Road Condition

খন্দময়

নাগরিক অভিজ্ঞতা বলে, সামান্য খোঁড়াখুঁড়িকেও অনন্ত কাল চালিয়ে যাওয়ার একটি বিশেষ ক্ষমতা পুরসভাগুলির করায়ত্ত। তাতেও যন্ত্রণা শেষ হয় না। খোঁড়া অংশটিকে জোড়াতালি দিয়ে কর্মীরা ফিরে যান।

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৫ ০৫:৩৬
Share:

পিচের চিহ্নটুকু মুছে গিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তায় জেগে রয়েছে শুধুই মাটি-পাথর। বর্ষার জলে তার কঙ্কালসার চেহারাটি ভয়ঙ্করতর। সে পথ দিয়ে গাড়ি দূর স্থান, হেঁটে চলাফেরা করাও দুঃসাধ্য। রাস্তার এমন অবস্থা কলকাতা পুর এলাকার লাগোয়া রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার এক নম্বর ওয়র্ডের একটি অংশের। মাসকয়েক ধরে প্রথমে জল সরবরাহের পাইপলাইন বসানো, অতঃপর মাটির নীচ দিয়ে নিকাশি নালা তৈরির মতো হরেকরকম্বায় অন্তহীন খোঁড়াখুঁড়ি চলছে এ রাস্তায়। এবং পুরসভার বক্তব্যে স্পষ্ট, খোঁড়াখুঁড়িতে এখনই যবনিকা পড়ছে না। পাইপলাইন সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তা চলতে থাকবে, তার পরে স্থায়ী ভাবে রাস্তা মেরামত করা হবে। অবশ্য, অচিরেই পাইপলাইন বসানোর কাজ সম্পূর্ণ হবে, বা রাস্তার বেহাল অংশগুলিতে ইতিমধ্যেই ‘প্রাথমিক সংস্কার করা হয়েছে’ গোছের পুরসভার আশ্বাসবাণীতে আস্থা রাখার উপায় নেই। নাগরিক অভিজ্ঞতা বলে, সামান্য খোঁড়াখুঁড়িকেও অনন্ত কাল চালিয়ে যাওয়ার একটি বিশেষ ক্ষমতা পুরসভাগুলির করায়ত্ত। তাতেও যন্ত্রণা শেষ হয় না। খোঁড়া অংশটিকে জোড়াতালি দিয়ে কর্মীরা ফিরে যান। অতঃপর নাগরিক জীবন কাটে জমা জল, কাদা ও ছোট-বড় গর্তে ঠাসা এবড়ো-খেবড়ো রাস্তাকে সঙ্গী করে।

এ কি কোনও সভ্য শহরের ছবি হতে পারে? কলকাতা শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের রাজধানীই নয়, পূর্ব ভারতে এক অতি গুরুত্বপূর্ণ শহরও বটে। সেই শহরেরই একাংশে অসমান, গর্তবোঝাই রাস্তায় হাঁটার কাজটিও অসম্ভব হয়ে পড়ায় বাসিন্দারা পথে নেমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন— এ কি সর্বতোভাবে রাজ্য প্রশাসনের লজ্জা নয়? সাম্প্রতিক কালে কলকাতার রাস্তাগুলি পর্যবেক্ষণে মন দিলে পুরসভা বুঝতে পারত, শহরের এক বিরাট অংশের রাস্তাই সুস্থ, স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। রাস্তার মাঝে বিরাট গর্ত, অসমান কলেবর, অল্প বৃষ্টিতেই জল জমার সমস্যা— কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকার পরিচিত দৃশ্য। এই প্রসঙ্গ উঠলেই পুরসভা হয় বর্ষার বৃষ্টির দিকে ইঙ্গিত করে, অথবা নিকাশি নালা-জলের পাইপলাইন বসানোর অজুহাত আঁকড়ে ধরে। অথচ, সমস্যাটি শুধুমাত্র বর্ষার নয়, বিচ্ছিন্ন এলাকায় সংস্কার কাজেরও নয়। পানীয় জল সরবরাহ, নিকাশি নালা সংস্কারের মতো কাজ বিশ্বের অন্য উন্নত শহরগুলিতেও সম্পন্ন হয়। তাদের ক’টির ক্ষেত্রে কাজের সময় এবং কাজ শেষে দীর্ঘ দিন ধরে নাগরিককে এমন নরক যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়?

আসল সমস্যাটি প্রশাসনের গয়ংগচ্ছ মানসিকতার। মাটির চরিত্র বুঝে রাস্তা নির্মাণ, তাতে উপযুক্ত মানের উপকরণ ব্যবহার, এবং নিয়মিত তার মেরামতির ব্যবস্থা করা দায়িত্বশীল প্রশাসনের প্রাথমিক কর্তব্য। পুরপ্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগের এই কাজগুলিই করার কথা। তারা তবে কোন রাজকার্যে মগ্ন? শুধুমাত্র রাস্তা নয়, কলকাতার দিকে তাকালে তার বিভিন্ন অংশে সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবটি পরিস্ফুট হয়ে ওঠে। এ এমনই এক শহর, যেখানে নাগরিকের নিরাপদে চলার অধিকারটিও প্রতিনিয়ত খর্ব হয় অপ্রশস্ত, হকারসর্বস্ব ফুটপাতে, ভাঙাচোরা রাস্তায়, জরাজীর্ণ ফুটব্রিজে। অযত্নের শহর মুখ লুকোতে চায় রাস্তার ধারের এলোমেলো পার্কে, অপ্রয়োজনীয় চড়া আলোর আড়ালে। লন্ডন হয়ে ওঠার দুর্বহ বোঝাটি ঘাড়ে চাপানোর আগে তাকে সুস্থ করে তোলার কাজটিতে মনোযোগী হওয়া উচিত নয় কি?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন