Euro Cup

অবিচ্ছেদ্য

ক্রীড়া হইতে রাজনীতিকে বিচ্ছিন্ন করা, এক কথায় অসম্ভব।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২১ ০৫:২৮
Share:

ফাইল চিত্র।

সমাপ্তির পথে ইউরো কাপ। বহু দিন পরে, অতিমারি-লাঞ্ছিত সময়ে, আয়োজিত হইল এই বৃহৎ মাপের ক্রীড়ানুষ্ঠান। তাহা বহু খেলোয়াড়ের স্বপ্নপূরণ, বহু সমর্থকের উচ্ছ্বাসের কারণ— তাহাতে মাতিয়াছেন সাধারণ মানুষ। এবং, অবশ্যম্ভাবী রূপেই তাহার গাত্রে রাজনীতির রং লাগিয়াছে। ইউক্রেন দলের জার্সিতে যে জাতীয় মানচিত্র অঙ্কিত হইয়াছে, তাহাতে উপস্থিত ক্রাইমিয়া, যদিও ২০১৪ সালে উক্ত অঞ্চল এলাকাভুক্ত করিয়াছিল প্রতিবেশী রাশিয়া। অতএব দেশনায়কগণের গৌরবে যে বন্দনা প্রকাশ করিতেছে উক্ত জার্সি, তাহাকে ‘নাৎসিস্বরূপ’ বলিয়া কটাক্ষ করিয়াছে মস্কো। অপর দিকে, মিউনিখের একটি ম্যাচকে বৃহৎ বহুজাতিক গাড়ি নির্মাণ সংস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মঞ্চ হিসাবে বাছিয়া লইয়াছিলেন কিছু স্বেচ্ছাসেবী। পরিকল্পনার বিভ্রাটে গোলযোগও বাধিয়াছে। আর এক সঙ্কটের সাক্ষী হইয়াছে আজ়ারবাইজানের বাকু স্টেডিয়াম। রামধনু পতাকাধারী দুই ব্যক্তিকে স্টেডিয়াম হইতে বাহির করিয়া দিবার অভিযোগ উঠিয়াছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিয়ম-নীতি মোতাবেক ব্যবস্থা করিয়াছে নিয়ামক সংস্থা উয়েফা। তাহার পরেও ফুটবল হইতে রাজনীতিকে বিচ্যুত করা যায় নাই। ক্রীড়া হইতে রাজনীতিকে বিচ্ছিন্ন করা, এক কথায় অসম্ভব।

Advertisement

দেশে বর্ণবিদ্বেষের প্রথা চালু রাখিবার কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রীড়াঙ্গনে প্রবেশাধিকার কাড়িয়া লওয়া হইয়াছিল, সেই দেশের সামাজিক কাঠামো পরিবর্তনের পশ্চাতে যে ঘটনার তাৎপর্য স্বীকৃত। সেই ভাবেই অষ্টাদশ শতকের হাইতি বিদ্রোহ এবং গ্যারি সোবার্সের ক্রিকেট খেলাকে চলমান বিপ্লবের অংশ হিসাবে চিহ্নিত করেন ইতিহাসবিদ সি এল আর জেমস। কখনও শ্বেতাঙ্গ সতীর্থদের মধ্যে একাকিত্বের বেদনার কাহিনি শুনাইয়াছেন ক্রিকেটার মাখায়া এনতিনি, কখনও ফুটবলার থিয়েরি অঁরি শুনাইয়াছেন যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও প্রশিক্ষক পদ না পাইবার অভিজ্ঞতা। খেলা রাজনীতিকে প্রভাবিত করিবে— ইহাই বাস্তব। উহা বহু জনের পরিচিতির প্রশ্ন; কাহারও আত্মাভিমান, কাহারও অস্তিত্ব। উহা জাতি-রাষ্ট্রসমূহের ভিতর দ্বৈরথের প্রতিচ্ছবি, অভ্যন্তরীণ টানাপড়েনের দর্পণও। সুতরাং, ইউরো কাপে ফ্রান্স ও জার্মানির ম্যাচ কেবল নব্বই মিনিটের প্রতিদ্বন্দ্বিতা নহে, ব্রেক্সিট-পরবর্তী ইউরোপে দুই মহাশক্তির ক্ষমতার ভারসাম্যের নির্ধারকও।

অর্থনীতি তথা বিনোদন বাণিজ্যের প্রসঙ্গটিও জরুরি, এখন খেলা যাহার গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। ১৯৫৬ সালে এক গবেষণাপত্রে একটি বেসবল ম্যাচে দর্শকসংখ্যার নিরিখে বিবিধ অর্থনৈতিক ও সামাজিক মানদণ্ড চিহ্নিত করিয়াছিলেন অর্থনীতিবিদ সিমন রটেনবার্গ। মুক্ত বাণিজ্যের দুনিয়ায় তাহাই শেষ সত্য। এক-একটি দেশের অর্থনীতির পক্ষে বড় ভরসা হইয়া উঠে এক-একটি বৃহৎ টুর্নামেন্ট। অপর পক্ষে, ফুটবলারের মূল্য হইতে গ্যালারির সজ্জা— সকলই বহুলাংশে নির্ধারণ করে বাণিজ্য। সম্প্রতি যে অভিজাত ‘ইউরোপিয়ান সুপার লিগ’-এর পরিকল্পনা সমগ্র ফুটবল বিশ্বকে আলোড়িত করিল, তাহার পশ্চাতে চালিকাশক্তি ছিল বাণিজ্যিক লাভ-ক্ষতির অঙ্ক। ক্রীড়ার সর্বশ্রেষ্ঠ অঙ্গনগুলিই নানা ভাবে প্রমাণ করিয়া দেয়, তাহা রাজনীতি ও অর্থনীতির অপরিহার্য অংশ, আবার সমাজের অনুরণনেই তাহার প্রাণশক্তি। এবং, এই ভাবেই একে অপরের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন