স্ত্রীর সঙ্গে অর্ণব রায়। ছবি: সংগৃহীত
ধৈর্য রাখা মুশকিল হচ্ছে এ বার। একটা করে দিন কাটছে আর উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে অর্ণব রায়কে নিয়ে। এক জন পদস্থ সরকারি কর্তা আচমকা নিরুদ্দেশ হয়ে গেলেন নির্বাচনের মরসুমে। গোটা নদিয়া জেলার সব বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্র এবং ভিভিপ্যাট যন্ত্রের দায়দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল এই আধিকারিকের উপরে। নির্বাচনী প্রক্রিয়া চলাকালীন এমন এক সরকারি কর্তা নিখোঁজ হয়ে গেলে উদ্বেগ তো নানা দিক থেকেই মাথাচারা দেয়। এতগুলো দিন কেটে গেল, এত হইচই পড়ে গেল, কিন্তু পুলিশ-প্রশাসন এখনও প্রায় কোনও সূত্রই খুঁজে বার করতে পারল না— এমন পরিস্থিতি সহজে মেনে নেওয়া খুব কঠিন। প্রশাসনিক গাফিলতি বা অপদার্থতা সংক্রান্ত প্রশ্ন অত্যন্ত স্বাভাবিক কারণেই উঠতে শুরু করবে এ বার।
অর্ণব রায়ের সঙ্গে ঠিক কী ঘটেছে, তিনি কোথায় রয়েছেন বা থাকতে পারেন, কী অবস্থায় রয়েছেন বা থাকতে পারেন, সে সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত প্রায় কিছুই বুঝে উঠতে পারেনি প্রশাসন। পুলিশের বা তদন্তকারীদের বক্তব্য এখনও পর্যন্ত যতটা জানা গিয়েছে, তা থেকে অন্তত এমনটাই প্রতীত হয়। এই অপারগতার জন্য লজ্জিত বা সঙ্কুচিত হওয়া উচিত পুলিশ-প্রশাসনের। কিন্তু তা হচ্ছে না। আধিকারিককে খুঁজে বার করতে না পারার দায় ওই আধিকারিকের উপরেই যেন চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়েছে পরোক্ষে। দায় ঝেড়ে ফেলার এই চেষ্টা দুর্ভাগ্যজনক তো বটেই, লজ্জাজনকও।
চাপে পড়লে বা অপছন্দের পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে না পারলে অর্ণব রায় নিখোঁজ হয়ে যান, এ রকম অভ্যাস তাঁর রয়েছে— প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে এই রকম এক তত্ত্ব খাড়া করেছে প্রশাসন। কিন্তু সেই প্রশাসনেরই আর এক পদস্থ কর্তা তথা নিখোঁজ আধিকারিকের স্ত্রী অনীশা যশ সে তত্ত্বকে নস্যাত্ করছেন। প্রতিকূলতার মুখে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া বা আত্মগোপন করে থাকার কোনও অভ্যাস তাঁর নেই বলে অর্ণবের স্ত্রীর দাবি। তিনি যথেষ্ট দায়িত্বশীল এবং এত দিন ধরে আত্মগোপন করে থাকা তাঁর পক্ষে অসম্ভব বলে অনীশার বিশ্বাস।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
আরও পড়ুন: কখনও উধাও হননি অর্ণব, দাবি অনীশার
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
অর্ণব রায়ের স্ত্রীর এই বিশ্বাসে প্রশাসনিক কর্তারা বা তদন্তকারীরা খুব একটা বিশ্বাস রাখছেন বলে মনে হচ্ছে না। কিন্তু সাধারণ নাগরিকরাও যে এ বার প্রশাসনের উপরে আর বিশ্বাস রাখতে পারছেন না, সে কথা কি প্রশাসনিক কর্তারা বুঝতে পারছেন?
অর্ণব রায়কে কেউ আটকে রেখেছেন, না কি তিনি আত্মগোপন করে রয়েছেন, তা বড় কথা নয়। বড় কথা হল এই যে, এতগুলো দিন কেটে যাওয়া সত্ত্বেও অর্ণব রায়ের অন্তর্ধান রহস্যের কিনারার দিকে এক কদমও এগনো গেল না। ধরে নিলাম, অর্ণব রায় আত্মগোপনই করেছেন। তা হলেও কি তাঁকে খুঁজে বার করার দায় থেকে প্রশাসন রেহাই পায়? তা যদি পায়, তা হলে তো এ বার থেকে আত্মগোপন করে থাকা দাগি অপরাধীদের খুঁজে বার করার দায়ও পুলিশ-প্রশাসনের থাকবে না!
চাপানউতোরটা যে দৃষ্টিকটূ হচ্ছে, প্রশাসনের তা বোঝা উচিত। আচমকা হারিয়ে যাওয়া আধিকারিকের হদিস পাওয়া অবিলম্বে জরুরি। পঞ্চায়েত নির্বাচনে উত্তর দিনাজপুর জেলার এক বুথ থেকে আচমকা নিখোঁজ হয়ে যাওয়া প্রিসাইডিং অফিসার তথা স্কুল শিক্ষককে কী অবস্থায় খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল এবং তা নিয়ে কী তত্ত্ব খাড়া করা হয়েছিল, সে কথা গোটা রাজ্যের মনে আছে। অতএব উদ্বেগে আমাদের থাকতেই হচ্ছে। দায় ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা ছেড়ে দ্রুত ওই আধিকারিককে খুঁজে বার করা দরকার। প্রশাসন সেই লক্ষ্যে জোর দিয়ে এগোতে না পারলে পরিস্থিতিটা লজ্জাজনক হবে।