স্বীকৃতি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী একটি কুলগোত্রহীন পুরস্কার গ্রহণ করিবেন কি না, করিলেও পুরস্কার হস্তে সহাস্য ছবি তুলিবেন কি না, তুলিলেও প্রধানমন্ত্রীর দফতর সেই ছবি টুইট করিবে কি না, এই মুহূর্তে প্রশ্নগুলি অবান্তর। হউক না প্রথম বৎসরের পুরস্কার, না-ই বা থাকুক তাহার বিচারকমণ্ডলী, তবুও পুরস্কার তো বটে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:০০
Share:

ফিলিপ কোটলার বিপণনের দুনিয়ায় খ্যাতনামা— আন্তর্জাতিক পরিভাষায়, ‘মার্কেটিং গুরু’। দুর্জনে বলিতেছে, তাঁহার নামাঙ্কিত পুরস্কার নরেন্দ্র মোদী পাইবেন, ইহাই তো স্বাভাবিক। মোদীর প্রথম ও প্রধান প্রতিভা বিপণনেই। নিজের বিপণন। দুর্জনের কথা থাকুক। পুরস্কারটি যে নিতান্তই ভুঁইফোঁড়, এবং তাহার প্রধান পৃষ্ঠপোষকদের মধ্যে একাধিক সংস্থা প্রধানমন্ত্রীর অতি ঘনিষ্ঠ বলিয়া অভিযোগ, এই সব প্রসঙ্গও উত্থাপন না করাই ভাল। সামর্থ্য থাকিলে যে কোনও সংস্থা পুরস্কার দিতে পারে, যে কোনও ব্যক্তিকে প্রাপক হিসাবে বাছিয়া লইতে পারে। কিন্তু, ভারতের প্রধানমন্ত্রী একটি কুলগোত্রহীন পুরস্কার গ্রহণ করিবেন কি না, করিলেও পুরস্কার হস্তে সহাস্য ছবি তুলিবেন কি না, তুলিলেও প্রধানমন্ত্রীর দফতর সেই ছবি টুইট করিবে কি না, এই মুহূর্তে প্রশ্নগুলি অবান্তর। হউক না প্রথম বৎসরের পুরস্কার, না-ই বা থাকুক তাহার বিচারকমণ্ডলী, তবুও পুরস্কার তো বটে। নরেন্দ্র মোদী সম্ভবত ভাবিয়াছিলেন, পুরস্কারের আভিজাত্যের অভাব মিটাইয়া দিতে পারে প্রচারের ঢক্কানিনাদ। নেতা-মন্ত্রীরা মাঠেও নামিয়া পড়িয়াছিলেন। প্রকাশ জাভড়েকর হইতে স্মৃতি ইরানি, রমন সিংহ হইতে রাজ্যবর্ধন রাঠৌর বা পীযূষ গোয়েল, অনেক তাবড় নেতাই কালক্ষেপ না করিয়া জানাইয়া দিয়াছিলেন, ইহা দেশের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর স্বার্থহীন দায়বদ্ধতার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, প্রত্যেক ভারতবাসীর জন্য ইহা এক অতুল গৌরবের মুহূর্ত। এই বিপণন-দক্ষতায় ‘মার্কেটিং গুরু’ প্রসন্ন হইয়াছেন নিশ্চয়। হইচই না বাঁধিয়া গেলে বিজেপির প্রচারে এই পুরস্কার হয়তো কালক্রমে নোবেল পুরস্কারের বাড়া হইয়া উঠিত।

Advertisement

অনুমান করা চলে, পুরস্কারটির নরেন্দ্র মোদীকে প্রয়োজন ছিল। দুর্জনে বলিবে, নরেন্দ্র মোদীরও পুরস্কারটি নেহাত কম প্রয়োজন ছিল না। লোকসভা ভোট যত নিকটবর্তী হইতেছে, তাঁহার ব্যস্ততাও বাড়িতেছে। তিনি উত্তরপ্রদেশে জল প্রকল্পের উদ্বোধন করিতেছেন তো কেরলে দৌড়াইতেছেন মাত্র ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বাইপাসের ফিতা কাটিতে। মহারাষ্ট্রে নিকাশি ব্যবস্থার উদ্বোধনের পর ওড়িশায় রেললাইন উদ্বোধন করিতে ছুটিয়াছেন। এমন গ্রামে, যেখানে মাত্র জনা কুড়ি মানুষের বাস। তিনি যে মানুষের কথা ভাবিতেছেন, মানুষের জন্য কাজ করিতেছেন, লোকসভা ভোটের পূর্বে এই ছবিটি ফুটাইয়া তুলিতে নরেন্দ্র মোদী মরিয়া বলিয়াই কেহ সন্দেহ করিতে পারেন। ফিলিপ কোটলার পুরস্কার সেই ছকেই পড়িবে— পীযূষ গোয়েল যেমন জানাইয়াছেন, ডিজিটাল ভারত, স্বচ্ছ ভারত বা মেক ইন ইন্ডিয়ার ন্যায় প্রকল্পে সাফল্যের স্বীকৃতিই এই পুরস্কার। তুখড় বিপণন। ভোটের দেবতা যে আর ২০১৪ সালের ন্যায় প্রসন্ন নহেন, এই কথাটি নরেন্দ্র মোদীরা বুঝিতেছেন বলিয়াই অনুমান। হাওয়ায় খবর ভাসিতেছে, নাগপুরের অভ্যন্তরীণ হিসাবেও বিজেপির ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা অতি ক্ষীণ। এই অবস্থায় মানুষ সচরাচর খড়কুটাও আঁকড়াইয়া ধরিতে চাহে। প্রধানমন্ত্রী ফিলিপ কোটলার পুরস্কার ধরিয়াছেন। মুশকিল হইল, আব্রাহাম লিঙ্কনের নামে যে কথাটি প্রচলিত, নরেন্দ্র মোদীরা সম্ভবত তাহাকে খুব একটা গুরুত্ব দেন নাই— (দেশের) সব মানুষকে যে সব সময় বোকা বানানো যায় না, এই কথাটি এখনও তাঁহারা বোধ হয় বিশ্বাস করেন না। অতএব, পুরস্কার হাতে ছবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন