Luiz Inácio Lula da Silva

দায়ও ঐতিহাসিক

প্রবীণ এবং অভিজ্ঞ লুলা নিশ্চয়ই জানেন, তাঁর নির্বাচনী সাফল্য যতটা কঠিন ছিল, প্রশাসনিক সাফল্য তার থেকে কোনও অংশে কম কঠিন হবে না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২২ ০৫:২২
Share:

লুইস ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা। ছবি: রয়টার্স।

এক যুগ পরে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের আসনে ফিরে আসছেন লুইস ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা। দুর্নীতির দায়ে কারাবাস এবং প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা— দ্বৈত আক্রমণের অভিঘাত সামলে সাতাত্তর বছর বয়সে ল্যাটিন আমেরিকার বৃহত্তম দেশটির স্বভাবত উত্তাল রাজনীতির মহাযুদ্ধে ফিরে আসা এবং বিজয়ী হওয়ার এই কৃতিত্ব সর্ব অর্থেই ঐতিহাসিক। ভোটের অনুপাত বিচার করলে লুলার সঙ্গে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীর ব্যবধান দুই শতাংশ-বিন্দুরও কম। কিন্তু সমানে সমানে লড়াইয়ের কোনও সুযোগ তিনি পাননি, তার প্রশ্নই ছিল না। তাঁকে কেবল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সঙ্গে লড়তে হয়নি, লড়তে হয়েছে গোটা রাষ্ট্রযন্ত্রের সঙ্গে। বেপরোয়া ও মরিয়া প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো দ্বিতীয় দফায় জয়লাভের জন্য সমগ্র নির্বাচন পর্বে চেষ্টা ও অপচেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখেননি, ভোটদানের দিনেও লুলার প্রবল সমর্থক বলে পরিচিত দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পুলিশের বিরুদ্ধে নির্বাচকদের ভোটকেন্দ্রে পৌঁছনোর পথে বাধা সৃষ্টির প্রবল অভিযোগ শোনা গিয়েছে। এমনকি হেরে গেলে সেই ফল না-মানবার আগাম সঙ্কেতও দিয়ে রেখেছিলেন ‘ব্রাজিলের ট্রাম্প’। সেই সমস্ত ছল, বল ও কৌশলকে ব্যর্থ করে শ্রমিক দলের নেতা ও ভূতপূর্ব (২০০৩-১০) প্রেসিডেন্ট লুলার এই প্রত্যাবর্তনকে পুনরুত্থান বললে অত্যুক্তি হয় না।

Advertisement

বোলসোনারোর পরাজয় কেবল তাঁর দেশের পক্ষে নয়, গোটা দুনিয়ার পক্ষেই স্বস্তির কারণ। চার বছরে তিনি যে দুঃশাসন চালিয়েছেন তার নমুনা আজকের পৃথিবীতেও সুলভ নয়। অন্ধ জাতিবিদ্বেষ, সুযোগবঞ্চিত নাগরিকদের স্বার্থের প্রতি চরম ঔদাসীন্য, লিঙ্গসাম্য এবং যৌনরুচির মতো প্রশ্নে সম্পূর্ণ পশ্চাৎমুখী মানসিকতা, ইত্যাদির উপরে কোভিডের মোকাবিলায় তাঁর চূড়ান্ত নির্মম ঔদাসীন্যের শিকার হয়েছেন দেশের অগণন নাগরিক, ব্রাজিলে অতিমারির ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা কার্যত অন্য সব দেশকে অতিক্রম করেছে। লুলা কেমন দেশ চালাবেন, ভবিষ্যৎ বলবে। আপাতত বড় খবর এটাই যে, বোলসোনারোর কবল থেকে দেশের মুক্তি ঘটতে চলেছে। দুনিয়ারও। গত চার বছরে তাঁর প্রত্যক্ষ উদ্যোগে আমাজ়নের অরণ্য সংহার অভূতপূর্ব মাত্রায় পৌঁছেছে, তার ফলে বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং জীববৈচিত্র বিনাশের গতিও অকল্পনীয় ভাবে বেড়েছে। পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘পৃথিবীর ফুসফুস’কে ধ্বংস করার এই প্রক্রিয়া আর কিছু দিন চললে চরম বিপর্যয় রোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। বলা বাহুল্য, সেই বিপর্যয় কেবল ব্রাজিলের নয়, এই গ্রহের। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরেই লুলা জানিয়েছেন, আমাজ়ন সংহার বন্ধ হবে। ধরিত্রী এই প্রতিশ্রুতি পূরণের প্রতীক্ষায় থাকবে।

কেবল পরিবেশ রক্ষার প্রশ্নে নয়, সামগ্রিক ভাবেই লুলা তাঁর দেশকে সুস্থতায় ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ভরসার কথা। সবচেয়ে বড় ভরসা, তিনি জানিয়েছেন, তাঁর সরকার দেশের ‘সমস্ত মানুষের’ স্বার্থ রক্ষায় তৎপর হবে। এই বক্তব্যে পরিণত বুদ্ধির ছাপটি সুস্পষ্ট। নবনির্বাচিত নায়ক জানেন, প্রায় অর্ধেক ভোটদাতা তাঁর প্রতিপক্ষকে ভোট দিয়েছেন, সুতরাং তাঁর পক্ষে ‘নিষ্পক্ষ’ অবস্থান নেওয়া কেবল নৈতিকতার ব্যাপার নয়, নিছক বাস্তববোধের প্রশ্ন। কেতাবি বামপন্থা বা ট্রেড ইউনিয়ন রাজনীতির ‘শ্রেণি’ অবস্থান নিয়ে তিনি দেশ চালাতে পারবেন না, এখন প্রয়োজন সার্বজনিক রাজনীতির। দ্বিতীয় দফায় তাঁকে নিজের পূর্ববর্তী জমানার তুলনায় অনেক বেশি মধ্যপন্থী হতে হবে, অনেক বেশি সতর্ক। শতাব্দীর প্রথম দশকের তুলনায় বিশ্ব অর্থনীতির পরিস্থিতি এখন বহুগুণ বেশি প্রতিকূল— অতিমারি-উত্তর মন্দার আশঙ্কা রীতিমতো প্রবল। প্রবীণ এবং অভিজ্ঞ লুলা নিশ্চয়ই জানেন, তাঁর নির্বাচনী সাফল্য যতটা কঠিন ছিল, প্রশাসনিক সাফল্য তার থেকে কোনও অংশে কম কঠিন হবে না।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন