকর্মী-বন্ধুর টেবিলে একখানা নতুন বই নিয়ে পাতা উল্টে দেখছিলাম। দেখে হতভম্ব হয়ে গেলাম। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাস বলতে গিয়ে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান শিক্ষার একটি পাঠ্যবইয়ে লেখক একেবারে শুরুতেই জানিয়েছেন ধন্বন্তরির কথা। ধন্বন্তরির জন্মদিন উপলক্ষে ‘ধনতেরস’ উৎসবের গুরুত্বের কথাও উল্লেখ করতে ভোলেননি। সুশ্রুতের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে, শ্রদ্ধা ও বিস্ময় সামলাতে না পেরেই সম্ভবত, তাঁকে নিয়ে চলে গিয়েছেন খ্রিস্টজন্মের দেড় হাজার বছর আগে! আবার ‘ডক্টর’ কে-র উত্তর দিতে গিয়ে শুরুতেই বলেছেন, দর্শনগত দিক থেকে বলতে গেলে ডাক্তার হলেন তিনিই, যিনি ঈশ্বরের সহায়ক। অর্থাৎ, রোগবালাই থেকে মানুষকে সারিয়ে তোলার ব্যাপারে চিকিৎসক ঈশ্বরের সহায়ক হিসাবে কাজ করে থাকেন।

একেবারে ‘কোর সাবজেক্ট’-এর পাঠ্যপুস্তকের শুরুর অধ্যায়েই এ রকম ‘ইতিহাস’! নতুন পাঠ্যসূচিতে ডাক্তারি ছাত্রছাত্রীদের শুরুতেই চিকিৎসাশিক্ষার প্রবেশিকা হিসাবে কিছু কিছু বিষয় পড়ানোর কথা ভাবা হয়েছে। তার মধ্যে একদম শুরুতেই চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাস। সেখানে সুনির্দিষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান (অ্যালোপ্যাথি) বাদে চিকিৎসাবিদ্যার বাকি ধারাগুলোর ইতিহাসও পড়াতে হবে। সেটা ভুল কিছু নয়। উপনিবেশকালে আমাদের অতীত ভুলিয়ে দেওয়ার যে প্রবণতা, পশ্চিমা পদ্ধতিকেই শ্রেষ্ঠ হিসাবে মানতে বাধ্য করার যে ধারা, তা বহন করে চলা কোনও কাজের কথা নয়। কিন্তু এই একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে, আয়ুর্বেদের কথা বলতে হলে পৌরাণিক ধন্বন্তরি দিয়ে শুরু করতে হবে?

না, ডাক্তারি পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে বার্লিনের সেই বিকেলের কোনও সম্পর্কই নেই। কিন্তু ইতিহাস বলতে এই সব শিক্ষায় আলোকিত হতে থাকলে ওই ‘নব সমাজ, আসছে, আসবে’-র স্লোগান তোলার মতো ‘শিক্ষিত’ ছাত্রগোষ্ঠী তৈরি হতে পারাটা খুব দূরেও নয়। আমি নিশ্চিত, বিজ্ঞানের বাকি শাখার ক্ষেত্রেও সমতুল্য উদাহরণ পাওয়া যাবে। এবং একটু ‘ফিউচারিস্টিক’ হয়ে যদি ভাবেন, এমন শিক্ষা জারি থাকলেএ দেশের মাটিতে আইনস্টাইন পুনর্জন্ম গ্রহণ না করলেও তাঁর সভার দৃশ্যটির পুনরভিনয় স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।

বিষাণ বসু, কলকাতা-৭৮

ভয়ঙ্কর ‘বুদ্ধি’

দৈনন্দিন জীবনে বেড়েই চলেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তথা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর ব্যবহার। সেই ক্ষমতারই এক রূপ জামাকাপড় সরিয়ে দেওয়ার এআই, যা তার সিস্টেম দিয়ে মানুষের জামাকাপড় সুনিপুণ ভাবে সরিয়ে দিতে সিদ্ধহস্ত। সমাজমাধ্যমে চোখ রাখলে সেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়। যদিও এ-ও জানা যাচ্ছে, অপব্যবহার হওয়া ছবিটি যদি ছবির মালিক তৎক্ষণাৎ একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে মূল ছবি-সহ পোস্ট করেন, তা হলে এডিটেড ছবিটি সব জায়গা থেকে মুছে যাবে। তবে এ তো সাময়িক সমাধান। এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে অপব্যবহারকারী সাধারণ মানুষের জীবনে ভীষণ রকম প্রভাব ফেলতে সক্ষম। আশা রাখি, সরকার দ্রুত পদক্ষেপ করবে।

রাজ ঘোষ, কামালপুর, পূর্ব বর্ধমান

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন