London Diaries

লন্ডন ডায়েরি: দুই মলাটের মাঝে টিকা আবিষ্কারের কাহিনি

তিনি কোনও তারকা বা খ্যাতনামা রাজনীতিক নন, বিনয়ী মানুষটি সারা গিলবার্ট। অক্সফোর্ডের করোনা টিকার প্রধান বৈজ্ঞানিক।

Advertisement

শ্রাবণী বসু

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২১ ০৫:০২
Share:

Advertisement

উইম্বলডন উদ্বোধনের দিন সেন্টার কোর্টের দর্শকেরা শুনলেন, রয়্যাল বক্সে বিশেষ অতিথি এসেছেন। তিনি কোনও তারকা বা খ্যাতনামা রাজনীতিক নন, বিনয়ী মানুষটি সারা গিলবার্ট। অক্সফোর্ডের করোনা টিকার প্রধান বৈজ্ঞানিক। সারা দেশ তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ। তারই চিহ্নরূপে গোটা স্টেডিয়াম উঠে দাঁড়িয়ে হাততালির ঝড় বইয়ে দিল— ক্যামেরা ধরল বিস্মিত গিলবার্টকে।

ভ্যাক্সারস: দি ইনসাইড স্টোরি অব দি অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজ়েনেকা ভ্যাকসিন অ্যান্ড দ্য রেস এগেন্সট দ্য ভাইরাস বইটি এই সপ্তাহেই বেরিয়েছে। তাতে সারা গিলবার্ট ও ক্যাথরিন গ্রিন মিলে অক্সফোর্ডের টিকা আবিষ্কারের কাহিনি শুনিয়েছেন। ২০২০-র ১ জানুয়ারি বিষয়ভিত্তিক এক ওয়েবসাইটে যখন উহানে নতুন অসুখ ছড়িয়ে পড়ার খবর দেখেন গিলবার্ট, তিনি বুঝে যান যে, বিপদ আসছে। ফ্লু, ইবোলা, মার্সের টিকা নিয়ে আগে কাজ করেছেন তিনি। তাই জানতেন, এ ক্ষেত্রে গতি ভীষণ জরুরি। ১০ জানুয়ারি চিনে প্রথম মৃত্যুসংবাদ, তার মধ্যেই গিলবার্ট ও তাঁর সহকর্মী টেরেসা ল্যাম্ব স্থির করে নিয়েছেন ঠিক কী ভাবে টিকা তৈরি হবে। ২০ জানুয়ারি তাঁরা করোনার কুখ্যাত স্পাইক প্রোটিন নিয়ে কাজ শুরু করেন। ৬৫ দিনেই তৈরি প্রথম ব্যাচ। জানতেন, টিকা সস্তা, সহজে পরিবহণ ও বিলি করার উপযুক্ত হওয়া চাই। বাকিটা ইতিহাস। আজ ১৭৮টি দেশে প্রায় ১৫৫ কোটি ডোজ় দেওয়া সম্পূর্ণ। হিসেব বলছে, ব্রিটেনে ১২,০০০ প্রাণ বাঁচিয়েছে টিকা। তাঁদের এই কাহিনি হলিউডে গেল বলে!

Advertisement

মধ্যমণি: উইম্বলডনে খেলা দেখছেন সারা গিলবার্ট (কমলা পোশাকে)।

আত্মঘাতী গোল

বরাবরই রাজনীতিকরা খেলোয়াড়দের খ্যাতির ছটা নিজেদের গায়ে লাগাতে চান। তাতেই বিপাকে পড়েছেন বরিস জনসন ও প্রীতি পটেল। ইংল্যান্ডের ফুটবলাররা জানিয়েছিলেন, বর্ণবিদ্বেষের হিংসায় মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা দর্শাতে ইউরোর প্রতি খেলার আগে হাঁটু গেড়ে বসবেন। অমনই তাঁদের মুণ্ডপাত করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। পটেল বলেছিলেন, ‘ভঙ্গিমার রাজনীতি’ হচ্ছে। ফলে, প্রতিযোগিতার শুরুর দিকে দলকে জনতা সমস্বরে দুয়ো দিত। ইংল্যান্ড-জার্মানি খেলায় অধিনায়ক হ্যারি কেন ও তাঁর দল তাঁদের ভূতপূর্ব কৃষ্ণাঙ্গ সতীর্থ ডালিয়ান অ্যাটকিনসনের স্মৃতিতে হাঁটু গেড়ে বসেছিল, গ্যালারি থেকে এসেছিল ধিক্কার। ২০১৬ সালে পুলিশের হাতে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় এই ভূতপূর্ব ব্রিটিশ ফুটবলারের। এ দিকে, ইংল্যান্ড হইহই করে ফাইনালে যেতেই জনসন-পটেল দলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ, তাতেই খেপেছে সংবাদমাধ্যম ও নেট দুনিয়া। সেমিফাইনালের পর পটেল দলকে বাহবা দিতেই টুইটে তাঁর আগের সমালোচনার খবর জুড়ে ঠুকেছেন বিরোধী সাংসদ, “তুমিই তো?” পটেলকে অন্য দল নির্বাচনেরও পরামর্শ দিয়েছেন জনপ্রিয় বেতার সঞ্চালক। জনসন বাড়ির সামনের রাস্তায় বিরাট পতাকার মাঝখানে দাঁড়িয়ে হাত ছড়িয়ে ছবি দিয়েছেন। তাই দেখে লেবার পার্টির কৃষ্ণাঙ্গ সাংসদ ডেভিড লেমির টুইট-বাণ, “শুধু যদি না আগের খেলাগুলোয় দলকে বিদ্রুপ করতে জনতাকে ওস্কাতেন!” রাজনীতি আর খেলাকে কি কখনও আলাদা রাখা যায়?

নয়নমণি নোভা

ঋষি সুনকের জনসংযোগের নতুন অস্ত্রের নাম নোভা। এই মিষ্টি ল্যাব্রাডর ছানাটিকে এনেছে সুনকের মেয়েরা। অর্থমন্ত্রী তাকে নিয়ে ছবি টুইট করেছেন। রোস্ট চিকেন খেয়ে মন্ত্রীর লাল ব্রিফকেসে চুপচাপ ঘুমোয় নোভা। শীলিত আচরণে সে লজ্জায় ফেলবে পড়শি ডিলিনকে। পাশের ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের সেই রোমশ দস্যুটি জনসন ও সাইমন্ডসের পোষ্য। সে কার্পেট ময়লা করে, অ্যান্টিক আসবাবপত্র কামড়ায়। ক্ষতিপূরণের দায় চাপে জনসনের ঘাড়ে। নোভা কিন্তু স্বভাবে তার বিপরীত। সুশীল, শিষ্ট। ঠিক তার মালিকের মতো।

জীবপ্রেম: ঋষি সুনকের সঙ্গে নোভা

৭৩-এনএইচএস

ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস) ৭৩-তম জন্মদিন পালন করল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ব্রিটেনে সবার জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে লেবার নেতা অ্যানিউরিন বেভান এনএইচএস চালু করেন। অতিমারিতে অক্লান্ত পরিশ্রমে প্রাণ বাঁচিয়েছে, টিকা দিয়েছে তারা। স্বীকৃতিরূপে রানি এনএইচএস-কে সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান জর্জ ক্রসে পুরস্কৃত করেছেন। এক বিশেষ হস্তলিখিত মানপত্রে প্রকাশ করেছেন সার্ভিসের প্রতি কৃতজ্ঞতা। এনএইচএসে বহু ভারতীয় চিকিৎসক ও নার্সও আছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন