Lok Sabha Election 2019

সহাবস্থানের পরিবেশটা হারিয়ে ফেললে কিন্তু আমাদের চলবে না

প্রথমে বিরোধী দলগুলোর আপত্তি ছিল ইভিএমে ভোট গ্রহণ নিয়ে। তার পরে ভিভিপ্যাট নিয়ে হইচই বাড়ল। ইভিএমে ভোটপ্রাপ্তির হিসেবের সঙ্গে কত শতাংশ ক্ষেত্রে মিলিয়ে দেখা হবে ভিভিপ্যাটের খতিয়ান, তা নিয়ে দর কষাকষি চলল, মামলা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়াল।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৯ ০০:৩৭
Share:

কড়া পাহারায় স্ট্রংরুম।— ছবি পিটিআই।

প্রলম্বিত এক প্রক্রিয়া আজ অন্তিম লগ্নে। দফায় দফায় ভোটগ্রহণ এবং সব শেষে আজ ভোট গণনা— মাস দেড়েক ধরে প্রবল রাজনৈতিক উত্তাপের সাক্ষী হল ভারত। সময় যত গড়াল উত্তাপ ততই বাড়ল, ততই অবনমন ঘটল ভাষা ও ভঙ্গির। ভোট প্রক্রিয়ার শেষ পর্যায়ে পৌঁছে তিক্ততা যেখানে পৌঁছল রাজনীতির ভাষা ও ভঙ্গি যতটা নীচে নামল, স্মরণাতীত কালের কোনও নির্বাচনে তার নজির খুঁজে পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় বিস্তর। আর একেবারে শেষ লগ্নে পৌঁছে সংশয়টা তৈরি হল নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে।

Advertisement

প্রথমে বিরোধী দলগুলোর আপত্তি ছিল ইভিএমে ভোট গ্রহণ নিয়ে। তার পরে ভিভিপ্যাট নিয়ে হইচই বাড়ল। ইভিএমে ভোটপ্রাপ্তির হিসেবের সঙ্গে কত শতাংশ ক্ষেত্রে মিলিয়ে দেখা হবে ভিভিপ্যাটের খতিয়ান, তা নিয়ে দর কষাকষি চলল, মামলা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়াল। সব শেষে অর্থাত্ ভোটগ্রহণ মিটে যাওয়ার পরে বিরোধীদের তরফে আশঙ্কা প্রকাশ করা হল, উত্তর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে স্ট্রং রুমে ইভিএম বদলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। বিরোধী শিবিরের রথী-মহারথীরা দলের কর্মী-সমর্থকদের নির্দেশ দিলেন স্ট্রং রুম পাহারা দেওয়ার। পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিভিন্ন রাজ্যে শয়ে শয়ে রাজনৈতিক কর্মী নেমে পড়লেন নিজেদের এলাকার স্ট্রং রুমের সামনে জমায়েত শুরু করার কাজে।

এই যদি হয় বিরোধী শিবিরের পদক্ষেপ, তা হলে ঠিক এই বিন্দুতেই শেষ সঙ্ঘাতটায় গেল দেশের শাসক দল তথা সরকার পক্ষ। গণনায় পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে দেখলেই এই জমায়েতকারীরা ভেস্তে দিতে চাইবে ভোট গোনার প্রক্রিয়া— অভিযোগ করল বিজেপি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক প্রত্যেকটি রাজ্যের এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের শীর্ষ প্রশাসনিক আধিকারিককে সতর্কবার্তা পাঠিয়ে বলল, ভোট গণনা চলার সময় হিংসায় প্ররোচনা দেওয়ার চেষ্টা হতে পারে। তা রোখার জন্য সব রকম ভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে প্রশাসনকে।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

এই পরিমাণ তিক্ততাকে সাক্ষী রেখে দেশের সাধারণ নির্বাচনের ভোট গণনা হতে আগে কখনও দেখা গিয়েছে কি? নির্বাচনের মরসুমে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়া কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। ভারতের যে কোনও নির্বাচনেই প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরকে তীব্র আক্রমণে বিদ্ধ করে। অতএব আক্রমণ, প্রতি আক্রমণ এবং তা থেকে জন্ম নেওয়া উত্তাপ ও তিক্ততা নতুন কিছু নয়। কিন্তু পরস্পরকে আক্রমণ করতে গিয়ে সৌজন্যের যাবতীয় সীমা লঙ্ঘন করে যাওয়া এবং ভাষা ও ভঙ্গির চূড়ান্ত অবনতি যে ভাবে দেখা গেল এই নির্বাচনে, তা বোধহয় ভারতের সাম্প্রতিক গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির নব্যতম সংযো‌জন।

আরও পড়ুন: ইভিএমের পর গণনা ভিভিপ্যাট, ফলপ্রকাশে বিলম্ব এবার

দেশের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক উত্সব, সুতরাং উত্সবের মেজাজেই অংশ নিন সবাই— বার্তাটাকে এই রকম সরল ও সাধারণ রাখা গেলেই সবচেয়ে ভাল হত। কিন্তু পরিস্থিতি আর অতটা সরল ও সাধারণ নেই। অতএব সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের সকালে অন্য আর্জি রাখতে হচ্ছে। এ গণতন্ত্র সবার, সবাই মিলেই সহাবস্থান করতে হবে, তিক্ততাকে এমন কোনও পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া উচিত নয়, যাতে সহাবস্থানের সৌন্দর্যটাই হারিয়ে যায়— এই কথাটা মনে রাখা দরকার আজ সবার।

আরও পড়ুন: স্ট্রং রুমে সতর্ক নজর রাখতে কর্মীদের নির্দেশ বিরোধী দলগুলির

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন