লন্ডন ডায়েরি

হাউস অব কমন্সের স্পিকার জন বারকো এ সপ্তাহে পদত্যাগ করলেন। সবাই মিস করবেন ওঁকে। গত কয়েক মাস পার্লামেন্টে ওঁর অদ্ভুত ভাবে ‘অর্ডার’ বলাটা একটা দেখার মতো দৃশ্য ছিল।

Advertisement

শ্রাবণী বসু

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:০৫
Share:

প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করলেন ধেসি

Advertisement

তনমনজিৎ সিংহ ধেসি, হাউস অব কমন্সের একমাত্র পাগড়িধারী, নিজের দলে আর ব্রিটেনের জাতিগত সংখ্যালঘু মানুষের কাছে এখন নায়ক। লেবার পার্টির এই সাংসদ সম্প্রতি বরিস জনসনকে ক্ষমা চাইতে বলেন, মুসলমান মহিলাদের বরিস ‘লেটারবক্স’ বলে ব্যঙ্গ করেছিলেন বলে। গত বছর একটি লেখায় ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস লিখেছিলেন, মুসলমান মেয়েদের দেখতে চিঠির বাক্সের মতো, ব্যাঙ্ক ডাকাতের মতো। পার্লামেন্টে ধেসি-র তীব্র ভাষায় প্রশ্ন ও ভর্ৎসনা, এবং দৃশ্যত অপ্রস্তুত বরিসের আমতা-আমতা উত্তরের ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। সবাই মেতে উঠেছেন ধেসিকে নিয়ে। বিবিসি টিভিতে, বিবিসি পঞ্জাবি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসেও সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ধেসি। জানিয়েছেন, নারীর অধিকারকে পুরুষের, মুসলমানের অধিকারকে শিখের, কাশ্মীরিদের অধিকারকে ব্রিটিশ শিখের সমর্থন অত্যন্ত জরুরি। বলেছেন, অল্প বয়স থেকেই তাঁর মতো অসংখ্য মানুষকে ‘টাওয়েলহেড’, ‘তালিবান’ বলে গালি দেওয়া হত। তাই মুসলমান নারীকে ‘লেটারবক্স’ বলার যন্ত্রণা তিনি বোঝেন। ধেসি প্রশ্ন ছুড়েছিলেন, বরিস কবে তাঁর জাতিবিদ্বেষী কুমন্তব্যের জন্য, ‘হেট ক্রাইম’কে ইন্ধন জোগানোর জন্য ক্ষমা চাইবেন; কবে তিনি ইসলামভীতি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেবেন, যেমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন টিভির পর্দায়। বরিস উত্তরে এটুকুই বলতে পেরেছেন, তুরস্ক-সূত্রে তাঁরও মুসলমান বংশপরিচয় আছে, তাঁরও শিখ আত্মীয় আছে। ধেসির প্রত্যুত্তর: ‘‘আমারও পোলিশ ও শ্বেতাঙ্গ স্কটিশ আত্মীয় আছে, তার মানেই এই নয় যে পোলিশ ও স্কটিশদের নিয়ে আমি যা-খুশি-তাই বলব।’’ ধেসিকে নিয়ে হোর্ডিং পড়েছে: তিনি এখন ‘বিশ্ববাসীর মুখ’!

Advertisement

পার্লামেন্টের ‘শিক্ষক’

হাউস অব কমন্সের স্পিকার জন বারকো এ সপ্তাহে পদত্যাগ করলেন। সবাই মিস করবেন ওঁকে। গত কয়েক মাস পার্লামেন্টে ওঁর অদ্ভুত ভাবে ‘অর্ডার’ বলাটা একটা দেখার মতো দৃশ্য ছিল। ব্রিটিশ এমপিরা এ তথ্যও পেয়েছেন, মার্কিন সেনেটররা নেটফ্লিক্সের থেকেও বিবিসি পার্লামেন্ট দেখছেন বেশি! বারকো ইউরোপেও জনপ্রিয়। ওঁর ‘অর্ডার’ বলাটা জার্মান রেডিয়োতে শোনানো হয়েছে, ইউটিউবে ওঁর নানান মুহূর্ত হিট। গত সপ্তাহে টোরি দলের ক্যাবিনেট মন্ত্রী জেকব রিস মোগ পার্লামেন্টে জরুরি ব্রেক্সিট-বিতর্ক শুরু করা নিয়ে তাঁকে চ্যালেঞ্জ ছুড়লে বারকো তাঁকে বলেন, কেউ যতই উচ্চপদাধিকারী হোন, হাউস অব কমন্স চালানোর কৌশল যেন তাঁকে কেউ শেখাতে না আসেন। হাউসে জেরেমি করবিনকে নাম ধরে ডেকে প্রধানমন্ত্রীও তাঁর কাছে বকুনি খেয়েছেন, কারণ পার্লামেন্টে এমপিদের ডাকা হয় নিজেদের নির্বাচন-এলাকার সূত্রে। আর এক ক্যাবিনেট মন্ত্রী মাইকেল গোভকে বলেছেন, তিনি যেন ‘লক্ষ্মী ছেলে’র মতো আচরণ করেন। রীতি মেনে বক্তৃতা না দেওয়ায় সাজিদ জাভিদকে থামিয়ে দিয়েছেন। দর্শনার্থীদের জন্য পার্লামেন্ট খুলে দিয়েছিলেন বারকো। স্কুলপড়ুয়াদের আমন্ত্রণ জানাতেন পার্লামেন্ট দেখতে আসার। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অবশ্য ঢোকার অনুমতি দেননি, অভিবাসীদের প্রতি ট্রাম্পের মনোভাবের জন্য।

উঠে বসুন!

পার্লামেন্টে কত কথাই তো শোনা যায়। কিন্তু চিৎকার করে কোনও এমপি-কে ‘উঠে বসুন’ বলতে হচ্ছে, এ আগে ঘটেনি। এমপি ভদ্রলোক শুয়ে ছিলেন! কনজ়ার্ভেটিভ ক্যাবিনেট মন্ত্রী ও হাউস-এর লিডার জেকব রিস মোগ গত সপ্তাহে তিনটে আসন জুড়ে প্রায় শুয়েই পড়েন। এমনকি ঘুমিয়ে পড়ারও দশা। তখন জরুরি ব্রেক্সিট-বিতর্ক চলছিল। ওঁর সহকর্মীরা তো চটে লাল! গ্রিন পার্টি নেতা ক্যারোলিন লুকাস বলেছেন, জেকবের শরীরভাষা ‘হাউস ও নাগরিকদের পক্ষে অবমাননাকর’। তাঁর দাবি, পার্লামেন্টের রেকর্ডে এই ঘটনা লিপিবদ্ধ থাকা উচিত— তিনটে আসন জুড়ে এমন ভাবে জেকব শুয়ে আছেন, যেন পার্লামেন্টে যা ঘটছে তা খুব একঘেয়ে! নিন্দা করেছেন লেবার পার্টির এমপি আনা টার্লিও। অন্য এক এমপি জেকবকে একটা বালিশ দিতে চেয়েছেন!

কথার ছিরি

প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের বিরুদ্ধে লিঙ্গবৈষম্যমূলক মন্তব্যেরও অভিযোগ উঠেছে। ক্যামেরায় দেখা গিয়েছে, তিনি হাত নেড়ে জেরেমি করবিনকে বলছেন, ‘বিগ গার্লস ব্লাউজ়’। কথাটার মানে হিম্মত না-থাকা পুরুষ। এর আগে এক হাতে-লেখা নোটে ডেভিড ক্যামেরনকে লিখেছিলেন ‘গার্লি সোট’, ফাঁস হয়ে যায় সেটা। কথাটার মানে লক্ষ্মী মেয়ে, যে শুধু লেখাপড়া-হোমওয়ার্ক নিয়েই থাকে। ব্রিটিশ মহিলা এমপি-রা টুইট করেছেন, তাঁরা সবাই গর্বিত ‘গার্লি সোট’!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন