অবাধে, শান্তিতে, নির্বিঘ্নে এই সপ্তম দফার ভোটটা মেটানোই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কমিশনের।
তীব্র তিক্ততার বাতাবরণ ছুঁয়ে ভোটগ্রহণ পৌঁছল সপ্তম তথা শেষ দফায়। রাত পোহালেই সাধারণ নির্বাচনের শেষ দফার ভোট। শাসক ও বিরোধীর মধ্যে যে পর্যায়ের টানাপড়েনের সাক্ষী হওয়ার পরে বাংলার ৯টি লোকসভা আসনের ভোটদাতারা ভোট দিতে যাচ্ছেন, তাতে এই দফার ভোটগ্রহণ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। নির্বাচন কমিশনের জন্যও এই দফা বিশেষ গুরুত্বের। কারণ, বেনজির এক পরিস্থিতিকে বেনজির পদক্ষেপের মাধ্যমে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে এই দফার ভোট করাতে চলেছে কমিশন। এই দফাও অবাধ ও শান্তিপূর্ণ না রাখতে পারলে কমিশনের পদক্ষেপগুলোর কার্যকারিতা নিয়েই প্রশ্ন উঠবে।
নির্বাচনী তিক্ততা বা নির্বাচনী হিংসা পশ্চিমবঙ্গে নতুন কিছু নয়। যে কোনও স্তরের নির্বাচনে হিংসার সাক্ষী হতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে এ রাজ্য। কিন্তু তিক্ততা যে চরম পর্যায়ে পৌঁছল সাধারণ নির্বাচনের শেষ দফার ভোটগ্রহণের আগে, তা শেষ কবে দেখা গিয়েছে লোকসভা নির্বাচন ঘিরে, মনে করা খুব শক্ত। দেশের শাসক দলের সভাপতির কর্মসূচি আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ উঠছে, তা নিয়ে কলকাতার রাজপথে ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটে যাচ্ছে, নির্বাচন কমিশন অভূতপূর্ব পদক্ষেপ করছে, দেশের প্রায় সব বিরোধী দল এ রাজ্যের শাসক দলের পাশে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে— এই রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা বাংলার মানুষের কমই। অতএব আগামী কাল গোটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাটাই এক বিশেষ উপলব্ধির মুখোমুখি দাঁড়াতে চলেছে।
নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তীব্র বিষোদ্গার করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কমিশন পুরোপুরি বিজেপির হয়ে কাজ করছে, বিজেপি দফতর থেকে নেওয়া সিদ্ধান্তই কমিশনের সিদ্ধান্ত হয়ে উঠছে, বিজেপি দফতর আর কমিশনের দফতর সমর্থক হয়ে উঠছে— এই রকম স্বরেই নির্বাচন কমিশনকে আক্রমণ করেছে তৃণমূল। কংগ্রেস-সহ প্রায় গোটা বিরোধী শিবির তৃণমূলের সুরেই সুর মিলিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে।
নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে গভীর অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বিজেপিও। গোটা দেশে কমিশন যে ভাবে কাজ করছে, পশ্চিমবঙ্গে সে ভাবে করছে না— এই অভিযোগ এনেছেন খোদ বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী অনিয়মের একের পর এক অভিযোগকে ঘিরে অসন্তোষ তীব্র তাঁর। বিজেপি সভাপতির নিশানাতেও সেই নির্বাচন কমিশনই। বাংলায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে না পারলে এ বার নির্বাচন কমিশনের প্রতিষ্ঠাই প্রশ্নের মুখে পড়বে, এমন কঠোর মন্তব্য শোনা গিয়েছে শাহের মুখ থেকে।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
আরও পড়ুন: ভয় ওই মেরুদণ্ডকে, তাই বারবার শিকার!
এই পরিস্থিতির মধ্যেই সপ্তম দফার ভোট। কোনও পক্ষই সন্তুষ্ট নয় কমিশনের ভূমিকা নিয়ে। দু’পক্ষই আক্রমণ করেছে দেশের নির্বাচন নিয়ামক সংস্থাকে। অবাধে, শান্তিতে, নির্বিঘ্নে এই সপ্তম দফার ভোটটা মেটানোই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কমিশনের জন্য অতএব।
পরস্পরবিরোধী দু’টি পক্ষই আক্রমণ করছে নির্বাচন কমিশনকে। কোনও পক্ষই সন্তুষ্ট নয়। এর থেকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যেতেই পারে যে, কমিশন ঠিক পথেই রয়েছে। রয়েছে বলেই সব পক্ষের কাছে অপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
শুধু অপ্রিয় হয়ে উঠে অবশ্য কাজের কাজ কিছু হবে না। ভোটটাকে নির্বিঘ্নে করিয়ে কমিশনকে বোঝাতে হবে, বেনজির পদক্ষেপগুলো বৃথা গেল না, সেগুলো কাজে এল।
কিন্তু নিশ্চিন্তে থাকার পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতৃত্বকে সংযত থাকার বার্তা কমিশন বেশ কড়া ভাবেই দিয়েছে। এ রাজ্যের প্রশাসনকেও কাড়া দাওয়াই দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সে বার্তা বা সে দাওয়াইয়ের রেশ বিবদমান দুই দলের কর্মীদের মধ্যে পৌঁছল, না কি অভূতপূর্ব তিক্ততার রেশটা নিয়েই তাঁরা ভোটে যাচ্ছেন, সে কথা এখনও স্পষ্ট নয়। সব উত্তর মিলবে শেষ দফার ভোটগ্রহণেই। কিন্তু প্রত্যেককে মনে রাখতে হবে, তিক্ততা আরও বাড়িয়ে তোলা গণতন্ত্রের পক্ষে মোটেই স্বাস্থ্যকর হবে না।