CESSI

আঁটিসাঁটি

সেস-এর প্রয়োগ বাড়িলে আর এক উদ্বেগও বাড়িতে থাকে, তাহা খরচে অস্বচ্ছতা লইয়া।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:৩৩
Share:

পেট্রল ও ডিজ়েলের উপর কৃষি পরিকাঠামো উন্নয়নের সেস বসিল, কিন্তু পণ্যগুলির দাম বাড়িল না। কারণ, শুল্ক কমাইল কেন্দ্র। ইহা সুসংবাদ নহে। সেস এবং সারচার্জ হইতে প্রাপ্ত অর্থের ভাগ পায় না রাজ্যগুলি, তাহা যায় কেন্দ্রের রাজকোষে। কেবল আমদানি শুল্ক এবং উৎপাদন শুল্ক হইতে সংগৃহীত রাজস্বের ভাগ পায় রাজ্যগুলি। অতএব শুল্ক কমাইলে রাজ্যগুলির ভাগ কমিয়া আসে। সম্প্রতি পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের রিপোর্টও দেখাইল, কত দ্রুত রাজ্যের ভাগ কমিতেছে। পাঁচ বৎসর পূর্বে সেস-সারচার্জ হইতে প্রাপ্ত অর্থ কেন্দ্রের আয়ের তেরো শতাংশ ছিল, তাহা ক্রমে বাড়িয়া আগামী অর্থবর্ষে আঠারো শতাংশ হইবে। তাহাতে রাজ্যের ক্ষতি। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হিসাব অনুসারে, কেন্দ্রীয় করের ভাগ হিসাবে পশ্চিমবঙ্গ ২০১৯-২০ সালে ১১ কোটি টাকা কম পাইয়াছিল। চলতি অর্থবর্ষেও ঘাটতি তেমনই হইবে, অথবা তাহাকে ছাড়াইয়া যাইবে। সকল রাজ্যের মিলিত ঘাটতি এক লক্ষ কোটি টাকার অধিক হইবে, ইঙ্গিত দিয়াছে অর্থ কমিশন। বিরোধী অর্থমন্ত্রীরা পূর্বেই অভিযোগ করিয়াছেন, সেস-সারচার্জ বসাইয়া রাজ্যগুলিকে রাজস্বের যথাযথ ভাগ হইতে বঞ্চিত করিবার প্রচেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিরোধী। শুল্ক কমাইবার এবং সেস-সারচার্জ বাড়াইবার প্রবণতা গত কয়েক বৎসরে ধারাবাহিক ভাবে দৃশ্যমান। স্পষ্টতই, কেন্দ্র আপন আয়ের ঘাটতি সামাল দিতে সেস-সারচার্জকে ব্যবহার করিতেছে।

Advertisement

ইহা অন্যায়। প্রথমত, কেবলমাত্র একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে, সীমিত সময়ের জন্য সেস কার্যকর করিবার কথা। তাহা নিয়মিত রাজস্ব আদায়ের উপায় নহে। সাধারণত কোনও আপৎকালীন পরিস্থিতি, বা তীব্র প্রয়োজনের মোকাবিলায় দ্রুত অর্থ সংগ্রহ করিবার জন্য সেস আরোপ করা হইয়া থাকে। কেন্দ্র তাহার অযৌক্তিক ব্যবহার করিয়া রাজস্ব সংগ্রহের উপায়গুলির যথাযথ বিন্যাস নষ্ট করিতেছে। দ্বিতীয়ত, রাজ্যগুলির অর্থবঞ্চনা নিন্দনীয়। সামাজিক ক্ষেত্রের প্রকল্পগুলিতে কেন্দ্রের বরাদ্দ লইয়া অধিক আলোচনা হইলেও, বস্তুত রাজ্যগুলিই জনকল্যাণমুখী প্রকল্পগুলির সিংহভাগ ব্যয় বহন করে। আদায়ীকৃত করের অধিকাংশ পাইবে কেন্দ্র, আর সামাজিক সুরক্ষা ও মানব উন্নয়নের ব্যয়ের অধিকাংশ বহন করিবে রাজ্য— এই অসমতা দূর করিতেই অর্থ কমিশনগুলি উত্তরোত্তর রাজ্যের প্রাপ্য বাড়াইয়াছে। চতুর্দশ অর্থ কমিশন মোট রাজস্বের ৪২ শতাংশ রাজ্যগুলিকে দিবার সুপারিশ করিয়াছে। বিবিধ কেন্দ্রীয় প্রকল্পের খাতে বরাদ্দ কমাইয়া রাজ্যগুলিকে নিঃশর্ত করের অধিক অংশ দিবার সুপারিশও করিয়াছে। কেন্দ্র করবাবদ আদায় কমাইলে রাজ্যের সমূহ ক্ষতি।

সেস-এর প্রয়োগ বাড়িলে আর এক উদ্বেগও বাড়িতে থাকে, তাহা খরচে অস্বচ্ছতা লইয়া। যে কারণে সেস বসানো হইয়া থাকে, তদ্ব্যতীত অপর কোনও কারণে তাহার খরচ নিষিদ্ধ। আক্ষেপ, কেন্দ্রীয় অডিট সংস্থার রিপোর্টে বারংবার ধরা পড়িয়াছে, সেস-এর অর্থ যথানির্দিষ্ট প্রকল্পে বরাদ্দ হয় নাই, কখনও বা বরাদ্দযোগ্য প্রকল্প নির্দিষ্টই করা হয় নাই। উচ্চশিক্ষা, প্রযুক্তি উদ্ভাবন, সড়ক নির্মাণ প্রভৃতি খাতে আদায়ীকৃত সেস-এর কোটি কোটি টাকা অব্যবহৃত পড়িয়া থাকে। বাজেট নথিতেও তাহার পূর্ণাঙ্গ হিসাব দেখা যায় নাই বহু কাল। আর্থিক শৃঙ্খলা লঙ্ঘনের ফল মিলিতেছে।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন