London Diary

লন্ডন ডায়েরি

আন্দোলনে উত্তাল ব্রিটেন। ব্রিস্টলবাসী রাগ উগরে দিয়েছেন এডওয়ার্ড কোলস্টন-এর মূর্তিতে।

Advertisement

শ্রাবণী বসু

শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০২০ ০০:৫৩
Share:

দড়ি ধরে মারো টান রাজা হবে খানখান

Advertisement

ভাবমূর্তি: নতুন মূল্যায়নের পর, ব্রিস্টলে বিসর্জন হচ্ছে এডওয়ার্ড কোলস্টন-এর মূর্তির

ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার— আন্দোলনে উত্তাল ব্রিটেন। ব্রিস্টলবাসী রাগ উগরে দিয়েছেন এডওয়ার্ড কোলস্টন-এর মূর্তিতে। কোলস্টন সতেরো শতকের কুখ্যাত দাস-ব্যবসায়ী। ১৬৭২-৮৯’এর মধ্যে ৮৪,০০০ পুরুষ, স্ত্রী ও শিশুকে আফ্রিকা থেকে আমেরিকায় এনেছিলেন। পশ্চিম আফ্রিকায় তাঁদের কিনে, ‘রয়্যাল আফ্রিকান কোম্পানি’-র ছাপ্পা মেরে আমেরিকার জাহাজে ঠেসে তোলা হত। আট সপ্তাহের নারকীয় সমুদ্রযাত্রায় প্রায় ১৯,০০০ মানুষ মারা গিয়েছিলেন। আটলান্টিকের হাঙরের মুখে তাঁদের দেহ ছুড়ে দেওয়া হয়েছিল। কোলস্টন ১৭২১ সালে অগাধ সম্পত্তি রেখে ব্রিস্টলে মারা যান। ১৮৯৫ সালে তাঁর সম্মানে শহরে ব্রোঞ্জ মূর্তি গড়া হয়। ফলকে লেখা, ‘শহরের অন্যতম সুপুত্র। গুণবান ও জ্ঞানবান।’ ক্রীতদাসদের বংশজরা বলেছেন, রাস্তাটায় গেলে শেকলে বাঁধা পূর্বপুরুষদের অমানবিক যন্ত্রণা ও অপমান মনে পড়ে যেত। আন্দোলনকারীরা মূর্তিটার মুখে লাল কালি লেপে বলেছেন, ‘ক্রীতদাসের রক্ত’। বেদি থেকে মূর্তি উপড়ে ব্রিস্টল বন্দরে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে জলে ফেলে দিয়েছেন। বলেছেন, এখানে লোকটা দাসে বোঝাই জাহাজগুলোর অপেক্ষা করত। এখানেই মাছেরা ওকে টুকরো টুকরো করুক।

Advertisement

ঋষির ছবি

ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনক দুই আলোকচিত্রীকে নিয়োগ করেছেন। তাঁরা কর্মরত ঋষির নানা ভঙ্গিমার ছবি তুলেছেন। আর এক পেশাদার প্রচারক সে সব ছবি সাজিয়ে-গুছিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করছেন। এঁদের বদান্যতাতেই ডেস্কে কর্মরত ঋষির ছবি ক’দিন আগে ভাইরাল হয়। বেজায় চটেছেন চিত্রসাংবাদিকরা। অর্থমন্ত্রীর সচেতন-অসচেতন নানা মুহূর্ত লেন্সবন্দি করার সুযোগ হাতছাড়া হচ্ছে তাঁদের।

ফিটফাট জনসন

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন কোভিড-১৯’কে হারিয়ে মৃত্যুমুখ থেকে ফিরেছেন, এখন তাঁর সাহায্যে ক্ষমতাবানেরা উন্মুখ। জনসন ওজন ঝরিয়ে ফিট থাকার চেষ্টা করছেন। তিনি ১০ ডাউনিং স্ট্রিট থেকে বাকিংহামের সেন্ট জেমস পার্ক পর্যন্ত দৌড়োন। উৎসাহীদের ভিড় হয়, নিরাপদও নয়। উইন্ডসর থেকে রানি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, বাকিংহাম প্যালেসের বাগানে ব্যায়াম করুন। আর্চবিশপ অব ক্যান্টারবেরি-র ল্যাম্বেথ প্রাসাদের বাগান ব্যবহারের প্রস্তাবও এসেছে। আমেরিকার রাষ্ট্রদূত উইনফিল্ড হাউসের টেনিস কোর্টে খেলতে ডেকেছেন।

মানুষের ভাষা

সাহায্য: শশী তারুর, ভাষা মুখোপাধ্যায়

করোনা ও আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত কলকাতার পথশিশুরা। তাদের জন্য অর্থসংগ্রহে হোপ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে যৌথ আলোচনায় জুটি বাঁধলেন সাহিত্যিক-রাজনীতিবিদ শশী তারুর ও মিস ইংল্যান্ড, জুনিয়র ডাক্তার এবং বাঙালিনি ভাষা মুখোপাধ্যায়। ডার্বি-র বাড়ি থেকে ভিডিয়োয় ভাষা জানালেন, করোনা-কালে ডাক্তারির অভিজ্ঞতা। মুখে মাস্কের ক্ষত, দাঁড়িয়ে থেকে পায়ে ঝিঁঝি— সব ভোলা যায় যখন রোগী বলেন, তোমার জন্য একটু শ্বাস নিতে পারলাম। জিমে যেতে পারছেন না বলে ৪০ মিনিট হেঁটে কাজে যাচ্ছেন ভাষা। বলছেন, ‘‘রোজ একটু একটু করে, নানা উপায়ে এই পরিস্থিতির সঙ্গে লড়তে হবে। তার মধ্যেই কারও জন্য সামান্য কিছু করে দেখুন। ‘হ্যাপি হরমোন’ নিঃসৃত হবে। ভাল লাগবে। ভাল থাকবেন।’’ আলোচনার সঞ্চালক ভাষাকে বলেছেন বুদ্ধিবৃত্তি ও হৃদয় সম্পদের সুন্দর মেলবন্ধন। অনুষ্ঠানে উঠেছে ৪,৮১,০০০ টাকারও বেশি।

ভাঙার গান

২০১৬ থেকেই অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ‘রোডস মাস্ট ফল’ আন্দোলনে সরব। তা উসকে উঠেছে কোলস্টন-কাণ্ডে। আন্দোলনের দাবি, ওরিয়েল কলেজে রোডস-এর মূর্তিটি নিপাত যাক। সিসিল রোডস উনিশ শতকে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবৈষম্যের পক্ষ নিয়েছিলেন। লন্ডনে ইতিমধ্যেই প্রতিবাদীরা সংসদের বাইরে চার্চিল মূর্তির নামের তলায় লিখেছেন ‘বর্ণবিদ্বেষী’, মধ্যদেশে লেবেল আটকেছেন, ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’। হয়তো, পরের লক্ষ্য ক্লাইভের মূর্তি। এই মূর্তিটি জাদুঘরে সরিয়ে রাখার জন্য সরকারের কাছে বারে বারে দরবার গিয়েছে। সেই ভাল। নয়তো মিউজ়িয়াম ক্ষতবিক্ষত মূর্তিতে ভরে যাবে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন