সম্পাদক সমীপেষু: বাবার ছুটি মিলছে না

আশ্চর্যের বিষয়, দু’বছর হতে চলল, কিন্তু বিদ্যালয় শিক্ষা দফতর এখনও পর্যন্ত নিজস্ব কোনও নিয়ম-বিধি চালু করতে পারেনি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:২৮
Share:

রাজ্যের বিদ্যালয়গুলিতে পিতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে চরম বিভ্রান্তি চলছে। অর্থ দফতরের নির্দেশিকা অনুযায়ী [তাং- ২৫/০২/২০১৬, নং- ১১০০-এফ (পি)], রাজ্যের স্পনসর্ড বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও সরকারি কর্মীদের মতো পিতৃত্বকালীন ছুটির অধিকারী। অনধিক দুই সন্তানের জন্ম থেকে তাদের ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত ৩০ দিনের পূর্ণবেতন ছুটি পাওয়া যাবে। মাত্র ৩০ দিনের ছুটি খুব কম হলেও, শিক্ষকদের মনে আশার সঞ্চার করে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে এই ছুটি কার্যকর হওয়ার কথাও বলা হয়েছে। শেষে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট দফতরগুলি প্রয়োজন অনুযায়ী নিয়ম-নীতি তৈরি করতে পারবে।

Advertisement

আশ্চর্যের বিষয়, দু’বছর হতে চলল, কিন্তু বিদ্যালয় শিক্ষা দফতর এখনও পর্যন্ত নিজস্ব কোনও নিয়ম-বিধি চালু করতে পারেনি। কোনও ডিআই অফিস বলছে, শিক্ষা দফতর নতুন কোনও নির্দেশিকা জারি না করায় অর্থ দফতরের বিজ্ঞপ্তিকেই মান্যতা দিয়েছে। অতএব, ছুটি নেওয়া যাবে। কোনও ডিআই অফিসের বক্তব্য, তা করা যাবে না। ফলে, স্কুল কর্তৃপক্ষ কোথাও ছুটি দিচ্ছেন, কোথাও দিচ্ছেন না। সরকারি পুরুষ-কর্মীরা যখন পিতৃত্বকালীন ছুটি উপভোগ করছেন, তখন স্কুল শিক্ষকরা পড়েছেন আতান্তরে।

প্রণবকুমার মাটিয়া দক্ষিণ মহেন্দ্রপুর এস বি হাই স্কুল, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

Advertisement

চৌকিদারি

সম্প্রতি কোনও কোনও স্কুলে ঘটে যাওয়া কিছু ছাত্র নির্যাতনের ঘটনার প্রেক্ষিতে স্কুলে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানোর জন্য দাবি উঠছে। হয়তো অপরাধীকে শনাক্ত করতে এই ব্যবস্থা সাহায্য করবে। কিন্তু এটাও ভেবে দেখা দরকার, সন্দেহের বাতাবরণ শিক্ষা বিকাশের সহায়ক কি না? কোথায় কোথায় সিসিটিভি বসানো রয়েছে, তা বোঝাই যাবে, তাই কেউ যদি নির্যাতন করতেই চায়, সে ক্যামেরার চোখের আড়ালেই সেটা করবে। কিন্তু এই করতে গিয়ে সবার ওপর সর্বক্ষণ নজর রাখার সংস্কৃতিকে যদি মেনে নিই, তা হলে প্রতিটি মুহূর্তে চৌকিদারি করার মানসিকতাকে সমর্থন জানাচ্ছি, যা মানুষের স্বাধীনতার পরিপন্থী।

আলোক রায় কলকাতা-১১০

৪ টা. ১৩ প.

আজকের রুগ্‌ণ শিশু কালকের অসুস্থ ভারতের প্রতিনিধি। গোড়া কেটে আগায় জল দিলে কোনও গাছই বাচেঁ না। মধ্যাহ্নকালীন আহার বা মিড-ডে মিল ভারতের এত বৈষম্যপূর্ণ সমাজেও বিশেষ গুরুত্ব বহন করে চলেছে। শিক্ষার অধিকার আইন ২০০৯-এ স্পষ্ট বলা আছে শিশুর সার্বিক বিকাশের কথা। আমি যে বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করি, সেখানে ৭০% আদিবাসী মানুষের বাস। তাঁদের ঘরের ছেলেমেয়েরা দিনের পর দিন খালি পেটে স্কুলে আসে। শুধুমাত্র ভরসা করে ওই দুপুরের আহারটুকুতে। সামনে যে প্রচণ্ড গ্রীষ্মের দাবদাহ শুরু হবে, তাতে কত ছেলেমেয়ে যে মাথা ঘুরে পড়বে তার ইয়ত্তা নেই। আমরা, শিক্ষকমশাইরা যখন কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করি, ‘কিরে, বাড়ি থেকে খেয়ে এসেছিস?’ ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকা শুকনো মুখগুলো নিরুত্তর। ৪ টাকা১৩ পয়সার প্রহসন সত্যি শিক্ষক হিসাবে বেশ পীড়া দেয়। যখন দেখি, টিফিনের ঘণ্টার সঙ্গে সঙ্গে আনন্দের দৌড়, তখন মনটা অনাবিল আনন্দে ভরে ওঠে। আগামী প্রজন্মকে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের প্রান্তিক, দরিদ্র, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে ভারতের চালনায় শামিল করতে গেলে, তাদের পুষ্টিটাও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই অরুণ জেটলির সাধের ইন্ডিয়াতে তথাকথিত ভারতের সেই মূলস্রোত-বিচ্ছিন্ন মানুষগুলো একটু মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে। নচেৎ জিডিপি বাড়ল কী কমল, তাতে কিছু এসে যায় না, কারণ, বেল পাকলে কাকের কী?

ভাস্কর দেবনাথ ঘুগুরিডাঙা আদিবাসী হাই স্কুল, সাগরদিঘি

স্কুলে কর্মী

প্রাথমিক শিক্ষায় একটি বিষয় হল ‘স্কুল বেসড অ্যাক্টিভিটিজ’। সেই উদ্দেশ্যে কিছু দিন পুরুলিয়া ২ ব্লকের ‘পোদলাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়’-এ একটি সমীক্ষা করি। এই বিদ্যালয়ে অনেক সমস্যা আছে। আমার মনে হয় সমস্যাগুলি সব বিদ্যালয়ের। অস্বাস্থ্যকর শৌচাগার, শিশুরা তো শৌচাগার নোংরা করবেই। এ-ছাড়া তারা সবাই মিড-ডে মিল গ্রহণের সময় ভাল ভাবে থালা এবং হাত পরিষ্কার করছে না। শিক্ষকদের পক্ষে এত সব দেখা সম্ভব হচ্ছে না। যদি প্রত্যেক বিদ্যালয়ে এক জন করে সাফাইকর্মী এবং শিশুদের দেখার জন্য এক জন করে কর্মী নিয়োগ করা হয়, ভাল হয়।

এ ছাড়া এই এলাকায় যে সমস্ত নলকূপ আছে সেগুলি শিশুদের ব্যবহার করতে হয়। বিদ্যালয়ে যদি সৌর শক্তি অথবা অন্য ইন্ধনে চালিত জল তোলার পাম্প-এর ব্যবহার করা হয় তা হলে ভাল হয়।

চন্দন সরকার জেলা শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সংস্থা, পুরুলিয়া

গোসাবার দশা

সুন্দরবনের অবশ্যদ্রষ্টব্য জায়গা গোসাবা। সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দুটি গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতিরক্ষাস্থলের রক্ষণাবেক্ষণে চূড়ান্ত অবহেলা দেখে বিষণ্ণ হয়ে পড়লাম। সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন ও সমবায় আন্দোলনের পথিকৃৎ, স্যর ড্যানিয়েল হ্যামিল্টনের বাংলোর খুব দুরবস্থা। স্যর হ্যামিল্টনের আমন্ত্রণে ১৯৩২ সালের ৩০-৩১ ডিসেম্বরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গোসাবায় আসেন ও সে সময় রাত্রিবাস করেন বেকন বাংলো-য়, তারও খুব দুরবস্থা। বেকন বাংলো সংলগ্ন অমার্জিত উদ্যানটিতে রবি ঠাকুরের গোসাবায় আগমনকে স্মরণ করে ২০১৪ সালের ২৩ জানুয়ারি ভাস্কর অসিত সাঁইয়ের তৈরি রবি ঠাকুরের যে পূর্ণাবয়ব মূর্তিটি স্থাপিত হয়েছিল, তাও অনাদরে অযত্নে দাঁড়িয়ে আছে।

রবীন্দ্রনাথের ভাবনায় গ্রামীণ সমবায়ের গুরুত্ব কত উঁচু পরদায় বাঁধা ছিল, তা জানাতেই তিনি গোসাবায় এসেছিলেন। গোসাবায় সমবায় শক্তির বহিঃপ্রকাশ দেখে রবীন্দ্রনাথ মুগ্ধ বিস্ময়ে বলেছিলেন, স্বদেশি সমাজের যে স্বপ্ন তিনি এক দিন দেখেছিলেন, এখানে তার পরিপূর্ণ রূপ দেখলেন! সমস্ত ভারতবর্ষের আদর্শ হোক গোসাবা। এমন গুরুত্বপূর্ণ স্থান দুটি সম্পূর্ণ অবহেলায় পড়ে থাকতে দেখে সত্যিই খারাপ লাগল।

অরূপরতন চৌধুরী কলকাতা-৩৭

বুঝতে ভুল

সঞ্জয় সাউ তাঁর চিঠিতে (‘গাছের কথাও’, ১৫-১) লিখেছেন, হাওড়া-ব্যান্ডেল শাখার বিভিন্ন স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে আগে থেকে বেড়ে ওঠা গাছগুলোকে বেষ্টন করে যাত্রীদের বসার বেঞ্চ নির্মিত হচ্ছে, আর গাছের গুঁড়ির অংশকে ছুরি, করাত, বাটালির সাহায্যে কেটে বিভিন্ন জন্তুর প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে, যা কখনওই সমর্থনযোগ্য নয়। প্রকৃত ঘটনা হল, হাওড়া-ব্যান্ডেল লাইনের (পূর্ব রেল) বেশির ভাগ স্টেশনেই আপ ও ডাউন প্ল্যাটফর্মে মাত্র একটি করে শেড বা ছাউনি ছিল। যাত্রীদের গরমে বা বর্ষায় কষ্ট হত। তাই কয়েক বছর আগে পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ সব প্ল্যাটফর্মে আরও ২-৩টি ছাউনি নির্মাণ করেন। এই সময় প্ল্যাটফর্মে থাকা বড় গাছগুলির কয়েকটি কেটে ফেলেন। তখন বৃক্ষপ্রেমীরা এর প্রতিবাদও করেছিলেন। বড় গাছগুলির গুঁড়ি ঘিরে যাত্রীদের বসার জায়গা, যাত্রিশেড তৈরির আগেই নির্মাণ করা হয়েছিল। কয়েক বছর পর দেখা গেল যে কেটে ফেলা গাছের গুঁড়িগুলি থেকে নতুন গাছের জন্ম হচ্ছে না। তখন কয়েক জন শিল্পী ওই মৃত গাছের গুঁড়িতে ছরি, করাত ইত্যাদির সাহায্যে নানা জীবজন্তুর অবয়ব ফুটিয়ে তুলেছেন এবং রং করেছেন। যেহেতু ওই গাছগুলি মৃত সেহেতু এই কাজ বেঠিক নয় বলেই মনে হয়।

বিজনকুমার মিত্র চুঁচুড়া, হুগলি

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন