Widow

একটি আলোকরেখা

বিধবাদের অমর্যাদা নিষিদ্ধ করে এই বিধি যে রামমোহন রায়ের আড়াইশোতম জন্মজয়ন্তীর বছরে হল, সে কথাটিও তৃপ্তিদায়ক।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২২ ০৪:৪৯
Share:

বিধবার প্রতি নিষ্ঠুরতা ভারতীয় হিন্দু সমাজের কলঙ্ক। সদ্যোবিধবাকে সিঁদুর মুছতে, মঙ্গলসূত্র খুলতে বাধ্য করা নিপীড়নের নামান্তর। এই সত্যটি সম্প্রতি স্বীকার করল মহারাষ্ট্র। সে রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতর সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েতের উদ্দেশে এই সরকারি নির্দেশনামা জারি করেছে যে, স্বামীহারা মেয়েদের বৈধব্যের প্রথা মানতে বাধ্য করা নিষেধ। এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমতুল্য, মহিলাদের মর্যাদার পরিপন্থী। এই সংবাদ যেন দীর্ঘ তমোময় নিদ্রার শেষে চেতনায় জাগিয়ে তোলা আলোকসুধার মতো। মানুষে-মানুষে সম্পর্ক যে আজ উন্নয়ন প্রকল্পের দাতা-গ্রহীতার সম্পর্কে পরিণত হয়েছে, দেশের লোকের মনোবেদনা যে শাসকের চিত্তে কোনও আঁচড়ই কাটতে পারে না, সেই দৈন্য বুকে নিয়ে নিত্য বেঁচে রয়েছে ভারতবাসী। তাই যে কোনও রাজ্যের সরকার যখন অপমানিত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে সিদ্ধান্ত নেয়, তা সকল রাজ্যের সকল অধিবাসীর কাছে আশ্বাসের বার্তা হয়ে আসে। মহারাষ্ট্র যে বিধবাদের প্রথামুক্তির পথ দেখাল, তাতে আশ্চর্য কী? এই রাজ্যেই জ্যোতিরাও এবং সাবিত্রীবাই ফুলে বিধবাদের মাথা কামানোর রীতির প্রতিবাদ করে নাপিতদের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন। পুণে শহরের সব নাপিত এক দিনের ধর্মঘট পালন করেছিলেন ১৮৮৯ সালে। সেই আন্দোলনের ধারা একশো কুড়ি বছর অতিক্রম করেও বয়ে চলেছে।

Advertisement

বৈধব্যের রীতি পালনে নিষেধাজ্ঞার এই সিদ্ধান্ত উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া নয়। কোভিডে মৃত মানুষদের বিধবাদের দিয়ে বৈধব্যরীতি পালনের দৃশ্য অনেককেই অত্যন্ত আঘাত করেছিল। তাঁদেরই এক জন স্ট্যাম্প পেপারে লিখে দেন যে, তাঁর মৃত্যু হলে তাঁর স্ত্রীকে বৈধব্য রীতি মানতে বাধ্য করা চলবে না। অনেকেই এই সিদ্ধান্তে সহমত প্রকাশ করলে কোলাপুরের হেরওয়াড় গ্রাম পঞ্চায়েত বৈধব্য প্রথা নির্মূল করার প্রস্তাব পাশ করে। এই গ্রাম পঞ্চায়েতকে অনুসরণ করে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে রাজ্য। তৃণমূল স্তর থেকে, নাগরিকদের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে উঠে এসেছে এই সিদ্ধান্ত, সেই কারণেও সারা ভারতের কাছে এটি একটি দৃষ্টান্ত। কারণ, সামাজিক রীতিনীতি সংস্কারের এটাই প্রকৃত পথ। নারী-পুরুষ সম্পর্কের ধারণা পরিবর্তন কেবল আইন সংশোধন করে হয় না, সংশোধন চাই সমাজে, সংসারে। নারীর প্রতি বৈষম্য ও অসম্মান প্রতিরোধের জন্য বহু আইন তৈরি হয়েছে, দোষীর জন্য কঠোর শাস্তিও নির্দিষ্ট হয়েছে। সে সব ‘বাইরের কথা’ হয়ে থেকে গিয়েছে বলে মেয়েদের ভাগ্য বদলায়নি।

বিধবাদের অমর্যাদা নিষিদ্ধ করে এই বিধি যে রামমোহন রায়ের আড়াইশোতম জন্মজয়ন্তীর বছরে হল, সে কথাটিও তৃপ্তিদায়ক। বিধবাদের সম্পদ বঞ্চনার অপচেষ্টাই যে সতীদাহ প্রথার উৎস, রামমোহন সে কথা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর পরে বিধবার কঠোর জীবনযাপনের বিধান স্বামীর সম্পত্তিতে মেয়েদের দাবিকে অস্বীকারের অপচেষ্টা। বিবাহিত মেয়েদের সম্পত্তির বৈধ ভাগ দিতে পুরুষতান্ত্রিক পরিবারের আপত্তির মধ্যেই হিন্দু সমাজে বৈধব্য-সংক্রান্ত রীতিনীতির শিকড় প্রোথিত রয়েছে, এ কথা রামমোহন স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন। ভারতপথিকের প্রদর্শিত পথে এগোতে হলে দেশের সব একক মেয়ের উত্তরাধিকার এবং তাঁদের সামাজিক সম্মান নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।

Advertisement

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন