Vehicle

আয়ু বৃদ্ধি

মেয়াদোত্তীর্ণ সমস্ত যানবাহনকে বিদায় জানানো অত্যাবশ্যক। পরিবর্তে বাসমালিকদের সিএনজি, বায়োডিজ়েল-চালিত বাস কেনায় উৎসাহিত করতে হবে।

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৫:৩৭
Share:

মহানগরের দূষণ রোধে একদা যে পদক্ষেপ করেছিল রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, বেসরকারি বাসমালিকদের ছ’টি সংগঠনের আবেদন ছিল সেই সিদ্ধান্তের পুনর্বিবেচনার। ২০০৮ সালে পনেরো বছর মেয়াদে নির্দিষ্ট নির্গমন মাত্রার গাড়ি বাতিল করার কথা বলেছিল দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। তার ভিত্তিতেই কলকাতায় ১৫ বছরের পুরনো বাসের পারমিট নবীকরণ বন্ধ করে দেয় পরিবহণ দফতর। ফলে বাতিল হয়েছিল বহু রুটের বাস। তাই বাস বাতিলের ক্ষেত্রে আয়ু নয়, স্বাস্থ্যকে মাপকাঠি ধরার দাবি জানিয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন বাসমালিকরা। সেই মামলাতেই বাসের স্বাস্থ্য এবং দূষণমাত্রা খতিয়ে দেখে মেয়াদ বৃদ্ধির নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। সরকারি নির্দেশিকা জারি করতে চলেছে পরিবহণ দফতরও। জানা গিয়েছে, বৃহত্তর কলকাতা এলাকায় বাসের স্বাস্থ্য খতিয়ে দেখে তবেই ছাড়পত্র দেওয়া হবে। বাসের স্বাস্থ্য এবং দূষণ সংক্রান্ত পরীক্ষা করাতে হবে বছরে দু’বার। ১৫ বছরের মেয়াদ পেরনো প্রতিটি বাসের জন্য আলাদা করে নির্দিষ্ট ফি-সহ আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের কাছে মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন জানাতে হবে। গাড়ির স্বাস্থ্য এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত শংসাপত্র খতিয়ে দেখে বাস চলাচলের অনুমতির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

যে যুক্তিতে পুরনো বাসের আয়ু বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছিল, সেই যুক্তিকে অস্বীকারের উপায় নেই— শহরে বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি। বড় শহরগুলির বায়ুদূষণ হ্রাসে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলে রাশ টেনে নাগরিকদের গণপরিবহণ ব্যবহারে উৎসাহ প্রদানের তত্ত্বটি বেশ পুরনো। কিন্তু কলকাতায় বাসের সংখ্যা গত কয়েক বছরে লক্ষণীয় হ্রাস পেয়েছে। তবে তার সমাধান মেয়াদোত্তীর্ণ বাসের শর্তসাপেক্ষে আয়ুবৃদ্ধি হতে পারে না। আদালতের রায় শিরোধার্য মেনে নিয়েও প্রশ্ন তোলা যায়, পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে ছ’মাস অন্তর নিয়ম করে বাসের স্বাস্থ্যপরীক্ষার বিষয়টি আদৌ মানা হবে কি? অদূর ভবিষ্যতেই পুরনো বাসের স্বাস্থ্যপরীক্ষায় বসা থেকে শংসাপত্র প্রদান— সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ার ফাঁকগুলি খুঁজে বার করে পুলিশ-পরিবহণ দফতরের সঙ্গে ‘পারস্পরিক বোঝাপড়া’র মাধ্যমে মিটমাট করে নেওয়া— এখানে আদৌ অস্বাভাবিক নয়। তখন কেবল দূষণ নয়, দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পাবে।

এই দুইয়ের বিপদ থেকে বাঁচতে মেয়াদোত্তীর্ণ সমস্ত যানবাহনকে বিদায় জানানো অত্যাবশ্যক। পরিবর্তে বাসমালিকদের সিএনজি, বায়োডিজ়েল-চালিত বাস কেনায় উৎসাহিত করতে হবে। তবে সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব বিকল্প বিদ্যুৎচালিত বাসের সংখ্যাবৃদ্ধি। কলকাতার পথে ইতিমধ্যেই তাদের দেখা মিলেছে। এতে শুধু দূষণ হ্রাস পায় না, জ্বালানি খরচও কমে। কিন্তু বিপুল সংখ্যক পুরনো বাস বাতিল করে এই বাস কেনার পথে হাঁটতে গেলে বাসমালিকদের উপর যে আর্থিক চাপ পড়বে, তা লাঘবের উপায় ভাবা জরুরি। হয়তো সহজ কিস্তিতে ঋণের ব্যবস্থা, করছাড় বিষয়ে ভাবা যেতে পারে। পরিবর্তন আনতে হবে বাসভাড়ার কাঠামোতেও। বর্তমান কাঠামোয় সাধারণ বাসের রক্ষণাবেক্ষণই হয়ে ওঠে না। বহু বাস বসে গিয়েছে শুধুমাত্র এই কারণেই। পরিবেশবান্ধব গণপরিবহণের পথে হাঁটতে গেলে এই ক্ষতি পূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। আশা, নির্মল বাতাসে শ্বাস নেওয়ার তাগিদে এই মূল্য প্রদানে সচেতন নাগরিকও স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসবেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন