শাহি সমাচার

টাকা ফুরনোয় মমতা বললেন, ধাবা থেকে খেয়ে নেব

মমতা এ রকমই! রোম থেকে লিখছেন জয়ন্ত ঘোষালমমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা নিজস্ব স্টাইল আছে। তা দেশেই হোক বা বিদেশে। সাধারণত রাজনৈতিক নেতারা বিদেশ ভ্রমণ করতে ভালবাসেন। সংসদ সদস্যদেরও দেখি সে সুযোগ কখনওই ছাড়তে চান না। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর শুধু নয়, যখন তিনি রেলমন্ত্রী ছিলেন তখনও বিদেশে যাওয়ার জন্য প্রচুর আমন্ত্রণ আসত। কিন্তু, মমতা চিরকালই খুব ‘রিল্যাকট্যান্ট ট্রাভেলার’।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:০৩
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা নিজস্ব স্টাইল আছে। তা দেশেই হোক বা বিদেশে। সাধারণত রাজনৈতিক নেতারা বিদেশ ভ্রমণ করতে ভালবাসেন। সংসদ সদস্যদেরও দেখি সে সুযোগ কখনওই ছাড়তে চান না। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর শুধু নয়, যখন তিনি রেলমন্ত্রী ছিলেন তখনও বিদেশে যাওয়ার জন্য প্রচুর আমন্ত্রণ আসত। কিন্তু, মমতা চিরকালই খুব ‘রিল্যাকট্যান্ট ট্রাভেলার’। বাজপেয়ী যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন প্রতিনিধি হিসেবে মমতা এক বার নিউইয়র্ক গিয়েছিলেন রাষ্টপুঞ্জের সাধারণ সভায়। তখনও তিনি চিঁড়ে-মুড়ি নিয়ে হাওয়াই চটি পরে নিউ ইয়র্ক গিয়েছিলেন। যা দেখে অনেকেরই মনে হয়েছিল, যেন তিনি কোনও জেলা সফরে যাচ্ছেন। রেলমন্ত্রী থাকার সময় তিনি কার্যত কোনও বিদেশ সফরে যাননি। সেই সময় তাঁর পাখির চোখ পশ্চিমবঙ্গ। বিদেশ যাওয়ার থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা সফরকেই তিনি প্রাধান্য দিয়েছিলেন। এর পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে জাপান, চিন, মস্কো— নানা দেশ থেকে এসেছে বিবিধ আমন্ত্রণ। কিন্তু, বিনীত ভাবে প্রায় সব আমন্ত্রণ তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তবে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি বুঝিয়ে দেন, যদি কাজের প্রয়োজন থাকে, তবে বিদেশযাত্রা নিয়ে তাঁর কোনও ছুঁতমার্গ নেই। বাংলাদেশ সফরে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও গিয়েছিলেন। ছিটমহল হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত তখন সবে গৃহীত হয়েছে। সেই সময়ে তাঁর বাংলাদেশ যাওয়া প্রয়োজন ছিল। এবং আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান না করে বাংলাদেশ গিয়েছিলেন মমতা। একই ভাবে সিঙ্গাপুর গেলেন। লন্ডন গেলেন। এ বারে মাদার টেরিজার সন্ত প্রক্রিয়ায় উপস্থিত থাকার জন্য রোমের ভ্যাটিকান সিটিতে এসেছেন। এখান থেকে জার্মানির মিউনিখ সফর।

Advertisement

মিউনিখ কেন?

যে হেতু ‘মিশনারিজ অব চ্যারিটি’র আমন্ত্রণে মমতা ভ্যাটিক্যান সিটিতে টেরিজার সন্ত প্রক্রিয়াকরণের অনুষ্ঠানে এসেছেন, তাই যখন ইউরোপের চেম্বার অব কমার্স তাঁকে আমন্ত্রণ জানায়, তখন তিনি ভাবলেন রথ দেখার সঙ্গে কলাও যদি বেচা যায় ক্ষতি কি! তাই মিউনিখে তাদের সভায় যাবেন তিনি। দ্বিতীয় ইনিংসে এ এক অন্য মমতা। পশ্চিমবঙ্গের বিনিয়োগ মানচিত্রে গোটা বিশ্বকেই অন্তর্ভুক্ত করতে চাইছেন তিনি। রাজ্যে বিনিয়োগ ও শিল্পের একটা পরিবেশ গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। এর পর তিনি ‘আসিয়ান সামিট’-এর জন্য ব্যাঙ্কক যাবেন। আসলে রাজনৈতিক জীবনে মমতার এ এক নতুন অধ্যায়।

Advertisement

তবু মমতা আছেন মমতাতেই!

অন্য পর্যটকেরা যেমন কোথাও ঘুরতে গেলে শপিং করেন, সাইট সিইং-এ যান, মমতা সে সব থেকে বহু দূরে থাকেন। যে কাজটা করতে এসেছেন সেটাকেই প্রাধান্য দেন। ভ্যাটিকানেও তার অন্যথা হয়নি। মজার ব্যাপার, এখানে এসেও তিনি তাঁর হাঁটা থামাননি। প্রায় পরিব্রাজকের মতো মমতা কেবল হেঁটেই বেড়িয়েছেন। যে হেতু তিনি একটি অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, তাই ভারত সরকারের প্রোটোকল অনুযায়ী তাঁর জন্য বিভিন্ন জায়গায় গাড়ি সাজানো রয়েছে। কিন্তু, সেই গাড়ি ব্যবহার করেননি মমতা। হাঁটতে তিনি ভালবাসেন যে! সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই হাঁটতে বেরিয়েছেন। সন্ধেবেলাতেও সেই হাঁটা। এর মধ্যেই বিভিন্ন বৈঠকও সেরেছেন। রাস্তার ধারের দোকান থেকে কেনাকাটাও করেছেন। খুঁজেছেন লেড়ো বিস্কুটও। এবং পেয়েওছেন। উচ্ছ্বসিত হয়ে সফরসঙ্গীদের বলেছেন, ‘‘এ হল সফিস্টিকেটেড ইউরোপিয়ান লেড়ো বিস্কুট।’’ এমনকী, যা টাকা এনেছিলেন তা ফুরিয়ে যাওয়ার পর বলেছেন, ‘‘রোডসাইড ধাবা থেকে খেয়ে নেব।’’

আসলে তিনি আম মমতা, খাস মমতা নন!

অনিবার্য কারণবশত এই সপ্তাহে
শাহি সমাচার প্রকাশ করা গেল না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন