National news

জাতীয় কর্তব্যের কথা আপনারও খেয়াল থাকছে না মুলায়ম!

ভারত এখন এক উদ্বেগজনক সন্ধিক্ষণে। সমগ্র জাতি এখন এক সুরে কথা বলবে, তেমনটাই কাম্য। নিবিড় পারস্পরিক সহযোগিতার আবহই জরুরি। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক শিবিরে তার ছাপ দেখা যাচ্ছে না এখনও।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৭ ০৪:২৫
Share:

মুলায়ম সিংহ যাদব। —ফাইল চিত্র।

পরিবারে মতান্তর থাকা ভাল নয়। তবু সে রকম হয়, কখনও কখনও তা মনান্তরেও গড়িয়ে যায়। কিন্তু সঙ্কটের মুহূর্তে যাবতীয় মতান্তর বা মনান্তর দূরে সরিয়ে ঐক্যে ফেরাই দস্তুর। পারস্পরিক সহযোগিতা, দায়িত্বশীলতা এবং সংযমই কাম্য। তা না হলে সঙ্কটের মোকাবিলা করা দুরূহ হয়ে ওঠে। ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্ব কি সে কথা উপলব্ধি করতে পারছে না?

Advertisement

ভারত এখন এক উদ্বেগজনক সন্ধিক্ষণে। সমগ্র জাতি এখন এক সুরে কথা বলবে, তেমনটাই কাম্য। নিবিড় পারস্পরিক সহযোগিতার আবহই জরুরি। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক শিবিরে তার ছাপ দেখা যাচ্ছে না এখনও। প্রবীণ এবং অভিজ্ঞ রাজনীতিকের মন্তব্যেও দায়িত্বশীলতার অভাব দেখা যাচ্ছে বরং।

ভারত-চিন টানাপড়েন নিয়ে বর্ষীয়ান রাজনীতিক মুলায়ম সিংহ যাদব সংসদে যা বলেছেন, তা প্রভূত উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। ভারতকে আক্রমণ করার যাবতীয় প্রস্তুতি সেরে ফেলেছে প্রতিবেশী চিন— বলেছেন মুলায়ম। আর এক প্রতিবেশী পাকিস্তানকে সঙ্গে নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করতে চায় লাল ফৌজ— মুলায়ম এমনও জানিয়েছেন। তাতেও থামেননি। চিন পরমাণু হামলার ছক কষছে বলেও তিনি ইঙ্গিত দিতে চেয়েছেন। ভারত সরকার সে সবের মোকাবিলায় আদৌ কোনও প্রস্তুতি নিতে পেরেছে কি না, মুলায়ম সিংহ যাদব তা নিয়েও কিছুটা সংশয় প্রকাশ করেছেন।

Advertisement

মুলায়ম সিংহ যাদব কোনও সাধারণ সাংসদ নন। তিনি দেশের সবচেয়ে প্রবীণ এবং সবচেয়ে অভিজ্ঞ রাজনীতিকদের অন্যতম। তদুপরি, মুলায়ম সিংহ যাদব এক সময় দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকও সামলেছেন। এ হেন রাজনীতিক যখন যুদ্ধ-বিগ্রহ নিয়ে কথা বলেন, এ হেন রাজনীতিক যখন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সংক্রান্ত বিষয়ে মতামত দেন, এ হেন রাজনীতিক যখন প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে চলতে থাকা টানাপড়েন নিয়ে দেশের সংসদে মুখ খোলেন, তখন তাঁর ভাষণের প্রতিটি শব্দই তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। মুলায়ম নিজেও সে কথা ভাল ভাবেই জানেন। তা সত্ত্বেও এমন মন্তব্য! একে দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ছাড়া কী-ই বা বলা যায়?

মুলায়মের মন্তব্য দু’দিক থেকে উদ্বেগজনক।

প্রথমত, মুলায়ম সিংহের এই মন্তব্যে দেশের সাধারণ নাগরিক আতঙ্কিত হতে পারেন।

দ্বিতীয়ত, সামরিক সঙ্ঘাত এড়িয়ে কূটনৈতিক পথে সীমান্ত সমস্যা মেটানোর যে চেষ্টা ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক চালাচ্ছে, মুলায়ম সিংহের মতো প্রবীণ ভারতীয় রাজনীতিকের মুখ থেকে আসা কট্টর চিন-বিরোধী মন্তব্য সেই চেষ্টায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

ভারত-চিন টানাপড়েন সম্পর্কে কোনও অসংযমী বা দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য যে এই মুহূর্তে এড়িয়ে চলা জরুরি, তা কিন্তু দেশের বিদেশ মন্ত্রক ইতিমধ্যেই গোটা দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে মনে করিয়ে দিয়েছে। কাশ্মীর বা দার্জিলিঙের বর্তমান পরিস্থিতিতে চিনের অবদান সংক্রান্ত যে সব অভিযোগ গত কয়েক দিনে রাজনৈতিক শিবিরের ভিন্ন ভিন্ন প্রান্ত থেকে ভেসে উঠেছে, এই সন্ধিক্ষণে তা অবাঞ্ছিত বলে খোদ বিদেশ সচিব জানিয়েছেন। তার পরেও সংসদে দাঁড়িয়ে কী ভাবে মুলায়ম সিংহ যাদব এ রকম ভাষণ দিলেন, বুঝে ওঠা দুষ্কর হচ্ছে।

ভারত-চিন টানাপড়েন এখন যে পর্যায়ে, তাতে দু’দেশই উদ্বিগ্ন। নাগরিকরাও উদ্বিগ্ন। সুতরাং মুলায়ম সিংহও উদ্বিগ্ন হতেই পারেন। সে উদ্বেগ তিনি প্রকাশও করতেই পারেন। কিন্তু এক জন সাধারণ নাগরিক এ প্রসঙ্গে যে ভাবে কথা বলতে পারেন, প্রবীণ এবং অন্যতম শীর্ষ রাজনীতিক নিশ্চয়ই সে ভাবে মন্তব্য করতে পারেন না। নিজের উদ্বেগ বা পরামর্শ যথাস্থানে পৌঁছে দেওয়া যায় কোন পথে, মুলায়ম সিংহ তা ভালই জানেন। সে পথ না ধরে লোকসভায় বিষয়টির অবতারণা এবং মন্তব্যে অসংযম কোনও ভাবেই কাম্য নয়। সঙ্কটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে অভিজ্ঞ রাজনীতিককেও যদি মনে করিয়ে দিতে হয় জাতীয় কর্তব্যের কথা, তা হলে সে অবশ্যই দুর্ভাগ্যজনক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন