সম্পাদক সমীপেষু: অরণ্যের অধিকার

আদিবাসী বা মূল নিবাসী নামগুলোও তো অ-আদিবাসীদেরই দেওয়া, যারা সরকারেরই অঙ্গ। আদিবাসী /মূল নিবাসীদের পরিচয়পত্রই বা কে দেয়, জমির পাট্টা, পরচা, দলিল, সবটাই তো অ-আদিবাসী সরকারি কর্মকর্তাদের হাত দিয়েই আদিবাসী মূল নিবাসীদের পেতে হয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৯ ০০:০০
Share:

‘আদিবাসী ও বনবাসীদের উৎখাত হওয়ার সেই ট্র্যাডিশন...’, কুমার রাণার লেখা প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে (২৩-২) এই চিঠি। প্রবন্ধটি পড়ে ‘কদমবা’ নামের একটা সিনেমার কথা মনে পড়ে গেল। যেখানে দেখানো হয়েছে, আরও বেশি লাভের জন্য নতুন ফ্যাক্টরি গড়তে জমির প্রয়োজনে, কোটিপতি ব্যবসায়ী এক গোষ্ঠী, সরকারি (ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট/পুলিশ) ও বেসরকারি (নকল সমাজসেবী সংগঠন) মদতে কী ভাবে অরণ্যবাসীদের উৎখাত করে নিজেদের দখল কায়েম করতে চায়। সিনেমার শেষে অরণ্যবাসীরা অবশ্য তাঁদের দখল রাখতে সক্ষম হন, যা কিনা সিনেমা বলেই সম্ভব। বাস্তবে কিন্তু অরণ্যবাসী বা অরণ্যনির্ভর আদিবাসী/মূল নিবাসীদের উৎখাত হতেই হয়, এইটাই ট্র্যাডিশন।

Advertisement

আদিবাসী বা মূল নিবাসী নামগুলোও তো অ-আদিবাসীদেরই দেওয়া, যারা সরকারেরই অঙ্গ। আদিবাসী /মূল নিবাসীদের পরিচয়পত্রই বা কে দেয়, জমির পাট্টা, পরচা, দলিল, সবটাই তো অ-আদিবাসী সরকারি কর্মকর্তাদের হাত দিয়েই আদিবাসী মূল নিবাসীদের পেতে হয়। অনেক ক্ষেত্রেই প্রকৃত সদিচ্ছা সম্বন্ধে সন্দেহের অবকাশ থেকে যায়। সেখানে নিরক্ষর, আধুনিক শিক্ষায় অশিক্ষিত মানুষদের কতখানি অধিকার রক্ষা, উপকার ও উন্নতি হতে পারে তা কল্পনার বিষয়। বৃহৎ স্বার্থে, দেশের স্বার্থে, উন্নতির স্বার্থে, আর এমন কে বা কারা আছেন, যূপকাষ্ঠে বলি হওয়ার মতো?

অরণ্যবাসী বা অরণ্যনির্ভর আদিবাসী /মূল নিবাসীদের দুর্ভাগ্য যে, তাঁদের বসবাসের জায়গাতেই বালি, পাথর, কয়লা, অভ্র, কাঠ ইত্যাদি পাওয়া যায়। কিংবা তাঁদের জায়গাতেই সব দিক দিয়ে উপযোগী কারখানা গড়ে তোলা যায়। এমনটাই বারে বারে যুগেযুগে ঘটে এসেছে, ঘটে চলেছে। আদিবাসীরা বন ধ্বংস করেন, এমন একটা অপবাদ দেওয়ারও চেষ্টা করা হয়। এক দিনের শিকার উৎসবে গেল-গেল রব ওঠে। কিন্তু অনেকেই জানেন, বন ধ্বংস হওয়ার প্রকৃত কারণ কী এবং বেশ কিছু বন্যপ্রাণীই বা কেন কী ভাবে লুপ্ত হওয়ার পথে। হাতি বা অন্য কোনও বন্যপ্রাণী কেন বারে বারে লোকালয়ে চলে আসছে? কারও হয়তো মনে পড়তে পারে যে এক সময় চিপকো আন্দোলন নামে একটা ঘটনা কেন ঘটেছিল এ দেশে। এই সে দিন ঝাড়খণ্ডের যমুনা টুডু পুরস্কৃত হলেন কেন? মনে রাখা দরকার, শুধু বন্যেরাই বনে সুন্দর নয়, বনবাসীরাও বনেই সুন্দর এবং যুগ যুগ ধরে বন ও বনবাসী উভয়েই উভয়কে লালন পালন করে চলেছেন, রক্ষা করে চলেছেন, আদপেই ধ্বংস করেননি, করছেন না এবং করবেনও না।

Advertisement

আজ যদি এঁরা অরণ্যের অধিকার থেকে বঞ্চিত হন, যদি তাঁদের স্বাভাবিক বাসস্থান থেকে উৎখাত করা হয়, তা কার দোষে হবে এবং তা কাদের স্বার্থ রক্ষা করবে, আদিবাসীপ্রেমী, বনবাসীপ্রেমী, মূল নিবাসীপ্রেমী, মানবপ্রেমী এবং তামাম আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিতেরা বলবেন কি?

বিশ্বনাথ মুর্মু

বাজে শিবপুর রোড, হাওড়া

আয়াতন্ত্র

গত ৮-১-২০১৯ তারিখে গভীর রাতে আমার মাকে একটি সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করি। কর্তব্যরত ডাক্তারবাবু মাকে দ্রুত পরীক্ষা করেন এবং ভর্তির সুপারিশ করেন, তিনি-সহ অন্য ডাক্তারবাবুদের সহৃদয় আচরণ আমার মাকে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে সাহায্য করে। কিন্তু উক্ত হাসপাতালে এক শ্রেণির নার্স ও ওয়ার্ড মাস্টারের মদতে আয়াতন্ত্র প্রবল কুৎসিত রূপ ধারণ করেছে। এখানে রোগী বা রোগিণীর দেখভালের জন্য প্রকারান্তরে আয়া রাখা বাধ্যতামূলক। না হলে নার্স দিদিমণি দৃষ্টিপাত নাও করতে পারেন, দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উগ্র মেজাজে নার্স দিদিমণি রোগীর পরিজনকে শারীরিক নিগ্রহ করতে পারেন। সর্বোপরি এই হাসপাতাল বিড়াল-কুকুরের অবাধ বিচরণভূমি। তারা ওয়ার্ডের ভেতরে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমার মা ডায়েরিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন, তাঁর বিছানায় একাধিক বার বিড়াল শুয়ে থাকা সত্ত্বেও আয়া এক বারও বিড়াল বিতাড়নের চেষ্টা করেননি, যদিও প্রতি বেলায় ১৫০ টাকা হিসাব বুঝে নিয়েছেন। অধিকন্তু এই হাসপাতালে আয়ারা রোগী বা রোগিণীর মলমূত্র পরিষ্কার করেন না। তার জন্য সুইপারদের আলাদা টাকা আয়াদেরই হাতে নির্ধারিত হারে দিতে হয়। কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে দিনের পর দিন এ সব চলছে কেমন করে, ভাবলে বিস্মিত হতে হয়।

সন্দীপ সিন্হা রায়

কাঁকিনাড়া, উত্তর ২৪ পরগনা

গ্রন্থসাহিব

খুব আনন্দের খবর, রামকৃষ্ণ মিশন বাংলায় গ্রন্থসাহিব প্রকাশ করেছে (‘সমন্বয়ের সুর নিয়ে বাংলায় গ্রন্থসাহিব’, ৯-২)। এ প্রসঙ্গে একটু বলি। বাংলা ভাষার গ্রন্থসাহিবের অনুবাদ এই প্রথম নয়। শ্রীশ্রী বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী প্রভুর নির্দেশে তাঁরই শিষ্য হারানচন্দ্র চাকলাদার (১৮৭৪-১৯৫৮) প্রাচীন গুরুমুখী ভাষা থেকে বাংলায় ওই গ্রন্থসাহিব গ্রন্থটি ছ’টি খণ্ডে অনুবাদ করেন। হারানচন্দ্র খণ্ডাকারে যেগুলি অনুবাদ করেন সেগুলি ১ম খণ্ড (জপজি, রহিবাস, সোহিলা), ২য় খণ্ড (শ্রীরাগ— প্রথমার্ধ), ৩য় খণ্ড (গৌড়ী সুখমনী সাহিব), ৪র্থ খণ্ড (রাগ মাঝ সম্পূর্ণ), ৫ম খণ্ড (আনন্দ সাহিব), ৬ষ্ঠ খণ্ড (হরিনামের মাহাত্ম্য)। ৩০ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে হারানবাবুর ভাই শ্রীমণীন্দ্রচন্দ্র চাকলাদার খণ্ডাকারে গ্রন্থসাহিব প্রকাশ করেন। ১ম খণ্ডটি প্রকাশিত হয় ১৩৬৪ সালে (ভেদিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট, বেরহামপুর, গঞ্জাম, ওড়িশা)।

১ম মুদ্রণের মুদ্রাকর সমরেন্দ্র ভূষণ মল্লিক, বাণীপ্রেস। অখণ্ডাকারে সমস্ত গ্রন্থসাহিব প্রকাশিত হয় ১৯৯৯ সালের মে মাসে (নবভারতী ভবন, ৩১/এ পটুয়াটোলা লেন, কলি-৯)। পরবর্তী কালে ২য় ও ৩য় সংস্করণ প্রকাশ করে ক্লাসিক পাবলিকেশন।

শ্রীশ্রী বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর শিষ্য কিরণচাঁদ দরবেশজি শুধুমাত্র ‘জপজি’র অনুবাদ করেন পদ্যাকারে বাংলা ভাষায় (১৩২১, বারাণসী)। এবং অন্যতম গোস্বামী শিষ্য রায়বাহাদুর জ্ঞানেন্দ্রমোহন দত্ত, বি এল বিদ্যা বিনোদ ভারতী কর্তৃক গদ্যাকারে ‘জপজি’ (১৯২৫) ও ‘সুখমনী’ (১৯২৭) বাংলা ভাষায় প্রকাশিত হয়।

প্রসঙ্গত, সদ্‌গুরু শ্রীশ্রী বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী বলেছিলেন ‘‘যত ধর্মগ্রন্থ পাঠ করিয়াছি, তন্মধ্যে গ্রন্থসাহিবের ন্যায় সুন্দর ও মিষ্ট আর একখানি আছে কি না সন্দেহ।’’ তিনি নিজে গুরুমুখী শিক্ষা করে গ্রন্থসাহিব নিত্য পাঠ করতেন। আজও তাঁর গেন্ডারিয়া আশ্রমে গ্রন্থসাহিবের নিত্যপাঠ হয়।

উত্তরায়ণ চক্রবর্তী

কলকাতা-১৪৯

ছুটিতে হাজিরা

কয়েকটি খবরে পড়লাম, কিছু ছুটিতে হাজিরা কেন, এই নিয়ে স্কুলে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। ২৩ জানুয়ারি, ২৬ জানুয়ারি, ১৫ অগস্ট— এই তারিখগুলিতে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ক্যালেন্ডারে ছুটি (পালনীয়) হিসাবে উল্লেখ করা আছে। ওই সব দিনে পতাকা উত্তোলন করা না হলে, স্থানীয় মানুষের রোষের সম্মুখীন হতে হয়। তাই পতাকা উত্তোলন করে দিনটিকে উদ্‌যাপনের যাবতীয় দায় প্রধান শিক্ষকের উপর বর্তায়। সহকারী শিক্ষকেরা অনেকেই আসতে চান না, কারণ ছুটি হিসাবে দিনটির উল্লেখ অাছে। এ বিষয়ে স্কুল শিক্ষা দফতরের সুস্পষ্ট নির্দেশিকার প্রয়োজন আছে।

সত্যানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়

বীরচন্দ্রপুর নিত্যানন্দ উচ্চ বিদ্যালয়, বীরভূম

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.i•

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

ভ্রম সংশোধন

• ‘আশার দিশা, এড্স-মুক্ত ‘লন্ডন রোগী’’ প্রতিবেদনে (পৃ ১, ৬-৩) এইচআইভিকে ব্যাক্টিরিয়া লেখা হয়েছে। এইচআইভি ব্যাক্টিরিয়া নয়। এটি ভাইরাস।
• ‘অভিমান ভুলে গানেই আশ্রয়’ সংবাদ প্রতিবেদনে (কলকাতা, পৃ ১৮, ২৪-২) রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী শৈলজারঞ্জন ঠাকুর লেখা হয়েছে। নামটি হবে শৈলজারঞ্জন মজুমদার।
অনিচ্ছাকৃত এই ভুলগুলির জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন