Price Of Essential Commodities

ক্ষুধার রাজ্যে

দেশের বাজারে খাদ্যপণ্যের জোগানে ঘাটতি দেখা দিলে সরকার রফতানির উপরে বিধিনিষেধ আরোপ করবে, তা নিয়ে সংশয় থাকার কথা নয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৫:৪৮
Share:

—প্রতীকী ছবি।

ভারতের বাজারে যদি আনাজের দাম বাড়ে, অথবা যদি চালের উৎপাদনে টান পড়ে, বৈশ্বিক ক্ষুধার মানচিত্রে তার প্রভাব কতখানি? এই মুহূর্তে প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ইতিমধ্যেই চাল এবং পেঁয়াজের ক্ষেত্রে ভারত রফতানির উপর বিবিধ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে; আশঙ্কা যে, এ বছর চিনির উৎপাদনও ব্যাহত হবে এবং সেই রফতানির উপরেও বিধিনিষেধ আরোপিত হবে। যে কৃষিপণ্যগুলির ক্ষেত্রে ভারত বড় মাপের রফতানিকারক, চাল পেঁয়াজ ও চিনি তার মধ্যে অন্যতম। চাল রফতানির ক্ষেত্রে ভারত বিশ্বে এক নম্বর, মোট বাজারের ৪০ শতাংশ ভারতের দখলে। পেঁয়াজের ক্ষেত্রে ভারত রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। বাসমতী ব্যতীত অন্য সাদা চালের ক্ষেত্রে ভারত রফতানির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর আন্তর্জাতিক বাজারে স্বাভাবিক ভাবেই চালের দাম বেড়েছে— রাষ্ট্রপুঞ্জের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজ়েশন-এর চালের দামের সূচক এক মাসে বৃদ্ধি পেয়েছে ২.৮ শতাংশ, গত এক দশকে সর্বাধিক। ভারত থেকে যে পরিমাণ চাল বিশ্ব বাজারে পৌঁছয়, সে রফতানি আচমকা বন্ধ হয়ে গেলে ভিয়েতনাম, তাইল্যান্ড বা পাকিস্তানের মতো অন্য চাল রফতানিকারী দেশের পক্ষে সেই ঘাটতি স্বল্পমেয়াদে পূরণ করা অসম্ভব। ফলে বাজারে জোগানে ঘাটতি থাকছে, অন্য দেশের রফতানি করা চালেরও দাম বাড়ছে। ভারত থেকে রফতানি হওয়া চালের উপর এশিয়া এবং সাহারার দক্ষিণবর্তী আফ্রিকার দেশগুলি বহুলাংশে নির্ভরশীল। এই চাল সেই অঞ্চলে প্রাত্যহিক পুষ্টির একটি বড় উপাদান। ফলে, ভারত থেকে রফতানি ব্যাহত হলে বিশ্বের দরিদ্রতম অঞ্চলের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর পুষ্টির উপরে নেতিবাচক প্রভাব পড়া স্বাভাবিক।

Advertisement

দেশের বাজারে খাদ্যপণ্যের জোগানে ঘাটতি দেখা দিলে সরকার রফতানির উপরে বিধিনিষেধ আরোপ করবে, তা নিয়ে সংশয় থাকার কথা নয়। নির্বাচনের বছরে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতেও যে সরকার মরিয়া হবে, তা-ও স্বাভাবিক। মূল্যস্ফীতির রাজনৈতিক অভিঘাত প্রবল, এবং এই সমস্যাটি বহুলাংশে সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ফলে, মূল্যস্ফীতির গতি শ্লথ করার কোনও সুযোগ সরকার যে ছাড়বে না, তা বোঝা যায়। তবু দু’একটি প্রশ্ন থেকেই যায়। প্রথমত, কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদনের যে সঙ্কট দেখা দিচ্ছে, তা যে সাময়িক সমস্যা নয়, সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার যথেষ্ট সচেতন কি? বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে যে ভাবে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটেছে, কৃষিকে তার সঙ্গে সইয়ে নিতে গবেষণার যথেষ্ট আয়োজন হচ্ছে কি? দ্বিতীয়ত, রফতানির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলে কৃষকদের আয়ে তার কী প্রভাব পড়ছে, ভোটমুখী সিদ্ধান্তের মধ্যে সেই হিসাবও ধরা থাকছে কি? তৃতীয় প্রশ্ন হল, হঠাৎ রফতানি বন্ধ করে দিলে নির্ভরযোগ্য রফতানিকারী হিসাবে ভাবমূর্তির যে ক্ষতি হবে, তাকে পুনরুদ্ধার করার রণকৌশলও তৈরি আছে তো? গমের রফতানির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করার সময় এই প্রশ্ন ওঠেনি, কারণ বিশ্ব বাজারে মোট গম রফতানির এক শতাংশেরও কম ভারতের দখলে। কিন্তু চালের ক্ষেত্রে প্রশ্নটির সদুত্তর থাকা জরুরি।

তবে, বিশ্ব বাজারে খাদ্যপণ্যের জোগানে ঘাটতির, এবং তজ্জনিত মূল্যস্ফীতির দায়ের সিংহভাগ বর্তাবে রাশিয়ার উপরে। বৈশ্বিক খাদ্যপণ্যের বাজারে ইউক্রেনের গুরুত্ব অসীম। যুদ্ধ আরম্ভ হওয়ার পর রাশিয়া কৃষ্ণ সাগরে ইউক্রেন থেকে বহির্মুখী পণ্যবাহী জাহাজ আটকাতে আরম্ভ করেছিল। তুরস্ক ও রাষ্ট্রপুঞ্জের মধ্যস্থতায় সেই পণ্য পরিবহণ ফের চালু হয়। এই জুলাইয়ে এক বছরের চুক্তি অতিক্রান্ত হওয়ার পর রাশিয়া ফের অবরোধ তৈরি করেছে। ফলে, বিশ্ব বাজারে ফের খাদ্যপণ্যের জোগান ব্যাহত হয়েছে, দামও ঊর্ধ্বমুখী। কোভিড অতিমারি আরম্ভ হওয়ার আগে পর্যন্ত আন্তর্জাতিক স্তরে প্রাথমিক খাদ্যপণ্যের দাম সুস্থায়ী ভাবে কম থাকছিল, ফলে ক্ষুধার সমস্যার সমাধানের একটি দিশা দেখা যাচ্ছিল। আপাতত সেই সম্ভাবনা যুদ্ধের ধোঁয়ায় ঢাকা পড়েছে।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন