Editorial News

গোঁড়ামির বিপদ আরও একবার দেখা দিল

মরণোত্তর অঙ্গদান যখন সারা পৃথিবীতেই অত্যন্ত মহৎ দান হিসেবে স্বীকৃত, যে কোনও প্রগতিশীল সমাজ ধর্মবিশ্বাস নির্বিশেষে যখন মরণোত্তর অঙ্গদানে উৎসাহ জোগায়, তখন হানিফ বরকতিরা ঠিক উল্টো পথে হাঁটেন।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৮ ০০:৫৮
Share:

মরণোত্তর অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফতোয়ার মুখে উত্তরপ্রদেশের চিকিৎসক আরশাদ মনসুরি।

মানুষকে মানুষের কাজে লাগতে নিষেধ করে কোন ধর্ম? এ প্রশ্নের উত্তর সম্ভবত কারও কাছেই নেই। থাকার কথাও নয়। কারণ কোনও ধর্মতত্ত্বেই ওই রকম নিষেধাজ্ঞা থাকা সম্ভব নয়। কিন্তু ধর্মতত্ত্ব যত উদার, যত মহানই হোক, বিশ্বাস যখন অন্ধত্বে পর্যবসিত হয়, তখন বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী।

Advertisement

উত্তরপ্রদেশের এক মাদ্রাসা তেমনই বিপর্যয়ের আয়োজনে মেতে উঠল। মৌলবাদ আর গোঁড়ামি কতটা বিপজ্জনক হতে পারে, তার প্রমাণ মিলল আরও একবার।

উত্তরপ্রদেশে অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এক চিকিৎসক। মরণোত্তর অঙ্গদানের কাগজপত্রে সইসাবুদও সেরে ফেলেছেন তিনি। কিন্তু আরশাদ মনসুরির মতো চিকিৎসক যেমন রয়েছেন, তেমন হানিফ বরকতির মতন স্বনিয়োজিত ধর্মোধ্বজীরাও রয়েছেন। অতএব অন্ধ মৌলবাদ এবং গোঁড়ামির প্রিজমের মধ্যে দিয়েই দেখা হবে চিকিৎসক মনসুরির সিদ্ধান্তকে। মৃত্যুর পরে অঙ্গদানকে ‘ইসলাম বিরোধী’ বলে আখ্যা দেওয়া হবে। ধর্মীয় মৌলবাদী প্রতিষ্ঠান চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করবে।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

আরও পড়ুন
অঙ্গদানের অঙ্গীকার করায় মুসলিম চিকিত্সকের বিরুদ্ধে ফতোয়া

যাঁরা সত্যিকারের ধর্মপ্রাণ, তাঁরা মানুষের কাজে লাগার কথা ভাবেন, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা চিন্তা করেন। আর ধর্ম যাঁদের পেশা, ধর্ম যাঁদের ব্যবসা, ধর্মকে তাঁরা ভীতি প্রদর্শনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চান, নিজেদের ইচ্ছে মতো ধর্মের ব্যাখ্যা করে সঙ্কীর্ণ স্বার্থসিদ্ধির মরিয়া চেষ্টা চালান। হানিফ বরকতি অবশ্যই তাঁদের মধ্যেই পড়েন। মরণোত্তর অঙ্গদান যখন সারা পৃথিবীতেই অত্যন্ত মহৎ দান হিসেবে স্বীকৃত, যে কোনও প্রগতিশীল সমাজ ধর্মবিশ্বাস নির্বিশেষে যখন মরণোত্তর অঙ্গদানে উৎসাহ জোগায়, তখন হানিফ বরকতিরা ঠিক উল্টো পথে হাঁটেন। প্রগতির দিকে এগতে চান যাঁরা, তাঁদের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করা হয়। এই সব ফতোয়া আসলে ধর্ম রক্ষার তাগিদ থেকে যে নয়, এই সব ফতোয়া যে আসলে ধর্ম ব্যবসায়ীদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য, সে কথা বোঝেন না, এমন মানুষের সংখ্যা আজ নিতান্তই কম। অতএব ফতোয়া যে কার্যকরী হবে না, সে হয়ত অধিকাংশেরই জানা। কিন্তু হানিফ বরকতিদের সম্ভবত জানা নেই যে, তাঁরা ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়বেন এ বার। অন্ধকার বহাল রাখার যাবতীয় চেষ্টা ও চক্রান্ত ব্যর্থ হয়ে যাবে আরশাদ মনসুরিদের হাত ধরে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন