Uttarakhand

কঠিন দায়িত্ব

চামোলীর বিপর্যয় প্রসঙ্গে অবধারিত ভাবেই উঠিয়া আসিতেছে চিপকো আন্দোলনের কথা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৪:৫৯
Share:

ছবি পিটিআই।

এক দিকে জীবন; অন্য দিকে কর্মসংস্থানের সুযোগ, জীবনযাপনে কিঞ্চিৎ স্বাচ্ছন্দ্যের হাতছানি। ইহার মধ্যে কোনও একটিকে বাছিয়া লওয়া নিদারুণ কঠিন। অথচ, উত্তরাখণ্ডের হিমালয়-সংলগ্ন স্থানে এই জটিল প্রশ্নটিই যেন বারংবার ভাসাইয়া দেওয়া হইতেছে— জীবন, না উন্নয়ন? স্বাভাবিক অবস্থায় এমন অদ্ভুত প্রশ্ন উঠে না। জীবনের প্রয়োজনেই তো উন্নয়ন। কিন্তু দেশের নাম ভারত। এখানে ‘উন্নয়ন’ হয় ন্যূনতম পরিবেশ বিধি না-মানিয়াই। পরিণাম? ২০১৩ সালের কেদারনাথ এবং ২০২১-এর চামোলী বিপর্যয়। সম্প্রতি জানা গিয়াছে, হড়পা বানে ক্ষতিগ্রস্ত দুইটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প লইয়া প্রশ্ন উঠিয়াছিল পূর্বেই। কিন্তু অর্ধেকের অধিক কাজ সম্পন্ন হইয়া যাওয়ায় প্রকল্প দুইটি শেষ করিবার সিদ্ধান্ত লওয়া হয়। এই উন্নয়নের কাজ করিতে গিয়াই মৃত্যু হইল পঞ্চাশেরও অধিক শ্রমিকের। নিখোঁজ এখনও শতাধিক।

Advertisement

চামোলীর বিপর্যয় প্রসঙ্গে অবধারিত ভাবেই উঠিয়া আসিতেছে চিপকো আন্দোলনের কথা। সত্তরের দশকে ঠিকাদারদের সম্মুখে অরণ্যের গাছ জড়াইয়া স্থানীয় মহিলাদের সেই বাধাদান শুধুমাত্র কিছু বৃক্ষচ্ছেদন রোধ করিবার উদ্দেশ্যে সংঘটিত হয় নাই। মূল দাবিটি ছিল আরও গভীরে প্রোথিত— অরণ্যকে রক্ষা করিতে হইবে, কারণ অরণ্যই প্রাকৃতিক জলাধারগুলির দেখভাল করে, মাটিকে পুষ্ট করে, ধসের সম্ভাবনা কমায়, পশুখাদ্য এবং অধিবাসীদের বৎসরভর জ্বালানিরও জোগান দেয়। অর্থাৎ, অরণ্যই জীবন বাঁচায়, জীবিকাও। চিপকো ছিল বাস্তুতন্ত্র রক্ষার আন্দোলন। প্রকৃতিকে ধ্বংস করিয়া সরকারের কর্মযজ্ঞের বিরুদ্ধে স্থানীয় বাসিন্দারা এখনও সরব। কিন্তু শুনিবে কে? পরিস্থিতির অবনতি হইতেছে প্রতি দিন। যে দিন অরণ্যের অধিকার স্থানীয়দের নিকট হইতে সরকার হরণ করিল ‘উন্নয়ন’-এর নামে, সেই দিন হইতে পরিবেশ ধ্বংসেরও সূচনা হইল। হাজার হাজার হেক্টর বনভূমি উচ্ছেদ করিয়া কংক্রিটের জঙ্গল উঠিল, হেলিপ্যাড নির্মিত হইল, পাহাড় কাটিয়া রাস্তা চওড়া হইল।

ঘটনা হইল, এই কাজগুলি অপ্রয়োজনীয় নহে। উন্নয়ন থামিয়া থাকিতে পারে না। রাস্তাও চওড়া করিতে হইবে, পর্যটনেরও প্রসার ঘটাইতে হইবে। কিন্তু পরিবেশ ভুলিয়া নহে। ভারসাম্য রক্ষার দায়িত্বটি লইতে হইবে কেন্দ্র এবং রাজ্য— উভয় সরকারকেই। নিঃসন্দেহে কঠিন দায়িত্ব, কিন্তু বিপর্যয়ের ব্যাপ্তির তুলনায় কিছুই নহে। উত্তরাখণ্ডের নানা স্থানে পঞ্চাশের অধিক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প আছে। সংবেদনশীল অঞ্চলে এতগুলি প্রকল্পের উপস্থিতি ভূ-প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে নষ্ট করিতেছে বলিয়া বিশেষজ্ঞরা বারংবার সতর্ক করিয়াছেন। কিন্তু উন্নয়নের চিৎকার সেই সকল স্বরকে চাপা দিয়াছে। সেই স্বরগুলিকে এখন যথোচিত গুরুত্ব দিতে হইবে। ২০১৩ সালের বন্যার পর উত্তরাখণ্ডে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে নিষেধাজ্ঞা জারি করিয়াছিল সুপ্রিম কোর্ট। ২০১৯ সালেও তিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রক এবং উত্তরাখণ্ড সরকারের প্রতিনিধির এক বৈঠকে গঙ্গা ও তাহার শাখানদীর উপর নূতন বিদ্যুৎপ্রকল্পে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। কিন্তু উত্তরাখণ্ড সরকার তাহাতে আপত্তি তোলে। যুক্তি ছিল, প্রত্যন্ত স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং কর্মসংস্থান। ইহাতে রাজনীতি আছে, কাণ্ডজ্ঞান নাই। চামোলী দেখাইল, এই কাণ্ডজ্ঞানের উদয় এখনও না হইলে সামনে সমূহ বিপদ।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন