সত্তরোর্ধ্ব বয়সে এসে, কম্পিউটার-নির্ভর জগতে খুব সমস্যায় পড়েছি। অত্যন্ত নিকটজনের বিয়ের ব্যাপারে নামী মেট্রিমনিয়াল সাইটের সহযোগিতা নিতে হয়েছে। বাড়িতে যারা নেট কানেকশন সহযোগে ল্যাপটপ ব্যবহার করে, তাদের সময় নেই নেট ঘেঁটে পাত্রপাত্রীর বায়োডেটা ও ছবি বার করার। অগত্যা দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পর যেই একটু তন্দ্রা মতো আসে, ঠিক সেই সময়ে ফোন বাজতেই ধড়মড় করে উঠে বসে ফোনটা কানে নিয়ে প্রায় দিনই বামাকণ্ঠে অভিযোগ শুনি, ‘‘কাকু, প্রোফাইলটা লগ ইন করছেন না কেন?’’ মনে মনে ভাবি, সেটা খায় না মাখে তো জানি না, মুখে বলি, ‘‘হ্যাঁ, কয়েক দিন করা হয়নি।’’ আবার কখনও কখনও কোনও বাড়িতে এই সব নিয়ে কথা বলতে বলতে যখন খুব সলজ্জ ভাবে স্বীকার করি, হোয়াটসঅ্যাপ বা ইমেল-এ ছবি ও বায়োডেটা পাঠানোর মুরোদ আমার নেই, অপর প্রান্ত থেকে ফিক করে হাসি-সহ জবাব আসে, ‘‘আমারও তো তা-ই!’’
স্বপন দত্ত
শ্রীপল্লি, বর্ধমান
গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড
সুস্মিতা ভট্টাচার্য ‘পাঠানসরাই’ (৪-৯) শীর্ষক চিঠিতে প্রস্তাব করেছেন ‘‘শের শাহের শ্রেষ্ঠ কীর্তি গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোডের নাম পরিবর্তিত করে তাকে ‘শের শাহ রোড’ করা হলে প্রকৃত ইতিহাসবোধের পরিচয় মিলবে।’’ দুঃখের বিষয়, তা হলে ইতিহাস ক্ষুণ্ণই হবে, কেননা শের শাহ গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড তৈরিই করেননি, যদিও এমন একটি জনপ্রিয় লৌকিক ধারণা দীর্ঘ কাল ধরে ইতিহাসের পাঠ্যপুস্তকে স্থান
পেয়ে আসছে। শের শাহের রাজত্বকাল মাত্র পাঁচ বছর। আর তাঁর এই সময়টুকুর বেশির ভাগটাই কেটেছে যুদ্ধবিগ্রহে। তাই এই সময়ের মধ্যে এত বড় একটা নতুন রাস্তা তৈরি করে ফেলা প্রায় দুঃসাধ্য। আড়াই হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়ক-ই-আজম বা মহাসড়ক মুঘল আমলে সোনারগাঁও থেকে আগরা, দিল্লি ও লাহৌর হয়ে মুলতান পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল।
আসলে বর্তমানে গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড বলে পরিচিত রাস্তাটি এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন ও দীর্ঘতম স্থলপথ। আধুনিক গবেষণায় ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, এটি গৌতম বুদ্ধের জন্মের আগে থেকেও ছিল। পরিচিত ছিল ‘উত্তর পথ’ নামে। পাকিস্তানের গবেষক সলমন রশিদ মনে করেন, এটি তৈরি হয়েছিল চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সময়ে। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে মৌর্যদের রাজত্বকালে, ভারতের সঙ্গে পশ্চিম এশিয়া আর গ্রিক জগতের যোগাযোগ ছিল উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের তক্ষশিলা হয়ে। মৌর্য সম্রাটরা তক্ষশিলা থেকে পাটলিপুত্র পর্যন্ত বিস্তৃত তখনকার এই সড়কপথটি রক্ষণাবেক্ষণ করতেন।
মেগাস্থিনিস জানাচ্ছেন, আটটি পর্যায়ে নির্মিত এই সড়কটি পুরুষপুর (পেশোয়ার), তক্ষশিলা, হস্তিনাপুর, কান্যকুব্জ, প্রয়াগ, পাটলিপুত্র হয়ে তাম্রলিপ্ত পর্যন্ত প্রায় ষোলোশো মাইল বিস্তৃত ছিল। জি টি রোড নামে পরিচিত রাস্তাটির সঙ্গে শের শাহের নাম যুক্ত হয়েছিল, কেননা তাঁর সময়ে রাস্তাটির সংস্কার হয়েছিল মাত্র! মুঘলদের আমলে সড়কটি আরও বিস্তৃত হয়েছিল পূর্বে চট্টগ্রাম আর পশ্চিমে কাবুল পর্যন্ত। পরিচিত হয় সড়ক-ই-আজম নামে।
১৮৩০-এর দশকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রশাসনিক আর বাণিজ্যিক প্রয়োজনে রাস্তাটি পাকাপাকি বাঁধানোর কাজ শুরু করে। কলকাতা থেকে দিল্লি হয়ে পেশোয়ার পর্যন্ত বিস্তৃত সড়কটি পুনর্নির্মিত হল। খরচ হল প্রতি মাইলে হাজার পাউন্ড।
অরবিন্দ সামন্ত
গাঁধীনগর, গুজরাত
তার বেলা?
রোহিঙ্গা বিষয়ক দু’টি ধারাবাহিক প্রতিবেদন ‘যাব কোথায়, গুলিই করুক’ (৬-৮), ‘স্থায়ী পরিচয়পত্র চান রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা’ (৭-৮) পড়ে, বারুইপুরবাসী হিসাবে নিজের একটি অভিজ্ঞতা বলি।
মাসখানেক আগে বাড়িতে হাজির কোলে বাচ্চা নিয়ে এক মহিলা, হাতে বড় ঝোলা নিয়ে দুই পুরুষ এবং মাথায় টুপি দেওয়া এক পুরুষ, যিনি নিজেকে এলাকার বাসিন্দা বলে পরিচয় দিলেন এবং বাকিদের রোহিঙ্গা বলে পরিচিত করালেন। রোহিঙ্গা মানুষগুলির দুর্দশার কাহিনি বললেন। তার পর তাদের ধর্মগ্রন্থ কেনার জন্য ২০০ টাকা ও জামাকাপড়, খাওয়ার জন্য ৩০০ টাকা দাবি করলেন। দরকষাকষির পর আমার থেকে ১৫০ টাকা নিয়ে যাওয়ার সময় যে রক্তচক্ষু দেখিয়ে তীব্র শ্লেষমিশ্রিত বিশেষণ নিক্ষেপ করলেন, তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। উপরন্তু এক রোহিঙ্গা পুরুষ বললেন, কম দেওয়ার জন্যে আমাকে আল্লাহর কাছে দায়ী থাকতে হবে এবং শাস্তি পাব। পাড়ার কিছু বাড়িতে একই ঘটনা হল। পরে শুনলাম ছিঁচকে চুরির ঘটনা বেড়ে চলেছে ফুলতলা, রামনগর, উত্তরভাগ এলাকায় (দু’তিন বার যারা ধরা পড়েছে তারা রোহিঙ্গাই)।
তাই যাঁরা সহমর্মী হয়ে রোহিঙ্গাদের সেবা করছেন, তাঁদের কাছে জানতে চাই, তাঁরা অভাবের তাড়নায় জীর্ণ ভূমিপুত্রদের জন্য কতটা করেছেন? ক’টা বাড়িতে ঘুরেছেন তাদের পড়াশোনা, খাওয়া, জামাকাপড়ের জন্যে, যারা আমাদের নিজের দেশে জন্মেছে, বড় হয়ে উঠেছে? ‘দেশ বাঁচাও সামাজিক কমিটি’ গঠন করেছেন বিদেশিদের জন্য, অথচ নিজেদের দেশের অভাবী মানুষদের জন্য কমিটি কোথায়?
আলি হোসেন খান
কলকাতা-১৪৪
সাইলেন্ট স্প্রিং
সমরেশ কুমার দাসের ‘কৃষিকাজ জানো না’ (৩-৯) শীর্ষক চিঠিতে উল্লিখিত র্যাচেল কারসনের ‘সাইলেন্ট স্প্রিং’ সম্পর্কে কিছু সংযোজন। কীটনাশক যে শুধু কীটপতঙ্গ ধ্বংস করছে তা-ই নয়, বিষিয়ে দিচ্ছে পরিবেশ। পরিবেশের বিরুদ্ধে এই রাসায়নিক যুদ্ধ কেন, কারসন প্রশ্ন তুলেছিলেন ওই বইয়ে। যে সময় এটির প্রকাশ হয়, তখন সে অর্থে ছিল না কোনও পরিবেশবাদী সংগঠন, ছিল না আজকের মতো পরিবেশ আন্দোলন।
বইটি প্রকাশমাত্রই আমেরিকা ও অন্য দেশে বিতর্কের ঝড় উঠেছিল। কয়েকটি বহুজাতিক সংস্থা কারসনের বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়ে পাল্টা আক্রমণ শানাতে লাগল। একটি বহুজাতিক কয়েক কদম এগিয়ে কারসনের বইটির কাব্যিক শৈলী অনুসরণ করে ‘দ্য ডেসোলেট ইয়ার’ নামে লেখা তৈরি করল। কীটনাশক নিয়ে বাদানুবাদ জাতীয় বিতর্কে পরিণত হল। বিব্রত আমেরিকান প্রেসিডেন্ট কেনেডি’র সায়েন্স অ্যাডভাইসরি কমিটি ১৯৬৩ সালের মে মাসে একটি পেস্টিসাইড রিপোর্ট পেশ করল। কমিটির চেয়ারম্যান ড. জেরম বি ওয়াজ়নার বললেন, ‘‘কীটনাশক-সহ অনিয়ন্ত্রিত বিষাক্ত রাসায়নিক বাস্তবে পারমাণবিক বিস্ফোরণজাত তেজস্ক্রিয় ধূলিকণার চেয়ে প্রচ্ছন্ন ভাবে বেশ ক্ষতিকর।’’
‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ একটি সম্পাদকীয় নিবন্ধে মত দিয়েছিল, ‘‘র্যাচেল কারসন নোবেল পুরস্কার পেতে পারেন, যেমনটা পেয়েছিলেন ডিডিটি’র আবিষ্কর্তা পল মুলার (১৯৪৮)।’’ মতামতটির মূল সুর: দীর্ঘ কাল অবিকৃত ও রাসায়নিক ভাবে সক্ষম থাকার জন্য এবং এক বার কীটনাশক প্রয়োগ করেই বছর বছর লাভের কড়ি ঘরে তোলার ভাবনার জন্য ডিডিটি’র আবিষ্কর্তা পল মুলার যদি নোবেল পেতে পারেন, তা হলে ডিডিটি ব্যবহারে জগৎ ও জীবনের মৃত্যুর বাস্তবতা চিহ্নিত করার জন্য নোবেল পেতে পারেন কারসনও।
এ ছাড়া বইটি ‘এনভায়রনমেন্ট প্রোটেকশন এজেন্সি’ গঠনের
(২ ডিসেম্বর ১৯৭০) পথ প্রশস্ত করে। কারসন ৫৬টি বসন্ত পার করে চলে গিয়েছেন ১৪ এপ্রিল ১৯৬৪। এখনকার সময় কারসনের গুরুত্ব সে ভাবে বোঝেনি। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, বেশি করে বোঝা যাচ্ছে কারসনের দূরদর্শিতা। সমগ্র বিশ্ব তাঁকে বরণ করে নিয়েছে পরিবেশবাদের জননী হিসেবে। ‘সাইলেন্ট স্প্রিং’ নিছক একটি বই নয়, আধুনিক পরিবেশ-চেতনার বেদ।
নন্দগোপাল পাত্র
সটিলাপুর, পূর্ব মেদিনীপুর
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।