Madhyamik examination

অনিশ্চিত

মনে রাখিতে হইবে, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক— উভয় পরীক্ষাই শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২১ ০৫:৩০
Share:

ফাইল চিত্র।

উৎকণ্ঠায় ভুগিতেছে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষার্থীরা। উৎকণ্ঠা, ভবিষ্যৎ লইয়া। এই বৎসরের মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা বাতিল হইল। অতঃপর যে পদ্ধতিতে মূল্যায়ন হইবে, তাহাতে মেধার প্রতি সুবিচার হইবে কি না, উচ্চতর স্তরে পছন্দের বিষয় লইতে অসুবিধা হইবে কি না, তাহা আগামী দিনগুলিতে স্পষ্ট হইবে। কিন্তু এই দীর্ঘ ডামাডোলের যে মানসিক অভিঘাতটি পরীক্ষার্থীদের উপর পড়িল, তাহা সামান্য নহে। মনোবিদরাও সম্প্রতি সেই আশঙ্কার কথাটিই তুলিয়া ধরিয়াছেন। এত দিন পর্যন্ত জানা ছিল, নির্ধারিত সময়ে না হইলেও পরীক্ষা হইবে। সেইমতো পরীক্ষার্থীরা মানসিক প্রস্তুতি লইয়াছিল। শেষ পর্যায়ে আসিয়া তাহারা জানিল, এত দিনের পরিশ্রমটি কার্যত পণ্ডশ্রমে পর্যবসিত হইতে চলিয়াছে। হয়তো অন্য উপায় অবলম্বন সম্ভব ছিল না। সরকারি সমীক্ষাতেও উঠিয়া আসিয়াছে, অধিকাংশ অভিভাবক পরীক্ষা না হইবার পক্ষেই রায় দিয়াছেন। কিন্তু এই সমগ্র ঘটনাপরম্পরা এবং শেষ ভাগে আসিয়া সিদ্ধান্ত গ্রহণে তীব্র টানাপড়েনের ধাক্কায় এক জন পরীক্ষার্থীর অবসাদগ্রস্ত হইয়া পড়া আশ্চর্য নহে। এবং তাহা হইতেছেও। অবসাদে পরীক্ষার্থীর আত্মঘাতী হইবার ঘটনাও ঘটিয়াছে।

Advertisement

মনে রাখিতে হইবে, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক— উভয় পরীক্ষাই শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। জীবনের প্রথম বৃহৎ পদক্ষেপটিই যদি ত্রুটিযুক্ত হইয়া যায়, তাহা হইলে পরবর্তী কালে আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা যাইতে পারে। বস্তুত, অতিমারির এই দুই বৎসর একটা গোটা প্রজন্মকে যে কোন অন্ধকারে ঠেলিয়া দিল, তাহা পরবর্তী কালে আরও স্পষ্ট হইবে। সমস্ত শ্রেণির পড়ুয়ারাই এই অনিশ্চয়তার শিকার। যে সবেমাত্র বিদ্যালয়ে পদার্পণ করিয়াছে, স্কুল তাহার কাছে শুধুমাত্র পরীক্ষা দিবার এবং মিড-ডে মিলের চাল-আলু পাইবার স্থান নহে, তাহার জীবন গড়িবার মাধ্যমও বটে। মা-বাবার পাশাপাশি শিক্ষকই তাহাকে জীবন-শিক্ষার প্রথম পাঠটি দেন, শৈশবের নিশ্চিন্ত আশ্রয়ের বাহিরের জগৎটির সঙ্গে তাহার পরিচয় করান। এই শিক্ষা মানুষ হইবার শিক্ষা। এত দিন স্কুল বন্ধ থাকিবার কারণে সেই পাঠটি হইতেও তাহারা বঞ্চিত হইল।

এই অনিশ্চয়তা সমাজের অন্যত্রও প্রকট হইতেছে। বস্তুত, এই মানসিক বিপর্যয় এক অন্য অতিমারির রূপ ধারণ করিতেছে। দুশ্চিন্তা, নিরাপত্তাহীনতার অতিমারি। সারা পৃথিবীর মানুষই ইহার শিকার। অতিমারির কারণে অনেকেই জীবিকা হারাইয়াছেন; অনেকেই হারাইয়াছেন প্রিয়জনদের, তাঁহাদের শেষ দেখাটুকুও দেখিতে পান নাই। জীবন লইয়া এক অদ্ভুত দুশ্চিন্তা গ্রাস করিয়াছে বিশেষত প্রবীণ নাগরিকদের। সামাজিক দূরত্ব তাঁহাদের আরও নিঃসঙ্গ করিয়াছে। এক কথায়, ভাল নাই পৃথিবী। এবং এই ভাল না-থাকাকে সঙ্গী করিয়াই হয়তো আরও অনেক বৎসর চলিতে হইবে। অতিমারির ধাক্কায় গোটা মানবসমাজের মানসিক জগতের যে অপূরণীয় ক্ষতি হইল, তাহার সঠিক পরিমাপ এখনও জানা যায় নাই। নয়তো দেখা যাইত, ইহার ব্যাপ্তি এবং প্রভাব কোভিডের তুলনায় অধিকতর। কিন্তু হাল ছাড়িলে চলিবে না। এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানাইয়া লইবার মধ্যেই আছে ভাল থাকিবার চাবিকাঠি। মনকে সেই রূপে প্রস্তুত করিতে হইবে। শিক্ষার্থীকেও, সাধারণ মানুষকেও। মনোবিদরা সেই পরামর্শই দিতেছেন।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন