Guest Lecturer

সম্পাদক সমীপেষু: কিসের আপত্তি?

কোনও কিছু নতুন আমাদের রাজ্যে বাস্তবায়িত করতে গেলে কিছু লোক আছে যারা অর্ধেক বুঝে, বা না-বুঝে, তার বিরোধিতায় নেমে পড়েন। অথচ আমার মনে হয়, প্রস্তাবটি যথেষ্ট বাস্তবোচিত।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:৪৯
Share:

ইউজিসি-র প্রস্তাব, বিশেষ কিছু বিষয়ে চুক্তির ভিত্তিতে ‘প্রফেসর অব প্র্যাকটিস’ নিয়োগ করা যেতে পারে, যাতে পড়ুয়ারা বাস্তব জীবনোচিত ও কর্মোপযোগী শিক্ষা লাভ করতে পারে (“‘পেশাদারদের’ শিক্ষক করার প্রস্তাব, বিতর্ক”, ২৫-৮)। রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের নেতারা যথারীতি তার বিরুদ্ধে নেমে পড়েছেন। পড়তে পড়তে মনে হল, এঁরা কি আদৌ শিক্ষক? না কি কিছু শিক্ষা সিন্ডিকেট চালানো মাফিয়া? যে যুক্তি তাঁরা হাজির করেছেন, তার অধিকাংশ হাস্যকর, বাস্তববুদ্ধিরহিত। বোঝা যাচ্ছে, এত দিন যে শিক্ষা সিন্ডিকেট তাঁরা চালিয়ে এসেছেন, তার বিপদে তাঁরা যারপরনাই শঙ্কিত। কোনও কিছু নতুন আমাদের রাজ্যে বাস্তবায়িত করতে গেলে কিছু লোক আছে যারা অর্ধেক বুঝে, বা না-বুঝে, তার বিরোধিতায় নেমে পড়েন। অথচ আমার মনে হয়, প্রস্তাবটি যথেষ্ট বাস্তবোচিত। পেশাদার প্রশিক্ষকরা কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে পারেন, যা পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে বিরাট সহায়ক হবে। আমি এক জন অবসরপ্রাপ্ত পেশাদার। আমাকে কর্মজীবনে বেশ কয়েক বার প্রতিষ্ঠানের বাইরে গিয়ে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে ভাষণ দিতে হয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখেছি, অধ্যাপকরা পুঁথির জ্ঞান দিয়ে যে শিক্ষা দিচ্ছেন, তা বাস্তবজীবনে চলে না। অন্য দিকে, একটি বহুজাতিক কোম্পানি কী উপায়ে তার সঙ্কট থেকে বেরিয়ে এসেছে, সে বিষয়ে সেখানে কর্মরত (এখন অবসরপ্রাপ্ত) আমার এক বন্ধু সুন্দর ভাবে, সরল ভাষায় ব্যাখ্যা করেছিল। কাজেই এই প্রস্তাবের বিরোধিতা না করে, শিক্ষাসমাজের উচিত কী ভাবে এর প্রয়োগ করে পড়ুয়াদের এই কঠিন প্রতিযোগিতার বাজারে তৈরি করা যায় সে বিষয়ে মন দেওয়া। এই পশ্চাদ্‌গামী মনোভাবের ফলেই এ রাজ্যের পড়ুয়ারা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় পিছিয়ে পড়ছে।

Advertisement

শৈবাল কুমার বসু, কলকাতা-৩২

মান পড়বে

Advertisement

জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ রূপায়ণ করার লক্ষ্যে ইউজিসি কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে অনুদান দেওয়া এক প্রকার বন্ধ করে দিয়েছে। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এটি চরম আঘাত। অর্থের অভাবে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সাহিত্য, বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, বাণিজ্য, প্রযুক্তিবিদ্যা, আইন, জনপ্রশাসন ইত্যাদি ক্ষেত্রে ‘প্রফেসর অব প্র্যাকটিস’ নামধারী শিক্ষক নিয়োগের ফরমান জারি করেছে। এই অধ্যাপকদের নিয়োগের ক্ষেত্রে উপযুক্ত যোগ্যতার কোনও মাপকাঠি রাখা হয়নি।

প্রাথমিক ভাবে তিন বছর এবং আপৎকালীন ক্ষেত্রে আরও এক বছর, অর্থাৎ মোট চার বছরের জন্য নিয়োগ করা হবে। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো, পরীক্ষা নেওয়া, এমনকি গবেষণার ক্ষেত্রেও তাঁদের নিযুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। ফলে, সামগ্রিক ভাবে উচ্চশিক্ষার মান নিম্নগামী হবে। বিশ্বে মেধার ক্ষেত্রে ভারতীয়দের যে উচ্চাসন ছিল, এই সিদ্ধান্তের ফলে তা বজায় রাখা সম্ভব হবে না।

নীলকান্ত ঘোষ, কলকাতা-১৩৮

লজ্জা

‘শিক্ষকের অপমৃত্যু, প্রশ্নের মুখে না-পাওয়া পেনশন’ (১৮-৮) শীর্ষক মর্মান্তিক খবরে লজ্জায় অধোবদন হতে হয়। আমরা এ কোন রাজ্যে বাস করছি, যেখানে এক জন শিক্ষক অবসরের পর সময়মতো তাঁর প্রাপ্য সরকারি পেনশন না পাওয়ার যন্ত্রণা, অসম্মান, অর্থাভাবের কষ্ট থেকে পরিত্রাণ পেতে আত্মহননের চূড়ান্ত পথ বেছে নিতে বাধ্য হলেন? প্রয়াত সুনীল দাস কর্মজীবন শেষ করেছিলেন কলকাতার হেয়ার স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে। হেয়ার স্কুল রাজ্যের একটি ঐতিহ্যশালী সরকারি স্কুল। তিনি ২০১৯ সালে শিক্ষারত্ন সম্মানে ভূষিত হন। ফলে, তাঁর যোগ্যতা প্রশ্নাতীত। অথচ, এ রকম এক জন গুণী মানুষকে আর্থিক বেনিয়মের অভিযোগে ভিজিল্যান্স তদন্তের শিকার বানিয়ে দীর্ঘ তিন বছর ধরে মানসিক, আর্থিক যন্ত্রণা ভোগ করিয়ে, অবশেষে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হল। এ দায় কার? কেন আর্থিক বেনিয়মের তদন্ত দ্রুত শেষ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল না? বর্তমানে এই রাজ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে যে নৈরাজ্য ও অরাজকতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তা আগামী প্রজন্মের সর্বনাশ করে দেবে। অপশাসন, অদক্ষতা যে কত নির্দোষ, সৎ মানুষের ভাগ্য বিড়ম্বনার কারণ হবে, সে কথা ভাবলে শিহরিত হতে হয়।

দেবকী রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়, উত্তরপাড়া, হুগলি

দফতরের ব্যর্থতা

কিছু প্রশ্ন তুলে দিয়ে গেল ‘শিক্ষারত্ন’ ভূষিত শিক্ষকের অপমৃত্যু। এটিও একটি শিক্ষা যা তিনি দিয়ে গেলেন সমাজকে, রাজ্য প্রশাসন ও রাজ্যের গর্ব করা সংস্কৃতিকে। শিক্ষক জীবনে নানা জেলায় পাঠদান করে শেষ জীবনে ঐতিহ্যপূর্ণ শিক্ষালয় কলকাতার হেয়ার স্কুলে টানা ন’বছর প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে অবসর নিয়েছিলেন। তিনি অবসরকালীন পেনশন পাননি গত তিন বছর, খবরে প্রকাশ। এক জন ‘শিক্ষারত্ন’-এর যদি এই ভবিতব্য হয়ে থাকে, তা হলে সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভাগ্য সহজেই অনুমেয়। অবাক-করা খবরটি দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, “শিক্ষারত্ন পাওয়ার ছ’দিন পরেই নাকি কিছু আর্থিক বেনিয়মের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে ভিজিল্যান্স চালু হয়।” তবে কি তাঁর কর্মজীবনের স্বীকৃতি দিচ্ছে সরকার, কোনও রকম যাচাই না করেই! সরকারি চাকরিতে সাধারণ কর্মচারীর পদোন্নতির আগে তাঁর কাজের বিগত পাঁচ বছরের গোপন রিপোর্ট যাচাই করে, তার ‘ইন্টিগ্রিটি’-তে সন্তুষ্ট হলে তবেই দফতর থেকে নাম সুপারিশ করা হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য। এটাই সরকারি স্তরে রীতি।

সুনীল দাসের কর্মজীবনের কোনও রিপোর্ট কি যাচাই হয়নি তাঁর পদোন্নতির স্তরগুলিতে? এ সব তো স্থানীয় স্কুল পরিচালন সমিতির সুপারিশ সম্বলিত রিপোর্ট দেখে জেলা স্কুল পরিদর্শক সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষিকার সার্ভিস বুকে নথিভুক্ত করবেন নিয়মিত ভাবে, এটাই দস্তুর। অবসরগ্রহণের ছ’মাস আগেই সংশ্লিষ্ট কর্মীর সার্ভিস বুক পেনশন সেলে পাঠিয়ে দেওয়ার নিয়ম, যাতে অবসর গ্রহণের দিন হাতে তুলে দেওয়া যায় পেনশন পেমেন্ট অর্ডার। তা হলে ‘শিক্ষারত্ন’ জীবনকৃতি খেতাব দেওয়ার আগে সার্ভিস রেকর্ডের কিছুই দেখা হয়নি, বোঝা গেল। পুরোটাই যে প্রশাসনিক ব্যর্থতা, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

সৌম্যেন্দ্র নাথ জানা, কলকাতা-১৫৪

একাকিত্ব

হেয়ার স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক সুনীল দাসের অপমৃত্যু অত্যন্ত দুর্ভাবনার। যিনি সামাজিক ভাবে বহু ছাত্রছাত্রী ও মানুষের সঙ্গে যুক্ত থেকে কর্মজীবন অতিবাহিত করেছেন, তিনি পেনশনের জন্য দুর্ভাবনায় আত্মহননের মতো সিদ্ধান্ত নিলেন। তাঁর সহকর্মী, বন্ধুরা কেউ বুঝতে পারলেন না যে, তিনি এত একা হয়ে পড়েছেন ভিতর থেকে। এই সময়ের সবচেয়ে বড় অবক্ষয় হল, ছোট গণসংগঠনগুলি ভেঙে পড়েছে। কোথাও গিয়ে নিজের সমস্যা ‘শেয়ার’ করতে পারছেন না কেউ। সবাই নিজেরটুকু গুছিয়ে নিতে চাইছেন। অথচ, এ রকম ছিল না আগে। বামপন্থীদের সংগঠনের একটা বড় বৈশিষ্ট্য ছিল, সন্ধেবেলা নিয়মিত সমিতির ঘর খুলত। অনেকেই আসতেন তাঁদের সমস্যার কথা জানাতে— পেনশন, বদলি, অসুস্থতা, সন্তানের ভর্তির সমস্যা কত কী নিয়ে। কত আলোচনা হতে দেখেছি। ঠাট্টা, হাসি-মশকরাও হত। এক জনের কাজ অন্য জন স্বেচ্ছায় করে দিতেন। কাজ হোক না হোক, কেউ এক জন আমার কথা ভাবছেন, এটাই অনেক। এই ভাবনাটাই বাঁচিয়ে রাখতে পারে আমাদের। সুনীলবাবুদের পাশে আজ আর কেউ নেই। সামান্য খোঁজটুকুও কেউ রাখে না।

অরণ্যজিৎ সামন্ত, কলকাতা-৩৬

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন